Diary of Suhasini Das

Suhasini Das
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী ও আজীবন দেশব্রতী সুহাসিনী দাস (১৯১৫-২০০৯)-এর জন্ম সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায়। তাঁর বাবা প্যারীমোহন রায়, মা শোভা রায়। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। বয়স যখন ষোলো তখন সিলেট শহরের জামতলা এলাকার কুমুদচন্দ্র দাসের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁর স্বামী ছিলেন সিলেটের প্রাচীনতম ছাপাখানা কোটিচাঁদ প্রেসের স্বত্বাধিকারী। বিয়ের চার বছরের মাথায় ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে তাঁর স্বামী মৃত্যুবরণ করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর দেড় বছর বয়সী কন্যা নীলিমাকে নিয়ে শুরু হয় তাঁর সংগ্রামমুখর জীবনযাপন। দেবর ফণীন্দ্রচন্দ্র দাসের সহযোগিতায় বইপড়া থেকে শুরু করে সামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হন। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে শ্রীহট্ট মহিলা সংঘের কার্যক্রমে নিজেকে জড়িত করেন। একই বছর কংগ্রেসের সদস্য হিসেবে তাঁর রাজনীতিতেও আত্মপ্রকাশ ঘটে। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি সিলেট শহরের শেখঘাট এলাকার মহিলা সংঘের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সভায় সুহাসিনী দাস আজীবন খদ্দর কাপড় পরার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ‘ভারত ছাড় আন্দোলন’ কর্মসূচিতে যোগ দেন এবং একপর্যায়ে আরও অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করেন।
১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস সভাপতি পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর সিলেট সফরকে উপলক্ষ করে চাঁদা সংগ্রহের ভার যাঁদের ওপর পড়েছিল, এর মধ্যে সুহাসিনী দাস ছিলেন অন্যতম। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে নোয়াখালীতে ভয়াবহ সামপ্রদায়িক দাঙ্গার পর মহাত্মা গান্ধী শান্তিমিশন নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন। সে মিশনে সিলেট থেকে একটি দল গিয়ে অভয় আশ্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সেবা ও ত্রাণকাজে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে সুহাসিনী দাস গান্ধীজির সান্নিধ্য পেয়েছিলেন। সেবাকাজ চালাতে গিয়ে সুহাসিনী তখন বসন্ত রোগে আক্রান্ত হন এবং সে খবর পেয়ে গান্ধীজি তাঁকে দেখতে ছুটে যান। মহাত্মা গান্ধী তখন সুহাসিনীকে হিন্দিতে কিছু কথা বলেছিলেন, যার বাংলা তরজমা এ-রূপ : ‘শিগগির সুস্থ হয়ে উঠবে এবং সেবার কাজ করবে। মন খারাপ করো না।’
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কংগ্রেসকর্মীদের নিয়ে ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে দিল্লিতে যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেখানে ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আমন্ত্রণে সুহাসিনী অংশ নিয়েছিলেন এবং তাঁর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাত্ করেছিলেন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে সিলেটের বিভিন্ন চা-বাগানে নানা যুক্তিসঙ্গত দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সুহাসিনী দাস শ্রমিক ইউনিয়ন গঠনে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের পর হিন্দুদের বাংলাদেশ ত্যাগ রোধে মুখ্য সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছিলেন। বিভিন্ন সামপ্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে সভা-সমাবেশসহ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে তিনি সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। অনাথ ও দরিদ্র পরিবারের সন্তান এবং মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ধর্ষিতা নারীদের পুনর্বাসন তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ‘রঙ্গিরকুল আশ্রম’ এবং সিলেট শহরের চালিবন্দর এলাকায় অবস্থিত উমেশচন্দ্র-নির্মলাবালা ছাত্রাবাসের কর্মপরিচালনার দায়িত্বে তিনি আজীবন যুক্ত ছিলেন। সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী কর্তৃৃক পুরস্কৃত হন। সুহাসিনী দাস ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের ৩০ মে  মৃত্যুবরণ করেন।
দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে অখণ্ড ভারতবর্ষ ভেঙে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুইটি পৃথক রাষ্ট্রে পরিণত হয়। তবে বাংলাদেশের (তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তান) সিলেট অঞ্চলটি ভারত নাকি পাকিস্তানের সঙ্গে থাকবে—এ নিয়ে গণভোট হয়েছিল। যা ‘সিলেটের রেফারেন্ডাম’ নামে পরিচিতি পেয়েছিল। সে ভোটে সিলেটের করিমগঞ্জ ভারতের সঙ্গে এবং সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ পাকিস্তানের স্বপক্ষে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। গণভোটের আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পক্ষে-বিপক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিল। মুসলিম লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তানের পক্ষে এবং কংগ্রেসের নেতৃত্বে ভারতের পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। সে সময় সুহাসিনী দাস কংগ্রেসের একজন কর্মী হিসেবে কাজ করেছিলেন। প্রচারণার পাশাপাশি সুহাসিনী দাস দেশভাগের ওই সময়ের কালপঞ্জি এবং সিলেট অঞ্চলের কিছু ঘটনার বিবরণ তাঁর ব্যক্তিগত ডায়েরিতে টুকে রাখতেন। পরবর্তীকালে সে ডায়েরিটি ‘দেশ বিভাগের ডায়েরি (১৯৪৭)’ শিরোনামে ‘সুহাসিনী দাস সংবর্ধনা গ্রন্থ’ (১৯৯৯) বইয়ে তাঁর আরও কিছু লেখার সঙ্গে মুদ্রিত হয়েছিল। এ সংবর্ধনা গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছিলেন নৃপেন্দ্রলাল দাশ, মনোজবিকাশ দেবরায়, বীরেন্দ্র সূত্রধর, মদনমোহন দত্ত ও দীপংকর মোহান্ত। ডায়েরিটি পৃথক কোনো বই হিসেবে এ-পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি। ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা বিবেচনায় রেখে এ ডায়েরিটি মুদ্রণের ব্যবস্থা করা হলো। এতে লেখকের বানানরীতি ও ভাষা সম্পূর্ণ অক্ষুন্ন রাখা হয়েছে। ডায়েরি-পাঠে পাঠকেরা সিলেট অঞ্চলের তখনকার সমাজব্যবস্থা, সামপ্রদায়িক দাঙ্গা, মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস কর্মীদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড এবং হিন্দু ধর্মালম্বীদের দেশত্যাগের একটি অনুপুঙ্খ বিবরণ জানতে পারবেন।
This diary was published in Suhasini Das Felicitation Volume (1999).
১৫.৪.৪৭ (15-4-47)
সকাল ১০টায় টেংরা বাজারের নিকটে রাজনগর হাইস্কুলে অভিভাবকদের সভা হইল। সভাপতিত্ব করেন পূর্ণেন্দুকিশোর সেনগুপ্ত। বিকাল ৩টায় গয়গড় গ্রামে যুবক কর্ম্মীদের সভায় ‘সেবাদল’ গঠন করা হয়। সিলেটে গণভোট আসন্ন। লোকরা আসাম না পূর্ববঙ্গ চায় তাহা নিয়া ভোট।
Guardians’ meeting started at 10 am at Rajnagar High School near Tengra Bazar. Purnendu Kishore Sengupta presided over the meeting. At 3 pm Seba Dal ( Service group) was formed in meeting of young activists at Goygar village. Sylhet referendum is at hand.  People will decide whether they want Assam or East Bengal.

