Step into the captivating journey of Bangladeshi wedding photos through time. Our curated collection spans generations, each photograph telling a story, weaving together threads of tradition, culture, and love. This collection delves into the period from 1947 to 1971, known as the Pakistan period.
A Christian wedding in Chittagong in the early 60s. Photo courtesy: Fernando Nelson/ EPM
An eighteenth century Bengali erotic poem
June 14, 2023
Tahmidal Zami and Debadrita Saha
A small manuscript titled “Naṣṭāmo kathā ebang strīloker barnanā” dated 1785 CE and preserved in the online Bibliothèque nationale de France archive is one of the earliest extant erotic poems in Bengali. The poem is written by a certain Kubirnāth and was collected by the French in the 1780s. We have not found any previous published reading of this erotic poem. Prithwindra Mukherjee made a catalogue of the Bengali collection in the archive, and provided paratextual information about the manuscript. We provide below a tentative reading of the poem, a redacted version of the same in modern Bengali, as well as an english translation.
References
Kubirnath. “Strīlokera varṇanā.” 1801-1900. Bibliothèque nationale de France. Département des Manuscrits. Indien 717
Mukherjee, Prithwindra. 1983.“Catalogue du Fonds Bengali.” Bulletin de l’Ecole Francaise d’Extreme-Orient 72: 13-48
Reading of the Text
৭ শ্রীশ্রীকৃষ্ণ (?)
আমী একলা বিকেলবেলা বসেছিলাম বায়ঃ
হেনসময় একটা মেএ সেইখান দিএ জায়ঃ
লইতন সেখা হাতেঃ কাঁকন তাতে সোবা পেএচে করঃ
টাউপৈচে কসনকোসা গয়না কলাবরঃ
আর কপালে পেটেঃ কানে গেঁটেঃ। গলায় তেনলিঃ
মোহনমালা চন্দ্রহার আর সবে চাঁপকলিঃ
আ তার বরন গুরেঃ পবন ডুরে তায় জরির আচলঃ
মুখ্যানি পঞ্চিমের চাঁদ দন্তগুলি ছোলঃ
দন্ত দেখিতে ভালোঃ কালকাল তায় কি বলব সে যলিঃ
মোনে করি কালো মেঘে পড়িচে বিজলিঃ
কীবল রবির প্রায় বুঝা যায় মোর মোনে লেগেচেঃ
কেমন বিরলে তারে বিধাতা গড়েচেঃ
কীবল ননি জিনি তনুখানি অতি সুখময়ঃ
তপ্তকাঞ্চন রূপ করে তনতনঃ
আহা মরি কী বা য়াভা কীবা সোবা কী বা তার চামঃ
চাইতে চীতে চেতন হরে রুপে কান্দে কামঃ
আ তার বুকের মাঝে ডালি সাজে দির্ব্ব স্তন দুটাঃ
কোন কুদাঁরি কুদেঁচে কিম্বা বিনোদিয়া কাটাঃ
তাঁহর সিংহ জিনি মাজাখানি ধত্তে পারি কড়েঃ
চলে জেতে কোমরখানি লজর গজর করেঃ
দুখানি পাচা ভারি চলমাধুরি জিনি হংসরাজেঃ
চলে জেতে পাএর ঘুঙ্গুর ঝুনুর ঝুনুর বাজে
আওায গুজীরি সাজেঃ তার কাছে ধে কমল পঞ্চম
চাত্তিবের (?) পুত্তলি কেবল দেখে হলাম ভ্রমঃ
অমিনি থাকীলাম চেএঃ ভেক হয়ে মোনে ভাবি ভোরঃ
তার সঙ্গে ছিল এক বুড়ি করিল ইসারাঃ
বুঝি এহার কুটানি সতেঃ ইসারাতে জিজ্ঞাসিলাম জাইএঃ
মাঁগী বলে খেলাড়ু বটে গন্দবেনের মেএঃ
কীন্তু রসিক বড় বুজিএ দড় গেলাম তড়াতরি
দরজার দরয়ানি তার বালাখানা বাড়িঃ
দেখে কীছু সন্দ হলোঃ দিবস গেল রাত্র উপনিতঃ
হেনকালে কুতুহলে হইলাম অতিতঃ
গ্রস্তরা বাড়িতে আছঃ বড়টী (?) পাঁচ সব্দ করি বারে
হেনসময় দরানি মিনিসে মোরে জিজ্ঞাসা করেঃ
কোতা হইতে আইলেঃ মোরে বলে বুঝিএ তার রিতঃ
এখানকার নই মুই বৈদিসি অতিতঃ
আজি এইখানে রবঃ বুঝিয়া ভাব দরানি এলো কাছেঃ
অতিত সালে বসো গিএ সপ পাতা রএছেঃ
মোরে সেদে মিএ দিয়েঃ দরানি ভেএ তিনি গেল বাড়িঃ
প্রহরখেনেক রেত পর এলো এক বুড়িঃ
গোচারি সিদা লইয়েঃ কাচে থুএ ঘরে গেল বুড়িঃ
বেঞনু (?) কেবল পাচটা মাসকলাএর বড়িঃ
অমনি ছেচতামেচতা ২ বড়িপোড়া গোচারি খেলাম রেন্দেঃ
এই দুঃখ সুমু রব তার চাঁদবদনে চুদেঃ
যদি মোর ভাগ্য থাকে ২ পাই তাহাকে এহো মোর সওকঃ
ত্রিসুত চাতক প্রায় রাতি হল তিনপ্রহরঃ
মোর কী নিদ্রা য়াছেঃ ২ তারি পীছে মোন পড়েচে জায়েঃ
হেনসময় চন্দ্রমুখি এলো বাহির হএঃ
ধিরি২ আমার কাছে ২ আসিয়া পুছেঃ জাগ নাহে ঘুম
হুকরিতে গালের ওপর চুমার ওপর চুমঃ
অমনি আবেস করে ২ হাতি ধরে বসাইনু খাটেঃ
নড়েচড়ে কাপড় ফুড়ে মস্ত মেড়া ওটেঃ
অমনি নড়েচড়ে ২ কাপড় ফাড়ে করে চড়২
ছুড়ি বলে বিলম্ব কেন লাগায়লা পক্কড়ঃ
অমিনি জাপট্যে ধরে দিনু ভরে ছোট গুদের গাড়াঃ
তিনদমকে সেন্দেইল অর্দ্ধখানি বাড়াঃ
আর অর্দ্ধেক জাগে নাহিক লাগে করে চড়চড়ঃ
ছুড়ি বলে খুব করে লাগায়লা পক্কড়ঃ
অমনি দিলাম পুরেঃ ২ আবেস করে লাগীল কাপে কাপঃ
বরগীর বেগার জেমন চাপের ওপর চাপঃ
অমনি তাপর ২ গাপুর গুপুর পড়ি সে ওর মাঝেঃ
চাপ মারিতে পাএর ঘুঙ্গুর ঝুনুর ২ বাজে
বড় সুনিতে মজা ২ ছুড়ি বাঁজা বেড়ে গেল হেপ
লাগিল রমবাদ্য চাডুমবাডুবব হোতা
রাতি পোহালোঃ ২ রম হলো দিতে চাই টেকাঃ
তেখেন টাকা দেখে ছুড়ি মুকট করে বেঁকা (বাঁকা)ঃ
তেখন ছুড়ি কয় ২ মহাসয় কহি তোমার চাইঃ
আনের পারা তেমন মোরা টাকার ভুক নইঃ
কীবল পীরিতের মরাঃ প্রেমে ভরা থাকা রাত্রদেনেঃ
আমি রসিক লএ রস করিব ধনে কায্য কীবাঃ
সদাইরসপ্রেমে হেনসময় কপাটে ধেলে ঘাঃ
ওটো ওটো ২ বল্যা ডাকীচে বড়জাঃ
তখন ছুড়ি কয় মহাসয় জাবে কেমন করেঃ
চল লএ রাখি তোমায় সিন্দুকেতে ভরেঃ
বড় নিগম চাই ভয় নাই চাবি দিল এটেঃ
আমি লাজে গলি (?) ঠেকীলাম কোন সঁকচান্নির হাতেঃ
আপন ইর্ছাসুকে একাসিন্দুকে থাকী পড়ে পড়েঃ
দিবস হলে বাহির করে খায়ায় দুদ চীড়েঃ
মিঠাইমণ্ডা দিএ গ্র*এ (?) খেএ গাএ হইল বলঃ
ভোজন সেসে ফের খায়ালে ডাবনরিকেলের জল
বড় হইলাম টাণ্ডা উটলে বাণ্ডা (?) গা করে চীঞ্চিঃ
রমনরঙ্গে তাঁর সঙ্গে গেল তেরদিনঃ
দীলে চণ্ডে খেএঃ ওরে ভে কোস্ট গেল এঁটেঃ
আমি মোনে করি চুপি চুপি এঁমিনি পালাই ছুটেঃ
তখন কহিলাম পস্টঃ হইয়া ওস্ট সুন রসমইঃ
আজি জাই মুই ফের আসিব দিন পাঁচ ছয় বইঃ
তখন কয়াজাগেঃ দুই এঁকে পড়ে প্রেমধারাঃ
বসিলে উটীতে নারে জেমন মাঁতয়ারাঃ
একী সর্ব্বনাস পরের আস হইলাম বাড়ির বাহিরঃ
বাহির হইয়া সতবার ভাবি সত্য পিরঃ
সত সেলাম দিএ ঘরে গীএ কবিতে বসাইঃ
তেরদিন কার সঙ্গে দেখা সুনা নাঞিঃ
কহে কুবিরনাতেঃ বাবুভেএঁয় খুব খপরদারঃ
অতিকামে লোবব্ধ হইলে এই য়াবস্তা তারঃ
তোমরা বুজে চোদঃ নস্টাম কথা এবং স্ত্রিলোকের বর্ণনা ইতি ৭ মাঘ
The Narrative in Modern Bengali
৭ শ্রীশ্রীকৃষ্ণ (?)
আমি একলা বিকেলবেলা বসেছিলাম বায়।
হেন সময় একটা মেয়ে সেখান দিয়ে যায়।।
লইতন (নতুন?) সেখা হাতে কাঁকন তাতে শোভা পেয়েছে কর।
টাউ (?) পইছা কসনকোসা (?) গয়না কলেবর।।
আর কপালে পেটে কানে গেঁটে গলায় তেনলি।
মোহনমালা চন্দ্রহার আর সবে চাঁপাকলি।।
আ(হা) তার বরন গোরা, পবন ডুরে তায় জরির আঁচল।
মুখখানি পঞ্চমীর চাঁদ দাঁতগুলো ছোল (?)।।
দাঁত দেখতে ভাল, কাল কাল তায় কি বলব সে জুলি (?)।
মনে করি কাল মেঘে পড়ছে বিজলি।।
কেবল রবির প্রায়, বোঝা যায় মোর মনে লেগেছে।
কেমন বিরলে তারে বিধাতা গড়েছে।।
কেবল ননি জিনি তনুখানি অতি সুখময়।
তপ্তকাঞ্চন রূপ করে টনটন।।
আহা মরি কি বা আভা! কি বা শোভা! কি বা তার চাম!
চাইতে চিতে চেতন হরে, রূপে কাঁদে কাম।।
আ(হা) তার বুকের মাঝে ডালি সাজে দিব্য স্তন দুটা।
কোন কুদাঁরি কুদেঁছে কিবা বিনোদিয়া কাটা।।
তার সিংহ জিনি মাজাখানি ধরতে পারি করে।
চলে যেতে কোমরখানি লজর-গজর করে।।
দুখানি পাছা ভারি চলমাধুরি জিনি হংসরাজে।
চলে যেতে পায়ের ঘুঙ্গুর ঝুনুর ঝুনুর বাজে।।
আওয়াজ গুজীরি সাজে, তার কাছে ধে (?) কমল পঞ্চম।
চাত্তিবের (?) পুত্তলি কেবল দেখে হলাম ভ্রম।।
অমনি থাকলাম চেয়ে ভেক হয়ে মনে ভাবি (বি)ভোর।
তার সঙ্গে ছিল এক বুড়ি করিল ইশারা।
বুঝি এর কুটনি সতীন, ইশারাতে জিজ্ঞাসিলাম যেয়ে।
মাগী বলে খেলাড়ু বটে গন্ধবেনের মেয়ে।।
কিন্তু রসিক বড়, বুঝে দড় গেলাম তাড়াতাড়ি।
দরজার দারোয়ান, তার বালাখানা বাড়ি!
দেখে কিছু সন্দেহ হল, দিবস গেল, রাত্রি উপনীত।
হেনকালে কুতূহলে হলাম অতিথি।
‘গৃহস্থরা বাড়িতে আছ’, বড়টী (?) পাঁচ শব্দ করি বাইরে।
হেন সময় দারোয়ান মিনসে মোরে জিজ্ঞাসা করে,
“কোথা হতে এলে”, মোরে বলে। বুঝি এ তার রীতি।“
“এখানকার নই আমি বিদেশি অতিথি।।
আজ এখানে রব।“ বুঝে ভাব দারোয়ান এল কাছে।
“অতিথিশালায় বসো গিয়ে সব পাতা রয়েছে।“
মোরে সেধে মেয়ে দিয়ে, দারোয়ান ভায়া তিনি গেলেন বাড়ি।
প্রহরখানেক রাতের পর এল এক বুড়ি।
গোচারি সিধা (?) লয়ে কাছে থুয়ে ঘরে গেল বুড়ি।
বেঞনু (?) কেবল পাঁচটা মাসকলাইয়ের বড়ি।
অমনি ছেচতামেচতা বড়ি পোড়া গোচারি খেলাম রেঁধে।
এই দুঃখ সয়ে রব তার চাঁদবদনে চুদে।।
যদি মোর ভাগ্য থাকে পাই তাকে এই মোর শখ।
তৃষিত চাতক প্রায় রাত হল তিনপ্রহর।
মোর কি নিদ্রা আছে? তারই পিছে মন পড়েছে গিয়ে।
হেন সময় চন্দ্রমুখি এল বের হয়ে।।
ধীরে ধীরে আমার কাছে এসে পুছে, “জাগো, নাই ঘুম।“
হু করতে গালের ওপর চুমার ওপর চুম।।
অমনি আবেশ করে হাত ধরে বসালাম খাটে।
নড়েচড়ে কাপড় ফুঁড়ে মস্ত মেড়া (?) ওঠে।।
অমনি নড়েচড়ে কাপড় ফাঁড়ে করে চড়চড়।
ছুড়ি বলে, “বিলম্ব কেন? লাগাও পাকড়।‘
অমনি জাপটে ধরে দিলাম ভরে ছোট গুদের গাড়া।
তিন দমকে সিঁধাল আধাখানি বাড়া।।
আর অর্ধেক যাচ্ছে না তো করে চড়চড়।
ছুড়ি বলে, “খুব করে লাগাও পাকড়।।“
অমনি দিলাম পুরে, আবেশ করে লাগল খাপে খাপ।
বর্গীর বেগার যেমন, চাপের ওপর চাপ।।
অমনি তাপর-তাপর গাপুর-গুপুর পড়ি সে ওর মাঝে।
চাপ মারতে পায়ের ঘুঙ্গুর ঝুনুর ঝুনুর বাজে।।
বড় শুনতে মজা, ছুড়ি বাঁজা, বেড়ে গেল হেপ (?)।
লাগল রম্য বাদ্য চাডুমবাডুবব হোতা (?)
রাত পোহাল রমণ হল, দিতে চাইলাম টাকা।
তখন টাকা দেখে ছুড়ি মুখটা করে বাঁকা।।
তখন ছুড়ি কয়, “মহাশয়, বলি তোমার কাছে।
অন্যের পারা তেমন মোরা টাকার লোভী নই।।
কেবল পিরিতের মরা, প্রেমে ভরা থাকা রাত্রিদিনে।
আমি রসিক লয়ে রস করব, ধনে কার্য কি বা?
সদাই রসপ্রেমে।“ হেন সময় কপাটে দিল ঘা।
“ওঠো ওঠো”, বলে ডাকছে বড় জা।।
তখন ছুড়ি কয়, “মহাশয়, যাবে কেমন করে?
চল নিয়ে রাখি তোমায় সিন্দুকেতে ভরে।।“
বড় নির্গমন চাই, ভয় নাই চাবি দিল এঁটে।
আমি লাজে গলি, ঠেকলাম কোন শাকচুন্নির হাতে?
আপন ইচ্ছাসুখে একা সিন্দুকে থাকি পড়ে পড়ে।
দিবস হলে বের করে খাওয়ায় দুধচিড়ে।।
মিঠাইমণ্ডা দিয়ে খাবার খেয়ে গায়ে হল বল।
ভোজন শেষে ফের খাওয়াল ডাব-নারিকেলের জল।।
বড় হলাম ঠাণ্ডা উঠল বাণ্ডা (?), গা করে চিনচিন।
রমণরঙ্গে তার সঙ্গে গেল তেরদিন।।
দিল চটকে/চণ্ডি খেয়ে, ওরে ভায়া, কষ্ট গেল এঁটে।
আমি মনে করি চুপিচুপি এমনি পালাই ছুটে।।
তখন কইলাম স্পষ্ট, হয়ে অতিষ্ঠ, “শোন রসময়ী।
আজ যাই, আমি ফের আসব দিন পাঁচ ছয় বাদে।।“
তখন “কাহাঁ জায়েঙ্গে?” দুই এঁকে পড়ে প্রেমধারা,
বসলে উঠতে নারে যেন মাতোয়ারা।।
একি সর্ব্বনাশ! পরের আস (?) হলাম বাড়ির বাহির।
বের হয়ে শতবার ভাবি সত্যপীর।।
শত সালাম দিয়ে ঘরে গিয়ে কবিতা বসাই।
তের দিন কারো সঙ্গে দেখাশোনা নাই।।
কয় কবীরনাথে, বাবুভায়া খুব খবরদার,
অতিকামে লুব্ধ হলে এই অবস্থা তার।।
তোমরা বুঝে চোদো। নষ্টামি কথা এবং স্ত্রীলোকের বর্ণনা।
ইতি ৭ মাঘ।।
A Translation of the Reading of Strīloker Barṇanā
Shrī Shrī Krishṇa
I was lazing alone on the lawn in an afternoon.
Just then, a girl was passing by.
[…] Her hands adorned with bangles.
Tau (?), bracelets […] and jewellery all over her body:
Across her forehead, belly, ears, and a teṇalī necklace to boot –
A mohanmālā moon-necklace and magnolia all over her.
Oh! fair was she! A paban-striped sari with laced ends wrapped her body.
Her face was like a fifth-tithi moon, her teeth well-shaped –
Fine-looking teeth she had, blackened and bright!
Like lightning glinting across dark clouds.
Like the sun, she struck my mind.
How the divine maker made her with meticulous care! – wondered I.
The pleasant figure of hers was tender and bright like clotted cream.
And she shone like molten gold –
Oh what a shine! Such looks! Such skin! – Damn! I would die!
A mere glance at her would steal my wits, and cupid would weep in passion at the sight of hers.
Oh! a pair of divine breasts she has, well-adorning her chest!
Which sculptor carved them – those mind-boggling shapes!
Her waist was slender like a lioness’, one could hold it in one’s grips.
And gently swayed her hips as she walked.
Thick was her ass, a fleshy pair of them, and her gait was sweeter than a swan’s.
Her anklets rang in a sweet jingle as she made her way.
The gujarī, and the kamal pancam near it, rang sonorously,
I mistook her for […] a doll.
And I stared at her just like that, like a frog, my mind racing.
An old woman that accompanied her beckoned at me.
I figured that she must be her wily co-wife.
I went forth and asked her with a gesture.
She said: This one is a playgirl, a daughter of the perfumer-caste,
But very playful. Sensing a chance, I hurried along.
Her house was quite a mansion, guarded closely.
I was a bit taken aback at that.
The day ended and night set in.
At that hour, I guised myself as a guest:
Hola householders! Anyone home?… I made the call quite a few times.
The guardsman asked me:
Where have you come from? I got his drift,
And said: I am not from this place, but a stranger.
I would stay here tonight. The guardsman got my intent, and approached me:
Come in, guest! Go and have a seat. Everything is set up for you.
Thus, handing over the girl to me quite willingly, so to speak, brother guardsman went home.
After one prahar of the night came an old woman.
She placed some […] near me and went home.
I found it contained merely a handful of black gram beans.
I managed to cook and have my dinner with the burnt beans, gocārī and all that junk.
For I would suffer as much to fuck that moon-faced beauty!
If my luck favours me to get hold of her, that is, such being my sole wish.
I stayed up, waiting like a thirsty jacobin cuckoo, till the night struck the third prahar –
How could I sleep when my mind was chasing her in fancy?
And then the moon-faced woman showed up,
Slowly she walked to me, and said: Wake up! Sleep no more.
I could not finish nodding at her when she grabbed my cheeks and kissed passionately: one-two-three-four…
I took her hands and made her sit on the bed – in a sensual daze.
The huge member was aroused, all erect, and pushing, piercing through the clothes.
The chick said: What is the delay for? Get on me already.
So I grabbed her and inserted myself into the small hole of her pussy.
Three thrusts did I give, and only half the cock could get inside,
The remaining half could not get in, aroused in a helpless swell.
Push harder! – The chick demanded
Harder I thrust and inserted all of it, and it fit in there perfectly.
I pushed and pushed, toiling as hard as if I was serving corvée labour for Maratha raiders!
We thrust and swung and swayed and pressed against each other.
Her anklets made a sweet noise as I thrust on.
It was fun to listen to, so I fucked the infertile chick harder and harder,
And a fine music it was: cādum-bādum!
Thus passed the night. Having made the best of it, I wanted to pay her in cash.
And lo! The chick made a grimace at the sight of cash.
Let me tell you, sir, said the chick,
We are not hungry for money as others are.
We are martyrs of love, filled with nothing but passionate amor day and night.
I just want to play with the play-mate all the time. What’s the use of money?
Suddenly someone knocked on the door.
It was her elder sister-in-law, calling: Hey get up, get up!
The chick asked me: Sir, how would you go?
Let me hide you in the trunk.
There is good ventilation there, so no worries! – And she locked the trunk.
I had a meltdown in shame: What kind of a witch did I get myself possessed by, all by my own sweet will!
All alone, I languished inside the trunk.
When morning came, she took me out and fed me with milk and flattened rice.
I regained my energy after filling myself with sweetmeat and cakes.
After the meal, she served me with coconut water
The sumptuous meal gratified me. My dick got erect, I aroused…
Thus I passed thirteen days in erotic play with her.
She sucked me up, oh my brother, draining my energy: I suffered.
I must sneak away and escape, thought I.
So, I had a straight talk with her: Listen sweet girl of mine,
Let me take leave for today. I shall be back in five or six days.
Tears streamed down her eyes, and she asked: Where shall you go?
She sat down, unable to move, as if she was drunk.
Damn! What kind of nasty trouble is this!… I rushed out of the house.
As I managed to make my way out, I took the name of Satya Pir a hundred times.
I thanked the pir a hundred times and went home,
And set the story in verse.
For thirteen days straight I had not had a chance to meet anyone.
Thus speaks Kubirnāth: Brother Babu, be very careful!
One that gets taken in by lust would get into a mess like this.
So stay in your senses when having a fuck.
Story of adultery and account of a woman. The end. Magh 7
Nabanoor : Bengali Muslim’s literary pursuit
December 27, 2022
The monthly literary magazine “Nabanoor” was launched in Kolkata in 1903.The magazine’s aim was to engage the Muslim community in literary and intellectual pursuits in the Bengali language. “Nabanoor” was published regularly until May 22, 1907.
First issue of Nabanoor
The first issue of Nabanoor magazine was published on May 15, 1903 (Baisakh 1310). Syed Emdad Ali served as both the editor and publisher of this issue, which was printed by Narayanchandra Ghosh at the Criterion Press located at 115 Amherst Street in Kolkata and published from 143 Koraya Road in Kolkata. The demy 1/8 size magazine contained 40 pages and was published in an initial run of 800 copies. It was priced at 4 Anna.
In the first editorial of “Nabanoor,” editor Syed Emdad Ali wrote:
“…We are seeing that Muslims are lagging behind in every aspect and frustration has overwhelmed their national life. Literature is the only means to uplift the downtrodden Muslims….
Today, we want to invite all Muslim contributors of the Bengali language to join this noble effort. The fate of Hindus and Muslims in India is tied together by divine providence; once victorious, Muslims are now defeated, just as Hindus have suffered reversals of fortune. The fate of India depends on the unity of these two great nations, and literature is the foundation of this unity….
Today, we are inviting every woman, confined to their home, to contribute to literature and enrich Nabanoor…”
Contents of Nabanoor
Nabanoor regularly published poems, stories, novels, reviews, and essays on a variety of topics, including history, art, and philosophy, with the goal of promoting literary pursuits and the use of Bengali as a literary language among Bengali Muslims. The magazine also featured regular articles on the philosophy of Islam and would refute any unfounded or derogatory comments about the religion with well-reasoned arguments in an effort to correct misunderstandings. However, “Nabanoor” was not a communal publication.
Who were the contributors to the magazine?
In addition to Syed Emdad Ali, other writers for “Nabanoor” included Abbdul Karim Sahityabisharad, Kaikobad, Kazi Imdadul Huq, Begum Rokeya, Charubala Devi, Brajasundar Sanyal, Mohammad Hedayetullah, Nishikanta Chakrabarty, and Mohammad Asad Ali. Asad Ali, who served as the proprietor and publisher of the magazine, later became its editor. His name appeared as the publisher from the second issue onward.
Begum Rokeya and Nabanoor
Begum Rokeya began her writing career by contributing to “Nabanoor.” She published a number of articles on women’s empowerment in the magazine, including “Amader Oboniti” (Our Downfall), which was published in 1904. This article argued that jewelry was a symbol of enslavement and drew widespread criticism from both Muslim men and women. Rokeya also published a poem titled “Basiful” (Withered Flower) in the 11th issue (Falgun 1310) of Nabanoor.
Source
Anisuzzaman, Muslim Banglar Samayikapatra: 1831-1930 (Journals of Muslims Bengal: 1831-1930), Bangla Academy, Dhaka, 1969.
Banglapedia
Husain Shah
December 1, 2022
Alauddin Husain Shah (Ala-ud-din Husain Shah) was the founder of the Husain Shahi dynasty. His reign (1494-1519) is regarded a brilliant epoch in the history of medieval Bengal.
Early life of Husain Shah
There are several competing narratives and legends about the early life of Alauddin Husain Shah. According to Riyaz-us-Salatin( the first complete history of the Muslim rule in Bengal, written between 1786 and 1788 by Ghulam Husain Salim Zaidpuri), he was the son of one Ashraf Husaini, a sharif (respectable person) of Mecca and an inhabitant of Termez (a town in Uzbekistan). Husain Shah is also known as Sayyid Husain Makki. The expression ‘Sultan Husain Shah bin Saiyid Ashraf-ul-Husaini’ frequently appears on the inscriptions and coins issued during his kingship.
Although it is not known why and how Husain Shah came to Bengal it is claimed by Salim that he stayed in the house of the Qazi of Chandpara, a village in Radha (Rāḍh) where he received his education. The Qazi married his daughter to Husain considering the latter’s noble pedigree.
Alauddin Husain Shah’s rise to power
Husain Shah made inroad to power through his father-in-law who was a Qazi. Beginning from a humble position he eventually became the wazir (chief minister) of Muzaffar Shah, the last Habshi Ruler of Bengal. The latter’s rule was a fitting climax to the infamous Abyssinian epoch in Bengal. He commenced a ruthless destruction of the opposition including noble and learned men of the capital irrespective of their religious adherence. Alauddin Husain Shah brought an end to Muzaffar’s reign of terror and established peace in Bengal.
Terriotiral expansion
Alauddin Husain Shah extended his territory on every side. Referring to the inscriptions found at Bihar’s Saran and Munger, Momtazur Rahman Tarafdar claims that Husain Shahi Bengal included the whole of north Bihar and a part of south Bihar. Husain Shah’s coins, dated between 1494 and 1518, contain the expression ‘conqueror of Kamarupa and Kamta, and Jajnagar and Orissa’.
Alauddin Husain Shah’s military exploits can be grouped under five heads: a) achievements in Bihar, b) war with Kamrarupa and Assam, c) war with Orissa, d) war with Tippera and e) Occupation of Chittagong.
Husain Shah’s achievements in Bihar
In 1495, Delhi’s Sultan Sikandar Ludi defeated the last ruler of the Sharqi Kingdom of Jaunpur. The defeated Sultan Husain Shah took refuge with his namesake Alauddin Husain Shah of Bengal. In response, Sikandar Ludi sent an expedition to Bengal which suffered heavily at the hand of Bengal Sultan’s troops led by his son Daniyal. A peace treaty ensued, and it was decided that both parties would cease to attack each other.
War with Kamrarupa and Assam
Husain Shah led several expeditions against Kamarupa and Kamta between 1494 AD and 1518 AD. This time period is assumed from the fact that the earliest and the latest coins recording the conquest of Kamarupa, Kamta and Orissa are dated 1494 AD and 1518 AD, respectively.
The ruling Khen Dynasty was overthrown and the areas were annexed to the Kingdom of Bengal. Kamarupa was reduced to a tributary status and its rulers, such as Vishva Simha, issue coins in imitation of some Sultani coins.
Husain Shah advanced further eastwards along the upper Brahmaputra valley of Assam. His army comprised infantry and cavalry, according to Mirza Muhammad Kazim’s Alamgirnamah, secured an initial victory over the Assamese troops. He returned to Bengal leaving his son the task of subjugating the region. However, the Assamese King, taking the opportunity of rain, inflicted heavy defeat on the Bengal Sultan’s troops.
War with Orissa
Throughout the reign of Husain Shah, Bengal’s war with Orissa continued, and the numismatic evidences suggest that he simultaneously fought against Orissa and Kamarupa. However, he attained some temporary success only.
War with Tippera
Husain Shah had encounters with the king of Tippera, Dhanya Manikya, and inspite of early reverses succeeded in annexing a part of Tippera to his kingdom.
Occupation of Chittagong by Husain Shah
In the tripartite war that was waged among the rulers of Bengal, Tippera and Arakan over the possession of Chittagong, Husain was also able to occupy Chittagong, which formed an integral part of the Husain Shahi kingdom till 1538.
Towards the end of his reign a Portuguese mission came to Bengal to establish diplomatic links.
Inscriptions of Alauddin Husain Shah
77 inscriptions of Husain Shah have so far been discovered.
The earliest one was found in a dilapidated mosque in village Depara, at a little distance to the northeast of Pandua, West Bengal. It records the construction of a mosque by Majlis al-Majalis Majlis Barbak in the year 1494 AD (899 AH) during the reign of Husain Shah.
Translation:
The Prophet, may the peace and blessings of Allah be upon him, says, “ Whosoever builds a mosque in the world, Allah the Most High shall build (for him) seventy castles in Paradise”. The mosque was constructed in the time of the just and liberal Sultan, descendent of the chief among the Prophets, Husain Shah Sultan, may Allah perpetuate his kingdom. And the builder of this house of benevolence is Majlis al-Majalis Barbak, dated 4th of the month of Jamadi II, 899 A.H. ( March, 1494 A.D.) [ Source: Corpus of the Arabic and Persian Inscriptions of Bengal, edited by Abul Karim, Asiatic Society of Bangladesh, 1992, pp.235-36]
Coins issued by Alauddin Husain Shah
The earliest coins of Husain Shah are all dated 1494 AD.
Conclusion
Husain Shah’s reign ended in 1519 AD with his demise.
Banner photo: Kherur Mosque at Kherur Village, Murshidabad, India. The mosque was built during the reign of Sultan Alauddin Husain Shah.