 

১৬.৪.৪৭

 

সকাল ৮ ঘটিকার সময় মহাসহস্রের সরোজবাবুর বাড়ীতে বৈঠক হইল। বহু লোকের উপস্থিতিতে ‘সেবাদল’ গঠন করা হয়। ডলাগ্রামে বিকাল তিন ঘটিকার সময় নিকুঞ্জবিহারী গোস্বামীর সভাপতিত্বে ছাত্রদের সভা অনুষ্ঠিত হইল। রাত্রিতে সতীশ চক্রবর্তীর বাড়ীতে আমরা অবস্থান করি। কংগ্রেস আসামের দিকে প্রচার চালাইতেছে আর মুসলিম লীগ পূর্ববঙ্গ অর্থাত্ পাকিস্তান গঠন করার জন্য প্রচার চালাইতেছে।

 

১৭.৪.৪৭

 

নোয়াগ্রামে বৈঠক করিয়া সেবাদল গঠন করা হইল। কেপ্টেন সুরেন্দ্র মালাকার সভাপতিত্ব করিলেন। দুপুর ১২টায় কেপ্টেন শরদিন্দু দেবের সভাপতিত্বে চাটুরা গ্রামে সভা হয়। আমরা সারদা বাবুর বাড়ীতে থাকিলাম।

 

 

১৮.৪.৪৭

 

দুপুর ১২টায় শাসমহল গ্রামে কেপ্টেন শ্রীনরেশ দেবের নেতৃত্বে বৈঠক হয়। বিকালে পঞ্চশ্বর গ্রামে মহিলাদের সভা হইল। দেশ ভাগের পরিস্থিতি নিয়া আলোচনা হইল।

 

 

১৯.৪.৪৭

 

রাজনগর থানার প্রায় সব গ্রামেই আমাদের প্রচারাভিযান হইবে। আজ পাঁচগাঁওয়ের সুধীর বাবুর বাড়ীতে থাকিয়া বিকালে সারা গ্রামটি ঘুরিলাম।

 

 

২০.৪.৪৭

 

পাঁচগাঁওয়ে সকাল ৯টায় ছাত্রসভা এবং ১০ ঘটিকার সময় কর্মকারপাড়ায় বয়স্কদের বৈঠক হয়। পুরুষ ও মহিলাদের আলাদা বৈঠকে নিকুঞ্জবিহারী গোস্বামী ও সুধীর বাবু পুরুষের মধ্যে আলোচনা করিলেন। সুহাসিনী দাস মহিলাদের মধ্যে আলোচনা করিলেন। রাত্রে খলাগ্রামে বৈঠক হইল।

 

 

২১.৪.৪৭

 

গ্রামের মহিলারা জাগিতেছে। তাহারা স্বাধীনতার কথা বলিয়া থাকে। খলাগ্রামের নিখিল বাবুর বাড়ীতে সকাল ১০টায় মহিলা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিকাল ৪টায় ব্রাহ্মণপাড়ায় সেই অঞ্চলের মহিলাদের নিয়া বৈঠক করিলাম। তাহারা আমাদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়া শুনিয়া থাকে।

 

 

২২.৪.৪৭

 

সকালে খলাগ্রাম হইতে করিমপুর আসিলাম। এবং ১২টায় কুলাউড়া পৌঁছাইলাম। গ্রামের মানুষ কি ঘটিবে বুঝিতেছে না। সবাই চিন্তা করিতেছে।

 

 

২৩.৪.৪৭

 

সারাদিন কুলাউড়া থাকিয়া কর্মীদের মধ্যে বর্তমান পরিস্থিতি বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হইল। পরিস্থিতি খুব ভাল নয়।

 

 

২৪.৪.৪৭

 

কুলাউড়ায় ছাত্রীদের নিয়া একটি সেবাদল গঠন করিলাম। সম্পাদিকা হইলেন চিনুদেবী, গার্গী ও কল্পনা সহ-সম্পাদিকা, পরিচালিকা সুহাসিনী দাস।

 

 

২৫.৪.৪৭

 

ভোরের গাড়ীতে সিলেট আসিলাম। সময়টা খুব অস্থির হইয়াছে। মানুষের যেন ঘুম নাই।

 

 

২৮.৪.৪৭

 

বাণী সিলেট আসিয়াছে। তাহার সঙ্গে দেখা হইল। মুকুন্দ সরকারের মিটিং-এ যোগদান করিলাম।

 

 

২৯.৪.৪৭

 

আজ সকালে গালর্স স্কুলের লীলা দাসগুপ্ত আসিয়া বলিয়া গেলেন তাহাদের মেয়েদের বোর্ডিং-এ গিয়ে তুলাধূনা শিখাইয়া দিতে। বিকালে মহিলাদের নিয়া মিটিং করিবার পর মেয়েদের বোর্ডিং-এ গিয়া শিখাইয়া দিলাম।

 

 

৪.৫.৪৭

 

আজ সন্ধ্যায় একাডেমী স্কুলের মিটিং-এ যোগদান করিলাম। শহরের গণ্যমান্য লোকরাও আসিয়াছেন। দেশ ভাগের সময় শ্রীহট্ট কোন দিকে থাকিতে চায়—তাহা নিয়া বিশদ আলোচনা হইল। সমবেত সকলেই বলিলেন শ্রীহট্ট আসামে থাকিতে চায়। সর্ব্বসম্মতিক্রমে এই প্রস্তাব গৃহীত হইল।

 

 

১১.৫.৪৭

 

সকালে নিকুঞ্জদার (নিকুঞ্জবিহারী গোস্বামী) কাছে শুনিলাম কুলাউড়া আশ্রমের বড় ঘরটা ঝড়ে পড়িয়া গিয়া সব জিনিস নষ্ট হইয়াছে। বিকালে গালর্স স্কুলে গিয়া তুলাধূনা শিখাইলাম ও কংগ্রেস অফিসের আলোচনায় যোগ দিলাম।

 

 

১৪.৫.৪৭

 

সকালে পুনাদার (পূর্ণেন্দুকিশোর সেনগুপ্ত) সাথে দেখা হইল। জগন্নাথপুর হইতে রাজানগর যাওয়া সম্বন্ধে তাহার সাথে আলোচনা করিলাম। ৫ই জুন পর্যন্ত ঐ অঞ্চলে কাজ করিতে হইবে। দুপুর ১২টায় জগন্নাথপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।