History of Sonargaon
November 27, 2022
This short account of the history of Sonargaon is taken from Dr James Wise’s article titled ‘Notes on Sunárgaon, Eastern Bengal’. It was published in the Journal of Asiatic Society of Bengal, Vol 1 (1874). James Wise was the civil surgeon of Dhaka in the 1860s. We have added subheadings (without diacritical marks) for smooth reading. – BoR Editor
Early history of Sonargaon
Sunárgáon, or, as the Hindús called it, Subarnagrám , was the capital of a Hindú principality anterior to the invasion of Muhammad Bakhtyár Khiljí, A. D. 1203. At the date of the invasion, Lakshman Sen , of the Vaidya caste, was on the throne. He had made Nadiá his capital . Defeated he fled to the residence of his ancestor Ballál Sen in Bikrampúr, and either from there or Sunárgáoņ he ruled over the eastern districts. The natives of Bikrampúr still point out with pride the square moat of his palace, which is called “ Ballál Bárí.”
The next thing we hear of regarding this part of the country, according to Mr, Taylor [ Topography of Dacca, page 67], is that it was governed by Muhammadan Qázís. One resided at Bikrampúr, a second at Sunárgáon. The only one whose name has survived, is Pír Adam, or, as he is called by the Muhammadans of Dháká, Adam Shahid (1).
Local tradition represents Ballál Sen as ruling at Rámpál, about a mile from where the tomb now is, when Pír A’dam suddenly appeared with an army and caused pieces of cow’s flesh to be thrown into the palace, which so enraged the monarch, that he marched against his enemy and killed him while at prayers on the spot where the masjid now stands.
The Hindú army is further stated to have been totally defeated at Abdullahpúr, a few miles to the west. It would appear that this tale has some foundation of truth. If there were two Ballál Sens, the later one the son of Lakshman Sen, the difficulties connected with this part of the history of Bengal disappears. That shortly after the invasion of Bakhtyár Khilji officers of his (sic) penetrated into and subdued Eastern Bengal is certain; for if we follow Muhammadan historians, we find that in A. D. 1279 Țughril, or, as he styled himself, Sultán Mughísuddín , was Governor of Eastern Bengal, and his seat of government was Sunárgáoņ. At that date he invaded Jájnagar (2) or Tiparah , and having carried off much treasure, he refused to remit any of it to Dihlí [Delhi].
Reign of Balban
The reigning monarch Ghiyásuddin Balban sent an army against his insubordinate deputy. It was defeated. A second [attempt] shared the same fate. The emperor then marched in person against the rebel, and occupied Sunárgáon, having been joined in his advance by Dhinwaj Rái (3), zamíndár of the city, with all his troops. Țughril fled , but was overtaken and slain, [in] A. D. 1282. Having heard of the death of his enemy, Balban returned to Sunárgáon, and put every one of Țúghril’s family and his principal adherents to death. Not content with this barbarity, the historians record that he executed a hundred faqirs with their Qalandar, because they had instigated Țughril’s rebellion, and had accepted from him three mans [maunds] of gold to maintain their society.
Balban, having subdued the district, conferred the ensigns of royalty on his second son Bughrá Khán, or Náçiruddin Mahmúd, and returned to Dihlí, where he soon afterwards died . Bughrá Khán was succeeded in the government of Bengal by his sons , who resided chiefly at Lak’hnautí. About A. D. 1318, Shihábuddín Bughrá Sháh obtained the throne. His reign is believed to have been short. His brother Ghiyásuddin Bahadur deposed him, and assumed the title of Bahadur Shah. The deposed monarch retired to Dihlí, and secured the intervention of Ghiyásuddin Tughluqsháh on his behalf.
In 1323, the emperor in person advanced with an army to Sunárgáoņ. The usurper submitted, and was sent with a rope round his neck to Dilhí . An adopted son of the emperor, Fath Khán , was left in charge of Sunárgáoņ with the title of Bahrám Khán. He is said to have ruled his province “ with much equity and propriety ” for fourteen years. His death, which occurred at Sunárgáoņ, is fixed at A. H. 739 ( A. D. 1338) . From other sources, however, we learn that Bahádur Shah struck coins at Sunárgáon in A. D. 1327, on which he acknowledges himself a vassal of Muhammad Tughluq.
Two years afterwards, the coins bear the impress of his own name. It is conjectured that on the accession of Muhammad Tughluq, A. D. 1325, he reinstated Bahadur Shah in the government of Sunárgáon, and that having rebelled again he was again defeated, and this time put to death. His dead body, Ibn Baţúțah tells us, was flayed, his skin stripped, and in this state circulated in all the provinces of the empire as a warning to other governors. It was probably at this later date that Bahrám Khán was elevated to the government of Sunárgáon.
Fakhruddin Mubarak Shah usurps power
In the following year, Bengal revolted from Muhammad Tughluq. The revolt was headed by. Fakhruddin Mubárak, who had been ‘silahdár’ or armour-bearer, to Bahrám Khán, and who now assumed the title of Sháh . Qadar Khán, Governor of Lak’bnauti, by order of the emperor, advanced towards Sunárgáon and totally defeated Fakhruddín, and took possession of Sunárgáoņ. Fakhruddín, though a fugitive, did not remain idle. He sent emissaries into the city who bribed the soldiers to kill Qadar Khán under the promise of distributing the treasure among them. The soldiers murdered their commander, and Fakhruddin returning put to death the wives and dependents of his rival. From A. D. 1339 to 1349, Mubarak Shah held undisputed rule over Sunárgáoņ. He was succeeded by Ikhtiyáruddin Ghází Shah, of whom nothing is known.
In 1341 , Ibn Baţúțah travelled in Bengal, and visited Sunárgáoņ, but he gives us no description of the city. He narrates that Shaidá, formerly a faqir, having been appointed náib of Sátgáoņ, revolted and fled to Sunár gáoạ . Fakhruddin sent an army to besiege the city; but the inhabitants, afraid for their lives, seized the unfortunate Shaidé, and sent him prisoner to the king who put him to death.
Ghází Shah succumbed to Shamsuddin Ilyás Shah, who struck coins in Sunárgáon from 753 to 758 A. H. (A. D. 1352 to 1356) . It was during his reign that the independence of Bengal was for the first time recognised at Dihlí. On the coins Sunárgáop is designated “ Hazrat i Jalál,” a title afterwards given to Mu’azzamábád [4], which was made the mint city, probably in the reign of Sikandar Shah, son of Shamsuddin. The name of Mu’azzamábád is found on coins from 1358 to 1379 ; but others with the name of Sikandar Sháh, and stamped at Sunárgáon, with the years from 1355 to 1362 marked on them, have been deciphered.
In 1367, Ghiyásuddin, son of the reigning monarch, rebelled and fled to Sunárgáoņ ; there he collected an army and marched against his father. The two armies met at Gowálpárá, near Ja’farganj, in the Dháká district, and nearly opposite the junction of the Ganges and Jabuná. The father was carried off the field mortally wounded. Eighty years ago (5), his tomb was still pointed out in the neighbourhood. Ghiyásuddin, whose title was A’zam Sháh, ascended the throne. He is chiefly famous for his correspondence with the poet Háfiz, whom he tried to induce to come and reside at his court. It is this monarch’s tomb that is still shown at Sunárgáon (vide below and pl . VIII) .
Sunárgáon in the 14th century seems to have been renowned for holy and learned men, and history informs us that Jait Mal ( Jalaluddin ), when he abandoned the Hindú religion, summoned from Sunárgáoņ Shaikh Záhid, to instruct him in the doctrines of Islám and direct him in the management of his kingdom. It was probably about this time that Sunárgáon swarmed with pírs, faqirs, and other religious mendicants, to a greater extent perhaps than any other Indian city. Amidst the ruins and forest of modern Sunárgáoņ natives assert that at least 150 “ gaddís ” of faqirs are distinguishable. Why they should have resorted to this distant city, is difficult to explain.
History of Sonargaon during Mughal rule
In 1582, the khálicah, or exchequer, lands of Bengal were settled by Rájah Todar Mal. The ninth sirkár was Sunárgáoņ. Its boundaries were the Brahmaputra on the west, Silhat on the north, and the then independent principality of Tiparah on the east. It included the present large parganah of Bikrampúr in Dháká, Baldák’hál, Dak’hin Shahbázpúr, Dáaderá, Chandpúr in Tiparah , and Jogdiah in Noákhálí. It is noteworthy that the city of Dháká was included in the seventh sirkár, that of Bázúhá.
In 1586, Mr. Ralph Fitch visited Sunárgáoņ. He is the only English traveller who has left any description of it. He found the country in a very unsettled state. The great city of Sripore (6) at the junction of the Megna and Padda or Kirtumnásá was in rebellion under its chaudharí or chief magistrate against the reigning monarch “ Zibaldim Echebar” ( Jalaluddin Akbar ).
From Sripore Mr. Fitch proceeded to Sunárgáoộ , which was only five leagues distant. “ King Isacan” ( ‘ lsá Khán) then ruled the city. Owing to the incursions of Portuguese and Mag marauders, the seat of the Muhammadan government was transferred from Rájmahall to Dháká in 1608. It is interesting to mark how the name of Sunárgáoņ now disappears from the writings of the early European travellers, and that of Dháká takes its place. It is not named by Linschoten ( 1589) , and Sir T. Roe ( 1615) mentions that the chief cities of Bengal were “ Rajmahall and Dekaka. ” Sir J. Herbert ( 1630) , however, includes Sunárgaon with Bucola, Seriepore, and Chatigam , among “ the rich and well-peopled towns upon the Ganges. ” Mandelsloe ( 1639) writes of “ Rájmahall, Kaka or Daka, Philipatum , and Sati gam .” In the “ Cosmographie” of Peter Heylyn, published in 1657, Sunárgáoņ is placed on an island in the mainstream of the Ganges.
Of the subsequent history of the city little is known, but the following fact I have ascertained. Sayyid Ghulam Muçtafá, the representative of a family which has held “ lákharáj, ” or rent-free, land at Sa’dípúr close to Sunárgáoạ for several centuries , possesses a most interesting document which affords insight into the fate of the city. This document, or mahzarnámah ,’ is a petition from his ancestor to the emperor, soliciting a renewal of the sanad by which the property was held. It is signed by several of the inhabitants of Sunárgáon, and endorsed with the seals of two Qázís of the city. The witnesses testify from their own observation that Sunárgáon was pillaged by the Mags, and that all the papers belonging to the Sa’di púr family were carried off. Unfortunately this petition has no date to it ; but the sanad sent in reply, signed by Shah Jahan, bears the date A. H. 1033 ( A. D. 1623) . As Jahángir was then reigning, his son Sháh Jahán probably signed for his father. This supposition is confirmed by the words “ A’lá Hazrat,” which are used to distinguish the monarch.
From that date until the present, nothing is recorded of Sunárgáoņ. In Major Rennell’s ” Memoir,” published in 1785, he describes the city as having ” dwindled to a village.” In 1809, Dr. Buchanan came to this part of the country with the intention of visiting Sunárgáon. The parganah (7) he found was called Sunárgáon ; but he was told that its proper name was Udhabganj (8). He was also informed that Subarnagrám , or Sunárgáon, had been swept entirely away by the Brahmaputra, and had been situated a little south from where the custom house of Kálágáchhí now stands. This information was very incorrect. The city that tradition places south of Kálágáchhi was Srípúr, and is nearly fifteen miles south -west of Sunargáoņ. Sunárgáon is often mentioned by Muhammadan historians ; but Mr. Blochmann informs me that it is not described by any of them. By Ibn Baţúțah it is designated as “ impregnable,” or, as the word may be also rendered, “inaccessible.” On his arrival at Sunárgáon, Ibn Baţúțah found a junk preparing to sail for Java, which proves that even in the 14th century it must have been a mart of some importance.
It is to Mr. Ralph Fitch , “ Merchant of London , ” that we are indebted for the only extant account of the city. He writes: “ Sunárgáoņ is a town five leagues from Sripore, where there is the best and finest cloth made of cotton that is in all India. The chief king of all these countries is called Isacan , and he is chief of all the other kings, and he is a great friend to all Christians. The houses here, as they lie in most part of India, are very little, and covered with straw, and have a few mats round about the walls and the door, to keep out the tigers and the foxes ; many of the people are very rich . Here they will eat no flesh , nor kill no beast ; they live on rice, milk , and fruits. They go with a little cloth before them , and all the rest of their body is naked. Great store of cotton cloth goeth from hence, and much rice, wherewith they serve all India, Ceylon, Pegu, Malacca, Sumatra, and many other places.”
About the same period , according to the Ain- i -Akbarí, sirkar Sunár gáon was renowned for the very beautiful cloth called kháçah [khasa], fabricated there, and also for a large reservoir of water in the town of Kayárah Sundar, which gave a peculiar whiteness to the cloth washed in it.
Modern history of Sonargaon
The following account of the old buildings of Sunárgáon was the result of a visit made in January, 1872. It includes a description of all that are known to the residents.
Panch Pir Dargah in Mahallah Baghalpur
It is in a very ruinous state. The wall surrounding the enclosure has fallen down in places, and several large jungle trees grow close to the tombs, and will ultimately destroy them. The sepulchers of these five Pírs are placed parallel to one another, and are raised about four feet from the ground. The river Brahmaputra must in former days have flowed past them. It was at one time intended to cover the tombs with a roof, but the pillars never rose higher than a few feet. The age of those graves, the names of the holy men, and the country whence they came, are unknown to fame; the natives are satisfied by telling that they came from the ‘ pachhim,’ i, e. , west, and they cannot understand why anybody should wish to know more.
At the south west corner of the enclosure is a small uninteresting mosque, which, like the tombs, is rapidly falling into ruin. This dargah is considered so sacred that even Hindús salaam as they pass, and Muhammadan pilgrims resort to it from great distances . There are only two other shrines to which Muhammadans make pilgrimages in Eastern Bengal—one is the tomb of Shah Ali at Mírpúr, a few miles north of Dháká ; the other is the dargah of Pír Badr Auliya [Badr al-Din] at Cháțgáon. The latter is the patron saint of all Hindú and Muhammadan boatmen and fishermen in Eastern Bengal.
Tomb of Ghiyasuddin Azam Shah
II . About five hundred yards south-east, on the edge of a filthy trench called “ Mag Dighi, ” is the tomb of Ghiyásuddin A’zam Sháh, king of Bengal, and correspondent of the poet Háfiz. This tomb has fallen to pieces. The iron clamps that bound the slabs together have rusted, and the roots of trees have undermined the massive stones. This mausoleum formerly consisted of a ponderous stone which occupied the cen tre, surrounded by pillars about five feet in height. These stones are all beautifully carved, and the corners of the slabs and the arabesque tracery are as perfect as the day they left the workman’s hands. The stones are formed of hard, almost black, basalt . [Vide pl .VIII. (9)]
At the head is a prostrate sandstone pillar half buried in earth. It was apparently used, when erect, as a chirághdán, or stand for a light. This tomb might be easily repaired, and the cost of doing so would be inconsiderable. There is no old building in Eastern Bengal which gives a better idea of Muhammadan taste than this ruined sepulcher; and there is none, when properly repaired, which would so long defy the ravages of time. The Muhammadans of Sunárgáoņ are too poor to reconstruct it themselves. They take great pride in showing it, although they know nothing about it but the name of the Sulțán who is buried there, and they take every care that none of the stones are carried off. Unless Government undertakes the re-erection of this handsome tomb, it is not likely that anything will ever be done.
What increases the surprise of the visitor at seeing this tomb is the contrast between these beautifully carved stones strewing the bank of a filthy hole and the wild luxuriance of the surrounding forest. In close proximity are various tombs, reported to be those of the monarch’s ministers. The roots of trees have destroyed them, and nothing now remains to mark the spot except the brick “pushta,” which preserves the mounds from being washed away.
Magarapara
The village of Magrápárá is considered by the natives of Sunárgáon to be the site of the ancient city. It has in its immediate neighbourhood several undoubtedly old buildings, and within a short distance is an eminence which still bears the name of “ Damdamah,” or fort. This mound, which has a magnificent tamarind tree growing on its top, is circular, but no traces of fortifications are visible. It has been used for many years by the Muhammadans as their “Ashúrkhánah” during the Muharram .
On the tenth day, all the garlands and ornaments that are made in place of ta’ziyahs are here collected and admired by the people. In the small market of Magrapárá is the tomb of Munná Shah Darwish. At the foot, a light is always burned at night. Every orthodox Muhammadan as he passes the tomb stops and mutters a prayer. This saint, about whom nothing is known, is said to have lived at the same time as the more famous Pír whose tomb stands a little to the north . This latter is called the dargáh of Khúndkár Muhammad Yúsuf. It contains the tombs of the saint, of his father, and of his wife. It consists of two elongated dome roofed buildings, each surmounted by two pinnacles covered with or formed of gold.
If any attempt is made to steal the balls, the residents assert that the thief will certainly be struck blind. Some hardened sinner, however, has of late years succeeded in cutting off one; but the believers in this tale cannot tell what his fate was. These tombs are destitute of any ornament inside.
They are kept scrupulously clean, and are covered with sheets, on which devotees throw a few pith-necklaces. When a ryot has reaped an unusually abundant harvest, he, in gratitude, presents a few bundles of ripe rice at the tomb. If any calamity, as the illness of a member of his family, is threatening, he brings rice, or “ batásá,” and prays the saint to avert the affliction .
Hindús are as confident of the efficacy of this propitiatory offering, and as frequently employ it as the Muhammadans. Close to the tombs is a modern Masjid with a “ kitábah ,” or inscription , dated A. H. 1112 (A. D. 1700) . It was probably erected by the Pír Muhammad Yusuf. Facing the mosque is a small graveyard, enclosed by a brickwall. The graves are numerous, but none are of any celebrity. Inserted in the wall at the left-hand side of the entrance is a large, black stone (2 feet by 13) . The natives believe that if a person has lost any property, he has only to put a coating of lime on this stone and he will infallibly get the property back . It was covered with an inch and three quarters of lime at the date it was examined . On scraping off the plaster a beautiful ľughrá inscription was found, with the name Jaláluddín Fath Sháh , A. H. 889 (A. D. 1484). (10)
This is the oldest inscription discovered in the Dháká district, with the exception of the one on A’dam Shahíd’s tomb in Bikrampúr, which bears the same king’s name and the date, A. H. 888. On the roadside near Magrápárá are two other inscribed stones. The writing on both is continuous. It includes the name and title of ’Alá -ud din Husain Sháh, A. H. 919 ( A. D. 1513). (11)
Close to the tomb above mentioned is a ruined gateway called the “ Naubatkhánah,” where musical instruments were sounded morning and evening to announce to travellers and faqirs that a place of shelter was at hand. At the back of the mosque are the ruins of a house called the “ Tahwil,” or treasury, where, within the memory of many living, feasts were given by the superintendent, or mutawallí, of the mosque. The present holder of this post is too poor to entertain anybody. Still further to the north -west are the ruins of the dwellings of the Khúndkárs. It is only within late years that this building, which had an upper room at each end, has become uninhabitable.
The last residents taught boys to recite the Qorán. Now – a -days no education is given in any part of Sunárgáon to Muhammadans. In the Mahallah north of Magrápárá, called Gohațța, is the tomb of a very celebrated Pír, known as Shah ‘ Abdul ‘ Alá , alias Ponkai Díwán. It is narrated that he retired to the forest, where he sat for twelve years so absorbed in his devotions that he was unconscious of the lapse of time. When found, he had to be dug out of the mound the white-ants (popka) had raised around him, and which reached to his neck. The same story is told of Valmiki the sage, and of others. This Pir must have died near the end of the last century, as his son Sháh Imám Bakhsh alias Chulu Miyán came, within the recollection of many living, from Silhaç to die at Sunárgáoņ. Father and son lie buried close together. At the head of the former is placed the lattice-stone on which he spent his memorable twelve years. The tombs are otherwise of no interest. They are merely mud heaps kept carefully clean and covered over with a grass thatch.
In this same quarter, a very large mosque formerly stood which was believed to have been built by the kings. It fell into ruins, and the proprietor sold the bricks to Hindús of Nárayanganj. Muhammadans extenuate this offense by asserting that the proprietor, who was a pensioned deputy magistrate, was insane when he did it. The foundations even are being dug up. The walls had been eight feet thick . The remains of one of the “ mihrábs” still standing, proved that the interior had been ornamented
by carved bricks ; no inscription was to be found.
Yusufganj Masjid
On the roadside east of Magrápárá is a small mosque, called the Yusufganj Masjid. It is rapidly going to pieces, as the dome is covered with masses of pípal trees, whose roots have penetrated into the interior. Its walls are 6 feet 1½ inches thick, which accounts for its standing erect so long.
Pagla Sahib
Beyond the village of Habibpúr, on the right-hand side of the road, is the tomb of “Pagla Sahib,” a very insignificant building. Various stories are told of the reason this Pír received such a singular name. One is that he became “ mast,” or light-headed, from the intensity of his devotions. Another, that he was a great thief-catcher, that he nailed every thief he caught to a wall, and then beheaded him. Having strung several heads together, he threw them into an adjoining “khál,” which has ever since been known as the munda málá, i. e. necklace of heads. This tomb is so venerated that parents, Hindú and Muhammadan, dedicate at the tomb the “chonti,” or queue, of their child when dangerously ill. A little further on the road crosses a nálah by a very fine Muhammadan bridge of great age. It is generally called the Kampaní ke ganj ká pul.
Bari Makhlas
In a quarter near this, called Bári Makhlas, is a comparatively modern mosque, erected by Shaikh Gharibullah, a former jánchandár, or examiner of cloth , to the Company. It bears the date A. H. 1182 ( A. D. 1768), and it is still used by the Muhammadans living in the neighbour hood. Its pinnacles are made of glazed pottery, but the building generally is plain and devoid of interest.
Panam
Painám , although a most singular village, possesses few ancient buildings. There is, however, a fine Muhammadan bridge of three arches, called the Dallálpúr pul, over which the road goes to the Kampaní ká kot’hi. The roadway is very steep. It is formed of bricks arranged in circles of about five feet in diameter. The adjoining bridge leading into Painám village is made in the same way. These circles of bricks are kept in place by several large pillars of basalt laid flat at the toe or rise of the bridges. The old Kampaní ká kot’hi is a quadrangular two-storied , native, brick building,with an arcaded courtyard inside. It was a hired house, and is now occupied by Hindú karmakars, or smiths. In the one street of Painám is a modern and very ugly temple of Shiva, ornamented with numerous pinnacles.
In Amínpúr the ruins of the abode of the royal krori, or tax-gatherer, is shown. Like all old ruins, it is said to contain fabulous treasures protected by most venomous snakes. A descendant of this family still resides in the neighbourhood. Close to his residence are the ruins of an old Hindú building, the only one existing in Sunárgáoņ. It is called “ jhikoti, ” a term applied to a building with an elongated dome roof formed of concrete, and with the walls pierced with numerous openings. It was formerly used for religious purposes.
Goaldia Mosque and Abdul Hamid Mosque
In the division called Goaldih, which consists of dense and impenetrable jungle traversed by a few foot-paths , are two mosques. The first is called ‘ Abdul Hamid’s Masjid . It is in good preservation, being a comparatively modern structure . Its “ kitábah” bears the date A. H. 1116, (A. D. 1705) .
About a hundred yards to the south is the oldest mosque in Sunárgáon. The residents call it the puráná, or old, Goaldih mosque. Its kitábah had fallen out, but had been carefully preserved in the interior. On this stone is inscribed the name of ’ Ala-uddin Husain Shah, A. H. 925 ( A. D. 1519) (12). This curious old mosque is fast going to ruin; pipal trees are growing luxuriantly on the dome, which is cracked, and will soon fall in, and creepers are clinging to the outside walls and aiding in the destruction. It is built of red brick. Its exterior was formerly ornamented by finely carved bricks in imitation of flowers, but neglect and the lapse of centuries has left few uninjured. The interior is 164 feet square. The square walls, as they ascend, become transformed into an octagon. At each corner are quarter domes or arches, and from the intermediate space or “ pendentive ” the dome rises. As usual there are three “ mihrábs.” The centre one is formed of dark basaltic stones, beautifully carved and ornamented with arabesque work. The two side ones are of brick, boldly cut and gracefully arranged. The bricks in the archways have been ground smooth by manual labour, and have not been moulded. The pillars at the doorways are sandstone, evidently the plunder of some Hindú shrine. Until twenty years ago this mosque was used for worship. The khádim , or servant, having died, no care was taken of the building, and the dome threatened to fall in, so worshippers migrated to the modern mosque.
As they do at all the old buildings in Sunárgáoŋ, Hindús salaam as they pass this Masjid.
Sultan Nasiruddin Nusrat Shah’s inscription
Beneath a “gúlar,” or wild fig tree, near Sa’dípúr is a mound with a large stone inscribed in Țughrá characters. Where it came from , or to what it belonged, no one knew. In the inscription the name of Sultán Násiruddin Nusrat Shah, A. H. 929 (A. D. 1523) , is written(13). This stone was carefully removed and deposited in a place of safety at Sa’dípúr.
Khasnagar tank
The only other memorial of former days worth mentioning is the large Kháçnagar tank, south of Painám . It covers 94 acres. of this reservoir is unknown. A few bricks on the west side are evidently the remains of a ghát. This tank has been gradually silting up, and in the month of April there is only six feet of water in it . In former days its banks were covered with the huts of weavers, who found that its water made their muslins remarkably white. The weavers have died out ; but the dhobis who wash clothes in the tank now, assert that the purifying quality of the water surpasses that of any other tank or well. Regarding the site of the old fort of Sunárgáon the residents can give little information . They state that a fort and a mosque, with its dome made of lac, formerly stood on the east of the modern village of Baid Bázár, where the Megná now flows. This is the most likely place for it to have stood, as it would have protected the city from the incursions of piratical ships coming up the river on the east.
Changing course of Brahmaputra and the history of Sonargaon
Any account of Sunárgáon would be imperfect that did not mention the changes in the course of the Brahmaputra, which must have had a most important influence in the selection of the site and on its prosperity. It is a curious fact that the Kalika Puráná poetically relates, that when Balaram cut though the Himalayas with his axe to allow a passage for the pent up waters of the Brahmakund, the goddesses Lakhya and Jabuná both sought to marry the youthful Brahmaputra. The god made choice of the former, and their streams were blended into one. Within the last century, however, the waters of the Lakhya have been gradually drying up, while the main stream of the great river has joined with that of the Jabuná.
In the neighbourhood of Sunárgíon are two places connected in story with the earliest Hindú epics. Nangalband, i. e. , the place where the plough stopped, is the spot where Balaram checked his plough when he undertook to plough the Brahmaputra from its source. Near this is Panchomi Ghát, where the five Pándú brothers, while in their twelve years’ exile, are traditionally said to have bathed. At both of these places thousands of Hindús annually resort to bathe, when the moon of the month of Chait is in a certain lunar mansion. These ancient legends appear to point to a period when the cultivated land terminated at Nangalband. The red laterite soil, which extends from the Gáro Hills through the Bhowal jungles, crops up here and there in the northern parganahs. In Sunárgáon, however, no traces of it are visible. That the alluvium washed down from the hills should first of all be deposited at the termination of this hard formation is most probable, and it was perhaps on this account, as well as on the inaccessibility of the place itself, that the Hindú princes expelled from Central Bengal were induced to found a city here.
In the distribution of the sirkárs of Bengal by Rájah Todar Mall, the Brahmaputra (14) is said to have bounded Sunárgáon on the west . It does so at the present day ; but the stream that bears that name is a shallow one. On the north- west of Sunárgáon, however, the dry bed of a river, which at one time must have been three or four miles broad, is still distinct.
The Mínákháli river, which now – a -days connects the Megná and Brahmaputra, was probably the course that the former took at some early date on its way to join the Lakhya opposite Nárayanganj. This supposition is supported by the fact that when Islám Khán built forts to prevent the Mag marauders from passing up the rivers, the site of one was Hájíganj ; of a second, “ Trivení,” the confluence of three streams, (which could only be the Megná, Brahmaputra, and Lakhya ) ; and of a third, Munshiganj ; that this was the course of the Brahmaputra in former days seems certain. The old bed of the Brahmaputra still exists at Munshiganj, and on its banks is held the time- honoured fair of the Baruní, or Varuní, in the month of Kártik. The spot where this religious festival is held in honour of “ the god of water,” is where the Brahmaputra and the Burhíganga meet.
The Burhígangá, or Dháká River, was the old bed of the Ganges, when it flowed through the great swamps still existing between Nátor and Ja’farganj. Old Sunárgáon would in this case be favourably situated , being protected from the incursions of the hated Muhammadans by the Ganges and Brahmaputra on the west, and from the inroads of the savage hill tribes by the Megná on the east.
In Rennell’s maps, published in 1785, the main stream of the Brahmaputra joins the Megná at Bhairab Bázár, as a small branch does at the present day. Seventy years ago, this was, I understand, the route followed in the hot season by all boats going to and from Asám and Calcutta, and it is not two generations since the Balesar k’hál, which runs through Sunárgáon, was navigable all the [season].
Ruin of Sonargaon
Although it is impossible to fix the date of any of these changes, yet there is every probability that in the days when Sunárgáoņ was a royal city , its walls were washed by one or other of these great rivers . A visit to the jungle of Sunargaon, intersected as it is by trenches of stagnant water and obstructed by raised mounds, suggests the idea that formerly the abodes of the people were elevated above the highest tides, and that the city was traversed by numerous canals and natural creeks. No situation could have been better adapted for a conquered people, whose safety lay in the rivers by which they were surrounded and in the boats which they possessed.
The site of the ancient Sunárgáon is covered by dense vegetation , through which a few winding footpaths pass. The inhabitants are few . The children are all sickly and suffering from spleen disease. The men are generally puny, and so apathetic, that they have not the energy to cut down the jungle, in the midst of which their houses are buried. In the rains all locomotion is by boat. The stagnant holes and swamps of the cold season are then practicable, and the small native boats are punted throughout the jungle between the artificial mounds. In the cold season , these holes contain the most offensive water, laden with decaying vegetable matter. On the banks the largest alligators are seen basking contentedly . The trees are chiefly mangoes, the remains of former prosperity. One decayed stump at Sa’dipúr is still shown as the identical tree of which the unfortunate Shah Shujá’ ate while he halted at Sunárgáoņ.
This variety is still called “ Shujá-pasand.” Throughout the jungle wild guava , bel, almond, and beș trees are found. It is told by the residents with pride – as if the fact reflected honour on Sunárgáoņ — that one “ khirní” tree (Mimu sops Kauki) grows there, while in Dháká only two specimens exist . The ” guláb jáman ” that grows here is reputed to be of unusual delicacy .
Sunárgáoņ pán is celebrated . It is known as “ káfúrí,” from the aroma it gives off when chewed , and is sold at the price of two bírás (96 leaves) a rupee, while the next quality, “sachí,” sells at six paisá , and the “sádah” at four to five paisá . The “mung dál” is also highly esteemed, and it surpasses in quality that grown in any other part of Eastern Bengal. “Sáțhí bhaja,” or fried cream , is not prepared in any other place of this district, although it is , I believe, a common article of diet in Patna. The method of preparing it is only known to the manufacturers. A celebrated kind of dahí, or curd, is also made here. It is known as that of “ Hari Dás Khání.” It sells for four times the price of the country dahi.
Muslin and the history of Sonargaon
The manufacture of the fine muslins, for which Sunárgáon was famous in former days, is now all but extinct. English thread is solely used by the weavers, and the famous “ phúți kapás” is never cultivated. In the Baqirganj [Bakerganj] district, I believe, a little is still grown , but it is only used in making Brahmanical threads, for which English cotton is inadmissible. The only muslin now manufactured by the Hindú and Muhammadan weavers at Sunárgáon is “malmal.” Jámadání, or embroidered cloth, is no longer worked at Sunárgáoņ, although it is at Dhámrái, Uttar Shahpúr, and Qadam -Rasul, in the neighbourhood. The art of weaving the still finer muslins, such as “ tan-zíb ,” “shabnam ,” and ” áb-rawán ,” is unknown at the present day.
The decay of the cotton manufactures of Sunárgáon dated from the end of last century , when the Company ceased to purchase muslins. Before this change, as much as a lákh of rupees was annually distributed from the factory of Sunárgáon to the weavers, and it is estimated that there were then 1,400 families of Hindú and Muhammadan weavers in and around Dallálpúr. In the whole of Sunárgáon it is said that not more than fifty looms are now at work.
Another cause of the falling off in the manufacture of the finest muslins was the stoppage of the annual investment, called “ malbús i kháç.”
The zanánah of the Dihli emperors was supplied with these delicate cloths of Sunárgáoņ and Dháká ; and in Aurangzib’s reign a lákh and thirty thousand rupees were yearly expended under this head.
The unhealthiness of Sunárgáon has been another cause of the decline of the cotton trade, but the most influential of all has been the introduction of cheap English thread, which can be woven into cloth at a much lower price than the native can .
A great trade in cotton cloth, chiefly English piece-goods, is carried on at Panam. The majority of the residents are prosperous merchants, who make extensive purchases in Calcutta and Dháká, which are disposed of in the villages around.
The separation at the present day of the Muhammadan and Hindú population of Sunárgáoņ is unusual. In all the mahallahs to the north and west of Magrápáſá, nine-tenths of the villagers are Muhammadans, while in those to the east the Hindú greatly preponderate. In Painam again there is not a single Muhammadan .
The householders are chiefly ta’luqahdárs, who pay the Government revenue direct to the Dháká treasury. There are ninety of them in this village . There is also a superfluity of Brahmans. In Painam the castes are as follows—thirty houses of Brahmans, sixty – five of Saos, five of Bhúimális, and the remainder of Barbers, &c. At Amíupúr there is a Government school where the children of these families receive education.
Conclusion
The Muhammadans of Sunárgáoņ are contented to remain uneducated ; very few can even read the Qorán, and they have consequently all become Farázís. There are no pírs or faqirs resident at Sunárgáoņ now. The superintendent of the mosque at Magrápárá is a native of Medinipur, who has not as yet acquired the respect of the people. The one man to whom every one resorts for advice and help, and who is regarded as the most holy pír in Eastern Bengal, is Shah Karím ’Alí . He was born in Silhat, and his residence for many years has been Jagannathpúr in the Tiparah district. He is popularly believed to have the power of raising from the dead, and of causing rain to fall at his pleasure.
Sunárgáon is too poor to support saints now, so the saints have migrated to places where the alms of the rich will furnish them with the luxuries which in this degenerate age they find to be necessary.
The Muhammadan women of Sunárgáon are all ” pardah-nishín .” With the changes in the course of the rivers they have been put to much inconvenience and expense. They are no longer able to visit their friends by stepping into a boat and being rowed to the house. They have either to stay at home, or make the trip in a pálkí. There are several families in Sunárgáoņ who claim to be descendants of the old Qázís, but there are none who call themselves Mughuls. Only one man, who is still looked up to as the descendant of an official of the days when Sunárgaon was a royal city, has the unmistakable colour and features of the high -born Tátár race.
Notes
His tomb at a village called Qází-qaçbáh, south of Riqábí Bázár in Bikrampúr. It was surrounded by a wall and put in thorough repair about a hundred years ago. For centuries a lamp was placed every night on his grave; but the greater enlightenment of the present day, under Farází instruction, has put a stop to such profane rites. Adjoining is a six-domed masjid, with beautiful carved stone and brick-work in the interior. The inscription bears the name of Jalaluddin Fath Shah, and the date is A. H. 888 ( 1483; vide J. A. S. B. for 1873, p. 286.
The modern tradition in Tiparah is that the old name of the district was Jaháznagar, or the “ city of ships.” This is evidently founded on the circumstance that, at a
much later period, the revenue for the support of the nawárá, or imperial fleet, was derived from lands in this district.
This is probably the same person as Dhinaj Madhub, who is believed to have been a grandson of Ballál Sen.
About twelve miles north-west of Sunárgáoņ, on the opposite bank of the Brahmapatra, is an old village, which gave its name to one of the parganahs of Sirkár Sunárgáon, called Mu’azzampúr, which Mr. Blochmann identifies with Muʼzzamábád. The only old building there now is the Dargáh of Shah Langar. It attracts Muhammadan pilgrims from long distances, who make offerings on a stone which is believed to bear the holy man’s footprint.
The tomb of this monarch is, I believe, still shown in the famous Adínah mosque at Panduah, built by him. The tradition, however, in this District is that he was buried where he fell. On the west of Ja’farganj, where the Jabuna flows at the present time, stood a village called Goáriah, where a Dargáh of Sikandar Shah, and a langarkhánah, or hospital, erected by Jahángir, are said to have been. The “oldest inhabitant” is positive, however, that this dargáh was that of a faqír, and not that of a king .
Near Rájábáſí, where these two great rivers meet, an island called Srípúr has always existed. There is still a tradition that it was formerly a place of great trade. At the present day, this island has joined on to the main land and is called Srípúr Tek, i . e. , Srípúr Point. There was formerly a custom -house here, where sáyir, or transit duties were collected by the government.
Montgomery Martin’s Eastern Bengal, vol. III. , page 43.
Udhabganj is a village, about a mile east of Sunárgáon on the Mínákhálí River.
The lithograph was made from a photograph taken by Mr. W. Brennand, Principal of the Dháká College.
Vide J. A. S. B., 1873, Part I , p. 285 .
Vide J. A. S. B., 1872, Part I , p. 333.
Vide J. A. S. B., 1873, Part I , p. 295.
Vide J. A. S. B., 1872, p. 338.
Ibn Bațuțá calls the Brahmaputra Al-nahr ulazraq, “ the blue river”.
East Bengal State Acquisition and Tenancy Act
November 26, 2022
The aim of The East Bengal State Acquisition and Tenancy Act , 1950 was to abolish the 150-year-old Permanent Settlement and introduce a system of direct payment of land revenue by the actual owners and tellers of the soil, eliminating all intermediary rent-receiving interests.
Background
Floud Commission
In 1938, the Government of Bengal set up a land revenue commission, known as the Floud Commission, with the aim to deal with the question of retention or abolition of the Zamindari system. Sher-e-Bangla AK Fazlul Huq was then the Chief Minister of Bengal. The Floud Commission, named after the Chairman of the commission Sir Francis Floud, submitted its report on March 2, 1940 recommending the abolition of the Zamindari system and the elimination of all grades of rent-receiving interests on payment of a suitable compensation. It also observed that the Permanent Settlement system had lost its utility and viability as the agrarian conditions in Bengal had gone through massive changes since the introduction of the Settlement.
The recommendations of the commission could not be implemented in the subsequent years mainly due to political instability, the Great famine of 1943 and communal unrest. However, a bill titled ‘Bengal State Acquisition and Tenancy Bill’ was introduced in the Bengal Legislative Assembly on April 10, 1947 on the basis of the recommendations of the Floud Commission. But it couldn’t get through due to the Partition of Bengal in August, 1947.
Enactment of the Act
After the Partition, the Bill was again introduced in the East Bengal Legislative Assembly in 1948. It was passed in 1950, assented to by the Governor-General on May 18, 1950, and enacted as East Bengal State Acquisition and Tenancy Act, 1950 (Act XXVIII of 1951).
Salient features of the East Bengal State Acquisition and Tenancy Act, 1950
The salient features of this Act, after various amendments, may be summarised as below:
(a) All rent-receiving interests were to vest in Government from the date of acquisition, as might be notified in the official gazette.
(b) None can retain special classes of khas lands like hats, bazars, forests, fisheries, ferries, and also buildings and structures used as tahsil kutcheries.
(c) Retainable classes of lands are homesteads, buildings and structures other than tahsil kutcheries, agricultural land, hortcultural lands including tanks, vacant non-agricultural lands, and fallow lands which are cultivable or capable of cultivation on reclamation.
(d) The ceiling for quantity of retainable khas lands according to the choice of individuals was 33 acres, later on raised to 124 acres (100 bigha as of 1979 ). But this limit did not apply in cases of mechanised or large scale co-operative farming, and lands for special cultivations like tea, coffee, sugarcane, rubber plantations, orchards, tejpata gardens, dairy farms, land used for large scale industry of raw materials thereof; and also the quantity of lands required to meet the annuity of wakf, debottor [endowed property] or any other religious and charitable trusts.
All excess kahas lands were to vest in Government. The Act deals with the retention or otherwise to khas lands.
(e) There was to be only one class of agricultural tenants under Government, viz., raiyats, later on designated as maliks. None will be allowed to hold land without payment of revenue. All rent-free and service tenures were assessed to rent. Rent will be paid in cash. So, all produce rents were commuted to cash rents. Rents once assessed would not normally be revised during 20 years.
All lands and holdings were liable to assessment of fair and equitable rent under Part V.
(f) Provision was made for assessment of compensation for acquisition of rent-receiving interest, and also for excess or non-retainable khas lands under sections 37 and 39 respectively.
(g) Payment of compensation can be made in cash or a bonds or in both. For ex-rent-receivers resident in Pakistan cash payment is being made in one instalment For non-residents, it is being paid in bonds through State Bank. Payment of compensation has been planned on a five-year basis; section 68 deals with such payments.
(h) Compensation for waqf, debottar and such other exclusively religious and charitable trusts have been assessed as perpetual annuity; and Deputy Commissioners have been made trustees in respect of these trust properties, and Administrator of wakfs in respect of wakf estates.
(i) Tenants or Maliks can use their lands in any manner, subject to payment of rent or revenue.
(j) Sub-letting has been prohibited; and it entails forfeiture to Government of any land sublet without compensation.
(k) Provision has been made for voluntary subdivision or amalgamation of holdings, consolidation of lands, and rationalisation of rent.
(l) Provision has also been made for reduction, enhancement and alteration of rent in certain cases, and also for extinguishment of tenancies on appropriate occasions, and for dealing with arrears or rent.
(m) Provision for maintenance, and revision of the record-of-rights has also been made.
Implementation of the East Bengal State Acquisition and Tenancy Act
After the Act was passed, it was decided that only big estates, with good collection papers, and the estates under the management of Court of Wards, would be acquired by a summary procedure immediately, and that the remaining rent- receiving interests would be acquired after regular revision of the record-of-rights, without which correct preparation of rent-rolls and compensation assessment rolls would not be possible.
Accordingly, a large number of big estates were acquired between 1952 and 1955. A new revenue administrative machinery was set up in the districts at all levels for proper management of the newly acquired estates.
Collection and management were started on the basis of papers furnished by or taken over from the ex-zamindars. While the process of gradual acquisition management and assessment of compensation was still going on, a decision was taken towards the end of 1955 to acquire all grades of rent-receiving interests with effect from the 14th April, 1956, without Revisional Settlement Operation.
Accordingly, an Ordinance was promulgated to give effect to this scheme of wholesale acquisition. The authorities then undertook the preparation of preliminary rent-rolls on the basis of existing record-of-rights within 6 months, to form the basis for collection of rent by Government after wholesale acquisition.
A Settlement organisation was set up in each district under a Settlement Officer; and after fresh recruitment and training of a laige number of field officers and staff, this stupendous task of preparation of preliminary rent rolls was completed in time under the supervision of the Director of Land Records and Survey.
Compensation and annuity rolls were finally prepared in 1962-63 and made over to the Additional Deputy Commissioner (Revenue) who started payment of compensation under a Five-year scheme beginning in 1963. The work of eliminating the chains of intermediate interests from the finally published records were then started. Records were modified accordingly, showing only the ground tenant under the Government. Thus the process of acquisition was legally completed.
Under the State Acquisition and Tenancy Act of 1950, the Government provided for the payment of compensation to the proprietors and tenure-holders whose properties were to be acquired.
Source:
Bangladesh District Gazetteers: Bogra, edited by KGM Latiful Bari, Bangladesh Government Press, Dhaka, 1979
The history of Dhaka has been told and retold by many scholars and amateur historians. This account is taken from The Dacca District Gazetteer (1912) which was edited by ICS officer B.C. Allen. It was originally written in longer form by J. T. Rankin,ICS. — BoR Editor
J.T. Rankin
Early history of Dhaka
Buddhist Tradition
There can be little doubt that a portion, at any rate, of the district of Dacca was included in the ancient kingdom of Pragjyotisha or Kamrup — a passage in the Yogini Tantra distinctly stating that the southern boundary of that kingdom was the junction of the Brahmaputra and Lakshya, which is situated,near the modern town of ISaraj’anganj. The early traditions that have come down to us indicate that Dacca and several of the neighbouring districts were originally under the sway of Buddhist kings. According to the Tibetan legends a Buddhist king named Vimala was master of Bangala and Kamrup, and therefore of Dacca. Hiuen Tsiang who visited Kamrup in the second half of the seventh century states that Samtata, which probably included the pargana of Bikrampur, was a Buddhist kingdom although the king was a Brahman by caste.
In the Raipura thana brass images of Buddhist origin have been discovered and two copper-plates with inscriptions of Buddhist kings. These have been assigned by experts to the end of the eighth and beginning of the ninth century, and a copper-plate found in the Faridpur district, which is ascribed to the same period, proves that the Bikrampur pargana was also under Buddhist rule.
The names of a few local Rajas have come down to us, but we know little more about them than their names. One of the best known is Haris Chandra, the ruins of whose capital close to Sabhar can be seen even at the present day. The capital of another local princeling called Josh Pal was at Dakurai, 18 miles north of Sabhar where there are several tanks and an old road called the Rathkhola Sarak, leading to a place called Jatrabari, names which tend to suggest that Josh Pal was not a Buddhist.
The remains of another town which is said to have been the headquarters of a chief called Sisupal are to be found at Singher Dighi, near Mahona, in the north-west of the district. About eight miles
away, at Pirojali, are the ruins of a fort ascribed to one Indra Raj ; and there are traces of old buildings and a moat close to Rajabari five miles west of old Kapasia at a place which is said to have
been the capital of the Chandal Rajas.
The overthrow of Buddhism and a new phase in the history of Dhaka
In the ninth century A.D., one Adisura, a Kshatriya by caste, came from the Deccan and after overthrowing the Buddhist king of Bikrampur established himself at Rampal near Munshiganj. He sent to Kanauj for Brahmans to teach the people the religion which even the priestly class in the district had forgotten and five Brahmans, accompanied by five Kayasthas, in due time arrived.
Tradition says that their reception by the king’s underlings, when they reached Rampal, was so rude that they were about to take their departure again in anger and had even bestowed the blessing intended for the king on the stump of a Gajari or Sal tree to which the court elephants used to be tied. The old stump took life again and is still to be seen at Rampal, the only Gajari tree in Bikrampur, where it is an object of veneration and worship to all Hindus. The king fortunately got word of the arrival of the Brahmans and was able to make his peace with them.
The Sen Kings
From copper-plates and other inscriptions discovered in recent years we learn the names of several kings of the Sen dynasty, who appear next upon the scene. This source of information is
more reliable than the Ain-i-Akbari and the names given in the latter need not be discussed here. The kings referred to ruled in Eastern Bengal in the following order : Vira Sen, Samanta Sen,
Hemanta Sen, Vijaya Sen, Ballal Sen and Lakhshman Sen. It has been conjectured that Vira Sen is identical with Adisura and this is not altogether improbable if, as the inscriptions give us to understand, a considerable interval elapsed between him and the next king. Of the next two kings, Samanta and Hemanta, nothing of note is recorded. Vijaya Sen, however, we are told, was a great
warrior who conquered the king of Gaur, probably, the Pal Raja of the time reigning in Northern Bengal, and it is more than likely that this was the death blow to Buddhism in this part of India.
Ballal Sen
The greatest of the Sen kings was Ballal Sen, famous alike in literature and in tradition, whose residence is still pointed out at Ballal Bari, at Rampal. It is a raised piece of ground rectangular in shape, surrounded on all sides by a moat two hundred feet wide. This is all that is now visible, but in the surrounding country bricks are constantly being turned up and treasure is not infrequently found. Close by are the Tantipara and the Shankhari Para which bear witness to colonies of weavers and shell-cutters
who at one time lived there in attendance on the court.
There are two bridges in the neighbourhood which tradition ascribes to Ballal Sen. One is over the Mirkadim Khal and is called the Ballali Bridge ; it has three arches and the piers are six feet thick. The other is a little further to the west and spans the Taltala Khal ; this also has three arches but was blown up in the early days of British rule to enable large boats with troops to pass to and from Dacca.
Ballal’s was a long reign. The last trace of Buddhism had been destroyed by his father and he was free to devote himself to the internal administration of the kingdom. We know that he reorganised the caste system and founded Kulinism, a kind of Hindu aristocracy, and that he was the originator of several social reforms. We know also that he wrote two Sanskrit works, the Dana Sagara and the Adbut Sagara. He abdicated in favour of his son in 1170 A.D. and died two years later. His name is still a household word in every Hindu home in the district and his fame is such as only a great and wise king could have inspired.
Fall of the Sen Kings
Ballal was succeeded by his son, Lakhshman Sen, who gave his name to Lakhnauti (Lakhshmana Bati) and lived latterly in Nadia. We are told that after the capture of Nadia by Bakhtyar
Khilji he fled to Bikrampur where he and his sons exercised precarious sovereignty for the next hundred years. He had three sons— Madhab, Keshab and Viswa Rup — the last of whom succeeded him in Bikrampur and evidently had some fighting with the Muhammadans. Eventually the Sens were driven out and we find that the Raja of Mandi claims descent from them and alleges that one of his ancestors, Rup Sen, fled to the Punjab where he founded the present city of Ruper. Beyond these legends all trace of this once powerful dynasty has completely disappeared.
History of Dhaka: Early Muhammadan Period
Little is known of the movements of the Muhammadans in Dacca in the earlier part of the thirteenth century. In 1223 A.D. Governor of Bengal, Ghiyas-ud-din, marched towards Kamrup and Eastern Bengal, but was recalled by an attack on his capital. Another governor invaded Eastern Bengal in 1260A.D., and according to Marco Polo the country was subdued by the Khans of Tartary in 1272 A.D. He gives the following account of these parts : —
” The province Bengala bordereth upon India toward the south, which Great Can subdued, when Marco Polo lived in his court. The country hath a proper king and peculiar language. The inhabitants thereof are all idolaters : they have masters which keep schools and teach idolatries and inchantments [sic] : a thing common to all the great men of that country. They eat flesh, rice and milk : they have cotton in great plenty, and by reason thereof, much and great trading is exercised there : they abound also with spike, galangal, ginger, sugar and divers other spices.
Huge oxen are also there, comparable with elephants in height but not in thickness. Many eunuchs are made in this province, which are afterwards sold unto merchants.”
In 1279 A.D., the district was visited by the Emperor himself who advanced beyond Sonargaon in pursuit of Toghril, the governor of I.aklmauti, who had thrown of his allegiance and proclaimed himself an independent sovereign.
Bahadur Khan
Subsequently the Emperor Ala-ud-din, finding that the viceroy of Bengal had become too powerful, effected a partition of the province and appointed Bahadur Khan to be governor of Eastern Bengal with his headquarters at Sonargaon. A Bengali historian of Sonargaon tells us that after capturing the main forts and subduing the Raja of the locality, Bahadur governed in his name and introduced but few changes in the form of the administration. Certainly, so long as Ala-ud-din lived, Bahadur ruled circumspectly, but on his death he declared himself independent with the title of Bahadur Shah. This so enraged the new Emperor (Ghiyas-ud-din Tughlak Shah) that he marched into Bengal (1324 A.D.) and, defeating Bahadur, took him to Delhi with a rope round his neck, appointing Tatar Khan, his adopted son, to be governor of Sonargaon in his place.
Fakhr-ud-din, a major figure in the history of Dhaka
Tatar Khan was succeeded in 1338 A.D. by his armour-bearer Fakhr-ud-din who declared himself to be independent. He was, however, defeated by Qadir Khan who occupied Sonargaon where he amassed great treasure. This treasure proved his destruction for his soldiers went over to Fakhr-ud-din who offered them this immense reward as the price of their treachery, (coins minted by this chief prove that he reigned ten years, when he met his death, probably at the hands of Ali Mubarak, governor of Lakhnauti. The following account of the country in the time of Fakhr-ud-din is given by Ibn Batuta. Writing of the Brahmaputra he says, ” it descends from the mountains of Kamrup and is called the Blue River, by which people travel towards Bengal and Lakhnauti. Along this river are hydraulic wheels, gardens, and villages, on the right and on the left, just as they are to be seen along the Nile in Egypt. The inhabitants of these villages are non-Muhammadaus who pay a protection tax. From them is exacted half of the produce of their lands besides tribute. We remained on this river for fifteen days sailing between villages and gardens just as if we had been passing through a market. On this river there are innumerable ships in every one of which there is a drum. Whenever two ships meet the crew of both of them strike their drums and salute each other. Fakhr-ud-din, the Sultan, of whom we have spoken, has ordered that no duty should be levied from fakirs on that river and that provisions should be given to such of them as had not got them so that whenever a fakir arrives in a village he is given half a dinar.”
At Sonargaon the travellers found a jonk which was bound for the country of Java and embarked on it.
Dynasty of Haji Ilyas
In 1352 A.D. Haji Ilyas conquered Eastern Bengal and founded a dynasty which continued with a brief interval to reign over that province for nearly a century and a half. In 1354, he was attacked by the Emperor Feroz Shah and fled to the fort of Ekdala. It is said that during the siege of the fort the saint Shaikh Raja Biyabani died, and Ilyas, coming out of the fort disguised as a mendicant, joined the Shaikh’s funeral procession and afterwards went to see the Emperor without himself being recognised.
Sikandar Shah
Ilyas died in 1359 A.D. and was succeeded by his son Sikandar Shah in whose reign the emperor Feroz again invaded Bengal. Hearing of the Imperial advance Sikandar, like his father, fled ” into the islands of Ekdala.” Another siege ensued during which one of the chief towers of the fort fell owing to the pressure of the people upon it, but the fort being built of mud was speedily repaired. Negotiations for peace were opened and presents were exchanged. It is related that the Sultan sent into the fort of Ekdala by the hands of Malik Kabul a crown worth 80,000 Tanka and 500 valuable Arab and Turki horses with the expression of his wish that henceforth they might never again draw the sword. Sikandar seems to have paid great attention to internal administration and it is said that he made a regular survey of the province, his name surviving to the present day in the term Sikandari gaj. His end was however an unhappy one as he was defeated and killed by his son Ghiyas-ud-din at Garpara in the Manikganj subdivision in 1368 A.D.
Ghiyas-ud-din and the glorious history of Dhaka
Ghiyas-ud-din held his court at Sonargaon. He was a man of some literary attainments and invited the celebrated poet Hafiz to visit him. At the same time he was an able and enlightened ruler. We learn from Chinese sources that he despatched embassies to China and received presents in return. He died in 1373 A.D. and the remains of his tomb are still to be seen in Mahalla Baghalpur at Sonargaon. At the present day it is in a very dilapidated condition but it was described by Dr. Wise in 1874 in the following terms: —
”This mausoleum formerly consisted of a ponderous stone which occupied the centre, surrounded by pillars about five feet high. These stones are all beautifully carved and the corners of the slabs and the arabesque tracery are as perfect as the day they left the workman’s hands. The stones are formed of hard, almost black, basalt. At the head is a prostrate sandstone pillar, half buried in earth. It was evidently used when erect as a Chiraghdan, or stand for a light.”
Ghiyas-ud-din’s coins were struck at Muazzamabad, where a mint had been established by his father. This place appears to have been close to Sonargaon, and may have been the same as Muazzampur, a village lying a few miles to the north of Sonargaon, which we know as the seat of a saint in the reign of Jalal-ud-din a few years later.
Raja Kans and his descendants
In 1405 there was a brief recrudescence of Hindu sovereignty, the throne of Bengal being seized by Kaja Kans who reigned till 1414 A.D. His son and successor Jalal-ud-din was, as his name
implies, a convert to the Muhammadan religion. He was followed by his son Ahmad Shah to whose reign belongs the oldest inscription yet found in the district. It is to be seen in the mosque of
the saint Shah Langar at Muazzampur.
Nasir Shah
In 1432 A.D., the dynasty of Ilyas Shah was restored in the person of Sultan Nasir-ud-din Abul Muzaffar Mahmud Shah who reigned till 1460 A.D. He restored to his throne Meng Soamwun,
the king of Arakan, who had been expelled by the Burmese in 1406 A.D., but only on condition that he should remain a vassal of Bengal. The mosque of Binat Bibi at Narinda in the city of
Dacca was erected during his reign, but otherwise, there is little known about this prince.
Bangladesh-India Relations: Timeline
November 5, 2022
This is a timeline of Bangladesh-India relations since the independence of Bangladesh. Besides chronicling the important bilateral events we have tried to analyse those events with the benefit of hindsight. — BoR Editor
November 11, 2022 : India gifts 30 military trained mules to Bangladesh
Indian Army gifts 10 x Mules (Mountain Artillery) and 20 x Mules (General Service) along with saddler items to the Bangladesh Army on Nov 11, 2022 in a ceremony held at Benapole-Petrapole Inland Container Port (ICP). Senior officers from both sides attended the event. According to Indian Embassy in Bangladesh, the mules will enhance the operational capability of Bangladesh Army in difficult terrain. [Source: Facebook page of the Indian Embassy in Bangladesh]
Earlier in 2020, the Indian Army gifted 20 fully trained military horses and ten mine detection dogs to the Bangladesh Army. [The Hindu, November 13, 2022]
November 9, 2022 : Two killed in BSF shooting at Bangladesh-India border
Two Bangladeshi nationals –Wazkaroni Mia (36) and Ayanul Haque (35)– were killed by the Indian Border Security Force (BSF) near the border adjacent to Lalmonirhat’s Aditmari Upazila. They were shot around 4:30am between the International border pillars 921 and 922, said Border Guard Bangladesh (BGB).
Some 10 to 12 Bangladeshi cattle traders were confronted by a BSF patrol team of Baburhat camp of Sitai Police Station in Cooch Behar district, said BGB. The BSF opened fire at them near Kaimari border of India, leaving Wazkaroni and Ayanul injured severely. The associates of the duo managed to bring them into Bangladesh territory, but they died on their way, said locals. BGB’s Lohakuchi BOP Camp Commander Shariful Islam Sharif said the deceaseds were involved with cattle smuggling. BGB has sent a letter to the BSF protesting the incident.
Wazkaroni’s mother Shafiron Bewa said, “I forbade my son many times from going to India, but he didn’t pay heed. My son used to work for a local cow trader.” Ayanul’s wife Sharifa Begum said her husband used to earn between Tk 10,000 and Tk 12,000 per cattle.
Source: The Daily Star, November 10, 2o22
November 1, 2022 : Bangladeshi Minister thanks India for its role in maintaining political stability in Bangladesh
Bangladesh information minister Hasan Mahmud said during an interaction with the media at the Press Club of India in New Delhi: “Political stability in a country is one of the most essential pre-conditions for prosperity. I strongly believe that to maintain the political stability in Bangladesh, regional stability is also important. I would register my thanks [to India]. To keep the regional stability, and thereby political stability in Bangladesh, India has played a role.” He further informed that Dhaka had taken strong action against people involved in attacks on Hindus and there were 700 more Durga Pujas in Bangladesh this year as compared to 2021. [ Source: The Hindustan Times]
October 27, 2022: New Indian ambassador presents his credentials
High Commissioner of India to Bangladesh Pranay Verma presented his credential to Bangladesh President Abdul Hamid.