 

 

৮.৬.৪৭

 

সুনামগঞ্জের অনেক গ্রামে গিয়া কাজ করিতে হইল। দেশ বিভাগের বিষয়টা নিয়া অনেকেই চিন্তা করিতেছেন। আজ বিকালে সিলেট পৌঁছাইলাম। শহর গরম হইয়া উঠিতেছে। সিলেট কোন দিকে যাইতে চায় তাহা নিয়া কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ প্রচার শুরু করিয়াছে। যাহার যাহার পক্ষে বক্তৃতা দেওয়া হইতেছে। সামপ্রদায়িক দাঙ্গা লাগিবে কি না চিন্তা করিতে থাকি।

 

 

১২.৬.৪৭

 

সকালবেলা টাউন হলে শ্রীহট্ট পূর্ব্ববঙ্গ ভূক্তি সম্পর্কে আলোচনা সভা হইল। তাহাতে যোগ দিলাম। এখন আর কেউ বৃটিশদের কথা বলিতেছে না, মাথায় শুধু দেশভাগ ও সিলেট কোন দিকে যাইবে তাহা নিয়া চিন্তা। হঠাত্ করিয়া কি জানি হইতেছে। নিজেদের মধ্যে মারামারি লাগিতেছে।

 

 

২০.৬.৪৭

 

কংগ্রেস ব্যাপক প্রচার করিতেছে। তাহারা কুঁড়েঘর নিয়া এবং মুসলিমলীগ কুড়াল নিয়া নামিয়াছে। দুপুর ১টায় নিকুঞ্জবিহারী গোস্বামী ও সরোজকুমার দাসসহ মোটরযোগে কুলাউড়া গেলাম। আসাম হইতে নেতারা আসিবেন। তাহাদিগকে অভ্যর্থনা জানাইতে মেয়েদের প্রয়োজন বিধায় সারা বিকাল ঘুরিয়া মহিলাদের সহিত দেখা করিলাম এবং মিটিং হইল।

 

 

২২.৬.৪৭

 

শিলং হইতে বিষ্ণুমেধী, বৈদ্যনাথ মুখার্জি প্রমুখ কংগ্রেস নেতারা কুলাউড়া আসিলেন। কুলাউড়ায় মিটিং হয়। আসামের সাথে সিলেটভূক্তির পক্ষে তাহারা যুক্তি উপস্থাপন করিলেন। মেয়েরা তাহাদের সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। সন্ধ্যার গাড়ীতে আমরা সিলেট ফিরিয়া আসিলাম।

 

 

২৯.৬.৪৭

 

গণভোটের আয়োজন চলিতেছে কিন্তু শ্রীহট্টের চা-বাগানের শ্রমিকরা এই ভোটে অংশ নিতে পারিবে না বলিয়া সরকার ঘোষণা দিয়াছে। কারণ হিসাবে তাহারা বলিতেছেন যে চা-শ্রমিকরা এইখানকার স্থায়ী জনসাধারণ নয়। কিন্তু তাহারা প্রায় একশত বছর ধরিয়া অত্র প্রদেশে রহিয়াছে। তাহাদের ভোটাধিকারের জন্য আন্দোলন চলিতেছে—আজ মহকুমা প্রশাসকের অফিস ঘেরাও করা হইবে। নিকুঞ্জবিহারী গোস্বামী তাহাদের নেতৃত্ব দিতেছেন। আমি সকাল বেলা মৌলভীবাজারে রওয়ানা হইলাম। বহুদূর হইতে চা-শ্রমিকরা পায়ে হাঁটিয়া আসিয়াছে। প্রায় পনের হাজার শ্রমিক ভোটের দাবীতে মহকুমা প্রশাসকের কাছে আবেদন লিপি দিয়া গেল। তাহারা ভোটের দাবীতে অন্যান্য জায়গায় এইভাবে মিলিত হইতেছে।

 

 

৩০.৬.৪৭

 

দুপুরে কুলাউড়া গ্রামে বাহির হইয়া সারাদিন ঘুরিলাম। সন্ধ্যায় রেল স্টেশনে মহিলাদের মিটিং-এ যোগদান করিলাম। মহিলারা দেশের অবস্থা জানিতে এখন খুব আগ্রহী। সবাই সতর্ক থাকিতেছেন।

 

 

১.৭.৪৭

 

সকালে হিঙ্গাজিয়া গ্রামে গেলাম। অবলাকান্ত গুপ্ত হিঙ্গাজিয়া তপশীলিদের বাড়ী বাড়ী ঘুরাইলেন। বিকাল ৫টায় নির্মলবাবুর বাড়ীতে মহিলাদের বৈঠক হইল। সন্ধ্যার পর কুলাউড়া ফিরিয়া আসিলাম।

 

 

২.৭.৪৭

 

দুপুরে নর্ত্তন গিয়েছিলাম। এলাকার সব লোকের সাথে আলাপ হইল। বিকালে কুলাউড়া বিদ্যাশ্রমে ফিরিয়া আসিলাম। এমন কঠিন সময় মানুষের জীবনে যেন আর আসে নাই।

 

 

৩.৭.৪৭

 

সকাল বেলা শ্রীমঙ্গল গিয়া কাজ করিলাম। মানুষের মধ্যে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের উদ্বেগ লক্ষ্য করা গেল। প্রায় সবাই বলিতেছে কি হইবে অবস্থা। বিকাল ৩টায় গাড়ীতে ফিরিয়া আসিলাম। ঢাকা হইতে লীগের নেতা কর্মীরা আসিতেছেন শুনিলাম।

 

 

৪.৭.৪৭

 

কুলাউড়ার নিকটবর্তী গ্রামগুলিতে প্রচারাভিযানে বাহির হইলাম। চুনঘর, বরমচাল, কটারকোনা ঘুরিলাম। ভোটদানের উত্সাহ লক্ষ্য করা গেল। কটারকোনায় অনেক মহিলা সমবেত হইয়াছিলেন। জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ কর্মীদের সঙ্গে আলাপ হইল। তাহারা শ্রীহট্টকে আসামের সঙ্গে থাকিতে চায়। মুসলিম লীগের চিন্তা থেকে তাহারা পৃথক। মুসলিম লীগ মনে করিতেছে ইসলাম মানেই পাকিস্তানি। তাহা প্রচার করিতেছে।

 

 

৫.৭.৪৭

 