গোপন সম্মেলনের অজানা নথি
October 20, 2022
মোহাম্মদ সাজ্জাদুর রহমান
যুদ্ধের চূড়ান্ত পরিণতির পর জনস্মৃতিতে আমরা প্রায়ই জড়িত নানা পক্ষের ভূমিকা সাদা-কালোর ব্যাখ্যায় নামিয়ে ফেলি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এই প্রবণতা আরও প্রকটভাবে দেখা যায়। কেননা, বিজয়ের কৃতিত্বের দাবিদার বিভিন্ন পক্ষ যুদ্ধকালীন নানা অসন্তোষ, বিদ্রোহ, অভিযোগ, সিদ্ধান্তহীনতা কিংবা হতাশার বিষয়গুলোকে পরে আর আলাপযোগ্যই মনে করেনি। এর স্পষ্ট কিছু প্রমাণ পাওয়া যায় সুপরিচিত স্মৃতিকথাগুলোতেও। সেসবে স্ববিরোধী, বিব্রতকর, মানহানিকর কিংবা হয়তো লজ্জাজনক বিষয়গুলোকে বোধ করি সচেতনভাবেই অতীতের কম প্রয়োজনীয় ঘটনা হিসেবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। বলা বাহুল্য, মূলধারার তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধ গবেষকেরাও বিভিন্ন পক্ষের পরস্পরবিরোধী অবস্থান ও ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণে অনাগ্রহী থেকে গেছেন। অথচ যুদ্ধকে রাজনীতির অংশ হিসেবেই যদি ভাবা হয়, তাহলে যুদ্ধকালীন নানা পক্ষের অভ্যন্তরীণ দ্বিধাদ্বন্দ্বের পর্যালোচনাকে ইতিহাস বিশ্লেষণের জরুরি উপায় হিসেবেই দেখার কথা। যেখানে যুদ্ধ মানেই লাখ-কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের বিষয়, সেখানে এর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আর নানা উদ্যোগের দ্বান্দ্বিক জটিলতা এড়িয়ে যাওয়া কঠিন। তা ছাড়া ব্যক্তিমানুষের দোদুল্যমানতা, স্বার্থ, সন্দেহ, অস্পষ্টতা কিংবা কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা রাজনৈতিক নেতাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণপ্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না—এমন ভাবনা অনৈতিহাসিক।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এখন কয়েক হাজার বইপত্রের খোঁজ সহজে পাওয়া গেলেও সেসবের অধিকাংশের মান ও গুরুত্ব নিয়ে চিন্তকসমাজের অসন্তোষ গোপন বিষয় নয়। বলা যায়, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-সাহিত্য যেন কানাগলিতে পৌঁছেছে, যেখানে বহুল পরিচিত তথ্যের চর্বিত-চর্বণ করেই প্রতিবছর প্রচুর বাংলা বই প্রকাশিত হচ্ছে। সেগুলোর সাফল্য অবশ্য যতটা না নতুন ব্যাখ্যা–বিশ্লেষণ বা তথ্যের উপস্থাপনের জন্য, তার চেয়েও বেশি বিশেষ বিবেচনায় সরকারি ক্রয়তালিকায় স্থান লাভের মধ্যেই যেন নিহিত। তার ওপর যুক্ত হয়েছে কথ্য এবং সামাজিক ইতিহাসের নামে অতিসাধারণ ও চিন্তাহীন প্রশ্নে জর্জরিত সাক্ষাৎকার–সংবলিত এবং কাঠামোবিহীন বইপত্রের বাহার। তা ছাড়া যুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে নানা আঙ্গিকের আলাপের বৈশ্বিক ধারা থেকেও বহুলাংশে বিচ্ছিন্ন রয়ে গেছে দেশীয় চর্চা। মুক্তিযুদ্ধ গবেষণায় এই অচলাবস্থার পেছনে যেসব বাস্তব কারণ রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত দলিলপত্র সংগ্রহে নিত্যনতুন উদ্যোগের অভাব। তাছাড়া, অভাবটা কেবল উদ্যোগের নয়, উৎসাহেরও। বাংলাদেশের জাতীয় মহাফেজখানায় মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত নথিপত্র সংগ্রহের সক্রিয় উদ্যোগ না থাকার বিষয়টি হয়তো এর বাস্তব প্রমাণ। পরিস্থিতি যখন এ রকম, তখন যেকোনো অজানা অথচ গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্রের খোঁজ পাওয়া মানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আরও গভীরভাবে ভাবা ও জানার সুযোগ আসা। তা ছাড়া নথিপত্রের গুরুত্ব কেবল নতুন তথ্য লাভের জন্য নয়, পুরোনো শোনা কথা কিংবা স্মৃতিকথায় প্রকাশিত তথ্যের সঠিকতা নির্ধারণের জন্যও সেগুলো প্রয়োজনীয় উৎস হতে পারে। সম্প্রতি প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ও মতিউর রহমান কর্তৃক সম্পাদিত ইংরেজি বই 1971: The Siliguri Conference. Government in Exile Meets the Elected Peoples Representatives: An Untold Story of the Liberation War তেমন একটি আকরগ্রন্থ, যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের কিছু ধূসর দিক উন্মোচনে গবেষক ও পাঠকদের সাহায্য করবে। বিশেষ করে, মুক্তিযুদ্ধকালীন আওয়ামী লীগের ইতিহাস উন্মোচনে বইটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার সূত্রপাত ঘটাতে পারে। মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারকে কী ধরনের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছিল, তারও কিছু দালিলিক প্রমাণ বইটিতে পাওয়া যাবে।
১৯৭১–এর জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে প্রধানত আওয়ামী লীগ-দলীয় জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ভারতের পশ্চিম বাংলার শিলিগুড়িতে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বইটির বিষয়বস্তু হলো যুদ্ধকালীন এই সম্মেলন বিষয়ে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর কিছু নথি। প্রধানত চারটি অংশে বিভক্ত এই বইটির প্রথমেই রয়েছে সম্পাদকের নোট, যেখানে তিনি সংক্ষেপে নথিপত্রের বিষয়বস্তু নিয়ে পাঠককে ধারণা দিয়েছেন। দ্বিতীয় অংশে দেবাশীষ মিত্রের লেখা থেকে আমরা নথিপত্রগুলো উদ্ধারের কাহিনি জানতে পারি। তৃতীয় অংশে লে. ক. (অব.) লুৎফুল হক উক্ত সম্মেলনের একটি বিস্তারিত প্রেক্ষাপট উপস্থাপন করেছেন এবং চতুর্থ অংশে নথিগুলো সংকলিত হয়েছে।
বিষয়টি এখন সুবিদিত যে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে যে ‘প্রবাসী সরকার’ ১৯৭১ সালের এপ্রিলের ১০ তারিখে ভারত সরকারের পরামর্শে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা নিয়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্বের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছিল।১ বলা যায়, বাঙালির নেতা শেখ মুজিবুর রহমান বাদে সে সময়ে আওয়ামী লীগের অন্য কোনো নেতাই তাঁদের সহকর্মীদের কাছে সমালোচনার ঊর্ধ্বে থাকতে পারেননি। প্রবাসী সরকারের নীতিনির্ধারণী ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রতিযোগিতা কিংবা ব্যক্তিত্বের নানা সংঘাত খোদ মুক্তিযুদ্ধের ভবিষ্যৎ নিয়েই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বাঙালিদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণার দুই মাসের মধ্যেই রাজনৈতিক অনুযোগ-অভিযোগ, আঞ্চলিকতা আর দলাদলি সামরিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছিল। সম্পাদক মতিউর রহমান জানাচ্ছেন, এ রকম একটি প্রেক্ষাপটেই ভারত সরকার বাংলাদেশ সরকারের নেতাদের একটি সম্মেলন আয়োজনের পরামর্শ দেয়, যেখানে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। উদ্দেশ্য হলো, নিজেদের বিভিন্ন পক্ষের বিপরীতমুখী চিন্তার ব্যবধান কমিয়ে আনা এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন প্রবাসী সরকারের প্রতি মুক্তিফৌজের আস্থা নিশ্চিত করে স্বাধীনতা অর্জনের অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে রাজনৈতিক মতৈক্য প্রতিষ্ঠা করা। এ ক্ষেত্রে ভারতীয় সামরিক বাহিনীকে, বিশেষ করে ৩৩তম কর্পসকে দায়িত্ব দেওয়া হয় সম্মেলন আয়োজনের এবং তাদের সঙ্গে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সেস বা বিএসএফ–ও যুক্ত ছিল।
নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সদস্যরাসহ ৫-৬ জুলাই অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা এবং জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের আওয়ামী লীগ–দলীয় প্রতিনিধিরা। ব্রিগেডিয়ার অজিত কুমার মিত্র; যিনি ৩৩তম কর্পসের সদর দপ্তরের (প্রশাসন) ব্রিগেডিয়ার ইন চার্জ হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন; সম্মেলনটির আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তাঁরই সন্তান, দেবাশীষ মিত্র, ২০০৪ সালে বাবার মৃত্যুর পর ব্যক্তিগত কাগজপত্রের মধ্যে এই নথিপত্রের সন্ধান পেয়ে যান এবং বলা যায়, বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য সম্পাদক ও প্রকাশকের কাছে এই নথিগুলো প্রকাশের জন্য হস্তান্তরের মাধ্যমে তিনি বেশ উদার মনোভাবেরই পরিচয় দিয়েছেন। অবশ্য তাঁর কিংবা সম্পাদকের বিবরণে স্পষ্ট হয়নি, আবিষ্কৃত হওয়ার এত দীর্ঘদিন পর কীভাবে তাঁদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছিল কিংবা নথিগুলোর মূল কপি এখন কোথায় সংরক্ষিত রয়েছে। যা–ই হোক, ৩৩তম কর্পসের সদর দপ্তরের অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত লে. কর্নেল কে এ মজুমদারও এই সম্মেলন ব্যবস্থাপনায় যুক্ত ছিলেন। এ ছাড়া ক্যাপ্টেন এ ডি সুর্ভের উপস্থিতিও নথিপত্র থেকে জানা যায়, যিনি গোয়েন্দা (৬৪৭ ফিল্ড সিকিউরিটি সেকশন) সংস্থার হয়ে সম্মেলন পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। সম্মেলন সম্পর্কে এই তিনজনের প্রতিবেদন নথিপত্রে স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে সম্মেলনে উপস্থাপিত মিজানুর রহমান চৌধুরীর একটি দীর্ঘ বিবৃতি এবং সর্বোপরি সম্মেলনের প্রথম গোপন অধিবেশনের কার্যবিবরণী; যেটি দিয়ে মূলত বইটির নথিপত্র অংশটি শুরু হয়েছে।
এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, বইটিতে সংকলিত নথিপত্রগুলো অসম্পূর্ণ। কারণ, সম্পাদকের তথ্যমতে, সবটা পাওয়া যায়নি। আসলে সম্মেলনের মূল প্রতিবেদনটিই উধাও। আরও পরিষ্কার করে বললে, দেবাশীষ মিত্র তাঁর বাবার ফাইলের মধ্যে যেটুকু পেয়েছিলেন, সেটুকুতে ইঙ্গিত রয়েছে যে মূল প্রতিবেদনটিতে আরও কিছু অংশ রয়েছে, যা পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া সম্মেলনে যে চার শতাধিক প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়, তাঁদের নামের একটি প্রস্তুতকৃত তালিকাও একই কারণে এই বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু তার পরেও সংকলিত নথিপত্রগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ এই অর্থে যে এই বইটি প্রকাশের আগপর্যন্ত এই গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন নিয়ে কোনো দলিল বা নথির অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায়নি। এ ছাড়া সম্মেলনে উপস্থিত প্রতিনিধিদের কেউ কেউ স্মৃতিকথা লিখে থাকলেও এই সম্মেলন সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো দালিলিক বিবরণ মেলে না। এসব দিক বিবেচনায় বইটির নথিপত্র মুক্তিযুদ্ধ গবেষকদের কাছে অত্যন্ত জরুরি বলেই মনে হবে।বইটির তৃতীয় অংশে লে. ক. (অব.) লুৎফুল হক একটি চমৎকার বিবরণ উপস্থাপন করেছেন যে কীভাবে ইতিমধ্যে প্রকাশিত নানা স্মৃতিকথায় উক্ত সম্মেলনের ইতিহাস উঠে এসেছে। যেমন সম্মেলনকে কেন্দ্র করে তাজউদ্দীন আহমদের বিরোধী আওয়ামী লীগের কিছু গ্রুপের বেশ সক্রিয় থাকার বিষয়টি আগে মঈদুল হাসানের বই কিংবা ফারুক আজিজ খানের স্মৃতিকথায় তোলা হয়েছিল। জনাব হক একই সঙ্গে বইটিতে সংকলিত নথিপত্রে উল্লিখিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলোও এই অংশে তুলে ধরেছেন। অবশ্য সম্মেলনের সফলতা অর্জনের বিষয়ে তিনি যেভাবে উপসংহার টেনেছেন, তার সঙ্গে পুরোপুরি একমত হওয়া কঠিন। কারণ, সম্মেলনের পরেও যুদ্ধকালীন নেতৃত্ব ও বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল কিংবা অন্যান্য মুক্তিযুদ্ধপন্থী দলের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ ঘটনা থেমে থাকেনি। তবে জনাব লুৎফুল হকের লেখায় জুলাই সম্মেলনের আগের ও পরের ঘটনাবলি সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য যুক্ত হলে বইটি সম্পূর্ণতা পেত। যেমন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বা বিপক্ষে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমর্থন থাকা না-থাকা নিয়ে একাত্তর সালের এপ্রিল মাস থেকেই বিভিন্ন রকম সংবাদ পাকিস্তানে ও অধিকৃত বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছিল। আবার আগস্ট মাসে অর্থাৎ জুলাইয়ের এই আলোচ্য সম্মেলনের পরেই আওয়ামী লীগ থেকে চলে আসা ৮৮ জন এমএনএর পদ ফিরিয়ে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের খবরও ফলাও করে প্রচারিত হয়েছিল ঢাকার পত্রপত্রিকায়। সন্দেহ, গুজব আর রটনার এসব ঘটনা দেখে মনে হবে, যুদ্ধের শুরুতেই নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের নেতাদের হৃদয় ও মন জয়ের লড়াইও চলমান ছিল পাকিস্তানি শাসকদের পক্ষ থেকে। পাকিস্তান সরকার, পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানপন্থী অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল (বিশেষ করে পিডিপি) এবং প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে এসব নিয়ে অঘোষিত এক প্রতিযোগিতা যেন শুরু হয়েছিল। পরিস্থিতির জটিলতা বুঝতে আমরা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের স্বরাষ্ট্র (রাজনৈতিক) দপ্তরের গোপন পাক্ষিক প্রতিবেদনগুলোর দিকেও নজর দিতে পারি। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের দ্বিতীয়ার্ধে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের স্বরাষ্ট্র (রাজনৈতিক) দপ্তরের যে গোপন পাক্ষিক প্রতিবেদন২ তৈরি করা হয়েছিল, সেখানে উল্লেখ করা হয়,
এক গোপন খবরে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কয়েকজন নির্বাচিত এমএনএ এবং এমপিএ ১৮ এপ্রিল ’৭১ ঢাকায় পিডিপি প্রধান নুরুল আমিনের সঙ্গে তাঁর বাসভবনে সাক্ষাৎ করেছেন। তাঁরা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আরও জানা গেছে, নুরুল আমিনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন এবং স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা ও রাজনৈতিক সমঝোতার বিষয়ে তাঁরা তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন।
এর পরের মাসেই একই দপ্তর থেকে প্রস্তুতকৃত গোপন প্রতিবেদনে৩ উল্লেখ করা হয়,
এক গোপন সূত্রে জানা গেছে, ২৬ মে ’৭১ দলের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে এক আলোচনায় নুরুল আমিন আশা প্রকাশ করেছেন যে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে তাঁকে নেতা মনোনীত করতে আওয়ামী লীগের ৭৫ জন এমএনএ ইতিমধ্যে সমর্থন দিয়েছেন।
আবার জুন৪ মাসের প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়,
এটা শোনা যাচ্ছে, পিডিপি প্রধান জনাব নুরুল আমিন বিশ্বাস করেন, দেশে পুরোপুরি স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত এমএলএদের সঙ্গে সমঝোতা দরকার। তাঁর মতে, যেসব এমএলএ বিদ্রোহের অবসান ঘটিয়ে সরকারকে সহায়তা করতে চান, তাঁদের অনুকূলে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় গতি আসবে। তাঁর উক্তি অনুযায়ী, তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এমএলএ এবং এমপিএদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সর্বোত্তম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, যাতে তাঁরা সেনাবাহিনীর প্রতি শত্রুতা পরিহার করেন।
আর, ১৯৭১ সালের জুলাই মাসের দ্বিতীয় পাক্ষিকের গোপন৫ রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়,
অন্য একটি তথ্যমতে, ময়মনসিংহ থেকে আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচিত এমপিএ (বর্তমানে পশ্চিম পাকিস্তানে) সৈয়দ বদরুজ্জামান এক বিবৃতিতে জানান, আওয়ামী লীগের কজন এমএনএ ও এমপিএ পাকিস্তান পিপলস পার্টিতে যোগ দিতে পারেন। তাঁর এই বিবৃতি পিডিপি মহলে বিস্ময় উপহার দিয়েছে। শোনা যাচ্ছে, নুরুল আমিন তাঁর দলীয় নেতা–কর্মীদের কাছে এটা বলে দিয়েছেন যে কফিলউদ্দিন চৌধুরী, জহিরউদ্দীন, আসাদুজ্জামান খানসহ (তাঁরা সবাই নির্বাচিত এমএনএ) অনেক নেতা তাঁর সঙ্গে ইতিমধ্যে দেখা করে আনুগত্য জানিয়ে গেছেন। নুরুল আমিনের মতে, জুলফিকার আলী ভুট্টো পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে পা রাখার সুযোগ সৃষ্টি করতে সৈয়দ বদরুজ্জামানকে কাজে লাগাচ্ছেন। শোনা যাচ্ছে, জহিরউদ্দীন ও আসাদুজ্জামান খানকে নুরুল আমিন বলেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে যেসব এমএনএ ও এমপিএ থাকতে চাইছেন না, তাঁদেরকে বৈঠকে আহ্বান করে সিদ্ধান্ত জানাতে বলা হবে, তাঁরা কি নতুন কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দেবেন নাকি স্বতন্ত্র থেকে যাবেন, নাকি নিজেদের জন্য নতুন কোনো রাজনৈতিক মঞ্চ গড়বেন।
এসব তথ্য থেকে যে বিষয়টি স্পষ্ট, তা হলো, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার প্রশ্নে ১৯৭০-এর নির্বাচনের মাধ্যমে আবির্ভূত পাকিস্তানের প্রধানতম দলের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলেন কি না, তা নিয়ে ১৯৭১ সালের এপ্রিল থেকেই রাজনৈতিক মহলে নানা আলাপ চলছিল। আর তাই প্রবাসী সরকারের কাছে জুলাই মাসের ওই সম্মেলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল—এই বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য যে তাদের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে মতৈক্য রয়েছে।
বইটিতে সংকলিত নথিপত্রগুলোর মধ্যে যে বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়, তা হলো প্রবাসী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামারুজ্জামান এবং কমান্ডার ইন চিফ এম এ জি ওসমানীর মতো ব্যক্তিদের মনোভাব বোঝার জন্য ভারতীয় কর্মকর্তারা সচেষ্ট ছিলেন এবং তাঁদের বিস্তারিত সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছিলেন। যুদ্ধ ও রাজনৈতিক পরিকল্পনা সম্পর্কে নেতাদের মতামত জানা ছাড়াও তাঁদের ব্যক্তিত্বের একধরনের মূল্যায়নও নথিপত্রে দেখা যায়। এই সম্মেলনে উপস্থিত অন্য প্রতিনিধিরা মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা কীভাবে মূল্যায়ন করছেন, সে ব্যাপারেও সংগৃহীত তথ্য প্রতিবেদনে স্থান পেয়েছে। মুক্তিফৌজের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতৃত্বের এবং আওয়ামী লীগের যুদ্ধকালীন নেতৃত্বের সঙ্গে ছাত্রলীগের তরুণ নেতাদের দূরত্বের প্রমাণও সংকলিত নথিপত্রে স্পষ্ট।
যুদ্ধকালীন এই সম্মেলনটি যে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গেই বিবেচিত হচ্ছিল, তার প্রমাণ পাওয়া যায় সেখানে গৃহীত ও আলোচিত কিছু সিদ্ধান্তের মধ্যেই। যেমন এই সম্মেলনের মাধ্যমেই ‘নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগে’র বিলুপ্তি ঘটে এবং ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগে’র নতুন নাম দেওয়া হয় ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’। সামরিক প্রয়োজনে সমগ্র বাংলাদেশকে বিভিন্ন অঞ্চলে ভাগ করে সেগুলো বিভিন্ন সেক্টর ও সাব-সেক্টরে বিভক্ত করার সিদ্ধান্তও এই সম্মেলনে আলোচিত হয়েছিল। ভারতের কাছ থেকে কী ধরনের সামরিক সহায়তা প্রয়োজন, তা বেশ স্পষ্ট করেই কর্নেল ওসমানী সম্মেলনে দাবি করেছিলেন। সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকারের বাজেট পাস করা সম্ভব না হলেও প্রাদেশিক ও জাতীয় পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জন্য মাসিক ভাতার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। এর পরিমাণ নিয়ে প্রবল অসন্তোষের বিষয়টি নথিতে উল্লেখ করা আছে।
বাংলাদেশ সরকারের মূল নেতাদের চমৎকার গুণাবলি আর মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তাঁদের অবিচল অঙ্গীকারের কথা ভারতীয় সামরিক বাহিনীর ওই তিন কর্মকর্তার প্রত্যেকের প্রতিবেদনেই স্থান পেয়েছে। তবে নথিপত্রগুলোতে যুদ্ধকালীন বাংলাদেশি নেতাদের প্রতি বিবিধ অভিযোগও লক্ষণীয়। এসব অভিযোগের সত্যতা কতটুকু, তা এ পর্যায়ে তদন্ত করা কঠিন হলেও যেটা স্পষ্ট তা হলো, আওয়ামী লীগের নেতাদের পারস্পরিক অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতার প্রকাশ্য রূপ দেখা গিয়েছিল সম্মেলনের মধ্যেই। যেমন পেছনের দিকের বেশ কয়েকজন প্রাদেশিক ও জাতীয় পরিষদের নির্বাচিত নেতা অভিযোগ করেছিলেন যে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বিপুল পরিমাণ পাকিস্তানি মুদ্রা ব্যাংক লুটের মাধ্যমে ভারতে স্থানান্তরিত হওয়ার পর সেগুলো জ্যেষ্ঠ জনপ্রতিনিধিরা আত্মসাৎ করছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিফৌজের কাছে দেশের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় কি না, তা নিয়েও একধরনের অস্বস্তিকর আশঙ্কার উপস্থিতি ছিল। তাই মুক্তিফৌজকে রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীন করার বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার দাবিও তোলা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের কেউ কেউ ছাত্রলীগের প্রতি অভিযোগ করছিলেন যে যুদ্ধকালীন বাংলাদেশের গণহত্যার দায় তাদের ওপরেও বর্তায়। কারণ, তারাই ২৫ মার্চের আগে সারা পূর্ব বাংলায় বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে ইয়াহিয়াকে উন্মত্ত আক্রমণের পথ তৈরি করে দিয়েছে। অন্যদিকে ছাত্রলীগের দাবি, মুক্তিফৌজের অধিকাংশই ছাত্রলীগের সদস্য এবং তাদের কষ্টের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জিত হলে দেখা যাবে আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিরাই সুবিধা নিচ্ছেন। এ ছাড়া জনাব কামারুজ্জামান এবং এম এ জি ওসমানীর নিয়োগের বিষয়টি নিয়েও অনেকের আপত্তি সম্মেলনে প্রকাশ পায়। বিশেষ করে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এম এ জি ওসমানীর বিরুদ্ধে নকশালপন্থীদের মুক্তিফৌজের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক দায়িত্বে নিযুক্ত করার বিস্ময়কর অভিযোগও তোলা হয়েছিল। সব মিলিয়ে সম্মেলনের পরিস্থিতি নিয়ে ক্যাপ্টেন সুর্ভের মন্তব্যের (পৃ. ১১৯-১২০) বাংলা রূপান্তর অনেকটা এ রকম দাঁড়ায়,
উপস্থিত প্রতিনিধিদের মধ্যে খুব কম দায়িত্বশীল ব্যক্তিই আছেন, যাঁরা সত্যিই পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারছিলেন। প্রতিনিধিদের বেশির ভাগই বেশ ভাবলেশশূন্য ছিলেন এবং মনে করছিলেন যে পুরো আয়োজনটি একটি দুর্দান্ত প্রমোদভ্রমণের বিষয়। এমএনএ এবং এমপিএদের মাসিক ভাতা কত বরাদ্দ হচ্ছে, তা নিয়েই বরং বেশি মাথাব্যথা লক্ষ করা গেছে। শিলিগুড়ির পার্থিব আনন্দের বিষয়গুলোই যেন সমাবেশের মূল আগ্রহ।
বইটি সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও বেশ প্রাসঙ্গিক। এ ক্ষেত্রে প্রায় এক যুগ আগে দৈনিক কালের কণ্ঠ–এ প্রকাশিত৬ এক সংবাদভাষ্যের দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে,
পাকিস্তান গণপরিষদে নির্বাচিত এবং পরে দল থেকে বহিষ্কৃত ৪৩ জন আওয়ামী লীগ–দলীয় সদস্যের তালিকাটি সংসদ সদস্যদের তীব্র আপত্তির মুখে সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি থেকে এক্সপাঞ্জ করেছেন স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ। গতকাল বুধবার সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের তারকা চিহ্নিত এক প্রশ্নের উত্তরে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ জানান, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচিত ৪৩ জন গণপরিষদের সদস্যকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তিনি সংসদকে আরও জানান, এসব সদস্যের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার কিংবা তা বহাল রাখা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের কিছু করার নেই। এ তালিকা প্রকাশের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার আবুল কাশেম, রওশন জাহান সাথী ও শামসুর রহমান শরীফ ডিলু। তাঁরা বলেন, এই তালিকা প্রকাশ সঠিক হয়নি। স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে যাঁদের নাম এ তালিকায় দেওয়া হয়েছে, তাঁরা অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নিয়েছেন। সুতরাং তা এক্সপাঞ্জ করা উচিত। আইনমন্ত্রীর উপস্থাপিত যুদ্ধাপরাধের দায়ে বহিষ্কৃতদের তালিকা প্রকাশ নিয়ে প্রথমেই প্রশ্ন তোলেন আওয়ামী লীগ দলীয় সিনিয়র সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ। পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্যের সুযোগ নিয়ে তিনি বলেন, এ প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে আসেনি। বহিষ্কৃত ব্যক্তিরা শুধু যুদ্ধাপরাধী হিসেবে নন, বিভিন্ন কারণে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন, তাঁদের সবাই স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন—এটা ঠিক নয়। যাঁদের নাম তালিকায় এসেছে, তাঁদের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নিয়েছেন। সুতরাং সংসদের কার্যবিবরণী থেকে এই প্রশ্ন প্রত্যাহার (এক্সপাঞ্জ) করে নতুন করে উত্তর দেওয়ার দাবি জানান তিনি। উল্লেখ্য, ওই সময় বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ কেউ এখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন।
অতিসম্প্রতি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল ১৯৭০ সালে নির্বাচিত এমএনএ ও এমপিএদের মধ্যে যাঁরা পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করেছিলেন, তাঁদের তালিকা প্রণয়ন ও গ্যাজেট প্রকাশের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করার ক্ষমতাও পেয়েছে।৭
সবশেষে বলা যায়, এ রকম গুরুত্বপূর্ণ একটি বইয়ে নির্ঘণ্ট থাকা জরুরি ছিল। একটি দালিলিক ইতিহাসের বই হিসেবে নথিপত্রের বিভিন্ন তথ্যের (যেমন ব্যক্তির নাম কিংবা ঘটনা) জন্য টীকা-টিপ্পনী দেওয়া থাকলে আগ্রহী এবং নতুন পাঠকদের কৌতূহল মিটত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কর্নেল এম এ জি ওসমানীর কোন ভাতিজা নকশালপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন, যাঁকে মুক্তিফৌজের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করা হচ্ছিল; তা নিয়ে টীকা বা ফুটনোট থাকা প্রয়োজন ছিল। তা ছাড়া মূল নথিপত্রের দু-একটি ছবি বইটিতে থাকলেও বেশ ভালো হতো। প্রতিবেদনগুলোর প্রাপক কে বা কারা এবং এসবের ভিত্তিতে কী ধরনের সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত নেওয়া হয়েছিল, তা এই আংশিক নথিপত্র থেকে বোঝার উপায় নেই। তবে এ ধরনের বহু প্রতিবেদন যে সে সময়ের ভারতীয় সামরিক ও বেসামরিক কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত করেছিল, তা সহজেই অনুমেয়। এই বইয়ে উপস্থাপিত নথিপত্র প্রমাণ করে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনার উপাদান এখনো নানা জায়গায় ছড়িয়ে আছে। শিলিগুড়ি সম্মেলনকে কেন্দ্র করে এই দালিলিক ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধের রাজনীতি বোঝার ক্ষেত্রে অবশ্যপাঠ্য হিসেবেই বিবেচিত হবে।
লেখক পিএইচডি গবেষক, স্ট্রসলার সেন্টার ফর হলোকাষ্ট অ্যান্ড জেনোসাইড স্টাডিজ, ক্লার্ক ইউনিভার্সিটি। ইউএসএ।
তথ্যসূত্র:
১. দেখুন, এইচ টি ইমাম (২০০৪) বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১। আগামী প্রকাশনী, ঢাকা। পৃ. ৭৮
২. দেখুন, পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের দ্বিতীয়ার্ধের পাক্ষিক গোপন প্রতিবেদন। পূর্ব পাকিস্তান সরকার, স্বরাষ্ট্র (রাজনৈতিক) অধিদপ্তর, সেকশন ১। আরিফুর রহমান (২০১৫) একাত্তরের গোপন দলিল। জাগৃতি প্রকাশনী, ঢাকা। পৃ. ২৯
৩. দেখুন, পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে ১৯৭১ সালের মে মাসের দ্বিতীয়ার্ধের পাক্ষিক গোপন প্রতিবেদন। পূর্ব পাকিস্তান সরকার, স্বরাষ্ট্র (রাজনৈতিক) অধিদপ্তর, সেকশন ১। আরিফুর রহমান (২০১৫) একাত্তরের গোপন দলিল। জাগৃতি প্রকাশনী, ঢাকা। পৃ. ৪১
৪. দেখুন, পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে ১৯৭১ সালের জুন মাসের প্রথমার্ধের পাক্ষিক গোপন প্রতিবেদন। পূর্ব পাকিস্তান সরকার, স্বরাষ্ট্র (রাজনৈতিক) অধিদপ্তর, সেকশন ১। আরিফুর রহমান (২০১৫) একাত্তরের গোপন দলিল। জাগৃতি প্রকাশনী, ঢাকা। পৃ. ৪৫
৫. দেখুন, পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে ১৯৭১ সালের জুলাই মাসের দ্বিতীয় পাক্ষিকে পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে গোপন রিপোর্ট। আরিফুর রহমান (২০১৫) একাত্তরের গোপন দলিল। জাগৃতি প্রকাশনী, ঢাকা। পৃ. ৭০
৭. দেখুন, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন ২০২২। 2022-09-20-11-55 55a3a24bbf2fa27578169cd029f2f456.pdf (jamuka.gov.bd)
[লেখাটির ঈষৎ পরিবর্তিত সংস্করণ দুই পর্বে প্রকাশিত হয়েছে ১৯ ও ২০ অক্টোবর, ২০২২, দৈনিক প্রথম আলো’তে।]
A Forgotten Family of Royal Poets
October 19, 2022
Dinesh Chandra Bhattacharya
Reference: Dinesh Chandra Bhattacharya, A Forgotten Family of Royal Poets : The Sura Kings of Вhulua
Dinesh Chandra Bhattacharya, Bengal: Past and Present , Vol-XLVIII, 1934, pg 17-22
Bhulua is the largest pargana in the district of Noakhali and gave the name to the district down to the year 1868. A romantic and semi- historical account of the first Hindu king of Bhulua, which originally comprised the major portion of the whole district, is still current among the people and a short history of the family was first published by Dr. Wise of Dacca is his famous article on the Bara-Bhuiyas of Bengal (J.A.S.B. 1874). It has subsequently found place іп a number of later works in Bengali on local history. Unfortunately, almost all the writers had to rely solely on local traditional and their accounts are thus mixed up with much that is false and fanciful. The latest account is from the pen of our learned friend Mr. Bhattasali of the Dacca Museum (Bengal: Past and Present, Vol. XXXV, p. 38-9) who, we are glad to note, has been able to clear most of the current errors in the history of the family. It is now possible in light of newer materials to improve considerably upon the brief sketch of Мг. Bhattasali, where a few errors have unwittingly crept in and to present a more comprehensive account of this almost forgotten family.
The essential facts of the story are (i) that a Prince named Biswambhar Sura son of Adisura of a Kastriya family of Mithila founded the kingdom of Bhulua and (ii) that the exact date of the event is given as 1203 A.D. It is universally admitted that the family was soon absorbed into the Kayastha community of Bengal.
Attempts have recently been made to connect the family with the famous king Adisura of Bengal and it is put forth for the first time in the District Gazetteer that probably “they were Kayasthas of West Bengal.” These do not seem to take into proper account the important fact that a few families claiming descent from Prince Biswambhar along with a few Brahmin families which originally migrated with the Prince are even now partly ruled by customs prevalent only in Mithila and not found in Bengal. This confirms in our opinion the Maithil origin of the family. The date of the event roughly coincides with the invasion of Bengal and Magadha by Bakhtiyar Khilji and that itself lends support to its probability. We have to reject this date, for only seven generations are found to intervene between Biswambhar and, Laksmanamanikya, the most famous ruler of the dynasty whose date is known to be about 1600 A.D.— seven generations to four centuries cannot be accepted as history.
In several districts of Eastern Bengal a new era called the Parganati San is found used in the dating of older records, the starting of the era falling variously between 1199-1203 A.D. The origin of this era is still unknown. Mr. Bhattasalli suggested (Ind. Ant. 1923 pp. 314-20) that it probably refers to the conquest of Bengal by Bakhtiyar. This era, I have found largely used in the older records of Bhulua dated in the 17th and 18th centuries A.D. It is our surmise that the mention of this era might have led the people of Bhulua to wrongly ascribe it to their local hero Visvambhar, not knowing that the era was current in other districts specially Tippera and Dacca.
The genealogy points to about 1400 A.D. as the probable date of Visvambhar the first king of Bhulua. The foundation of this kingdom is preceded, according to the legends, by the discovery and installation by that king of a black stone image of a Goddess, Varahi Devi, which at once became the presiding deity, so to speak, of the entire Pargana and has ever since been worshipped by the Hindus with uniform devotion. The Goddess is regarded as a type of the well-known Hindu deity Durga. I shall never forget the shock that a distinguished old Pandit of Bhulua received from me when I disclosed to him that the image does not at all belong to the Hindu pantheon but it is really a well-known Buddhist Goddess named Marichi with eight arms and three faces and the five Dhyani Buddhas are depicted there as an infallible sign of its Buddhistic origin. (cf. Bhattasali : Iconography p. 272)
The worship of Gods of the Buddhist Pantheon by the later Hindus after the fall of Buddhism is not unknown elsewhere. But it is certainly strange that Bhulua which once formed an important seat of Sanskrit learning should let this fiction survive through half a millennium and that we might say with impunity. For, the Goddess far from disowning Her alien devotees preferred to become a ‘living deity” with them, if we are to believe in the stories current in the Pargana about the remarkable powers of the Goddess. It is said before any calamity attending the royal family the image would be found to ‘sweat’ profusely.