আজ জয়চন্ডী গ্রামে রওয়ানা হইলাম। আমাদের আসার কারণ জানিয়া গ্রামবাসীরা খুবই আনন্দিত। তাহারা বিভিন্নভাবে আমাদের কর্মীদের নিকট থেকে উপকার পাইয়া থাকে—আমাদের গ্রামসেবার কাজ এত অঞ্চলে বেশী হয়। অনেক বাড়ী ঘুরাইয়া বিকাল ৫টায় ভাটেরা গ্রামে পৌঁছাইলাম, সেইখান হইতে বরমচাল হইয়া রাত্রে আশ্রমে ফিরিলাম। আগামীকাল হইতে ভোট দেওয়ার কাজ শুরু হইবে। মনের মধ্যে উত্কণ্ঠাবোধ হইতেছে। ভোট লওয়ার জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা ভাল বলিয়া মনে হইল। তবুও সকলের মধ্যে ভয়ের ভাব প্রচুর। লীগ শক্তি প্রদর্শন করায় ভয়টা বাড়িল। কারণ চা-শ্রমিকদের ভোটাধিকার হইতে বঞ্চিত করার ফলে কংগ্রেস সমর্থকদের পক্ষে বহু ভোট কমিয়া গিয়াছে।

 

 

৬.৭.৪৭

 

ভোরে কংগ্রেস অফিসে যাই। সেইখানে কর্মীদের দায়িত্ব মধ্যে বণ্টন করা হইল। আমি এল পি স্কুলে যাই। বিকাল ৩টা পর্যন্ত মহিলাদের ভোটদানের কাজ শেষ হইল। অন্যান্য জায়গা ঘুরিয়া রাত্রে ফিরিলাম। ভোটকেন্দ্রগুলিতে উপস্থিতির সংখ্যা কম নহে। খুব দুঃচিন্তার মধ্যে রাত কাটাইলাম।

 

 

৭.৭.৪৭

 

ভোরের গাড়ীতে সিলেট চলিয়া আসিলাম। সারাদিন হাইস্কুলের মহিলা ভোট কেন্দ্রে থাকিয়া কাজ করিয়া রাত্রে ফিরিয়া আসিলাম। শহরের হিন্দুরা খুবই চিন্তিত বলিয়া মনে হইতেছে। এইখানে লীগের দাপট কম নয়।

 

 

১১.৭.৪৭

 

শহরে উত্তেজনা বাড়িতে থাকিল। পুরানলেনে মহিলাদের নিয়া মিটিং করে কমিটি গঠন করিয়া সকলের মনে সাহস দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। শহরে গুজব ছড়ানো হইতেছে যে রায়ট হইতে পারে। শহরে আতঙ্কের সৃষ্টি হইয়াছে, লোক সরে যাইতেছে। খারাপ লাগিল। এই কি আমরা স্বাধীন হইতেছি যে, ভিটামাটি ছাড়িতে হইবে। মুসলিম লীগের উত্তেজনাকর বক্তব্য ও শ্লোগান এই জন্য অনেকটা দায়ী বলিয়া মনে হইতেছে। এইসব প্রতিকারের জন্য কাজের প্লেন নেওয়া হইল। কঠিন সময়ে মানুষের মধ্যে থাকিয়া সাহস দিতে হইবে। হিন্দু মানসিকভাবে দুর্বল হইয়া পড়িতেছে বুঝিলাম।

 

 

১২.৭.৪৭

 

খুব সকালে বাহির হইয়া পাড়ায় পাড়ায় ঘোরা শুরু করিলাম। সেই সিলেট যেন ক্রমেই স্লান হইয়া যাইতেছে। পরিচিত লোকদের মুখের দিকে তাকাইলেই দেখি চেহারা কাল ও শুষ্ক, লাবণ্যতা লোপ পাইয়াছে। আমাদের তিনটি কাজ করিতে হইবে; প্রথমতঃ লোকদের সাহস দেওয়া, দ্বিতীয়তঃ সংঘবদ্ধ করানো, তৃতীয়তঃ ভলান্টিয়ার দল তৈরী করা। সকলেই কহিতেছে বড় কিছু ঘটিয়া যাইতে পারে। এই সবের জন্য প্রত্যেক দিন ঘোরাঘুরি করিতে হয়।

 

 

১৪.৭.৪৭

 

গণভোটের ফল বাহির হইল। শ্রীহট্ট জেলা পূর্ব্ববাংলার সাথে যুক্ত হইবার পক্ষে বেশী ভোট পড়িল। গণতন্ত্রের এই পদ্ধতিকে মানিয়া লইতে হইবে। রাস্তায় বাহির হওয়া ভাল কি না ভাবিয়া সারাদিন বাড়ীতেই থাকিলাম। রাত্রে আমাদের পাড়ার লোকদের সহিত আলাপ হইল। তাহারা সকলেই চিন্তিত যে শহরে লীগের লোকরা কিছু করিতে পারে। মেয়েদের আত্মরক্ষার বিষয়টি নিয়া চিন্তা লাগিল।

 

 

১৮.৭.৪৭

 

পুরানলেন পূর্ণেন্দুকিশোর সেনগুপ্তের বাসায় মিটিং হইল। বেশ কিছু লোক উপস্থিত ছিলেন। মেয়েদের নিয়া একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হইল। প্রচার বিভাগ ও ভলান্টিয়ার বিভাগের ভার আমার উপর দেওয়া হইল। সভানেত্রী নলিনী চৌধুরী নির্বাচিত হইলেন। নূতন রাষ্ট্রে থাকিবার আহ্বান নিয়া ঘরে ঘরে যাইতে হইবে। এই সময় মানুষের কাছে না দাঁড়াইলে বিশ্বাসঘাতকতার সামিল। মানুষের কল্যাণ-ই তো রাজনীতি।

 

 

১৯.৭.৪৭

 

কাষ্টঘরের মহিলাদের নিয়া সাব-কমিটি গঠন করা হইয়াছে। পাড়ার প্রায় সবাই উপস্থিত ছিলেন। আমরা তথায় যোগ দিয়া সকলকে বুঝাইলাম যে নির্ভয়ে এই মাটিতে থাকিতে হইবে। বর্তমান সময়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি লক্ষ্য করা যাইতেছে। কখনো কখনো মুসলিম লীগের আনন্দোচ্ছ্বাস সংখ্যালঘুদের জন্য হুমকিস্বরূপ বলিয়া মনে হইতেছে।

 

 

২০.৭.৪৭

 

অদ্য চৌহাট্টায় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মিটিং হইল। আমরা একই বক্তব্য দিলাম। গ্রামাঞ্চল থেকে খারাপ সংবাদ আসিতেছে। মানুষ আজ যে বিপদে পড়িল তাহা কখনও চিন্তা করিয়াছে বলিয়া মনে হইতেছে না। এককালের ভাল সম্পর্ক (হিন্দু-মুসলমান) আজ ক্রমেই দূরে চলিয়া যাইতেছে। মুসলিম লীগ বুঝাইতেছে যে, শুধু মাত্র মুসলমান এই ‘পাকিস্তান’ রাষ্ট্রে থাকিলে সবচেয়ে ভাল হইবে। অন্যরা জঞ্জাল।

 

 

২২.৭.৪৭

 