Nothing is known about the immediate descendants of Visvambhar. Possibly the earliest mention of the kingdom of Bhulua is found in the recently published Chronicles of Tippera, the Rajamala, from which it is learned that King Devamanikya (1520-35) of Tippera conquered Bhulua perhaps for the first time ; for, Bhulua is not included among the extensive conquests of his predecessor Dhanyamanikya who raided upto Chittagong. (Rajamala Vol.II р. 35) The first specific mention of a King of Bhulua is also made in the same work Rajmala ; king Amaramanikya (1577-86 A.D.) of Tippera is stated therein to have conquered Durlabha Roy of Bhulua in the year 1578 A.D. (Ib. Vol. П р. 83,306). We propose to identify this Durlabha with the grandfather of king Laksmanamanikya whose name is given in all tables as Rajavallabha. Probably the correct name was Rajadurlabha ; for in Bengali Mss. the two words Rajadurlabha and Rajavallabha are likely to be misread as one another.
Rajadurlabha was succeeded by his son Gandharvamanikya who is mentioned in the Rajamala as defeated soon after 1600 A.D. by king Yasomanikya (1600-1620) of Tippera. Мг. Bhattasali’s finding that he probably came after both Laksmanamanikya and Anantamanikya is totally wrong. For, Gandharva is named and eulogised in elegant verses as the father of King Laksmana in a contemporary work the Kautukaratnakara. This short farcical play in Sanskrit was written by the family priest of Laksmana. In the prelude after a glowing description of the capital of the kingdom, also named Bhulua, the father of the poet’s patron is thus praised :—
“His father was king Gandharvamanikya, who was more handsome than Cupid, who had his charming fame formed into a white parasol and who was the Full Moon (rising) out of the ocean of the Sura family.”
In a subsequent verse the poet describes eloquently the big elephant on which the king rode to fight his battles. A Ms. of the play exists in the library of the India Office, London (Eggeling: Catal. p. 1618) and another has recently been secured for the Dacca University, Among a large number of copies of land grants preserved in the Tippera Collectorate we were able to discover a copy of an important copperplate grant of this king Gandharvamanikya. This happens to be the only copperplate inscription discovered in the district of Noakhali, though the original can no longer be traced.
The transcript evidently made by an ordinary clerk suffers consequently from a number of errors. There was a seal attached to the plate but the emblem does not appear in the copy. On one side of the seal occurs the name of the donor and on the other the name apparently of his minister. The entire inscription is in Sanskrit verse except one sentence in prose in the middle.
The number of lines in the original plate cannot be ascertained from the copy. The translation of the inscription as far as we have been able to restore it is as follows :—
Translation
vv. 1-4. Hail! By the great king Sri-Gandharvamanikya the wise, who was a bee in the lotus feet of Srikrisna, who destroyed his enemies by means of arrows thrown with ease from a bow, who was in his soul devoted to the two feet of Govinda and who had come down with the (knowledge of) all — arts of a great councillor, —(landed) properties were given, for increasing (the life) in Heaven of his father, to Brahmins viz. the wise Ramachandra, Ramananda Sarma and the learned Hridayananda, who was celibate.
v. 5. In (villages) Kachihata and Nazirpur . . . . lands upto the home-stead of Raghuya (?) &c.
The tax of 5 per cent. (?) of the village full of houses (?) is remitted ; let it be enjoyed at will even through sons, grandsons &c.
v. 6. At whatever different times anyone owns the land, to him belongs the fruit of that land-grant. Hence the property given by me to the Brahmins should be maintained by (future) kings.
v. 7. And also, Whoever takes away a Brahmin’s property given by himself or by others becomes for 60,000 years a worm in dirt.
We are unable to restore the topographical portion of the inscription. The grant shows that Gandharvamanikya was a Vaisnava by religion and the gift of a certain measure of land in 2 villages was made by him with the express purpose of enhancing the merits of his deceased father in favour of three Brahmins named Ramachandra, Ramananda and Hridayananda. In the last line there is a figure apparently giving the date of the record, which reads 1403. The reading is evidently wrong, the figure for 5 which had, as is well known to students of epigraphy, a left-hand lateral stroke was apparently misread by the copyist as 4. Referring to the correct date 1503 to the Saka era the date of the record works out to be 1581 A.D. The inscription proves, therefore, that Gandharva’s father died shortly after his defeat at the hands of the king of Tippera about the year 1580-81 A.D. Nothing further is known about Gandharva whose name curiously is omitted in all previous accounts. The chronicles of Tippera refers to him as Gandharva Narayana denying him the title Manikya which attaches to the monarchs of
Tippera.
Gandharva was succeeded soon after 1600 A.D. by his son king Laksmanamanikya by far the most celebrated king of the dynasty about whom many stories are still current. He is popularly included among the famous “12 Bhuiyas’’ of Bengal who struggled for independence against the Mogul Emperors and as early as 1791 A.D. his name is mentioned as such in C. W. B. Rouse’s Dissertation concerning the landed property of Bengal. But his actual participation in this struggle remains yet to be proved. During the times of the famous Isa Khan he did not yet come to the throne. While Islam Khan’s expeditions as narrated in the contemporary work the Baharistan, encountered in Bhulua a prince named Anantamanikya who was evidently his successor. The only struggle in which Laksmanamanikya might have joined is that between Mansingh and Kedar Roy about 1602-3 A.D. One of his Sanskrit dramas the Vikhyata-vijaya was meant originally to be staged before a gathering of princes at Kurukshettra near Delhi. This would presuppose his sojourn to the Mogul Court at Delhi evidently on a peaceful mission and ‘it is not unlikely that he may have been won over by Mansingh after the fall of Kedar Roy in 1603 A.D.
Laksmanamanikya had enmity with the ‘boy’ chief Ramachandra of Bakla (Barisal) and that proved his undoing. For, he was treacherously made a captive and removed to Chandradvipa where he was subsequently put to death about the year 1611-12 A.D. The story of this treachery is even now a household word in Bhulua where the incident has given rise to a pithy line current among the Pandits :— There is no sense in Bakla.
King Laksmana was by the tradition of an exceptionally robust constitution and the coat of mail which he wore is said to be still preserved as a relic in‘ his ruined palace at Kalyanpur, weighing about a maund. Of his considerable literary achievements we shall speak below. The exact nature of his relationship with Anantamanikya, the next ruler of Bhulua mentioned in the Baharistan, has not been ascertained by any previous writer.
One historian of Noakhali (Babu Pyarimohan Sen) prints a table showing three brothers Laksmana, Ananta and Udaya. But all these tables have gone the wrong way in altogether omitting the name of Gandharva. Fortunately a correct genealogy we were able to procure from a direct descendant of Anantamanikya and the name of Gandharva appears there for the first time. According to this account, Gandharva had a younger brother named Prince Udayamanikya whose son was Anantamanikya. He was thus the first cousin and rival to the throne of the great Laksmana. According to a tradition, which I heard from an old Pandit, cousin Ananta was even, more robust in physique than Laksmana who entertained a feeling of jealousy and suspicion against him.
It is said king Laksmana once contemplated his secret murder and invited him as if out of affection to a sumptuous dinner all alone in his own presence. In one of the rooms of the ruined palace at Kalyappur the poor Prince sat to his meals before Laksmanamanikya seated with drawn sword in the Royal seat and even as he was wondering whatever might be the motive of the king he suddenly grew suspicious and by a desperate leap broke clearly through a window; he ran with his life to the village of Srirampur, a distance of 12 miles and there took shelter with the scion of the Sura family that still survives. It appears that Anantamanikya subsequently sought the help of the Magh ruler of Chittagong and after the tragic fate of Laksmanamanikya he, probably with the help of the Maghs, usurped the kingdom of Bhulua from the immature sons of Laksmana.
According to the Baharistan Anantamanikya was defeated by the forces of Islam Khan in 1613 A.D. and fled to the country of the Maghs. Of the successors of Ananta for about a century nothing practically is known. Mr. Bhattasali deserves all credit for correcting a most curious error, due to a misinterpreted misreading, that has vitiated all the recent works on the subject including the District Gazetteer where Laksmanamanikya is stated to have been succeeded by his son named Balaram Roy about the year 1597 A.D. Balaram actually belonged to the Sura family but his date as we have found in a grant by him is only 1167 BS. (1760 A.D.)
According to two printed tables that have come to our hands Laksmanamanikya had four sons ; the names are given in the following order—Vijaya or Jaya, Amara, Dharma or Varma, and Chandra. This is materially confirmed by Mss. works in Sanskrit that have recently come to light. Laksmana’s eldest son was Dhanyamanikya (misread in the tables as Dharma or Varma) who succeeded to the throne after the overthrow of Ananta and we can easily imagine that he had friendly relations with the conquering Moguls who had then established a permanent outpost at Bhulua. Dhanyamanikya is highly eulogized by two of his younger brothers named Chandramanikya and Amaramanikya in their respective works in Sanskrit. Mr. Bhattasali was clearly wrong in identifying this Dhanyamanikya with the celebrated Tippera king of that name; for, one of the brothers Amaramanikya has given the father’s name Laksmana along with the name of the eldest brother who was then the reigning monarch. Besides, the Chronicles of Tippera do not show any brothers of Dhanyamanikya by the names of Chandra and Amara and the Tippera kings never pretended scholarship in Sanskrit. [Мапаsi for (?) 1334 B.S.]
Dhanyamanikya of Bhulua died childless about the middle of the 17th century and was apparently succeeded by one or more of his three younger brothers. In one document preserved in the Tippera Collectorate (No. 3844 of copies of Revenue free land grants) dated 1167 B.S., there is [a] reference to a previous grant by Raja Amaramanikya who must, therefore, have come to the throne at one time. The last prince of the dynasty is stated to be Rudra Roy or Rudramanikya, son of the youngest son of Laksmana named Vijayamanikya. We came across copies of two land grants by this prince in the Tippera Collectorate where his full name is given as Rudra-rama-gopala Raya.
This prince was, by well-known tradition, from his early life maimed and invalid and the kingdom was ruled successfully by his queen Rani Sasimukhi who had uncommon ability and intelligence and her memory is still universally respected in the Pargana. In tһе earlier of the two land grants (No. 3913 Ibid.) dated in the Parganati year 517 (1719 A.D.) the name of (Rani) Sasimukhi is associated with that of her husband, proving her participation in the affairs of the state. She comes of a rich Kayastha family of Jessore and during her regime, as she was childless, the Pargana was divided into three shares which passed to the hands of the three aristocratic families of Dattapara, Maijdi and Khilpara. This was sometime before the year 1728 A.D. From the other grant dated 534 Parganati Era (1736 A.D.) it appears that the Prince was still alive in that year (No. 3934 Ibid.) The subsequent history of the Pargana is beyond the scope of this paper. The direct line of Laksmanamanikya became extinct with Rudra Roy who died childless. But it is not generally known even in Bhulua that the family of Laksmana’s redoubtable cousin Anantamanikya still survives in the district of Tippera. The great-grandson of Ananta named Pratapamanikya left Bhulua apparently failing to secure any share of the Pargana and settled in a village about 12 miles from the town of Comilla.
Kangal Harinath’s Baul Songs
October 2, 2022
Tapon Majumder
A few learned Bauls (mystic singers) who had dedicated their literary genius to bringing their music to mainstream social life through the passage of time, Kangal Harinath is without any doubt one of them. Travel writer Roy Jolodhor Sen, historian Akshay Kumar Maitreya, Mir Mosharrof Hossein of the famous Bishad Shindhu, Tantrik devotee Shibchandra Biddyanath and Dinendra Kumar Roy are amongst the many intellectuals who were influenced by Kangal Harinath.
Kangal Harinath was born in the month of Srabon 1240 of the Bangla calendar year (1833 in Roman calendar). His birthplace was in Kumarkhali Upazilla which was then in the district of Pabna, it now falls under Kushtia. It was then a center of education, literature and trade. Kumarkhali and the villages adjacent to it were famous for anti-Nil-Chaash (indigo cultivation) and for the anti-tax movement.
In the month of April, 1863, Kangal Harinath’s “Grambarta Prakashika” started its publication. To earn a living, he worked as a bill collector at Nil Kuthi (indigo storage) and was a teacher at a school. His work experience made him passionately oppose indigo cultivation. He had the opportunity to observe the cruelty of the Nil traders. He resigned from his job as a bill collector and did everything he could to oppose the Nil traders. Because of the cruelty of the Nil traders, his magazine “Grambarta Prokashika” took a direct, strong and rebellious stand against Nil-Chaash. Initially, he began to write the whole magazine by hand without a printing machine, as it gained popularity, Kangal established a printing press on his own. The printing machine is still present in Kundupara Kangal Kutir (hut). Before that, the journalist chapter of his life began in Ishwar Gupta’s “Songbad Provakor” magazine.
Realizing the importance of Baul music, Kangal Harinath decided to raise humanity and then turn that humanity into patriotism, and eventually make patriotism bring about social welfare – Kangal started practicing writing Baul music. He was inspired mainly by the legendary Baul musician Fakir Lalon Shah. Lalon was born in a village near Kumarkhali called “Bharara”. Kangal and Lalon had great degree of closeness. Baul-king Lalon often used to visit Kangal Kutir. According to many locals, the frequent visits of Lalon and his gang to Kangal Kutir inspired Kangal’s disciples to form a Baul group. The formation of the group materialized in Bangla year 1287 with the help of historian Akhkay Kumar Moitra and Jolodhor Sen. The group was called “Fikir Chand Fakirer Dol”. He began to write lyrics for Baul songs. His family given name began to fade away with the emergence of his new pen name; a Baul. He produced many songs with the names “Kangal” and “Fikir Chand Fakir”. He stared to become known as “Kangal Fikir Chand”.
With the power of music, he started to strike the minds of the inactive, the redundant and the cruel. His music was simple yet symbolic at the same time. Known to be Kangal’s first lyrics, the following offers fellow human to rise above the temptations of earthly matters:-
“Think day and night indestructible towards truth.
The truth will not be touched by the thief or the robber;
The mind towards the truth – let it flow towards it without any deception.
Fakir Chand says so, what are you doing, don’t be worried,
Let us move towards the truth somehow, there will be no more pain.”
Once it began, it spread to villages, sub-districts, districts and to the provinces. This story is brilliantly described in first volume of Jolodhor’s edited book “Kangal Harinath”. It began the chain reaction which led others like Mir Mosharrof to start writing with pen name “Mosha”.
Kangal Harinaths’s effort to keep harmony in ethnicity and society was remarkable. With humor and thought provoking lyrics, he tried to remove the painful scars of ethnic tension in society. Therefore, he wrote;
“Blinded by different religions, brothers are fighting with their eyes shut,
Open your eyes and see the difference, all are misguided differently;
God is one, think for once – think in a different mood”.
Religious blindness is the root cause of poisonous ethnic tension, Kangal tried to make us understand this fact with his lyrics. His call for overall social welfare can be found in his writing;
“Those who see iron in stone and lead
People call them complicated
These are not hard – they melt away someday
Just heat up in a clever way
The brother who holds a hard soul,
Never does his hear melt.”
Mesmerized by the popularity of Fikir Chand, Akhkhay Moitra commented “didn’t know how it could be done – the way to strike the hearts of the masses of the nation.”
Fikir Chand’s expertise as a lyricist can be traced in some of his songs about human creation. The maturity and the sharpness in his lyrics can only be found in few other Bauls. He toppled all other Bauls except for Fakir Lalon Shah with his evergreen lyrics. His popularity can only be matched with Pagla Kanai and poet Mukund Das. The use of words and the depth of his writing was unique.
The mystery of human creation can be found in Kangal’s writing. The immensity to discover the truth about human creation in Kangal’s writing is not easy to ignore. The usage of analogy and symbolism can be found in many of his writing;
“Where do we come from, where do we go,
Head start to spin, it goes nowhere.
Oh! Brother, the seed of fig tree is too small,
Inside it there are few drops of water.
When dropped on ground, within days it shoots up high.
Oh! Brother, blood and seed,
They are two of the same,
We all know it,
But never feel the mystery.
Again, artists draw,
Insects do the color.
Fakir Fikir Chand says, this is the word,
It is not ours to understand the mystery of the lord.
Once you take a dive in your inner mind, you can not swim out of it”.
Rebel, serviceman, teacher, philanthropist, journalist, spiritualist and trendsetter; people know him by all these characters he played in life. But the main ingredient of him as a man is his Baul songs. They are the best creation of his literary life. The songs were popular amongst the landlords and the kings of his time. His songs are evergreen, and they still manage to evoke strong emotion to the one listening.
His songs also addressed social decay. He was absolutely against living a life of intoxication. In his lifetime, he saw the early demise of great poets like Michael Madhusudan Dutt and Ishwar Gupta because of alcoholism – his heart wept for those great poets. Kangal, therefore, despised all sorts of intoxicants.
The volume of Kangal’s literary work is huge and also diverse in subject matter. Truth-seeking, creationism, symbolism, poverty and regret; all matters of material and spiritual life can be found in his Baul songs. There is spiritual connection between Kangal’s Baul songs and Bangla folk songs.
Most of Kangal’s writings are of an esteemed level – it can only be proved if all his literary work be found scattered around Kumarkhali and its surrounding areas. It is unfortunate that no initiative has been taken to collect the material.
Kangal’s work can be a great catalyst and open the inner eye, thus bringing back humanity in society. His songs on various subjects can curb the current mindset into believing – “I am better than the other”. The diversity in Kangal’s songs holds that power.
Tapon Mojumder has devoted his life to singing and spreading the songs of Kangal Harinath
Translated by Zia Nazmul Islam
The article was published in Star Insight, The Daily Star on July 28, 2012.
Century-old M T Hossen institute under threat
September 29, 2022
Cultural workers and civil society members are up in arms against an attempt by Lalmonirhat business leaders to acquire part of MT Hossen Institute for the construction of a school building.
History of M T Hossen institute
The institute goes back to the British period as part of the railway establishment. It has been an iconic cultural centre, but is now under threat. The Lalmonirhat railway divisional headquarters started its journey during the British rule. After the partition in 1947, it became part of the Pakistan railway and subsequently of the Bangladesh railway after independence.
From 1880 to 1890, the Bengal Duars Railway (BDR) company first laid the tracks of the Lalmonirhat–Burimari rail route, locally known as the BDR line, for easy communication with Dinhata and Jalpaiguri of West Bengal, India.
At that time, the employees of this railway were quite well-off, leading a very sophisticated life. The British government had built eye-catching railway buildings and residential quarters at Lalmonirhat for foreign employees.
Most of the establishments and infrastructure, such as the railway hospital, railway school, parks, training centre, a locomotive shed, and a few thousand buildings in Lalmonirhat division, were built on railway land. For the recreation of elite railway staff officers, the Pears Institute was built in 1905 on 2.73 acres of land in the heart of the city at Babu Para under the patronage of the British railway. The Pears Institute had a movable theatre stage, one among the few in Asia at that time.
After the partition, it was renamed MT Hossen Institute. In those days, it was the only place for recreation in the area, a retired government employee, Abdus Samad, 81, told this correspondent.
Urdu cinema used to be screened in the hall. It was a place of amusement and gathering for people of all ages.
Abdus Samad recalled that a person named Salauddin, a non-Bengali gentleman, used to run the institute. “We often used to go there to watch Urdu films with our friends,” he recalled.
Many noted personalities and artistes performed drama and stage shows at the institute before and after the Liberation. Stalwarts like Birendra Krishna Bhadra, Ahindra Chowdhury, Nirmalendu Lahiri, Robi Roy, Chhobi Biswas, Jashim Uddin, Abbash Uddin and many others visited this institute. Even Jyoti Bosu, longtime chief minister of India’s West Bengal, also visited the place. Famous plays like Sirajuddullah, Sagor Shecha Manik, Ohteb, Taka Ana Pai, Ashami Polatok were staged in the theatre hall. Sojon Badiar Ghat, a famous drama by Jashim Uddin, was performed in his presence in the auditorium.
Jyoti Bosu wrote about the institute in his book ‘Ami Jyoti Bosu Bolchi”.
M T Hossen institute, now
But recently, the Lalmonirhat Chamber of Commerce and Industry has decided to build a school on the institute premises. This has become a matter of concern for people from the cultural field. They have spoken up against the grabbing of the institute, which is part of the country’s heritage and archaeological history.
The government should take steps to protect the historic institute for the future generation, they say.
When asked, Lalmonirhat Chamber of Commerce president Kamrul Hasan Bokul said they have appealed to the railway state department for allocation of the land for the school. He said the school would be built by keeping the main structure of the institute intact. Sufi Mohammad, a cultural activist and president of Lalmonirhat Sangkritik Kendro, said the school could be built on other vacant railway plots.
Shupen Datto, convener of the Lalmonirhat Unnoyon Andolon, said they have demanded that the institute be turned into a town hall, gymnasium and a ‘mukto mancho’ for recreation and cultural activities of the young generation.
When asked, the state officer of the Lalmonirhat divisional railway (BR), Rezwanul Haque, said no land of the MT Hossen Institute had been allocated for the proposed school. Mojibur Rahaman, president of the Sammilito Sangkritik Jote in Lalmonirhat district, said the MT Hossen Institute is part of the country’s cultural heritage and has to be protected. The Jote has been working to save the building from 2013. It has applied to the cultural ministry to renovate the building, but the government has taken no initiative so far, he added.
Bangladesh Shilpakala Academy director general Liakot Ali Luky said he has requested the authorities concerned to protect old monuments and theatre stages across the country. His academy has taken the initiative to protect and repair the institute, he added.
The report was published in The Independent on November 18, 2017
Dhaka Collegiate School
September 29, 2022
Maria Mohsin
Dhaka Collegiate School is the first government high school in undivided Bengal. In 1835, the General Committee of Public Instruction submitted a proposal to Lord William Bentinck, the then governor-general of India, to establish an institution that would teach English literature and science. As a result of that proposal, Dhaka Collegiate School was established in 1835 as an English seminary by the British government, and an English missionary named Ridge was appointed as its first headmaster. The 187-year-old boys’ school was first located a couple of blocks away from its present location at Loyal Street, Sadarghat. A British colonial bungalow was first used for the Dhaka Collegiate School, and later, it was moved to a new building, which was built at the site of an indigo factory.
Dhaka Intermediate College, now renamed as Dhaka College, was established in the premises of the Collegiate School in 1841 and housed on the first floor, while the school remained on the ground floor. Dhaka College was first relocated to a larger building near Victoria Park, now Bahadur Shah Park, in 1873, and was moved a few other times till it was finally got its own campus on Mirpur Road near New Market in the 1950s.
The Collegiate School started off with just three teachers and 136 students in 1935. It was given the status of a zila (district) school in 1908. The school also included a hostel for students, named ‘Raj Chandra Hindu Hostel’, which is no longer in use.
Famous Students
Dhaka Collegiate school’s famous old students include freedom fighter Bir Shreshtho Matiur Rahman, scientist Jagadish Chandra Bose, Nawab of Dhaka Khwaja Abdul Ghani, and the founder of Pogose School, Nicholas Pogose.
Dhaka Collegiate School , now
Dhaka Collegiate School now has 2,200 students, who study in classes 2 to 10 in two shifts. “Besides education, the school encourages students to take part in extracurricular activities, and that is why we have a science club, agriculture club, debating club, language club, Boy Scouts and Red Crescent Youth units, and more. We also organise national anthem competitions among different classes,” Mohammad Abu Sayeed Bhuiyan, the present headmaster, told Y&I.
The school now has two buildings, the old yellow two-storey schoolhouse with wooden shutters is still there, while a modern multi-storey red brick building, with grilled windows, stands next to it. The school demonstrates a proper contrast of then and now Dhaka _ even today, there are desks and chairs from the 1800s, some of which are still used by the students.
“The old school building from the 19th Century is still there, but abandoned as it is not in a condition for use. But it has not been torn down as old and new students of the school want us to keep it as a symbol of the school’s long history,” Bhuiyan said.
“There was a time when this school was the most famous school in the city, and it has a glorious history, too. But now it is losing its glory as people prefer other famous schools in new Dhaka,” the headmaster added. “Though we try to maintain high standards in our school, we see that the guardians are not bothered enough about education. About 80 percent of the parents of our students are businessmen and homemakers, and most of them want their children to run the family business. So, education for them is just a token, not a necessity, and that’s responsible for declining standards now. But still, we maintain 100 percent pass rate in SSC (secondary school certificate exams).”
Dhaka Collegiate School Students Reminisce
Abu Selim, a businessman and a former student of the school, told this reporter: “I got graduated from Dhaka Collegiate School in 1995 and I feel so proud of being a part of that institute, which is 183 years now. It has produced so many leading figures for the county. Now, my son goes to the same school, and I proudly share memories of my schooldays with him. But now, the condition of the school is deteriorating due to lack of attention from the authorities.”
Mohannad Abdul Kawser, another ex-student who is now a banker, added: “I left the school almost 10 years ago. It always fascinates me how this institution is still standing with such a long history. And how many students have passed through the corridors of this school. But the school has not developed even a bit since I left it. On the contrary, it is going under and it feels very bad to see my school like that. We have to keep in mind it is not just an institute, it’s an institution which has been carrying our country’s history for almost 200 years.”
“We do have some internal issues, which we need to resolve. It’s a government school, but we haven’t received even a single bench from the authorities in the past 10 years. We get donations from old students sometimes, and that’s how we work,” Bhuiyan, the headmaster, explained. “There are other problems, too. For example, there is a bus and tempo stand in front of the school which not safe for our students. But no action has been taken to move it, even after complaining repeatedly. So, it is not only up to the students or the teachers, the government needs to pay attention to bring back the old glory of the school,” he added.
The article was first published in The Independent on September 6, 2018.
Chakma resistance to early British rule
August 4, 2022
Ratan Lal Chakraborty
The Battle of Plassey and the Battle of Boxar were the imperial wars between the East India Company and the Mughal authority, which in turn gave the Company a legal status in Bengal. But, to consolidate their power in rural Bengal, the Company had to face resistance from the local Chiefs, Rajas and people. Although, many of these resistance movements sprung up owing to the oppressions of the Company’s local agents, yet the Company’s revenue policy and their support to the local agents were also responsible for them. Like Fakir Sanyasi movement (1760-1800)[For details, see Ratan Lal Chakraborty, ‘Some Aspects of the Fakir-Sannyasi Movement’, Journal of the Bangladesh Itihas Samiti (in Bengali), vol. 3 and 4 (1974-75), PP. 43-52. ], and Shamsher Gazi’s revolt (1767-68)[See J. E. Webster, Eastern Bengal and Assam District Gazetteers, Noakhali, (Allahabad, 1911), pp. 22-23.], the Chakma rising may also be considered as an early resistance to the Company’s rule in Chittagong region. The topography of the Chittagong Hill Tracts had helped the Chakmas to launch guerrilla warfare against the well-armed Company’s army. Attempts have been made in this paper to analyse the causes and nature of the Chakma resistance. In order to form a comprehensive idea about the causes, it may be worthwhile to briefly discuss the pattern of the livelihood of the people of Chittagong Hill Tracts.
Without entering into an anthropological discourse about the people of Chittagong Hill Tracts, it can safely be said that they were Chakmas in tribe and were the early Arakanese settlers in that area. These people employed quasi Muhammadan nomenclatures. They fancied to keep their names after the ruling Mughals [J. B. Harrison, ‘Arakan’ Encyclopaedia of Islam, (Leiden, 1960), vol. I. p. 606 ]. The principal leaders of the Chakmas, who fought against the Company, were Sher Daulat Khan, Jan Baksh Khan and Ranu Khan. Jan Baksh Khan was the son of Sher Daulat Khan [For details, see T, H. Lewin. The Hill Tracts of Chittagong and the dwellers therein, Calcutta, 1861, pp. 21-21. ]. But the identity of Ranu Khan [For Ranu Khan’s geneology see Satish Chandra Ghosh, The Chakma Nation (in Bengali), Calcutta, and C. S. P. 74] and his connection with the hill Chiefs raises some confusion. It is found in the Chittagong District Record, available at the Bangladesh Secretariat Record Room, that Ranu Khan was the naib of Sukdeo Roy of pargona Rajenagar of chakla Rangunia in the province of Islamabad [Darkhaste of Khoshal Chand Wadahdhar, 12 August, 1781, Bangladesh Secretariat Records (here after abbreviated as BSR)]. Chittagong, vol. 462, pp. 125-26.] . Captain T. H. Lewin and Satish Chandra Ghosh, the two authoritative writers on Hill Chittagong, are at one on the point that Ranu Khan was a relation of Sher Daulat Khan [See T H Lewin, The Hill Tracts of Chittagong. p. 22. Satish Chandra Ghosh, The Chakma Nation, p. 74.]. Pierre Bassaignet has described Ranu Khan as the brother-in -law (sister’s husband) of Jan Baksh Khan [Pierre Bassaignet, Tribesmen of the Chittagong Hill Tracts, The Asiatic Society of Pakistan, 1958, p. 93.]. But he did not mention the sources where from he got this information. Most probably Ranu Khan was a relation of Sher Daulat Khan who served as his principal Diwan and general. After the death of Sher Daulat Khan in 1782 A. D. Jan Baksh Khan succeeded him and Ranu became his Chief naib.
As regards to their early connection with the Mughals, it appears that Jalal Khan, the Chief of the independent Chakma tribe, obtained a permission from the Emperor Farrukhsiyar in 1713 A. D. to trade with the people of the plains in articles like dried fish, hens, salt, molasses, tobacco, black cloth etc., which would not be produced in the hills, on voluntary payment of a tribute in cotton [For details, see Alamgir Muhammad Serajuddin, The Revenue Administration of the East India Company in Chittagong, University of Chittagong, 1971, pp. 168-69. ] . But this tribute was very irregularly paid and ultimately Jalal Khan violated his agreement and in consequence of an inevitable attack by the Mughals Jalal khan fled to Arakan. This agreement was again renewed by Shermast Khan, another Chief from Arakan, who agreed to pay the tribute and in return he received a grant of wasteland in Chittagong for which separate revenue was to be paid. [ See R. H Sneyd Hutchinson, Eastern Bengal and Assam District Gazetteers, Chittagong Hill Tracts, Allahabad, 1909, p. 22.] From that time onward the hill people, through local stewards, paid only a nominal tribute in cotton to the Mughal authority out of their total production in the sterile and hilly lands. Like the primitive system of cultivation as the Coomry of south India, the Chena of Ceylon, the Tong-gyan of Burma and the Gainges of the Philippine Islands, the people of the Chittagong Hill Tracts cultivated their lands under the system of Joom. About joom cultivation Alexander Mackenzie describes: “A village settles down in formidable site, and yearly, in the month of April, each family proceeds to fell the jungle and clear enough ground for purpose of tillage. The timber and bamboos so cut down are fired in May, and thereafter on the first token of the approaching rains, holes are dibbled in the ground, into which five or six kinds of seeds are thrown together-cotton, rice, maize, pumpkin or what not, calculated the nature in regular ripening, the whole village bivouacks on the jooms to protect them from blast and bird. Two years later such cultivation exhausts the soil, and when all the good land round a village has been worked out the people move in masse to another site”. [ Alexander Mackenzie, History of the Relations of the Government with the Hill Tribe of North Frontier of Bengal, Calcutta, 1884, pp. 131-32] So, under this system of cultivation neither the joomeas, who would cultivate lands under the system of joom, had permanent right on the soil, nor could they find any practical means to pay any fixed rate of revenue to the authority. Before the Company’s rule in Chittagong, tribute paid by the tribal Chiefs to the Mughal authority was originally realised in kind through roajas or headmen and the amount of tribute was uncertain and irregularly paid.[ Ibid.]
In 1772 A. D. the kapas mehal of Chittagong Hill Tracts become an item of the Company’s revenue. Attempts at collecting revenue from kapas mehal had been made by the Company in the shape of a tax revied [levied?] “on Cotton brought down from the hills, which was farmed out to some second party”[T. H. Lewin. The Hill Tracts of Chittagong, p. 21.] These farmers of the Company’s would contract with the tribal Chiefs for the delivery of definite amount of Cotton annually. Ranu Khan, who later revolted against these farmers, was the contractor of the Company’s farmer who had agreed to pay 501 maunds of Cotton to the Company annually. [J. H. S. Cotton, Memorandum on the Revenue History of Chittagong, (Calcutta, 1880), p. 20.]
But strained relations developed through the Company’s attempt of making settlement with some individuals other than the tribal people for collecting cotton revenue, and especially the Company’s attempt to lease out lands in hilly areas to men, not connected with the tribal rulers. Alexander Mackenzie pointed out that the kapas mehal “was farmed out yearly to some speculators who contracted to realize the tribute, and enjoyed a monopoly of the staple in which it was paid”. [ Alexander Mackenzie, The North-West Frontier of Bengal, p. 331.] These lease-holders, through several techniques of their own, collected cotton from the hill people. In this collection, the amount of cotton was several times greater than the tribute they usually paid to the Company. The farmers deposited the fixed amount of cotton and they themselves appropriated the remainder. They earned huge profit by selling the cotton, thus appropriated, which indirectly helped the speculator to the plains. Again, the Company’s authority made contract with another party with a view to converting the cotton-revenue into money and in this contract the amount of money was fixed. These contractors used to sell that amount of cotton which was enough to pay the stipulated amount fixed by the Company, and from the residual of cotton they made huge profit through speculation. [Halheed Commission Report on Hill Chittagong, 1829, p. 59, quoted in T. H. Lewin, The Hill Tracts of Chittagong, p. 22.] Thus hill people had to face bifold exploitation — one in the form of revenue collection, and the other in the form of speculation. The introduction of an intermediary class, the lease-holders, in the Company’s arrangement with the hill chiefs meant the exclusion of the hill people. This arrangement gave way for direct and indirect exploitation. In consequence of this, the economic life of the hill people jeopardized and they lost incentive for cotton cultivation from which most of the hill people moaned [used] to eke out their livelihood. The inequalities and weakness in the mode of taxation was earlier recognised by the Mughal authority. But as a result of the oppression of the new intermediary class and the speculators, the traditional system of paying by the hill people become obsolete. On the other hand, the tribute as cotton, which was produced by Joom cultivation was not proportionately fixed, and the leaseholders could, in the name of revenue, snatch away almost the entire amount of cotton from the hill people. The cotton, which remained with the hill people even after such exploitation, came to be sold in the markets of the plains of Chittagong. But by the sale process of cotton, the hill people could hardly afford to collect the bare necessities of their life. Because, here also the speculators had extended their clutches of exploitation through monopoly business. As monopolists, they could control the price and kept it at the lowest possible level. They, through market mechanisms, compelled the hill men to sell their cotton at a nominal price. Moreover, the hill people used to barter their cotton for other products. They were habituated in exchanging cotton for an equal amount of other commodities. But it was found that the merchants, who dealt in cotton, also availed themselves of this opportunity to exploit the hill people. They managed to exchange a maund of salt, worth Taka 2, for a maund of cotton, worth Take 6. [Satish Chandra Ghosh, The Chakma Nation, p. 70.] The hill people were left with a small amount of cotton after the exploitation of the company’s agents and they could hardly procure their necessities by selling or bartering that amount.
Diverse exploitation and the resultant extreme hardship ultimately generated discontent among the tribal people. Though, this system of revenue collection from the hill track continued to operate for nearly four years, but it seemed that the tribal people were not ready to carry on this system any more.
The oppressions and extortions of the company’s people produced intense dissatisfaction among the tribal people. Under the leadership of Sher Daulat Khan, Jan Baksh Khan and Ranu Khan resisted the Company’s rule in the Chittagong Hill Tracts. Their resistance began when 1776 A.D. Sher Daulat Khan denied the Company’s authority and withheld payment of revenues of his Zamindari at Rangunia. [R. H. Sneyd Hutchinson, District Gazetteers, Chittagong Hill Tracts, p. 24.] His Lieutenant Ranu Khan had organised resistance adopting guerrilla tactics. We get information about the nature of Ranu Khan’s resistance from the report Mr. Law, the Collector of Chittagong. He reported that Ranu Khan and his people made constant attacks on the landholders and farmers of the plains and in consequence the Company’s revenue collection was delayed and sometimes the Company incurred a loss. [Collector of Chittagong to the Governor General in Council of the General Department, 10 April 1777, BSR, Chittagong, vol. 462, pp. 125-26.] But Mr. Law recorded that fact that the Company’s farmers were complaining against the hill people finding their interest from revenue collection declining. Mr. Law also reported that Ranu Khan did not recognise the authority of the company. It was, indeed, too much for the company to safeguard the company’s honour and prestige, it was felt to be politic to resist the attempts of the hill leaders. [ibid.]
The resistance activities of the Chakmas were both offensive and defensive. Through guerilla tactics they had, for some time, resisted the company’s rule and by launching sporadic raids in the plains they tried to fade out the former’s influence and establish the supremacy of their own tribe. It was reported by the sundry Zamindars that Ranu Khan made it a practice of sending his pulwans or armed men who seized and confined their people and extorted money from them. [Complaint of Sundry Zamindars, 26 June 1783, BSR. Chittagong. vol. 506, pp. 42-44] Ranu Khan’s people used to come down from the hills with different kinds of arms on the plains with a view to collect their daily necessities of life in the manner of raids. Sometimes they forcibly carried away the cattle. The party of Ranu Khan did not allow the people of the plain land to bring their cattle for pasture into their areas. If anybody dared to disobey his restrictive orders, a fine was wrested from him on that account. In a complaint to the collector of Chittagong, the sundry Zamindars informed that “they (the Chakmas) have erected neeshauns on the former jummabundy land whose situation is adjacent to the side of the mountains and will not permit the riots to bring the same into cultivation requiring of the riots to take pottahs from them and to pay revenue to them.” [Ibid ] The hill people demanded grain from the taluqdars of Islamabad and if their demand, was not fulfilled, they would try to ransack their godowns. They would not allow anybody to collect bamboos, grass, rattans, firewood or any other article from the hill and if they would ever give permission, a duty would be exacted thereon. [Ibid] The Zamindars complained that Ranu Khan had instructed the Chakmas to seize and lay hold of their taluqdars and chaudhuries and exact nazar and sheedhas from them. Furthermore, the hill people took away the people of the plains forcing them to repair their khamar or field and houses. At the instance of Ranu Khan, “each pulwan so dispatched extorts a diurnal allowance as rozeenah from each Assamie of one Rupee”.[Ibid] It was alleged by the Zamindars that the hill people had established jurisdiction of their own court of justice and inflicted punishment in the cases of the company’s jurisdiction. Even sometimes it was complained that riots of the Company’s territory got shelter in the hills of Jan Baksh Khan if they committed a crime. [Alamgir Muhammad Serajuddin, The Revenue Administration of Chittagong, p. 199] It seemed that the hill people, in their resistance to the British rule, had adopted more offensive methods than defensive. Probably it would serve their twofold purpose — one in preventing the Company’s farmers from the evil practices and the other in getting the hillmen their daily necessities.
With a view to taking Ranu Khan into custody, collector Law sent a party of sepoys on April 1777 A.D., but the expedition failed. [Collector of Chittagong to the Governor General 10 April 1777 BSR, Chittagong, vol. 462. pp. 125-26.] It was because Ranu Khan had no fixed place of residence, adopting a guerrilla method he used to hide in a safe place, whenever necessary, and attacked when he got a chance. Fifty sepoys were again sent against Ranu Khan, who burnt two or three hillocks and villages. In response to this challenge, Ranu Khan had “assembled men of large bodies, who though ill-armed, harassed the few sepoys in the expedition”. [Ibid] It seemed that in the early phase of the Chakma rising, their power of resistance was so strong that the Company’s authority was hardly felt there. To arrest Ranu Khan’s growing strength, Captain Ellerker, the Commanding officer at Chittagong, sent a reinforcement of one hundred and fifteen newly employed sepoys against him. But they were eventually opposed by the large body of Kukies, who were assembled by Ranu Khan and “who live far in the (..w. e.) parts of the hills, who have not the use of fire Arms, and whose bodies go unclothed”. [Ibid]
The Collector of Chittagong, finding their attempts at subduing the hill people fruitless, anticipated that a new method, if steadfastly pursued, might bring the hill people to due obedience to the Company’s Government. The method was to raise a blockade against the supply of salt and other Commodities into the hills. To make this effort a success the Collector proposed, “to enforce, by every Act of vigour on the offenders, by punishing those families (sic) which furnish the supply and depriving the chaudhuries or zamindars of their lands who conceive at such practices”. [Ibid] In the following year Collector Law submitted a detailed plan against the hill people for excluding them from all sorts of communication with the plains. But it seemed that this plan was revised by the Calcutta authority, who in 1784 A.D., ordered Mr. James Irwin, the collector of Chittagong, to express his opinion “whether, by lenient measures, the inhabitants of the hills might not be induced to become peaceable subjects and cultivators of the lands”.[ R. H. Sneyd Hutchinson, District Gazetteers, Chittagong Hill Tracts, p 8.]
The Company’s attitude towards conciliating the hill people was based on their commercial considerations, first, cotton was abundantly sown by the hill people, and to help the weaving production of Dacca factory the Kapas Mehal had received special consideration from the Company’s government. [See Abdul Karim Sahitya Visharad, Islamabad (in Bengali), S. M. Ali ed. Bangla Academy, 1964, pp. 106-107 S. N. H. Rizvi (ed) East Pakistan District Gazetteers, Chittagong, (Dacca, 1970), p. 89] Second, the company had the necessity of collecting fire wood from the hills for boiling salt. But owing to the unrest in the hill tracts the people of walangies could not collect any firewood. [Salt Agent of Chittagong to the Collector of Chittagong. 23 February 1781, BSR, Chittagong, vol 467 p. 87.] Third, the Company’s coolies were reluctant to cut timbers from Rangunia for the preparation of the Company’s barracks, due to the opposition of the Kukies. [Chief of Chittagong to the Commander of the 22nd Battalion at Chittagong, 24 April 1776, BSR, Chittagong, vol. 461. p. 39] Finally, the Company’s elephant trade was impeded because of the opposition of the Kukies. [ T. H. Lewin, The Hill Tracts of Chittagong pp. 21-22.] It seemed that some of the important commercial interest of the Company was wrapped around the question of place in the hills. So the Company thought that any conciliation with the hill people might bring peace in this locality and safety to their revenue and commerce. But the Company, in fact, did not try to find out the actual causes of the unrest among the hill people and that is why their attempt at conciliation got no favour from the hill people and they continued their endless violent attacks.
In 1781 A.D. it was reported that Ranu Khan and his associates were crossing the Feni River up the bills. Mr. Sumner, the collector of Chittagong, immediately communicated with the Raja of Tippera with a view to arrest him, if he took shelter in Tippera. [Collector of Chittagong to the Resident at Tippera. 1 March 1781. RSR, Chittagong, vol 467, p. 88.] A considerable detachment had already been sent against them, but the Company’s government was not sure that they would be able to arrest him without the active help from the Raja of Tippera. Ralph Leeke, the Resident of Tippera, was asked to procure the support of the Raja of Tippera to suppress Ranu Khan. [Ibid] Records indicate that the Company’s purpose was not served. The Chakmas continued their operations almost unabatedly. The Company once again explored their ability in apprehending Ranu Khan and his people by sending a detachment from Islamabad. But this time Ranu Khan took hold of a Company’s shickdar and ran off with him. [From the Darkhaste of Khosal Chand Wodadhar, 12 August 1781, BSR, Chittagong, vol. 468, p. 18.] Being perplexed, the Company’s authority made attempt to correspond with the object of getting the release of their shickdar, on the one hand, compelling him to pay revenue to the Company’s government on the other. This time the Company’s army created much trouble in the hills. As a consequence of this, a spy of Ranu Khan came from the hills and informed the Commanding officer that Ranu Khan would release the Company’s shickdar and would pay revenue to the Company usually. [Ibid] The spy also informed that Ranu Khan repented for his activities and he would beg pardon from the Company. Most probably Ranu Khan, under the pretense of submitting to the Company, wanted to save himself from being arrested. Ultimately the assurance given by Ranu Khan through his informer to the effect of releasing the Company’s shickdar and paying revenue to the Company was not complied with. The Company, in their turn, tried to cramp Ranu Khan’s movement within a certain route limit by stationing the force. In spite of repeated orders from the authority for withdrawing the army, the collector of Chittagong thought that the recall of the army would not be wise, because Ranu Khan “would not swerve from his former course of outrageous and insolent behaviour”. [ Collector of Chittagong to the Committee of Revenue at Fort William, 12 August 1781, BSR, Chittagong, vol. 470, p. 19] Practically, the Company was alarmed at Ranu Khan’s offensive measures and they could not recall their army. Moreover, they had to supply Khoshal Chand with a proper guard to escort 23 chests of treasure to the Presidency. [ Assistant Collector to the Commanding officer at Chittagong, 13 August 1781, BSR, Chittagong, vol. 470, p. 20.] In spite of the barricade organised by Ranu Khan and his people against the Company’s revenue collection from the Kapas Mehal, the Company’s Wadahdar decided to send sezawal or native revenue collection officer into the Chakla Rangunia for the realisation of the revenues. The Wadahdar’s effort at collecting revenues from Kapas Mehal was materially supported by the Company who had given instructions to the troops to protect the sezawal from the people of Ranu Khan. [Acting Collector of Chittagong to the Commanding offices at Chittagong. II October 1781, BSR, Chittagong vol. 468, p. 39] But the measure of protecting the sezawal was futile and the Wadahdar complained that Ranu Khan’s resistance was the main cause for which the revenues of that area fell into arrears. [Acting Collector of Chittagong to the Committee of Revenue. 6 May, 1782, BSR, Chittagong, vol. 469, PP. 10-11.] So the Company’s authority considered that guards, which were stationed at the different Cutcherries and Chaukies would be absolutely necessary to carry on the public business smoothly. Accordingly in 1782, the company’s authority decided to keep constant guards at the different places of the plains, because they had anxiety that on the return of the troops, Ranu Khan might start operations in that part. [Collector of Chittagong to the Commanding officer at Chittagong, 8 April 1782. BSR, Chittagong, vol. 469, p. 1.]
In 1782 AD. Sher Daulat died, but his son Jan Baksh and his general Ranu Khan with their associates like Doolub, Choree, Kannoo and Toothang Shuckdas carried on operations. [ Complaint of Sundry Zamindars, 26 June 1783. BSR, Chittagong, vol 506, pp. 42-44.] As records show, in consequence of Sher Daulat Khan’s demise their movement, for some time, dwindled but soon regained its strength. Being embittered by the repulsive activities of Jan Baksh Khan and Ranu Khan and consequently by the repeated complaints of the Zamindars, the Company issued a Parwannah ordering the chaudhuries, taluqdars, farmers, and ryot to apprehend all the persons belonging to Jan Baksh Khan and Ranu Khan. By the Parwannah it was also proclaimed, “any person acting contrary to these orders will be severely punished.” [ Hookumnamah, 1783, BSR. Chittagong, vol 306, p. 74.] But this measure was not operative, because the hill peoples were more rock-ribbed than that of the Company’s local agents.
During the period between 1784 and 1785 A.D. the Company seriously fought against the Chakmas. This time, the Company applied their every possible strength to subdue them. By the middle of June 1784 A.D., a party under Major Ellerker was against Jan Baksh Khan and his associates. But the hill Chief went into the interior of the hills and the army had to retire. [Alamgir Muhammad Serajuddin, The Revenue Administration of Chittagong. P 199] Again in December 1784 A D., a party was sent against the Chakmas, but they were restricted by the authority to advance into the interior of the hills.[Collector of Chittagong to the Committee of Revenue, December 1784, quoted in R. B. Ramsbotham, Chittagong in 1784, Bengal Past and Present, (hereafter cited as BPP), vol. 39, pt. III, (April-June), 1940, p. 83.] It was probably because in the interior of the hills the Chakmas could frequently use guerrilla tactices of warfare which the company’s army were not accustomed to. On the New Year’s Day in 1785 A.D. Major Ellerker wrote to Captain Anderson, commanding the 22nd Battalion of the Independent Regiment of Light Infantry, for dislodging the adherents of Jan Baksh Khan. Captain Aderson was empowered to adopt every means to arrest Ranu Khan. [Collector of Chittagong to the Captain Commanding the 22nd Battalion. 1 January 1785, quoted in R. B. Ram shotham, ‘Chittagong in 1784’ BPP, vol. 39, pt. III, 1930 p. 84.] He was also given direction to move against a Chieftain who, in favour of Jan Baksh Khan, had formed an entrenchment near the Kalapania hills. He was further advised not to slacken his operation until they surrender. [Ibid] In order to capture the posts in the hills, James Irwin felt “the necessity of furnishing masses of boats for the use of the detachment going up the river to act against the posts occupied by the Chakmas, and also coolies, beldars (spademen) etc., for the purpose of clearing the jungles.”[Collector of Chittagong to the Committee of Revenue. 7 January 1789, quoted in R. B. Remsbotham, ‘Chittagong in 1784″ BPP, vol. 39. pt. III, 1930, p. 86.]
On 16 January, 1785 A.D, the Company made a violent attack on the hills. Richard Anderson with his lieutenants Framingham and Feeking advanced towards the interior of the hills and continued their operation for nearly a week. This time they destroyed the residence of Ranu Khan’s son and some villages of the hills using powerful weapons and batteries and took possession of paunch Morrang, Ranu Khan’s residence and some fortresses, But neither the army could capture any Chakma nor could they subdue them at all. Moreover, the hill people adopting guerrilla tactics, had killed one beldar or spademan and wounded one lascar, four dandies or boatmen of the Company.[ For details of Richard Anderson’s expedition, See RB, Ramsbotham, ‘Chittagong in 1784″ BPP vol. 39, 1930, pt. III, pp. 86-87 ]
Captain Anderson retired, but he considered the necessity of keeping guards on the bank of Karnafuli fearing the blockade raised earlier by the Chakmas to commence again. But there were positive and repeated orders from the authority to withdraw army altogether. Nevertheless, Collector James Irwin suggested stationing army at some places which would ‘serve as a guard to the avenues into the hills’. [Collector of Chittagong to the Commander of the 22nd Battalion at Chittagong, 24 March 1785, quoted in R.B. Ramsbotham, Chittagong in 1785, BPP vol. 39, pt. III 1930, p. 89.] In consequence the Company found it essential to keep twelve posts to prevent the operations of the Chakmas. [ These posts entailed a combined garrison of 1 British officer 2 Subahdars, 2 Jemadars, 26 N. C. O’S and 150 rank and file. See R. B. Ramsbotham, ‘Chittagong in 1784″ BPP, vol. 39, pt. III, 1930, p. 90.] But this preventive measure could not stop the hill people from undertaking their operations. And later official records indicate that the hill people, under the leadership of Jan Baksh Khan and Ranu Khan, continued their operations as usual. At their frequent operations, the Company’s local agents were terrified and they sought help from the Company. Narahari Mitra, who was appointed the Company’s Wadahdar at Rangunia, requested Major Ellerker for keeping constant guards to protect him from guerrilla attacks. [Collector of Chittagong to the Commanding officer at Chittagong, 4 August 1785, BSR, Chittagong, vol. 507, PP. 52-53.]
As a consequence of the Chakma resistance, the Company had to sustain an enormous economic loss and it was necessary for them to keep a separate account for the expenditure incurred in their war with the hill people. [Extract of a letter from Governor General in Council. 4 September 1786, BSR, Chittagong, vol. 487, pp. 139-40.] From 1783 to 1785 A.D. the Company’s lease-holders could not enter the hill tracts and as a result, the revenues of this area fell into arrear. As a consequence of this, the Company had to exempt the leaseholders from paying the government revenues for these years. [Satish Chandra Ghosh, The Chakma Nation, p. 78.]
It seemed that the task of subduing the hill people was not as easy as the Company thought to be. Moreover, the Company was baffled by their guerrilla operations. Having failed to subdue them by sending detachment the Company adopted a new strategy to confine them into the hills. This new strategy was, in effect, an economic blockade on the hill people to come to the markets of the plains in order to procure salt, tobacco, dried fish, and other commodities through barter trade. [Ibid] Besides, the Company’s government tried to incite the Kukies through allurement to seize the adherents of Jan Baksh Khan. [Alamgir Muhammad Serajuddin, The Revenue Adminis tration of Chittagong, p 199-200.] But the Company’s plan of provocating the Kukies against Jan Baksh Khan and his associates proved abortive. The Kukies continued their resistance as usual against the Company’s local agent and when in 1787 A.D. Jan Baksh Khan came to terms with the Company, the Company’s authority had to seek his help to halt the Kukies. [Petition of Sheeb Durga Charan Chowdhury, 11 August 1788, BSR, Chittagong, vol. 491, p. 213] On the other hand, the hill people were getting supplies of salt, tobacco and dried fish from the plains in spite of the Company’s prohibitive orders. [Collector of Chittagong to the Committer of Revenue, 7 January 1735, quoted in R. B. Ramsbotham, Chittagong in 1784, BPP, vol. 39, 1930, pt. III, p. 85] The economic blockade enforced by the Company was successful when the Company posted guards at different strategic points of the hills. Ultimately, the people of Chittagong Hill Tracts were obliged to cease their resistance.
In sum, the rising of the people of Chittagong Hill Tracts under the leadership of Sher Daulat Khan, Jan Baksh Khan and Ranu Khan originated from the Company’s revenue policy on the one hand and the multifarious exploitation of the Company’s farmers and speculators on the other. Their resistance started in 1776 A.D. and continued roughly to 1786 A D. In 1787 Jan Baksh Khan came to terms with the company and agreed to pay regular revenue to the Company. There is an interesting legend [Once Jan Baksh Khan was betaking himself into the mountains at Mahaphroongh. At that time, a pregnant woman while fleeing, being unable to bear the hardship of flight, damned him. Jan Baksh Khan by chance overheard her. This made him, repentant: he went to Calcutta in 1787 A. D. and, asked pardon of the Governor and made peace with the British Government. See Satish Chandra Ghosh. The Chakma Nation, p. 78, Pierre Bassaignet, Tribesmen of the Chittagong Hill Tracts, p. 93] about the sudden surrender of Jan Baksh Khan. But it appears clear that the economic blockade put up by the Company ultimately obliged him to cease resistance and come to terms with the Company.
It appears that the Chakmas, in their resistance, had the help of some Bengalis on the plains. In his letter to the committee of Revenue on 7 January, 1785 A.D. James Irwin wrote that Jan Baksh Khan maintained “in his service a Bengali of the name Mun ghawzee, a notorious dacoit, who was sentenced by the Fouzdar of Islamabad to be impaled ” [Collector of Chittagong to the Committee of Revenue, 7 January 1785 quoted in R. B. Ramsbotham, ‘Chittagong in 1784, BPP. vol. 39. 1930, pt. III, p. 85.] It was also reported that Mun Gazi had trained about sixty Bengalis who were always with him. We can trace another Mun Gazi, officially known as a dacoit, who was sentenced in 1774 A.D. by the Fouzdary Adowlut conformable to Muhammadan law to “let his right hand left foot be cut off”. [Governor General in Council to the Chief of Chittagong quoted in R. B. Ramsbotham, ‘Letters received by the Chief of Chittagong during 1774 from the Committee of Revenue at Fort William, BPP, vol XL. pt. I. I, (Oct-Dec), 1930, p. 10.] It seemed that all these sentences against Mun Gazi were passed in absentia. Again we find another Mun Gazi, sometimes known as Mun Sarkar, in the ‘Shamsher Gazi Namah [The author is personally grateful to Sheikh A. T. M. Ruhul Amin, planning and Development Officer, Dacca University, who kindly, supplied Shamsher Gazi Namah and also to Dr. Ahmed Sharif for his valuable advices.] written by Sheikh Manohar. According to Shamsher Gazi Namah, Mun Gazi, a Bengali, was an employee of Shamsher of Shamsher Gazi of Tippera in 1760’s. He was the chief of Nimak Mehal of Panuya Ghat near the big Feni River, where Shamsher Gazi had served earlier. There is a hat, after his name, Mun Gazir hat, which is adjacent to Panuya Ghat under the Chhagalnaiya police station. During Shamsher Gazi’s revolt, Mun Gazi played an active role. It seems that Mun Gazi and his adherents may have associated themselves with Jan Baksh Khan and kept up this resistance against the Company. To clear the official remark on Mun Gazi as a dacoit, it should be noted that any activity contrary to the interest of the established government is always considered by that government as an act of dacoit or miscreants. However, the identification of Mun Gazi and his association with Jan Baksh Khan still remains a question for further research.
Ratan Lal Chakrborty was an eminent historian. He was a Professor at the Department of History, University of Dhaka.
This article was first published in Bangladesh Historical Studies (Vol II) in 1977.
উনিশ শতকে বিয়ের একটি দলিল
April 26, 2022
সম্পাদকের নোট: উনিশ শতকের কাবিননামার একটি মনোরম উদাহরণ আমাদের হাতে পৌঁছেছে। ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে সিলেট অঞ্চলের কুলাউড়ার লংলা স্টেশনের নিকটবর্তী জয়পাশা গ্রাম নিবাসী জনাব খুরসেদ আলী একই এলাকার নইমা বানুর সাথে পরিণয়ে আবদ্ধ হন। পাত্রের পিতা জীবিত থাকলেও পাত্রী ছিলেন পিতৃহারা। ফলে স্থানীয় মোছিম বা মাছুম তাঁর উকিল হিসাবে প্রাপ্তবয়স্ক পাত্রীকে বিয়ে দেন। গুরুত্বপূর্ণ এই দলিলটি আমাদেরকে দিয়েছেন জনাব খুরসেদ আলীর প্রপ্রপৌত্র (great great grandchildren) মোয়াজ আহমেদ চৌধুরী। দলিলটির পাঠোদ্ধার ও বিশ্লেষণ করেছেন স্বনামধন্য গবেষক ও Bengal History Collective (BEHIKA) এর সমন্বয়ক তাহমিদাল জামি।
উনিশ শতকে বিয়ের একটি দলিল
তাহমিদাল জামি
এই বিয়ের দলিলে লক্ষণীয় এর শাদামাটা বৈষয়িক চরিত্র। খোদা ও নবীর স্মরণ বা হামদ-নাত এবং বিয়ের পাত্রপাত্রী-উকিল-সাক্ষীদের উল্লেখের পরে দেনমোহর ৪০০ টাকা বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যার অর্ধেক তৎক্ষণাৎ পরিশোধ্য। যেহেতু পাত্রের কাছে সেই পরিমাণ ক্যাশ টাকা ছিল না, ফলে সেটি তিনি নিজের পৈতৃক জমির নির্দিষ্ট অংশ কনেকে একেবারে বংশানুক্রমে হস্তান্তর করে দিলেন। আর এই বৈষয়িক হস্তান্তরের লেনদেনটি এতটাই স্পষ্ট ও আনুষ্ঠানিক যে পাত্র যদি কোনক্রমে এই জমি হস্তান্তর নিয়ে গোলমাল করেন তাইলে বিয়ে তালাক হয়ে যাবে। বিয়েকে কেন্দ্র করে এই সুস্পষ্ট বৈষয়িক লেনদেন সম্পাদন করার ক্ষেত্রে কোন রোমান্টিক বাতাবরণ বা রাখঢাক এখানে দৃশ্যমান নয়। এই লেনদেনের দলিলটি খুরসেদ আলী মহাশয় ফেঞ্চুগঞ্জের সাবরেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে এনেছেন চার টাকা স্ট্যাম্পে। সাবরেজিস্ট্রার অফিসের কর্মচারী হিসাবে পাওয়া যাচ্ছে নারায়ণ চন্দ্র দাশের নাম। দলিলে জমি পরিমাপের এককগুলি দেশীয়। দেশীয় ভাষাতেই লেখা হয়েছে মূল দলিল, আবার তার দাপ্তরিকীকরণের বেলায় ইংরেজির আস্তরণ পড়েছে সেই বাংলার উপরে।
মুসলমান সমাজে বিয়ের শর্ত বা চুক্তিমূলক চরিত্রটি এইধরনের দলিলে অত্যন্ত স্পষ্ট। হিন্দু বিয়ের কনেসম্প্রদান কিংবা খ্রিস্টান বিবাহের একগামিনৈতিকতার মন্ত্র এই দলিলে পাওয়া যায় না মোটেই। বর ও কনে উভয়ের ব্যক্তিসত্তা এখানে স্পষ্ট যার প্রকাশ ঘটেছে সম্পত্তির মালিকানা, হস্তান্তর ও বিয়ে সম্পাদন ও তার বিচ্ছেদের শর্তের খোলামেলা উচ্চারণে। পাত্রের অন্য বিয়ে করার সম্ভাবনা এখানে অসম্ভব নয়, যেহেতু একদারপরিগ্রহ মুসলমান সমাজে অনিবার্য প্রথা ছিল না, আবার পাত্রীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার্থে তাঁর অনুমতি বিনা আবার বিয়ে করলে বিয়ে তালাক হয়ে যাবে, সেটাও বানান করে বলা আছে। যতদূর জানি, এই ধরনের তালাককেই মুসলমান শাস্ত্রে তালাকে তাফুয়িদ বলে।
পাঠকের সুবিধার্থে আমরা প্রথমে প্রমিত পাঠ ও পরে অবিকল মূল পাঠ উপস্থাপন করেছি। প্রমিত পাঠে আমরা দলিলের একেকটি অংশকে অনুচ্ছেদ আকারে বিন্যস্ত করেছি ও উপশিরোনাম তৃতীয় বন্ধনীতে যুক্ত করেছি যেন একনজরে দলিলটির বক্তব্যের ক্রমপ্রবাহ বোঝা যায়। দলিলের পাঠোদ্ধারে ভুলত্রুটি হওয়া খুবই সম্ভব, বিশেষত স্থাননামের পাঠে বিশেষ জটিলতার মুখে পড়েছি। সহৃদয় পাঠক ভুলগুলো ধরিয়ে দিলে আমরা একটি শুদ্ধপাঠ লাভ করব।
প্রমিত পাঠ
Obverse
STAMP OFFICE FOUR RUPEES চারি টাকা چهار روپیه
Stamp correct under article 15th schedule I of the general stamp act and exculpable (?) sections 21, 23, 28 & 32 of the registration act fees paid 1/ one rupee 3/13/1873
[হামদ ও নাত] সর্ব্বত প্রশংসা খোদাতালার জন্য, ও দরূদ ও সালাম পয়গাম্বর মোহাম্মদ সাহেবের প্রতি ও তাঁর আসহাব ও আওলাদের প্রতি …
[বরের পরিচয়] যা হোক, সাকিন পরগনা লঙ্গলা মৌজা জয়পাশা নিবাসী শ্রী সীকন্দর আলী চৌধরির পুত্র আমি শ্রী খুরসেদ আলী চৌধরি আপন বুদ্ধি ও স্বেচ্ছায়
[কনের পরিচয়] সাকিন তথার খন্দকার ফজিলতউল্ল্যা মরহুমের কন্যা ৬এ (?) জাতীয় বালেগা শ্রী মুসাম্মাত নইমা বাণুকে,
[দেনমোহর ও পরিশোধের শর্ত] তস্য দেনমোহর মবলগ ৪০০ চারশত টাকা সাইনবণ্ডে, তার অর্ধেক অংশ মবলগ ২০০ দুইশ টাকা তলব করা মাত্র পরিশোধ করিব, ও বাকি অর্ধেক অংশ বিবাহ স্থির থাকা পর্যন্ত পরিশোধ করার প্রতিজ্ঞায়,
[কনের উকিল] বানু মজকুরের নিযুক্ত করা উকিল সাকিন তথার মৃত মোঃ আপজলের পুত্র মোঃ মোছিমের ওকালতি এবং
[দুই সাক্ষী] ঐ ওকালতি প্রমাণীয় উক্ত সাকিনের মৃত (?) মলীক সাদেক পুত্র মোঃ ফজল ও
উক্ত পীনার [পরগনার] মৌজা হুসনপুর ইমহার সাকিন জয়পাশা নিবাসী গোলাম মস্তফা চৌধরি মরহুমের পুত্র শ্রী গোলাম আম্বিয়া সাক্ষীদয়ের সাক্ষ্যে ওকালতি প্রমাণ ও তসদিক পাওয়ায়
[সম্মতি] উকিল আপন মক্কেলা বানু মজকুরকে আমার নিকট বিবাহ দেওয়ার উপস্থিত [সম্মতি] পাওয়ায়
[বরের স্বীকৃতি] আমি পয়গামবরি চতুর্থ শর্ত মোতাবিক উপরোক্ত বানুকে আপন স্ত্রী [রূপে] আত্মস্বীকার ও অঙ্গীকার করিলাম ও
[দেনমোহরের পরিশোধ্য অংশের পরিবর্তে জমি হস্তান্তর] দেনমোহরের অর্ধেক অংশ মবলগ ২০০ শত টাকা তলবকালীন পরিশোধ করা অতি আবশ্যক বাট [কিন্তু] তাহা নগদ পরিশোধ করিতে না পারিয়া তৎপরিবর্তে আমার স্বত্ব-দখলী মিরাস
[জমির বিবরণ] শ্রীহট্ট ডিস্ট্রিক্টের অন্তর্গত ফেঞ্চুগঞ্জের সাবডিভিশনের এলাকাধীন কথিত পীনার [পরগনার] মৌজা কাছিমনগর প্রকাশিত মৌজা জয়পাশা সমুদয় ১99৯২|১০ নং তালিকা ম আনওার খারিজা নিষ্কর খানেবাড়ি সং পর্যন্ত নিচের চৌহদ্দির রেখায়িত কমবেশি সহ মন্তাজি ২||১|৪||৯ দুইহাল সাত কেদার এক পাণ্ডা চার যষ্টি এগার পণ জমি
[জমি হস্তান্তরের শর্ত] তাহা বানু মজকুরের নিকট বিক্রি করিয়া আপন স্বত্ব ত্যাগী হইয়া তাঁর দান বিক্রয় স্বত্বাধিকার করিয়া দিলাম বিক্রিত ভূমি অদ্য তারিখ অবধি [হইতে] স্বত্ববান ও দখলদার হইয়া আপন পুত্র পুত্রাদিক্রমে ভোগ করিবেন, ইহাতে আমি ও আমার উত্তরাধিকার কাহারো কোন স্বত্ব সম্পর্ক নাই, এবং রহিল না আর প্রকাশ থাকে যে রীতিমতে উক্ত কাবিন রেজিস্টার করাইয়া দিব, যদি না দিই তবে তালাক বায়েন হবে, অর্থাৎ ৩ তালাক হবে,
[জমির দলিলের শর্ত] আর বিবি মজকুরির অনুমতি বিনা অন্য স্থানে নিতে পারিব না অথবা ঐ বিপত্র কোন নালিশে উপস্থিত করিতে পারিব না ও
[অপর বিবাহের শর্ত] বানু মজকুরের ইজাজত বিনা নিকাহ-শাদী করিতে পারিব না,
[তালাকে তাফুয়িদ] যদি অন্যথা করি, তবে কাবিনের দাবি সমঝাইয়া [বুঝাইয়া] দিব এবং উপরের লিখিত তিন তালাক হবে আর
তফসিল চার হদ্দা ১ কির্ত্তা পূর্ব্ব উত্তরে ঐ তালুকের জমি দানাউল্ব্যা, ও দক্ষিণে শ্রী খন্দকার কেফায়তউল্ব্যা, পশ্চিম ২ কিত্তার ভূমি, ইহার মধ্যে রকম স্বকসল (সুফসল?) মওাজি
(উপরে ডানে) শ্রী খুরশেদ আলী
সাক্ষী শ্রী মোঃ আবিদা বানু মাদার লেসা
সাক্ষী শ্রী ছিকন্দর আলী
অপাদ নওসাকে এই নামা লিখিয়া দিলাম আমি শ্রীমোবস্বররু ত্যাহ সাং রাদিয়া (?) মৌজা দ্বাগটিয়া(?)