শ্রীহট্ট শহরের প্রতি পাড়ায় আমাদের জনসংযোগ অব্যাহত রহিয়াছে। আজ তেলীহাওরে মিটিং হইল। মানুষের মধ্যে পরিবর্তনের ভাব লক্ষ্য করিতেছি অর্থাত্ তাহারা কোন ভরসা পাইতেছে না কি করিবে কোথায় যাইবে। এর আগে তাহারা এমনভাবে চিন্তা করে নাই।

 

 

২৩.৭.৪৭

 

শহরের পাড়ায় পাড়ায় ঘুরিয়া ভলান্টিয়ারদের অর্গেনাইজ করিলাম। কোন অঘটন শুরু হওয়ামাত্র তাহারা সবাইকে জানাইবে এবং প্রতিরোধ করিবে। বিকালবেলা আমাদের জামতলার লোকদের নিয়া আমার ঘরে মিটিং করিলাম।

 

 

২৫.৭.৪৭

 

এত মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে হিন্দু লোকরা আছে যে অন্য কেউ হয়তো বুঝিবে না। কেউ কি ইচ্ছা করিয়া নিজের চৌদ্দ পুরুষের ভিটামাটি ছাড়িতে পারে? আজ খুবই কষ্ট পাইলাম। কারণ তাঁতী পাড়ার লোকরা সরিয়া যাইতেছে শুনিলাম, তাঁতীপাড়া গিয়া লোকদের সাহস দিয়া আসিলাম কিন্তু শেষ রক্ষা হইবে কি না বুঝিতে পারিতেছি না। কয়েকটি পরিবারে গিয়া জানিলাম গ্রাম ছাড়িয়া অনেকেই চলিয়া আসিয়াছেন। লীগের নেতা কর্মীরা অভয় দিলে মানুষের দেশত্যাগ কিছুটা কমিয়া যাইত। কিন্তু তাহারা তাহা চাহে না।

 

 

২৬.৭.৪৭

 

ক্রমেই আতঙ্ক ছড়াইতেছে। আমাদের কাজও বাড়িল। ৩০ জুলাই পর্যন্ত পাড়ায় পাড়ায় ঘুরিয়া আলোচনা করিবার সিদ্ধান্ত হয়।

 

 

১.৮.৪৭

 

গার্লস স্কুলের আলোচনায় যোগ দিলাম। সেইসব মুখে আজ হাসি দেখি না—শুধু কষ্ট বাড়িতে লাগিল। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়া আলোচনা হইল।

 

 

৩.৮.৪৭

 

আজ কংগ্রেস কমিটির মিটিং। সব পরিস্থিতি নিয়া নেতারা আলোচনা করিলেন। আসলে ইংরেজরা যাহা করিতেছে তাহাতে সামপ্রদায়িকতা কমিবে না। বরং চির অশান্তি বিরাজিত থাকিবে।

 

 

৫.৮.৪৭

 

শহরের সবকয়েকটি পাড়ায় ঘুরিলাম এবং সকলের সহিত আলাপ হইল। কেউ শান্তিতে আছেন বলিয়া মনে হইল না।

 

 

৭.৮.৪৭

 

চৌহাট্টায় দাঁতের ডাক্তারের বাসায় দাঁত চিকিত্সা করাইতে গিয়া দেখিলাম সেইখানে পাড়ার লোক মিলিত হইয়াছে। শুনিলাম দুই-চার দিনের মধ্যেই তাহারা সবাই চলিয়া যাইবে। তাহাদিগকে সাহস দিতে গিয়া অনেক বকুনি শুনিলাম। কংগ্রেসকে গালি দিতে দ্বিধা করিল না। তাহাদের ধারণা এই পরিস্থিতির জন্য কংগ্রেসই দায়ী। কেন কংগ্রেস গণভোট ঠেকাইল না অর্থাত্ বঙ্গ ভূক্তিকে মানিল।

 

 

১৩.৮.৪৭

 

গালর্স স্কুলে গিয়া দেখিলাম তাহারা সব চলিয়া যাইতেছে অন্য বাসায়। খাইরুনের সঙ্গে রেফারেন্ডামের দিনে গোলমাল নিয়া খুব আলোচনা হইল। পরিচিত লোকদের সিলেট ত্যাগের কথা শুনিয়া কান্না আসে। তাহাদের সহিত আর কখনও দেখা হইবে না। যার যার নিরাপদে সবাই যাইতেছে অর্থাত্ পাকিস্তান ছাড়িতেছে। শূন্য বাড়ীগুলি খাঁ খাঁ করিতেছে—অভিভাবকহীন অবস্থায় যেন কান্না করিতেছে ঘরগুলি। গতকাল যে ঘরে বাতি জ্বলিয়াছিল আজ সন্ধ্যায় সেই ঘরে অন্ধকার জমাট হইয়াছে। দুই একটি বাড়ি হইতে দুষ্ট লোকরা মালামাল লুট করিতেছে মনের আনন্দে। কেউ বাধা দিতেছে না।

 

 

১৪.৮.৪৭

 

আমাদের পাড়া (জামতলা), মির্জ্জাজাঙ্গাল, তালতলা প্রভৃতি পাড়ায় গিয়া মেয়েদের সঙ্গে দেখা করিয়া আসি। দেশে স্বাধীনতার সূর্য্য উঠিয়াছে। মানুষের মধ্যে সুখের লক্ষণ দেখিতেছি না। খবর নিয়া জানিলাম অনেকেই চলিয়া গিয়াছেন—আর যাহারা আছেন—সবাই খুব আতঙ্কিত অবস্থায়। তাহাদিগকে বলিয়া আসিলাম যে, যদি কোন গণ্ডগোল হয় তবে সবাই এক জায়গায় যেন সমবেত হয়। আর এই জন্য শঙ্খধ্বনি দেওয়া হবে বলিয়া ঠিক হইল।

 

 

১৫.৮.৪৭

 

আজ সারাদিন কোথাও যাই নাই। উপবাস ও সূতা কাটিয়া দিনটি অতিবাহিত করি। সকালে লীলাদির সঙ্গে অনেকক্ষণ আলাপ হইল। তিনি আমার এখানে আসিয়াছিলেন। বিকালে বিনোদ বাবুর সঙ্গে দেখা হইল। তাহার কাছে বাহিরের খবর জানিলাম। স্বাধীনতার উত্সবটা যেন প্রাণহীনভাবে আজ পালন হইয়াছে।

 

 

১৬.৮.৪৭

 

আজ পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রথম দিন। রাত্রে দুর্গেশকুমার দেব ও নিকুঞ্জবিহারী গোস্বামীর সাথে দেখা হইল। সারাদিন নিজের কাজ করিয়া কাটাইয়া দিলাম। যে সমস্ত লোক শহরে রহিয়াছে তাহাদেরকে দেশত্যাগ করিতে বাধা দিতে হইবে। আমরা কাজে আছি এবং পরেও থাকিব।

 

 

১৭.৮.৪৭

 