দিং শ্রীহট্ট ডিষ্টীক্ট কালেক্টরেট বিক্রী শ্রী খুরসেদ আলী সাং পী লঙ্গলা মৌজা জয়পাশা কমীসের কর কিং ৪ চারী টাকা
শ্রী নারায়ণ চন্দ্র দাশ
Presented for Registration between the hours of 2 & 3 pm (?) on the 31st day of march 1873 at the office of the Subregistrar of Phenchuganj by Khorshed ali executant
শ্রী খুরসেদ আলী
31/3/73
Execution & receipt of consideration admitted Khorshed ali of mouzah Joypasa p(argana)h Lungla Identified mohammad I?zzaman the writer of this deed of …
শ্রী মোঃ মাছুম
সাং কামার কান্দি
পী নদ্দীনা
31/3/73
শ্রী খুরসেদ আলী সাং পী লঙ্গলা মৌ জএপাসা
The Seal of the Subregistrar of Phenchuganj
ফেঞ্চুগঞ্জ সাবরেজিষ্ট্রারের মোহর
Registered in Book
Number I
Volume III of
(1873)
Page 124 to 129
Being no 216 … … Sub registrar
9/4/73
Original Reading
Obverse
STAMP OFFICE FOUR RUPEES চারি টাকা چهار روپیه
Stamp correct under article 15th schedule I of the general stamp act and exculpable (?) sections 21, 23, 28 & 32 of the registration act fees paid 1/ one rupee 3/13/1873
সর্ব্বত প্রসঙ্গসা খদাতালার জেন্য ও দ্বরূদ ও সেলাম পেগাম্বর মাহামদ সাহেবর প্রতি ও তেনীর আছহাব ও আওলাদের প্রতি ?ত্র
জাহওক সাকিন পরগনা লঙ্গলা মৌজা জএপাসা নিবাসী শ্রীসীকন্দর আলী চৌধরির পুত্র আমি শ্রী খুরসেদ আলী চৌধরি আপনা বদ্দি ও সেৎসায় সাতথার খন্দকার ফজিলতউল্ল্যা মরহুমের কন্যা ৬এ (?) জাতিয় বলীগা শ্রীমছমাত নইমা বাণুকে তস্য দেনমহর ম ৪০০ চারসত্ব টাকা সাইবণ্ডে তাহার অদ্দেকাংস ম ২০০ দ্বইসত্ব টাকা তলব করা মাত্র পরিছদ করিব ও বাকি অদ্দেকাংস বিবাহ স্থিরতর থাকা প্রজন্ত পরিছদ করার প্রতিজ্ঞায় বানু মজকুরির নিযুক্ত করা উকিল সাং তথার মৃত মঃ আপজলের পুত্র মো মোছিমের উকালত এবং ঐ উকালত প্রমাণীয় উক্ত সাকিনের মৃত (?) মলীক সাদেক পুত্র মো ফজল ও উক্ত পীলার মৌজে হুসনপুর ইমহার সাং জএপাসা নিবাসী গোলাম মস্তফা চৌধরি মরহুমের পুত্র শ্রী গোলাম আম্বিয়া সাক্ষিদএর সাক্ষ্যতাএ উকালত প্রমান ও তছদিক পাওাএ উকিল আপন মৌকিলা বানু মজকুরিকে আমার নিকট বিবাহ দেওার উপস্থিৎ পাওায় আমি পেগামবরি চতুরর্থ সর্ত্ত মতাবিকে উপরক্ত বানুকে আপন স্ত্রি আর্ত্মসীকার ও অঙ্গিকার করিলাম ও দেনমহরের অর্দ্দেকাংস ম ২০০ সত্ব টাকা তলবকালীন পরিছদ করা অতি আবুসক্য বাট তাহা নগদ পরিছদ করিতে নাপারিয়া তদপরিবর্ত্তে আমার এতত্রতা সত্বদখলী মিরাস শ্রীহট্ট্য ডিষ্টকোটের অন্তর্গত ফেঞ্চুগঞ্জর ছবডিবিজানের এলাকাদিন কতিথ পীলার মৌজে কাছিমনগর প্রকাসীত মৌজে জএপাসা সমদ্দিয় ১99৯২|১০ নং তালিক ম আনওার খারিজা নিসকর খানেবাড়ি সং প্রজন্ত নিচের চৌহদ্দার রেখীত কমিবেসী সহ মন্তাজি ২||১|৪||৯ দুইহাল সাত কেদার এক পাণ্ডা চার জষ্টি এগার পন জমি তাহা বানু মজকুরির নিকট বিক্রি করিয়া আপন সত্ব ত্যাগী হইয়া তিনীর দান বিক্রী সত্বাধিকার করিয়া দিলাম বিক্রিত ভোমে অর্দ্য তারিকা বদি সত্ববান ও দখলকার হইয়া আপন পুত্র পুত্রাধিক্রমি ভোগ করিব এহাতে আমি ও আমার উত্তরাধি কেহরর কোন্ব সত্ব সমপ্রক্য নাই এবং রহিলেকনা আর প্রকাষ থাকেজে রিতিমতে উক্ত কাবিন রেজীষ্টর করাইয়া দিমো জদি না দেই তবে তালাক বাএন হবেক অতার্থ ৩ তালাক হবেক আর বিবি মজকুরির অন্বমতি বিনা অর্ন্যস্থানে নিতে পারিমোনা অতবা ঐ বিপত্র কোন্বনালীষে উপস্থিত করিতে পারিবনা ও বান্ব মযুকার ইজাজত বিনা নিকাছাদী করিতে পারিমোনা জদি অর্ন্যথা করি, তবে কাবিনর দাবি সমজাইআ দিব এবং উপরের লিখীত তিনতালাক হবেক আর আমার ক্রয়তা দলীল নিকালীয়া দিলাম এতাবার্থ দলীল সরূপ অত্র কাবিননামা লেখীআদিলাম ইতি সাল ২৭৯ বাং মাহ ১৩ ফাল্গুন তপছিল চারহদ্দা ১ কির্ত্তা পূর্ব্বক উত্তারে ঐ তালুকের জমি দানাউল্ব্যা ও দক্ষিনে শ্রী খন্দকার কেফায়তউল্ব্যা পছিম ২ কিত্তার ভোম এহার মধ্যে রকম স্বকসল মওাজি
(উপরে ডানে) শ্রী খুরশেদ আলী
সাক্ষি শ্রীম আবিদাবান্ব মাদার লেসা
সাক্ষি শ্রীছিকন্দর আলী অপাদ নওসাকে এই নামা লেখি দিলাম আমী শ্রীমোবস্বররু ত্যাহমা???? মৌং দ্বাগটিকে(?)
দিং শ্রীহাট্যা ডিষ্টী(ক্ট) কালেকট্যরাট বিক্রী শ্রী খুরসত্র আলী সাং পী লঙ্গলা মৌজা জয়পাশা কমীসের কর কিং ৪ চারী টাকা
শ্রী নারায়ণ চন্দ্র দাশ
Presented for Registration between the hours of 2 & 3 pm (?) on the 31st day of march 1873 at the office of the SubRegistrer of Phenchuganje by Khorshed ali executant
শ্রী খুরসেদ আলী
31/3/73
Execution & receipt of consideration admitted Khorshed ali of mouzah Joypasa p(argana)h Lungla Identified mohammad I?zzaman the writer of this deed of …
শ্রী মোঃ মাছুম
সাং কামার কান্দি
পী লঙ্গলা
31/3/73
শ্রী খুরসেদ আলী সাং পী লঙ্গলা মৌ জএপাসা
The Seal of the Subregistrar of Phenchuganj
ফেঞ্চুগঞ্জ সাবরেজিষ্ট্রারের মোহর
Registered in Book
Number I
Volume III of
(1873)
Page 124 to 129
Being no 216 … … Sub registrar
9/4/73
সত্যজিৎ রায়ের কাছে খোলা চিঠি
April 23, 2022
সম্পাদকের নোট: লেখাটি সাপ্তাহিক চিত্রালীতে ১৯৭৩ সালের ৯ই নভেম্বর প্রকাশিত হয়। সাঈদা খানম (১৯৩৭-২০২০) ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম নারী পেশাদার আলোকচিত্রী।
সত্যজিৎ রায়ের কাছে খোলা চিঠি
সাঈদা খানম
শ্রদ্ধেয় মানিকদা,
আপনার অশনি সংকেতের সমালোচনা আপনি অহরহ শুনতে পাচ্ছেন ফোনে। পড়ছেন পত্রপত্রিকায়, চিঠিতে। দর্শক হিসেবে প্রত্যেক দর্শকেরই নিজস্ব একটা স্বাধীন মতামত আছে। আপনি সেই মতামত জানতে ও শুনতে ভালোবাসেন এবং তা নিয়ে ভাবেনও।
অশনি সংকেত আমার পক্ষে দেখা সম্ভব হত না যদি না আপনি দেখার সুযোগ করে না দিতেন। হলে যেয়ে দুদিন ফিরে এসেছিলাম টিকিট না পেয়ে। অথচ ওখানে থাকতে কৃতজ্ঞতাটুকু প্রকাশ করার সুযোগ পেলাম না। মতামত জানাবার একটা তীব্র ইচ্ছাও ছিল । যে সময়টুকু ছিলাম এ অতিরিক্ত বৃষ্টিতে ফোন হয়ে গেল প্রানহীন, নিশ্চুপ।
যেদিন চলে আসি। আকাশ ছিল ঘোলাটে, টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছিল। বিষণ্ন, ম্লান সকাল। রানওয়ের উপর দিয়ে প্লেনটা যখন ছুটছিল অশনি সংকেতের ঘোলাটে আকাশ ছুয়ে গেল মনকে। যে ঘোলাটে আকাশের ছোয়া এখনও আমাদের জীবনের উপর ছায়া ফেলে আছে।
জীবনে রং ছিল। কি সুন্দর রং ছিল গ্রাম্য জীবনের। দুর্ভিক্ষের ছায়ায় যে রং ক্ষয়িষ্ণু হল, প্রকৃতির রং বদলের সঙ্গে সঙ্গে তাকে আপনি যে ভাবে ধরে দেখিয়েছেন — তা ভোলা যায় না। কখনও কখনও শিল্পী গগার পেইন্টিংকেই যেন দেখতে পেয়েছি বিচিত্র রং এর সমারোহে , দিগন্ত বিস্তৃত প্রকৃতির দৃশ্যে।
একটু পরেই আমার ভাবনাই ছেদ পড়লো। মোড় ঘুরে গেল। রানওয়ের পাশে কাশ ফুলের উপর দৃষ্টি পড়তেই। চোখের সামনে অপু ছুটে এল। কাশবন আর ঘোলাটে আকাশ পথের পাঁচালী আর অশনি সংকেত দুটো ছবিই আপনার সৌন্দর্যের আধার। তবে গতি, রং আর সৌরভ আলাদা। তবু কোথায় যেন একটা সমন্বয় আছে। সত্য আর সুন্দরের উদয় – যা দুর্ভিক্ষ, দারিদ্র , অনাহার কেউ ধ্বংস করতে পারে নি। যার মধ্যে আছে চিরন্তন মানবিক আবেদন।
আপনার ‘পথের পাঁচালী’ যখন প্রথম দেখি তখন বিশ্বের চোখে ধরা পড়েনি আপনার ছবির সৌন্দর্য। কোন পুরস্কারে চিহ্নিত নয়। মুক্তি পেয়েছে অল্প কয়েকদিন হলো। হলে দর্শক অতি সামান্য। এ বই ভালো লাগার মত মানসিকতা তখনকার দর্শকদের না থাকারই কথা। আমার নিজের কতখানি ছিল জানিনা। কিন্তু ছবি দেখতে দেখতে আমি অভিভূত হয়ে পড়ি। রাত্রিতে ঘুম হল না। সমস্ত মন জুড়ে বিচিত্র অনুভূতি। সেদিন থেকেই আমি আপনার ভক্ত।
আপনাকে চাক্ষুস যেদিন দেখি, সেদিনটা আমার ভয়ে, আনন্দে, গর্বে, স্মরণীয় হয়ে আছে। চিত্রালীর পক্ষ থেকেই আমি আপনার সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলাম। যাওয়ার আগে এর ওর কাছে আপনার সম্পর্কে যা জানলাম তাতে মনটা দমে গেল। শুনলাম আপনি ভীষণ রাশভারি। কেউ প্রশ্ন করলে হ্যাঁ না ছাড়া জবাব দেন না।
আপনি তখন সবে কাঞ্চনজংঘার সূটিং শেষ করে দার্জ্জিলিং থেকে কলকাতায় ফিরেছেন। বেশ একটু ভীরুতা সঙ্গে বিষণ্ন মন নিয়ে দেখা করতে গেলাম আমার কেমন যেন ধারণা হয়ে গিয়েছিল আমার মত অতি সাধারণ মেয়ে রিপোর্টার হিসেবে দেখে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবেন। কিন্তু আপনি যখন বিনীতভাবে বললেন আমার ছবি সম্পর্কে আপনি কি জানতে চান , বলুন তখনই বুঝলাম কাউকে আপনি অশ্রদ্ধার চোখে দেখেন না।
কাউকে না। পরবর্তী কালে এটা আরও স্বচ্ছভাবে দেখলাম। আপনার সঙ্গে স্টুডিওতে যাচ্ছিলাম। স্টুডিওর গেটের সামনে দারোয়ান উঠে দাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আপনি তাকে করযুক্তভাবে নমস্কার করেন। এদের হাতে রাখী বেঁধে দেবার গল্পও করলেন। ঘটনা অতি তুচ্ছ কিন্তু তখনই বুঝলাম সাধারণ মানুষকে সম্মান করার মধ্যেই আপনার সৃষ্টির উপাদান। আরও অবাক আরও বিস্মিত হয়েছিলাম একাত্তুরের ভয়ঙ্কর ন’টা মাস মঙ্কুদি ও আপনি অনেকের কাছে আমার খোঁজ করেছিলেন জেনে। মানবতার এই অনুভবের স্পর্শটুকু এই স্বার্থের যুগে সমাজে মেলে না।
মৃত্যু কি? না মরলে জানা যায় না। কিন্তু চারপাশে তার আলিঙ্গণ নিয়ে প্রতীক্ষা করা যে কত কঠিন আপনাকে তা বুঝাতে পারবো না। তবু তার মাঝে কি ভাবতাম জানেন? যদি বেঁচে থাকি যদি আপনার সঙ্গে দেখা হয় তাহলে এই পটভূমিতে আপনাকে একটা ছবি করতে বলবো। কেন জানিনা ‘টু উইমেন’ ছবিটার কথা মনে পড়তো। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুদ্ধে যে স্বাভাবিক ভাঙ্গন আসে তার শিকার হয় মেয়েরা। আপনি বলেছিলেন অশনি সংকেতে যুদ্ধ নেই কিন্তু তার ইঙ্গিত আছে।
মনের মধ্যে যা খুঁজছিলাম তাই যেন দেখতে পেলাম অশনি সংকেতে। এখানে একটা কথা বলে নেই – আপনার ওখানকার দর্শকরা যে দৃষ্টিতে বইটি দেখেছে আমি কিন্তু তা পারিনি। কারণ আমার অনুভূতির মধ্যে এখন আছে একাত্তরের কান্না। ওদের কাছে একদা যা ঘটেছিল আমার কাছে তা অতি নিকট অতি বাস্তব।
অনঙ্গের ‘বৌ’ এর ভূমিকায় ববিতার অভিনয় সম্পর্কে কোলকাতার পত্রপত্রিকায় দেখলাম দুই রকমের মতামত রয়েছে। কোন পত্রিকা প্রশংসা করেছেন কোন পত্রিকা লিখেছে – ববিতার মধ্যে গ্রাম্য মেয়ের চরিত্র ফোটেনি। কথাটা সত্যি। আমার নিজেরও তাই মনে হয়েছে। আধুনিক মেয়ের ছাপ এসে গেছে অনঙ্গের বৌ পরিষ্কার বাংলা ভাষায় কথা বলেছে। আপনি অবশ্য এ সম্পর্কে যে যুক্তি দেখিয়েছেন তা অস্বীকার করা যায় না। গ্রামের গরীব ব্রাহ্মণের ছেলে অনেক সময় শহরের মেয়েকে বিয়ে করে থাকে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ববিতা তার চরিত্রে মানিয়ে গেছে, কিন্তু অভিনয়ের দিক থেকে ববিতার কাছ থেকে আরও কিছু আশা করেছিলাম। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় বার্লিনেই প্রশংসা পেয়েছে। ব্যক্তিগত ভাবে আমার লেগেছে অপূর্ব। আপনার ছবির আরেকটা পুরুষ চরিত্র কিন্তু মনে দাগ কেটে ফেলে। যে যুবকটার সঙ্গে ছুটকী পালিয়ে গেল । যার মুখ বাজীর আগুনে পুড়ে বিকৃত হয়ে গেছে। ছুটকীকে (সন্ধ্যা রায়) ভালো লাগে তার সাবলীল অভিনয়ের জন্য। চরিত্রটি বিচার করলে ঘৃনার। কিন্তু তার প্রতি ঘৃণা জাগে না – জাগে ব্যাথা ও করুণা।
আপনার ছবির প্রতিটা শটের দৃশ্যই অপূর্ব। মনে হয় প্রতীক হিসেবে আপনি অনেক রং ব্যবহার করেছেন। ঘন সবুজ বনের ভেতর দিয়ে ছুটকী যখন এগিয়ে চলেছে দেহের বিনিময়ে চাল সংগ্রহ করতে । তার পরণের শাড়ীর গাঢ় লাল রংটা না-বলা অনেক কথা দেয়। যেমন বলে দেয় অনঙ্গের বউ ধর্ষিত হওয়ার পূর্বে আঁধারের মাঝে জলে সিগারেটের আগুনটুকু।
আপনার অশনি সংকেতের সমালোচনা একবার দেখে বোধ হয় করা যায় না। শুধু ভালো লাগাটুকু প্রকাশ করা যায়।
রবীন্দ্রনাথের ‘ঘরে বাইরে’ যে কারণে করা বন্ধ করে দিলেন তা আমার খুব মজা লেগেছে। আপনি আবার নতুন গল্প খুঁজছেন। বাংলাদেশে এসে যে গল্পটার রুপ দেবার কথা ভাবছিলেন সেটা এসে করুন না। যে কাহিনী ইস্টিমারকে কেন্দ্র করে।
আপনি বলেছেন ভালো গল্প না পেলে কিংবা বাংলাদেশে যেয়ে ছবি করা সম্ভব না হলে এবার আপনি ছোটোদের জন্য ছবি করবেন। আপনার কাছে ওদের একটা দাবী আছে। দাবী আমাদেরও আছে, সে কথাটা ভুলে যাবেন না।
ইতি
সাঈদা খানম
Pogose School: A brief history
March 13, 2022
Note: The following article was published in ‘Our Magazine’ ( A magazine published by Pogose School Dacca) in Winter 1945. The original title of the article was Pogose School , Dacca: History in brief outline. Here we publish the article verbatim.
Manindra Chandra Bhattacharyya
Foundation of Pogose School
Pogose School, Dacca, was founded in June, 1848 by Mr. N. P. Pogose, an Armenian gentleman. The school, which was then named Pogose AngloVernacular School, was housed in a rented building belonging to Mr. J. C. Panioty, probably an Armenian merchant, at a rental of Rs 10/- a month. The school at “Armenian Tollah” was next located in a house belonging to Mr. N. P. Pogose and had a garden and a cricket ground attached to it. As far as can be known now, the school was for some time shifted to the building now occupied by the Moslem High School and next to the building occupied at present by the Normal School, and came to its present site about the year 1865.
Management of the school
The management of the school passed from Mr. Pogose to Babu Mohini Mohan Das in 1871 or thereabout, to his widow in 1897, and then to a Committee in 1907. Mr. Pogose and Mr. Das spent at times considerable sums over the school. It is said that the first Head Master was Mr. Pogose himself. Soon after Mr. C. Pote came as Head Master. He drew a salary of Rs. 55/- a month. The total number of students in 1856 was 130 and the fee-rates varied from Re. 1/- to Re. 1/8/-. The school then received a monthly grant-in-aid of Rs. 75/- from “The Hon’ble East India Company.” Mr. Pogose paid a monthly subscription of Rs. 75/-.
The next Head Master was, besides one or two who officiated as such, Babu Gopi Mohan Basak who left to join the newly started “Jagannath School” in 1872. Babu Brindaban Dhar came during the eighties of the last century and was followed by Babu Prasanna Kumar Sen in 1906. There were several changes between 1872 and till Babu Brindaban Dhar came in.
Famous students of Pogose School
The galaxy of students who have passed out of this school include Sir K. G. Gupta, I. C. S., the first Indian Member of the Privy Council, Dr. P. K. Roy, D. Sc., the first Indian Principal of the Presidency College, Calcutta, Dr. Aghor Nath Chatterjee, D. Sc., father of Mrs. Sarojini Naidu, Mr. Nishi Kanta Chatterjee, sometime Editor, Lahore Tribune and many others who made or have made marks in various walks of life,
Many interesting facts come out from a study of the school records. In 1866 with 409 students on the rolls the school was stated to be the largest and best-aided school in Bengal,” in 1867 with 500 students to be “the largest aided school in Bengal” by one visitor and about the largest school that I have seen in India” by another.
About the sixties of the 19th. century quills were used in this school, as pens are now. Chalk was purchased at one anna a seer and 125 bundles of straw for one anna and nine pies. Eleven “ghurramies” were paid Rs. 1-6as a day’s wages. Meetings were held in the school compound on behalf of the citizens of Dacca to welcome Michael Madhusudan Datta, Pandita Rama Bai and Swami Vivekananda.
Manindra Chandra Bhattacharyya was the President of Pogose School Students’ Union.
Football in Barishal (c.1898)
February 24, 2022
Note: On August 18, 1898, Englishman’s Overland Mail ( a Calcutta-based newspaper) published an article titled ‘Football in East Bengal’. It provided an interesting account of friendly football matches organised in Barisal between Englishmen, mostly government servants, and local boys. Here we are publishing the article verbatim
Is there any mofussil station in Bengal or in all India where every Sahib in the place turns out regularly once or twice a week to play soccer with the school boys or others? Thera is one such station in East Bengal little known to fame and usually considered by members of the Civil Service as an undesirable place to be transferred to. Little do such men know of what they miss, little do they think that if they had only known of it, this station I am talking of, as compared to Behar, is what home is to the Andaman, what the sun is to the moon, what diamond is to glass. Readers must now be anxious to hear the name of this most desirable of stations. Let it be told, listened to and remembered. Barisal is its name, only known to common man as the place where the guns come from, and the place where the guns have been taken away from. Such is fame.
Barisal, the name itself conjures up in my mind countless morning gallops, endless picnics and perpetual dances. Shooting both of tigers and snipe is an everyday recreation, and to bag a leopard one need only walk down the bazar before chota hazari. (I have done it myself.) All three things may be obtainable in many stations, but Barisal has one supreme title to glory, possessed by no other place.
Football is our unique accomplishment from blazing June to dark October. Twice a week do the Europeans sally forth to friendly combat with Bengel’a haughty sons. What other station has ever played a team which included the Judge, Additional Judge. Magistrate, Joint and Assistant Magistrate, the DSP and two A. D. S. P.s. Not in the first bloom of lusty youth, were all the noble sportsmen; though grey was visible on the Judge’s head and the policeman’s hair was thinning, they all played not once but every time. For three successive seasons have these games taken place, and in the first year the Europeans generally won, but now the boys have learnt the game, and helped by youth and naked feet are very nearly, if not quite, the match for the Europeans with a full eleven, and when, as it is frequently the case, only eight or nine Sahibs are available, victory often rests with the boys. About 18 games have been played this year, of which the boys have won five and the Sahibs three, the rest being drawn. Tomorrow a great match takes place, and as both sides expect their strongest teams the match should be as exciting as it certainly will be muddy.
Before I stop let me warn intending visitors that no mosquito nets are necessary, because like in Iceland there are no mosquitoes in Barisal.
Banner photo: A representative photo.
Slave trade in Dhaka
February 21, 2022
Note: On March 2, 1785, Chief of Dhaka Mathhew Day wrote to the Acting President of the Committee of Revenue (apex body of the colonial government) William Cowper to inform him about the brutal trade in enslaved people in Dhaka district. The trade was carried out between “low castes of Portuguese” residing in Dhaka and “those of Calcutta, Chinsurah and other foreign settlements”. Day identified that scarcity of grain and the failure of crops due to the recent deluge forced parents to sell their children to the slave traders. He also elaborated on his initiatives to suppress the pernicious trade as well as to feed the starving masses. The company authority wrote back to Day on March 14 approving his steps.
The correspondence is reproduced here verbatim :
Letter 1
To William Cowper Esqr.
Acting President and Committee of Revenue
Gentlemen,
Intelligence of a very serious nature having been given me respecting a Trade which has lately been established between the Low castes of Purtuguese [Portuguese] at this place and those of Calcutta, Chensurrah and other Foreign Settlements I beg leave to submit the particulars to you and to request such interference as may prevent and put a final stop to its Existance [Existence] The nature of which cannot but ultimately prove of the utmost Detriment to Government.
The long continued distress this District has laboured under from a General scarcity of Grain and the failure of Crops in consequence of the late Deluge has reduced its Inhabitants to the lowest pitch of misery and distress the poor and the lower class of people to secure to themselves a Subsistance are reduced to a Sale of their children and many hundreds have been purchased I find in the interior part of this District by persons deputed from this place by the aforementioned people, and immediate Dispatched for Calcutta and its invirons [environs] they are for the most part Landed in the Foreign Settlements, from whence I am given to understand they are imbarked [embarked] on vessels to different parts at this time many Boats are between this and Calcutta by the Sunder bund [ Sunderbans]; loaded with children of all ages. The Hon’ble Mr. Lindsay, who arrived on Friday last informed me that he met above a hundred. To prevent and save the poor wretches from Transportation and slavery, will be the wish of every one [everyone] . The most apparent method by which this can be effected is for orders, to be issued to the Custom Master’s to secure all Boats, as arrive laden with children and by so doing it may be the means of tracing the concern to the principal who as acting in open defiance of the public & long established orders of Government may be brought to justice, I have on my own part adopted every possible means to Stop the continuance of it by placing Boats and people at all the outlets of those parts from whence they are brought with directions to seize all such so laden, and to bring them to the City at the same time I thought it necessary on a supposition, that many might be secreted in the Town, to cause a general search, throughout the Barzars and private places, for children brought from the Mofussil My suspicion was not ill grounded this morning 42 from 2 years and upwards as far as 6 years were produced with the people, who had them for sale, I have in consequence ordered them into confinement till such times as I can receive your orders on the subject. The children are object the most striking and can barely be said to have life, I have ordered them to be taken care of and mean as soon as their place of Residence can be ascertained to return them to their Families with any further assistance. Your Board may think necessary I beg leave further to trouble you on a subject equally alarming with that just mentioned. From the long Scarcity and high price of Grain throughout this District, and the total want of it in the Eastern part of the Division many hundred I may say thousands of unhappy wretches are now lying on the Banks of the Burhampoter [Brahmaputra] some in the agonies of Death, and other emaciated by Famine hardly strength to crowl along imploring the assistance of passengers. From the best Authority I am informed that spectacles so shocking, The Eye never behold. The price of Grain in those parts is from 20 to 25 seers for the Rupee, but these poor creatures reduced to skeletons by long fasting are incapable of manial [menial] Labour & have not where with [wherewithal to] purchase.
To Effect & afford every relief in my power to the people in question, I have dispatched a Quantity of Rice under the charge of Proper people, to be boiled at different places, & daily distributed to the unfortunate. The Gentlemen & principal Inhabitants have contributed towards the Expence [Expense] & the amount already & what I flatter myself will be subscribed, may in a great measures be sufficient to answer my wish. In the Events of its not proving so I hope the Board will [be] Pleased to indulge me with a Discretionary power of making up the Deficiency at the public Expence [Expense].