শহরের স্তব্ধতায় বুঝা যাইতেছে আজ অপরিচিত সব। কেউ মুখ খুলিতেছে না। সবাই যেন পরিস্থিতি অবলোকন করিতেছে। মির্জাজাঙ্গালে চারুশীলা দেবের বাসায় গেলাম। সুমতি মজুমদার, লীলাদি, শোভাদিসহ অনেক কর্মীর সাথে কথাবার্তা হইল। কি ঘটবে না ঘটবে এই নিয়া সবাই চিন্তিত। রাতে দুর্গেশদা আসিলে সব খবর পাইলাম।

 

 

১৯.৮.৪৭

 

মহিলা সংঘের অফিসে গেলাম। নতুন করিয়া এই পরিস্থিতিতে কাজ করিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। মহিলা নেত্রী কিরণশশী দেবের বাসায়ও গেলাম। আমাদের অনেক কর্মীদের মধ্যে নিস্তেজ ভাব লক্ষ্য করিতেছি কারণ তাহারাও উদ্বিগ্ন।

 

 

৩০.৮.৪৭

 

সকালে আশ্রম হইতে ৯টার গাড়িতে শমসেরনগর চা-বাগানে গেলাম। বাগানের মানুষও চিন্তায় পড়িয়াছে। সেইখান হইতে কানিহাটি ও চাতলাপুর চা-বাগানে মিটিং করিলাম। তাহাদিগকে এইখানে থাকিতে বলিলাম এবং আত্মশুদ্ধি হওয়ার উপদেশ দিলাম। বেশির ভাগ শ্রমিক নেশা করিতেছে—তাহা ছাড়ার জন্য অনেক কথা বলিলাম। রাতে চাতলাপুর চা-বাগানে থাকিলাম।

 

 

৩১.৮.৪৭

 

চাতলাপুর চা-বাগান হইতে ভোর পাঁচটায় রওয়ানা দিয়া কুলাউড়াস্থ রঙ্গিরকুল আশ্রমে পৌঁছাইলাম। গ্রামাঞ্চলের লোকও চলিয়া যাইতেছে। বিভিন্ন খবর নিয়া জানিলাম যে সংখ্যালঘুদের জমি-জমার প্রতি অনেকেরই লোভ থাকায় হিন্দুদেরকে ভয়-ভীতি দেখানো হইতেছে যাহাতে তাহারা চলিয়া যায়।

 

 

৫.৯.৪৭

 

কয়েকদিন কাজ করিয়া আজ সিলেট ফিরিয়া আসিলাম। বড় ধরনের কিছু না ঘটিলেও মানুষের মন হইতে ভয় যেন দূর হইতেছে না।

 

 

৬.৯.৪৭

 

মহিলা সংঘে মিটিং ছিল—তাহাতে যোগদান করিলাম। বিকালে মীরাবাজারের মিটিং-এ গিয়াছিলাম।

 

 

২৪.৯.৪৭

 

১১টার স্টীমারে প্রভাত চৌধুরী ও বাণীসহ রাজানগর রওয়ানা হইলাম। সুনামগঞ্জের রাজানগরে আমাদের গঠনমূলক কর্মী সংঘের শাখা আছে। সেখানে থাকিয়া কাজ করিতে হইবে। এই সময় ঘরে বসিয়া থাকিলে চলিবে না। মানুষের ভীতি দূর করিতে হইবে।

 

 

২৬.৯.৪৭

 

সুনামগঞ্জের মহকুমার অবস্থাও তেমন ভাল নয়, সারাদিন রাজানগরের কয়েকটি বাড়ি ঘুরিলাম। মানুষ উদ্বিগ্ন চিত্তে দেশের কথা শুনিতে চাহে।

 

 

২৮.৯.৪৭

 

বিকালে জানপুর গ্রামে গেলাম। সবই ছন্নছাড়া ভাব দেখিলাম।

 

 

৬.১০.৪৭

 

আজ ১২টায় আমরা সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে  রওয়ানা হইলাম। পাথারিয়া আসার পর সন্ধ্যা হওয়ায় আখড়ায় অতিথি হইলাম। রাতে বহু লোকের সহিত আলোচনা হইল। তাহারা থাকিবে কিনা জানিতে চাইল।

 

 

২৮.১০.৪৭

 

দীর্ঘদিন সুনামগঞ্জ অঞ্চলে কাজ করিয়া আজ নিজ বাড়ী জগন্নাথপুর ফিরিয়া আসিলাম। মানুষকে অভয় দেওয়া ছাড়া আর কি-ই-বা আমাদের করিবার আছে। আমৃত্যু মানুষের মধ্যে কাজ করিয়া তো যাইতেই হইবে।

 

 

১৮.১২.৪৭

 

সন্ধ্যায় গাড়িতে করিয়া কুলাউড়া আসিলাম। বিভিন্ন অঞ্চলের খবর পাইয়া উদ্বিগ্নবোধ করিলাম। খবর পাইলাম হবিগঞ্জের বামৈ—লাখাই অঞ্চলে নমঃশূদ্র পল্লীতে কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতকারীরা ব্যাপক লুটতরাজ করিয়া তাহাদিগকে গৃহছাড়া করিয়াছে। কিন্তু সরকার কোন প্রতিকার করিল না। তাহারা অতি কষ্টে দিন কাটাইতেছে। আমরা সেইখানে যাইবার প্রস্তুতি নিলাম।

 

 

২২.১২.৪৭

 

সকালে হবিগঞ্জ যাওয়ার উদ্দেশ্যে রঙ্গিরকুল আশ্রম ছাড়িলাম। সেইখানে পুনর্বাসনের কাজ করিতে হইবে। আজ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করিলাম। এইখানে সংখ্যালঘুদের উপর সামপ্রদায়িক দাঙ্গা করা হইয়াছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে।

 

 

২৪.১২.৪৭

 

দুপুরে বামৈ গ্রামে আসিলাম। অনেকেই তাহাদের অভিযোগ জানাইলেন। আমাদিগকে পাইয়া তাহাদের যেন প্রাণ ফিরিয়া আসিল। দুষ্কৃতকারীদের অত্যাচারে নমঃশূদ্র পল্লীর লোকরা খুব কষ্টে দিনাতিপাত করিতেছে। তাহাদের জীবীকার উত্স হইল মাছ ধরা কিন্তু ভিটেমাটি পুড়িয়া যাওয়ার সময় জালও নষ্ট হওয়ায় এখন বেকার রহিয়াছে।

 

 

২৫.১২.৪৭

 

সারাদিন মাসুদপুর গ্রামে কাটাইলাম। মানুষজনের অবস্থা সত্যই করুণ। গ্রামে চরকা ও জালের সূতা সরবরাহের জন্য কংগ্রেস নেতারা চেষ্টা করিতেছেন।

 

 

২৬.১২.৪৭

 

আজ নোয়াগ্রামে গেলাম। মানুষের যন্ত্রণা দেখে কষ্টই লাগিল। আমরা সামান্য ত্রাণ নিয়া আসিয়াছি। স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করা হইবে। তাহাদের হারানো মনোবল ফিরিয়া আসিলে কাজকর্মে আবার গতি আসিবে।

 

 

২৭.১২.৪৭

 

বামৈ গ্রামে পুনর্বাসন কাজ শুরু হইল। আমরা কর্মীরা তথায় লোকদেরকে সাহায্য করিলাম। ঘর মেরামত হইল।

 

 

২৮.১২.৪৭

 

বেলা দুইটায় গোপালপুর রওয়ানা হইলাম—বিধ্বস্ত গ্রাম। মানুষের সঙ্গে মিশিয়া কাজ করিতে ভাল লাগে। গ্রামের লোকরা আমাদের সাহায্য করিতেছে। কেম্পে আমরা থাকিতেছি কিন্তু দুষ্কৃতকারীদের দেখিলেও কিছু বলা যায় না। আমাদের উপর আক্রমণ চালায় কিনা।

 

 

২৯.১২.৪৭

 

আজ বিকালে ভূমাপুর আসিয়া পৌঁছাইলাম। আমরা কাজ করিতে আসিয়াছি শুনিয়া গ্রামবাসীরা আনন্দিত হইল। তাহারা প্রাণ খুলিয়া সব কথা বলিতে থাকে। অনেক বাড়ীর গাছপালা পুড়িয়া গিয়াছে। তাহাদের অপরাধ তাহারা হিন্দু, এরা চলিয়া গেলে সেই জায়গা দখল করিতে চায় তারা।

 

 

৩১.১২.৪৭

 

সকালে উচাইল গ্রামে গেলাম। গ্রামের পথ দীর্ঘ হইলেও মানুষের দিকে চাইয়া সব ভুলিয়া গিয়াছি। নতুন করিয়া ঘর-দরজা তৈরী করিতে বলিলাম। আমরা মহিলাদের হাতের কাজ শিখাইবার চেষ্টা করিতেছি।

 

 

১.১.৪৮

 

সকালে আগাপুর গিয়াছিলাম। প্রায় প্রতিটি বাড়ী গিয়া দেখিলাম এবং রাত্রে বৈঠক হইল। আমার মনে হইল যে আমাদের আগমনে তাহাদের অনেক দুঃখ কাটিয়া গিয়াছে। সকলে তাহাদের নিজ নিজ ক্ষয়ক্ষতির কথা জানাইল।

 

 

২.১.৪৮

 

বিকালে বামৈ গ্রামের মানুষদের নিয়া বৈঠক হইল। বৈঠকে অনেক মুসলমান ভাইরা উপস্থিত ছিলেন—যাহারা এইসব জঘন্য বিষয়াদি অপছন্দ করেন তাহারা সাহায্যের আশ্বাস প্রদান করিলেন। অশিক্ষিত মহিলাদের লেখাপড়া শিখাইতে চেষ্টা করিলাম। সেই জায়গায় মেয়েদের পড়ার কোন জায়গাই নাই।

 

 

৬.১.৪৮

 

গোপালপুর ও নিধনপুরের লোকরা আসিয়া রিলিফের কাপড় নিয়া গেল। তাহাদের জন্য নিকুঞ্জবিহারী গোস্বামী অনেক কষ্ট করিতেছেন। অনেক লোকের ঘর পোড়ানো হইয়াছে, তাহারা আজ পর্যন্ত এক কাপড়েই আছে। রিলিফ পাইয়া আনন্দিত হইয়াছে।

 

 

৭.১.৪৮

 

নোয়াগাঁও-এ রিলিফ দেওয়া হইল। আমাদের কাজকর্মের প্রতি লোকদের বিশ্বাস বাড়িতেছে। কাপড়, ঔষধ বিতরণ ও স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থা করায় তাহাদের মধ্যে আমাদেরকে আরও আপন করিয়া নেওয়ার প্রবণতা বাড়িতেছে।

 

 

১১.১.৪৮

 

খোড়াখই গ্রামে রাত্রে গিয়া বৈঠক ও রিলিফ বিতরণ করা হইল। আমি রাত্রে সেইখানে থাকিয়া খুব সকালে কেম্পে ফিরিলাম। বুঝিলাম মানুষ শান্তিতে থাকতে পারিতেছে না। কারণ সরকার কোন ব্যবস্থা করিতেছে না, ফলে দুষ্কৃতকারী সংখ্যাগরিষ্ঠদের মনোবল বাড়িতেছে।

 

 

১৬.১.৪৮

 

বামৈ গ্রামের পশ্চিম দিকে গেলাম। মেয়েদের দিয়া ২০টি জামা সেলাই করাইয়া নিয়া আসি। তাহা বিতরণ করা হইবে। ঘরে শুধু বসিয়া না থাকিয়া তাহারা যেন উত্পাদনমুখী কাজ করিতে পারে সেই জন্য শেলাইয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হইয়াছে।

 

 

২০.১.৪৮

 

সকালে মাসুদপুর ঘুরিয়া রিলিফ পাওয়ার শ্লিপ দিয়া আসিলাম। বিকালে কয়েকজন আসিয়া কাপড় নিয়া গেল।

 

 

২১.১.৪৮

 

থান কাপড় দিয়া নূতন জামা তৈরীর উদ্দেশ্যে বামৈ গ্রামে গেলাম। মেয়েরা কাজ শিখিয়া ফেলিয়াছে।

 

 

৩১.১.৪৮

 

নোয়াগ্রাম-মাসুদপুর গ্রাম ঘুরিয়া কেম্পে আসিয়া গান্ধীজীর মৃত্যুর সংবাদ পাইলাম। এইদিন এই মহামানবের আহ্বানে ঘর ছাড়িয়াছিলাম। কাছে থাকিয়া দেখিয়াছিলাম যে এতবড় মাপের মানুষ অতিদীনভাবে থাকিতে পারেন? বত্সর দেড় আগে সেই নোয়াখালীতে তাঁহাকে দর্শন করিয়াছিলাম। তিনি দেশের জন্য কি না করিয়াছেন, আজ এই নির্মম পুরস্কার। খবর শুনিয়া আমাদের কর্মীদের খারাপ লাগিল। তাঁহার স্মরণে প্রার্থনা করিলাম। তাঁহার আদর্শে মানবসেবা করিয়াই যাইব।

 

 

১.২.৪৮

 

বিকালে ভগ্ন মন নিয়া মাসুদপুর রওয়ানা হইলাম। রাত্রে অনেকের সহিত আলাপ হইল এবং সেইখানেই এক বাড়ীতে রাত্রি কাটাইলাম। মানুষ নূতন করিয়া আবার যেন সংসার সাজাইতেছে কিন্তু মনে ভয় কখন যে এইসব দাঙ্গাবাজরা শেষ করিয়া দেয়। গান্ধীজীর সংবাদে খারাপ লাগিতেছিল।

 

 

২.২.৪৮

 

ভোরে মাসুদপুর হইতে বামৈ আসিলাম। দুপুরে খাইয়া গোপালপুর ও নিধনপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। কাজ করিয়া ক্লান্ত হইয়া পড়িলাম তাই রাত্রে নিধনপুর থাকিতে হইল। আমাদিগকে পাইয়া তাহাদের ভরসা হইল।

 

 

৬.২.৪৮

 

শরীর খারাপ থাকায় কোথাও বাহির হইলাম না। নোয়াগাও কাপড় বিতরণ করিলাম।

 

 

৭.২.৪৮

 

কেম্পে গান্ধী তর্পণের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। অনেক গ্রাম হইতে লোক আসিয়াছিল। গান্ধীর উপর আলোচনা হইল।

 

 

৮.২.৪৮

 

আজ গান্ধী স্মৃতি তর্পণ করা হইল। তাঁহার নির্দেশেই যেন আমরা কাজ করিতেছি। তাঁহার ঋণ কোনদিন পরিশোধ করা যাইবে না। ছোট বেলা এই মনীষী সম্পর্কে বহু গল্প শুনিয়াছি।

 

 

১০.২.৪৮

 

আজ রাতে বামৈ গ্রামের রাধানাথের বাড়ীতে ডাকাতি হয়। মনটা ভাঙ্গিয়া যাইতেছে। লোকজন একটু দাঁড়ানোর চেষ্টা যখন করিতেছে। তখনই ঘটিল এই অবস্থা। মানুষকে দেশ না ছাড়ার উপদেশ দিয়া কি ব্যর্থ হইতেছি।

 

 

১১.২.৪৮

 

ভোরবেলা উঠে বামৈ গ্রামে বাহির হইলাম। যে বাড়ীতে ডাকাতি হইয়াছিল সে বাড়ী ঘুরিয়া আসিলাম। তবুও তাহাদেরকে সান্ত্বনার বাণী শুনাইলাম। লজ্জাই লাগিল।

 

 

১২.২.৪৮

 

পরিস্থিতি মনে হইল খারাপ হইতেছে। আজ বিকালে বামৈ গ্রামের মুসলমানদের বাড়ীগুলি ঘুরিয়া আসিলাম। অনেকেই ভাল ব্যবহার করিলেন। রাত্রে নোয়াগ্রাম পুড়াইয়া দেওয়া হইল। সামপ্রদায়িক প্রীতি ভাব যখনই একটু বাড়িতে থাকে তখনই দাঙ্গাবাজরা নূতন করিয়া শুরু করিয়া দেয়। অসহায় মানুষ যাইবে কোথায়।

 

১৪.২.৪৮

 

সকালে মাসুদপুর গেলাম। নোয়াগ্রামের লোকদের সাথে দেখা করিয়া পোড়াবাড়ীগুলি দেখিতে বাহির হই। মানুষের কান্নায় বুক ফাটিয়া যাইতেছে। সব মানুষ ভয়ে তটস্থ। ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ এই কষ্ট বুঝিবে না। ঘরগুলি পুড়া ছাইয়ে পরিণত হইয়াছে।

 

 

১৫.২.৪৮

 

আজ পাড়ার ভীত হইয়া যাওয়া মেয়েদের সাথে দেখা করিলাম। দুষ্টদের নানান নির্যাতনের শিকার হইতে পারে তারা। এইখানে থাকিবে কি না তাহা চিন্তা করিতেছে সবাই।

 

 

১৮.২.৪৮

 

মাদনা গেলাম। সেইখানে নোয়াগ্রামের লোকদের নিয়া আলোচনা হইল। আমরা কাজ করিয়াই যাইতেছি। কিন্তু সব সময়তো আর থাকিব না—তখন কি হইবে।

 

 

১৯.২.৪৮

 

আজ সারাদিন বাহির হই নাই। বামৈ গ্রামের মেয়েরা আসিল। তাহাদেরকে নিয়া সারা বিকাল আলোচনা করিলাম। খবর পাইলাম বহু লোক গ্রাম ছাড়িয়া চলিয়া যাইবে। কোথায় যে তাহারা নিরুদ্দেশ হইবে কে জানে? ঐ জায়গায় গিয়াও কষ্ট পাইবে।

 

 

২০.২.৪৮

 

আজ বিকালে কয়েকটি গ্রাম ঘুরিয়া আসিলাম। দেখিলাম সকলের মন ভাঙ্গিয়া গিয়াছে। অনেক পরিবার অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকিয়া পিতৃভূমি ত্যাগ করিয়া যাইতেছে। আমরা আটকাইতে পারিলাম না। তাহারা চলিয়া গেলে সংখ্যাগুরুদের অনেকের লাভ হইবে বুঝিলাম। কতই-বা সহ্য করিবে সংখ্যালঘু। আমরাতো শুধু উপদেশই দিলাম।

 

 

২১.২.৪৮

 

আজ সকালে মাদনা গেলাম। বেগুনা-মদনা গ্রাম ঘুরিলাম। সর্বত্রই একই অবস্থা। রাত্রে মাদনা গ্রামে অবস্থান করি। মানুষ নতুন করিয়া চিন্তা করিতে পারিতেছে না। আগামীকাল বামৈ গ্রামে থাকিব।

 

 

২৩.২.৪৮

 

ব্রজেন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী ও বিনোদ বর্ম্মন বামৈ গ্রামে গিয়াছেন। আমাদের কেম্পে ব্রজেন্দ্র বাবু আসিলে সব কথা শুনিলাম। আসলে দেশে কি ঘটিতেছে বুঝিতেই পারিতেছি না। সরকার শুধু লোক দেখাইবার জন্য আদর্শ কথা বলিতেছে।

 

 

২৪.২.৪৮

 

কংগ্রেস নেতা বসন্ত বাবুসহ ১৬ জন আমাদের কেম্পে আসিলেন। তাহারা সব কিছু দেখিলেন এবং স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করিবেন শুনিলাম। তাহাদের সূতা সরবরাহ করা হইবে। আগামীকল্য কেম্প ত্যাগ করিয়া চলিয়া যাইব।

 

 

২৫.২.৪৮ ( 25-2-48)
আজ সকাল বেলা ৭টায় আমরা বামৈ কেম্প হইতে বাহির হইলাম। এলাকাটা ছাড়িতে খারাপ লাগিল। মানুষ আমাদিগকে কত না আদর করিয়াছে। সাড়ে নয়টায় মটরে হবিগঞ্জ আসিলাম। রাত্রে কুলাউড়া পৌঁছাইলাম।
Today at 7 am we left Bamoy Camp. I felt really bad to leave the area. People are so affectionate to us. At 9.30 I reached Habiganj in motor vehicle.  I reached Kulaura at night.

1 Comment

Leave a Reply