Dacca
the 2nd March 1785.
I am & ca.
Signed/ Mathhew Day.
Letter 2
Calcutta 14th March 1785
Mr. M. Day
Chief of Dhaka
Sir
We have received your Letter of the 2nd instant & highly approve the steps you have taken to stop the pernicious trade now carrying on in your districts We desire you will also use your utmost endeavours to apprehend those who are engaged in it, and cause them as soon as taken, to be prosecuted in the Court of phoujdary Adawlets; should the phoujdar however refuse to receive and bring the Aggressors to trial, We request that you Aprize [Apprise] us of such refusal detaining them in custody until You shall be furnished with our further directions respect of them.
We are & ca.
William Cowper
J. Evelyn
The Long Transition in Bengal Sufism
January 15, 2022
The Long Transition in Bengal Sufism: Onto-Theological Debates and Colonial Margins
Tahmidal Zami and Nizam Ash-Shams
Abstract
The colonial transition brought massive ideological upheavals in Bengal Islam, with the mainstreaming of a political ideology oppositional to the received politico-spiritual dispensation. The reformist rhetoric through which this oppositional ideology was articulated was based on a modern scripturalist turn initiated by Shah Wali-Allah Dehlavi, but it was also shaped by bigger onto-theological debates in the longer history of Islam. In this paper, we trace how the grand onto-theological debates, such as the debate on wahdat al-wujud vs. wahdat ash-shuhud, were overdetermined by the encounters between Islam and its others at various intersection points between crisscrossing flows traversing a wide geography. This article explores this question in relation to the expansion of the Nizampuri-Azamgarhi Tariqah – a reformist Sufi order across the Bengal-Arakan frontier linking South and Southeast Asia. The order spread its roots to Arakan based on preexisting Muslim network consolidated by increasing migration on the back of a rice export economy. The departure of the British colonialists and formation of post-colonial states led to refrontierization at the Bengal-Arakan border, giving rise to politicization of identities and new intensities of violence which decimated the Sufi diaspora in Arakan.
Keywords: Sufism, Bengal, Arakan, Syed Ahmad Berelvi, Colonial transition
Introduction: The Oppositional Paradigm in Islam during the Colonial Transition
In the gallery of major figures in Indian Islam – aside from Sufi masters like Muin al-Din Chishti (1143-1236 CE) or Nizam al-Din Awliya (1238-1325 CE) – there are hardly anyone as impactful as Shaikh Ahmad Faruqi of Sirhind (1564-1624 CE) and Shah Wali-Allah of Delhi (1703-1762 CE).
The Chishtiyya and Suhrawardiyya Tariqahs – followed by Qadiriyya and a few others – were key actants in Islamization and spread of Sufi networks in North India and Bengal. Some of these Tariqahs – especially the Chishtiyya – developed a language of intersectionality in relation to the vast and multifarious populace of India upholding a panoply of beliefs. With the advent of Mughals from central Asia, the Naqshbandiyya Tariqah from the same region found a stronger foothold in India. The Mughal regime under Jalal al-Din Muhammad Akbar (r. 1556-1605 CE) was developing a vast apparatus of power centered on politico-spiritual charisma of the Timurid household and bringing together multiple religious and ethnic groups under a system of common allegiance and vocabulary of power. Using the same millenarian logic, the Naqshbandi saint Shaikh Ahmad Faruqi of Sirhind articulated a resounding critique of the politico-spiritual strategy of the Mughal apparatus. Proclaiming himself the renovator of the second millennia of Islam or the Mujaddid-e Alf-e Thani, Ahmad Sirhindi attacked in the same breath the political promiscuity of the Mughals and the intersectional Sufi praxis of the Indo-Muslim saints.
By putting up a formidable opposition against the Mughal empire at its heyday in the name of Islamic orthodoxy, the Mujaddid remobilized the old Islamicate dialectic of the ruler vs. the man of religion. By enacting an implacable opposition against the Emperor’s religio-political policies that would subsequently create greater resonance compared to its alternatives, the Mujaddid’s name came to be enshrined as the representative of the orthodox current in Indo-Islam. The Mujaddid created a symbolic place for oppositional Ulama, representing the orthodox reaction against various ideas and practices that he deemed heterodox. Like the West Asian intellectual Ibn Taimiyyah, the Mujaddid revived an oppositional paradigm in Indo-Islam.
The Mughal establishment sought to accept, assimilate and neutralize the symbolic aggression of Ahmad Sirhindi the Mujaddid. However, following the death of Aurangzeb (r. 1659-1707 CE), the Mughal establishment began crumbling under its own logic of growth. The Mughal urban network became populated with new ethno-religious and socio-economic groups wielding increasing power such as networks of merchants and bankers as well as ulama and Sufis linked with the Islamic heartland. Ethno-political groups like the Marathas, Sikhs, Jats, or Afghans became armed threats to the Mughal monopoly of power consisting of the Turko-Irani-Rajput complex.
When the pax Mughalica was definitively shattered, the Islamic intelligentsia came up with new responses.
It was Shah Wali-Allah (1703-1763 CE), a brilliant scholar born in an ancient Muslim family of Delhi, who articulated a new critique of the existing Indo-Muslim politico-spiritual strategies and in so doing brought about a scriptural reduction and ideological reconfiguration of doctrinal Islam in India. Like his Hijazi contemporary Muhammad Ibn al-Wahhab of Najd (1708-1792 CE), Wali-Allah revived ijtihad (interpretive jurisprudence), challenged blind imitation of fiqh schools, and prioritized the scripture and prophetic tradition (Quran and Sunnah). While Shaikh Ahmad the Indian renovator had earlier been denounced, even proclaimed kafir, in the Islamic heartland of Mecca-Medina, Wali-Allah came up with a more powerful and global program of Islamic reform. Having performed a pilgrimage to Mecca during 1730-33 CE, Wali-Allah returned to India and proclaimed himself the Mujaddid of the era whose verdict must be followed by the political and spiritual elite. At the center of a Mughal state helpless against the aggressions of the new ethno-political forces and spiritual heterogeneity, Wali-Allah wanted a reassertion of Sunni dominance by conceiving an abstract, almighty authority of God and prescribing an ideological purity cleaning up the accretions of innovations in Indo-Muslim life as well as a political strategy centered on the consolidation of a chaste Sunni administration that would quash Hindus and Shiites with overwhelming violence. Wali-Allah saw society as an evolving order that would climax into a universal caliphate, just as God himself reigns on the divine court (mala’ al-a’la) (1). In the declining Islamic realm of the late Mughals, Wali-Allah initiated a new transcendence, unhinging the emplaced notions of religion, governance, and culture.
Within a few decades of Wali-Allah’s death, the Mughal emperor was turned into a mere pensioner of the East India Company. The successors of millenarian oppositionalism came up with political responses suited to the new context. Wali-Allah’s able son Shah Abd al-Aziz declared India an abode of war (dar al-harb), further displacing and deterritorializing the Islamic imaginary from its emplaced Indian context. However, while he considered eliminating infidels a virtue in the vein of his father, he also supported leading a functional socio-economic and religious life under infidel rulers as much as possible (2).
Sayyid Ahmad Berelvi (1786-1831 CE) was an epochal figure in this new chapter of Indo-Muslim society (3). He combined futuwwa ethic of heroic militancy, Shah Wali-Allah’s reformist puritanism, a trans-Tariqah Sufi charisma (4) and a millenarian vision of his mission in the crumbling Muslim religio-political geography of India in early 19th century.
He found a powerful comrade in the figure of Muhammad Ismail, an erudite ideologue and scion of the Wali-Allahi family. In the works of Muhammad Ismail and other members of Tariqah-i-Muhammadiya (TiM), religious duties like jihad were obligatory upon each Muslim, not a delegatory obligation for the whole community. Sayyid Ahmad couldn’t launch exoteric (zahiri) jihad from a dar al-harb – since their goal was not rebellion – but only from an abode of security (dar al-aman), following the prophet’s model. Propaganda on orthodox praxis among Muslims in occupied India was meant to result into migration to the frontier and war (5). Berelvi waged a war in the Northwest frontier against the Sikhs. However, hostility from the local Pashtuns and modern military tactics of the European-led Sikh army led to a devastating end to his jihad in 1830 CE. Despite the quick and bloody abortion of his revolutionary program, Berelvi left an undying legacy and paradigm for Indian Muslims.
A few factors strengthened Syed Ahmad Berelvi’s legacy despite his military defeat. He had reenacted the old Sirhindian oppositionalism by combining religious orthodoxy and political opposition within the ideological frame of tariqat. Being a Sayyid, he mustered the symbolic prestige of Shah Wali-Allah through his pledge of allegiance (baiah) to Abd al-Aziz as well as in the figure of his loyal comrade Muhammad Ismail. He pursued his cause with considerable zeal and traversed the expanse of Hindustan to gather recruits. His visits to Kolkata caused stirs among the Muslim notables and gentry and eventually he managed to gather a diverse body of Indo-Muslim followers to wage jihad in the northwest. At his martyrdom in battlefield, his followers dispersed to their respective regions. It was this returnee mujahidin diaspora who carried back the oppositional mission, the prestige of Berelvi’s legacy, the claim to represent and succeed his Tariqah, and a certain fraternal solidarity (asabiyya). This formed the social basis for the supremacy of his symbolism.
Sayyid Ahmad Shahid articulated a messianic jihad movement with the help of Ismail Shahid, which raged till the 1860s. However, from 1830s onwards, gradually many of the neo-orthodox Islamic tendencies took a quietist, non-military stances and directed their efforts to reform Muslim society. Thus, the offensive posture of the messianic jihadism was replaced with the self-defensive posture of socio-religious reformism.
It was from among the successors to Berelvi that various new sub-Tariqahs emerged, one of which was the Nizampuri Tariqah of Bengal. This Tariqah played a profound role in shaping subsequent Sufism in Bengal in the colonial era.
In this paper, we would concentrate on one of the sub-families of this Nizampuri Tariqah, namely the Azamgarhi Tariqah, to explore how the suborder ultimately hailing from the TiM could expand its footprint at the furthest margin of Indo-Islam, namely the Bengal-Arakan frontier.
A fundamental methodological principle must be added here: all typological and periodization schemes are taken here as formal-discursive effects on an irreducible and immanent multiplicity. Singularities are never reducible to the categories of universals and generals, just as difference is prior to identification. The schematic discussion presented here needs to be read with this epistemological ethic of prioritizing immanence, multiplicity, and irreducible difference. For example, individual Sufi groups need to be understood as complex and open entities radiating filiations and effects in various fashions rather than being reduced to spacetime, social or spiritual affiliation, avowed ideology and so on. In other words, the molecular dimension of the entities needs to be kept in mind no less than the molar dimension. As we will see, the vicissitudes of development of the Nizampuri-Azamgarhi Tariqah was complex and aleatory and cannot be understood in the teleological or essentialist notions about Indo-Islam, economic determinism or frontiers.
A New Sufism for Bengal: The Case of the Nizampuri-Azamgarhi Tariqah
In this section, we analyze the case of the Azamgarhi Tariqah to see how a Sufi order expanded in the Chattogram-Arakan axis in the colonial period. We use existing literature on the Tariqah such as the writings of Mr. Ahmedul Islam Chowdhury, a pious adherent of the order, that represent a very interesting emic source. We also make use of fresh primary material like a few successorial documents (khilafatnamahs) which are little studied in understanding Sufism in Bengal or South Asia.
We posit that the emergence of new respectable classes and the expansion of agrarian frontier laid down the objective conditions for the reception of the Nizampuri-Azamgarhi Sufi order in new horizons, while the anti-traditionist and oppositionalist rhetoric espoused by the order – like so many other related branches of Sufi orders – were ideological formulations that aligned with the new ethical purposes and epistemological regime of the new epoch.
To put it into context: In early 19th century, Bengal was swept with a series of reformist movements. We can name the Faraidi, the Tayyuni, the Deobandi, and strands of the Tariqah-i-Muhammadia movement as the most notable. A brief description of the movements could help locate the Nizampuri-Azamgarhi Tariqah in its proper context.
The Faraidi movement was initiated by Haji Shariatullah (circa 1781-1840 CE). From rural Faridpur, he had traveled to the Hijaz and Egypt for Islamic education and returned to Bengal upon completion of studies. Shariatullah propagated an orthodox version of Islam cleansed of syncretic accretions and reduced to fundamental obligations required in scripture, yet firmly affiliated with the Hanafi school of Fiqh that was the prevalent emplaced jurisprudential tradition in Sunni Indo-Islam. His constituency was mainly the peasants and artisans of South-central Bengal (6). He maintained a broadly apolitical program, but as the Muslim peasants and artisans joined his sect, they came to blows with the local Hindu zamindars. In 1840s to 1860s, his son Muhsen Uddin alias Dudu Miyan (1819-1862 CE) expanded the movement into a consolidated network functioning both as a religious sect as well as a force of peasant resistance against landlords and the indigo farmers. Although the Faraidis never confronted the colonial administration, they prohibited congregational prayers for Muslims on the ground that a proper comprehensive Muslim municipal township (misr al-jami) couldn’t be found in Bengal, thereby contributing to the notion that Bengal was a military territory or dar al-harb. However, after Dudu Miyan’s death, the successors of the movement increasingly took a more conformist position to the colonial condition. Thus, the Faraidi movement uniquely combined a certain renovation of the Islamic religious culture, a disavowal of the political status quo, and yet a very close emplacement in the peasant society as well as the traditional jurisprudential base.
While Faraidi movement was raging, the disciples and comrades of Sayyid Ahmad Berelvi launched their operations in Bengal. The most spectacular follower of Berelvi was a wrestler turned religious preacher called Titu Mir (1782-1831) from the 24 Parganas of West Bengal. Titu’s religious preaching brought his followers into conflict with Hindu Zamindars who wanted to curtail the orthodox observance of the Muslim peasants. His small band of followers reacted to Zamindari strictures with violence. The conflict escalated rapidly till the military intervention by the East India Company regime. Titu Mir and his main lieutenants were murdered almost around the same time that the holy warriors under Berelvi at Balakot were annihilated.
Since the military campaigns of Sayyid Ahmad Berelvi and Titu Mir were destroyed by the colonial power, Berelvi’s other successors adopted a less offensive role. Some of his disciple mujahids had tried to wage war in the frontiers. Maulana Wilayat Ali (1790-1852 CE) and Inayat Ali (1794-1858 CE) from Sadiqpur family of Patna sent delegates to Bengal for propagating Tariqah-i-Muhammadiya (7). During 1830s to 1860s, TiM preachers would show up in Kolkata and rural Bengal and the province was divided into circles for propaganda and fundraising. Some propagandists of the TiM declared Sayyid Ahmad a messiah (Mahdi) who had not died and would return in the right moment. They promised a future Islamic state where land would be rent-free. Peasants of the Bengal delta joined their ranks thanks to the millenarian promise. However, it is not clear that they could recruit any significant percentage of the Bengal peasantry as fighters or supporters (8). By the 1860s, the jihad efforts were mostly subdued (9).
A more reconciliatory approach was adopted by Maulana Karamat Ali Jaunpuri (1800-1873 CE), who wrote a body of literature to reconcile Muslims to the existing political dispensation as a fait accompli. Jaunpuri had accompanied Sayyid Ahmad to Mecca but probably didn’t join the jihad (10). He began his movement in 1830s that would be identified the Taiyuni movement which found support in almost the same region as the Faraidis’ (11). In contrast to the teaching of the Faraidis, Maulana Jaunpuri encouraged holding congregational prayers. He sought reconciliation of the Tariqah-i-Muhammadiya with the four fiqh schools as well as the main Sufi orders. The old school mullahs or the sabiqis began identifying with his camp in the latter part of the century (12). In 1870, the Chief Justice of Kolkata high Court was assassinated, while the Viceroy of India Lord Mayo (r. 1869-1872) wanted to fix India’s political status from the perspective of Islamic theology, a group of ulama issued a fatwa declaring it as dar al-Islam. Jaunpuri threw in his weight, besides Nawab Abdool Luteef, declaring that India was not dar-al-harb and jihad against the dispensation was unlawful (13). Jaunpuri thus represented a pragmatist reconciliation with political reality.
The above discussion reflects that Tariqah-i-Muhammadiya (TiM) was both a highly influential as well as thoroughly contested legacy – interpreted, appropriated and denied variously by emerging theo-political tendencies. The British persecuted various such tendencies branding them under the umbrella term: “Wahhabis”. The 1857 Indian war of independence was followed by rampant persecution of the Muslim elite. The destruction of earlier jihadi military campaigns, the quietist or reconciliationist line advocated by certain leaders, and consolidation of British administration deep into the social spaces of India encouraged a change of tack for the Indian Islamigentsia. The establishment of Dar al-Ulum Deoband (1866 CE) and the Mohammedan Anglo-Oriental College of Aligarh (1875) were two expressions of the strategic reorientation.
The oppositionalism nurtured by the Islamigentsia could have two postures:
(a) At its offensive posture, it would be an assimilative opposition, whereby either the ruler would have to assimilate to the politico-ideological demands of the Shaikhs and everything would be fine, while in the event of non-alignment, the ruler could risk stiff resistance.
(b) At its defensive posture it would be an accommodative-negotiative opposition, whereby the Shaikhs would concede various political and disciplinary spaces to the regime but cultivate their own social discipline to form a quasi-political community.
In the colonial era, due to this flexibility of strategy in their engagement with power, the oppositional Islamigentsia could engage the upward aspirations and opportunism of the Muslim middle and upper strata. Of course, the oppositional Islamigentsia was not a monolithic Sufi-Ulama complex but consisted of various schools of TiM, the Faraidis, the Deobandis and so on with variegated ideas and strategies. However, these groups shared the broad assumption that socio-ideological reform was essential for the Bengali Muslims.
In the following passages, we describe some of the processes during the colonialism that created the context for a reconfiguration of Sufism in Indo-Islam.
Marginalization of Syncretism
As the reformists assumed a new kind of transcendence in relation to Indian socio-political reality, they questioned the emplaced religious culture. The so-called innovations and ‘syncretistic’ practices of the local Muslims of Bengal became a prime target of the reformists. In this vein, the age-old praxis of the local society passed under the radar of the reformists (14). Veneration of ahl al-bait or imaginary and real saints or sacred figures, quasi-magical practices of the agrarian society, and so on were all dubbed as part of polytheism (shirk). This affected the relationship between Islamic clergy and mystics with the rural lay peasantry of Bengal.
At the same time, the colonial state imposed new forms of control over the lives of the populace, controlling their consumption, movements, and expressions. The ordinary faqirs, bairagis, qalandars, bauls and so on who earlier predominantly practiced various forms of vernacular spirituality deeply rooted in the native society were seen as a mass of undesirables by the British administration. In traditional Indo-Islam, faqirs were usually understood as God-intoxicated men (majzub) whose impassioned utterances veiled a mystical reality underlying the mundane phenomena. In precolonial India the itinerant, often antinomian, vernacular qalandars and zavaleqs would traverse and interact with the network of mainstream religious and spiritual centers, as for example seen in the table-talk of Nizamuddin Auliya (15). The Faqirs practiced transgressive physical culture, such as consuming intoxicating substances and wandering naked freely and without traceability, yet enjoyed considerable social respect (16).
The colonial intervention involved epistemological violence as well as physical coercion against these sects. The colonial administration dubbed the faqirs as charlatans.
While the state overtly took a neutral and non-interventionist stance towards ‘religion’ identified as a matter of interiorized beliefs and social practices, the faqirs’ transgressive culture and political intransigence induced the British to violently attack them as a matter of sanitization of the ‘colonial space’.
Of course, the colonial space itself could never cover the entire governed territory, rather it always needed to maintain an outside – a socio-economic residual space – within or just across the borders of the inside to maintain the exclusionary and doubly exploitative nature of the colonial enterprise compared to any domestic capitalism. The administration classified the faqirs as nuisance defined in terms of their begging (unproductive life), vagrancy (untraceable life), as well as nudity, intoxication and madness (unreasonable life) (17). The colonial state tried to define what constituted legitimate form of religious subjectivity by dictating some behaviors as public nuisance, while others were accepted and even encouraged.
The colonial othering of such spiritual culture was complemented by emergence of a native puritanism – whether modern or neo-traditional.
Languages and Texts
The reconfigured Sufism was premised on a new relationship among texts, technology, and the beliefs and practices of the community of believers. Shah Wali-Allah’s Persian translation of the Quran as well as subsequent Urdu translations by his sons transformed Quran from a miraculous word of God primarily celebrated aurally into a comprehensible text to be read and understood (18). In 1830s, English replaced Persian for official language. Persianate humanism dissipated due to the change of medium of education in 1835 (19).
The administration heightened emphasis on vernacular language for schools and courts. Among Indian Muslims, Hindustani was being accepted as a more useful medium(20). The printing press gave rise to a vigorous Urdu literary sphere. In competition to Christian and Hindu literary spheres and the scripturalist polemics by missionary, the Muslim princes and wealthy patronized the press to publish and propagate Islamic literature. (21) Urdu emerged as the language of the public relations of an evolved Ulama, elevating it as the normative language for Islamicate culture and an Islamic religiolect for South Asian Muslims. The Islamigentsia successfully created a relatively coordinated grassroots-based literary-social circuit supported by the printing press and Urdu intelligibility. A new textual culture changed the hermeneutical space in Indian Islam. As a modernist Muslim public grew up, they inherited the colonial-capitalist gaze imbued with rationalist-utilitarian assumptions. Nationalism involved reform and disciplining the Muslim masses. Sayyid Ahmad Khan (22), Mir Shahamat Ali, or Allama Muhammad Iqbal came up with a new imagination of the identity and values of an Indo-Islamic community.
New Institutions
A new institutional culture underwrote the emergence of the new Muslim intelligentsia. The madrasahs established such as Kolkata Aliya Madrasah (1781) or the Hooghly Madrasah – though limited to the ashraf for a long time – gave a definite new form of educational development. Before the 19th century, many mullahs in Bengal and Bihar couldn’t comprehend even one page of Arabic. (23) The Delhi College (1825-1857), the Aligarh Institute in 1866, the Mohammedal Anglo-Oriental College in 1877 introduced new education for Muslims. (24) Deoband Madrasa established in 1867 by Muhammad Qasim Nanawtwi (1833-77) and Rashid Ahmad Gangohi (1829-1905) – two disciples of Mamluk Ali who was disciple of Muhammad Ishaq of the Delhi reformist family – emerged as a new apparatus that could provide authoritative Islamic education. (25) Deoband secured its finance by direct contributions by the Muslim community from near and far. 30 Madrasas were established in India in the model of Deoband by 1900. (26)
Although colonialism had a certain effect of deindustrialization and un-development of India, its economic and logistical conditions created certain opportunities that were grabbed by newly-emerging classes, laying down the social infrastructure of respectable classes. A social layer of maulanas, hafizes, traders, zamindars and so on composed the strata of respectability within the Muslim community.
In Bengal, just as military jihadism subsided after 1871, the British sought to assimilate the Muslims of Bengal into the existing educational-ideological structure as well as employment. They gradually integrated Muslims into schools and eventually a higher educational institution that was Dhaka University. The graduates of new madrasas created anjumans that served as organizational basis for reform work. In the place of older Sufi silsilas, these new institutions created new bases for Islamic networking.
Economic Ethic
Traditional Sufi establishments in India often conceived themselves as munificent providers – both in material and spiritual terms – to vast indigent masses irrespective of their class or creed, as captured in titles like ‘gharib nawaz’. Many towering Sufi figures in Sultanic and Mughal India did not engage in any income-earning or acquisitive work (kasb), but worked as axes of redistribution for the social surplus value, whereby the gifts and donations from disciples and city-folks would be given away to the poor masses, often irrespective of their socio-religious affiliations. In the stable atmosphere of Mughal India, land grants to Sufi establishments (madad-i-maash) became ever more common. Festivals like Urs in the Sufi shrines or rite of passage ceremonies were spiritually encoded programs for redistribution of the social surplus value through extravagant consumption and charity.
When the precolonial political economy metamorphosed into a new administrative and market structure under the impact of colonialism, a whole new social calculus came into being.
The most critical change wrought by colonialism was the resumption of rent-free grants to waqf lands, undercutting funding for many Sufi shrines and Madrasas. As colonial salariat classes replaced their Mughal predecessors, the redistributional system was reconfigured. In the new setting, an ethic of strict pecuniary accounting was encouraged while extravaganza in the redistributive festivals (marriage, Urs, and so on) was censured. The notions of respectability stressed a relationship of law-bound reciprocity with the colonial state, a structure of public institutions of education, and so on. The new social type of respectable personality was expected to be self-sufficient and law-abiding. For a Sufi, living on charity came to be seen as less respectable. The Sufi should earn their own living and should extend their hegemony on the upwardly-mobile classes.(27)
There was a certain alignment between orthodox puritanism and modernist anti-traditionalism in terms of breaking the shackles of older religious and political authorities as well as popular beliefs and practices. (28) In other words: creating a deterritorialized transcendence – sustained by the new networks of institutions, texts, and practices – from the emplaced local spiritual culture.
The partial alignment of the orthodox reformist and modernist movements produced a separate Muslim public out of sections of the Muslim peasants of Bengal, but this new ideological accretion could not penetrate too deep into the life of Muslims in Bengal. Moreover, the peasant followers of Wahhabi or TiM were still partly attached to some of their older practices. (29) Mullahs who served as the rural social authorities, magicians, and so on could not immediately be reformed into the new ways. The practical complex of the fragile life of the peasantry involved magical practices such as driving away jinns, snakes, and myriad other dangers, and no reformism or rational modernism could fill in the needs. Older social types like shamans (ojhas) or badiyas carried on the show. Just as colonial sanitization could cover only the inside of the colonial space, reformism by its ideological/practical logic could penetrate only some parts of the lifespace of Bengali Muslims.
The above describes some of the dimensions of colonial changes that enabled a reconfiguration of Sufism in Indo-Islam. We would now discuss the kind of reconfiguration that took place in the structure of Sufism.
Classical Indian Sufism had been by and large shaped by the post-Mongol consolidation of Sufism as an increasingly structured system. This involved articulation of orders defined by shared allegiance, common but flexible body of teachings, disciplinary techniques and practices, and so on. The geography would often be partitioned into Sufi domains. Public authority of Sufis was mostly orally-mediated, aural and auratic. As the emplaced, cultured intelligentsia of Islam, the Sufis undertook various adaptations, translations and negotiations of ideas and practices in relation to the heterogenous mass of Indic peoples and social groups. With a consolidated, structured reproduction of Sufi orders during the Sultanic and Mughal periods, such adaptive-translational ideas and practices gained a certain traditionalization, which would be later called rusumat or traditional practices. The oppositional mujaddid Shaikh Ahmad of Sirhind launched attacks on traditionalism during the reigns of Akbar and Jahangir. However, Shaikh Ahmad’s reconceptualization was launched within the same ethical and epistemological conditions as his detractors.
With the onset of colonialism, there was a certain de-structuration of classical Indian Sufism, and its Bengal chapter was no exception. With the political quietization of the oppositional islamigentsia, a tactical common front against old-fashioned Sufism was opened by the partially-aligned orthodox and modernist Muslims. The new colonial political space gave an impetus for vertical integration of rural Islam in Bengal with pan-Indian Hindustani Islamic ideology. A network of new Sufi darbars were established in Bengal to propagate reformism with zeal. Undoing the traditional tariqah-structuration, trans-Tariqah Sufism became much more common in this period: a Sufi receiving initiation from multiple lineages has been not uncommon since 15th century, but the process rapidly flourished under colonialism. (30)
In short, new textual culture, new educational institutions, and new structuration of life created a new form of religious intersubjectivity. New ways of interpellation a la Althusser could be devised based on this interplay among mass-circulated texts, new norms around Islamic discourse-making, and the refashioning of the Muslim selves. Of course, the dead Pirs could not be rendered interpellated by the new ideological apparatuses. Popular veneration in their tombs continued in the vein of tradition, and the reformists sought to stem this tide.
In the reconfigured Sufism, just as the Sufis were dislocated from their earlier roles of munificent public-ness, the ethical purpose of Sufism would partly be regrounded.
The Tariqa-i-Muhamadiya in its various forms, the Faraidi movement, and later the expansion of the Deobandi educational apparatus created a new ethical transcendence of Islamic men.
The new ethical purpose was cultivating a certain oppositionalism towards various forces and growths that were perceived to have attacked or enervated the collective body of Muslims.
In this context of a new conception of Sufism would we place the successor suborders succeeding the Tariqah-i-Muhammadiya (TiM). These suborders distinguished themselves against the broader context of Indo-Islam by railing against polytheism and innovations. At the same time, these sought to appropriate the prestige and sanctity of older classical Sufi orders by claiming multi-tariqah filiation.
For an example of the ideas of a typical TiM suborder, we would like to quote here a succession-come-preceptory document by the successor of Imamuddin Bangali, a Bengali lieutenant of Syed Ahmad Berelvi.
To make a brief methodological remark: In understanding Sufism in Bengal and India, the predominant focus has been on texts like table-talk (malfuzat), letters (maktubat), hagiographic collections (tazkirah) and similar genres of texts. There has been far less concentration on Khilafatnamahs or letters of successorial authorities. Yet, Khilafatnamahs have certain important attributes that make them highly useful sources in understanding some aspects of Sufism, such as:
(a) Khilafatnamahs record the transmission of charismatic authority of the Sufi shaikh. These are transactional, performative texts having both locutionary and illocutionary dimensions. Such practicality shapes their formats and content.
(b) These are contemporary with much of the subject matter represented, unlike for example a tazkirah recounting the past. This may affect the veracity of the representation in such documents both positively and negatively. For example: The colophonic parts usually give us objective coordinates, while the eulogistic parts may be highly subjective and self-serving.
(c) Khilafatnamahs can help retrace the geographic concentration and dispersion of a tariqah.
(d) The commandments contained in such documents could help understand the normative content of a Sufi assemblage in its self-representation.
As we will see, the Khilafatnamah issued by the successor of Imamuddin Bangali testifies to dispersion of TiM into Noakhali, the ideological urgency for reformism, and the Persophone Sufi lore of the Tariqah.
The nisba or toponym “Bangali” attached to the name Imamuddin itself testifies to his pan-Indian horizon of belonging where he had to have a differential name in terms of his patria. After the Balakot massacre, Imamuddin returned to Noakhali, in Southeast Bangladesh and a culturally heterogeneous space at that time. Imamuddin would conduct missionary activities to preach the teachings of his Shaikh. The successorial and preceptory document that we will share here was issued by Imamuddin’s successor Muhammad Abdul Aziz of Sadullahpur to his own followers. In this document, he initiates the followers into multiple Tariqahs as deemed valid by the TiM. The document, reflecting the doctrine of new Sufism, preaches a strict conception of Islamicity: One must denounce polytheism and innovation with very expansive definitions. We are quoting the full text as it reveals fascinating details about transmission of TiM Sufism in the geographic margins of the Islamic space of Bengal.
Text
بسم الله الرحمن الرحیم
از فقیر محمد عبد العزیز
بر ضمیر صفا پزیر طالبین راه حضرت حق و سالکین طریق ان هادی مطلق عموما و کسانیکه باین فقیر لسدقی اله حاضرانه و غائبانه محبت میدارند
خصوصا پوشیده نماند که مقصود از بیعت بر … پنج (؟) طریقت ۸ عین ست که راه رضامندی حضرت حق بدست اید و راه حضرت حق منحصر و اتباع شریعت غراست
هرکه سوای شریعت مصطفویه را طریق تحصیل رضامندی حضرت حق انکار دین بیشک ان شخص کازب و گمراه ست و دعوی او باطل و نامسموع و اساس
شریعت مصطفویه بر دو امرست اول ترک اشراک و ثانی ترک بدعات
اما ترک اشراک بیانش انکه هیچکس را از ملک و جن و پیر و مرشد و استاد و شاگرد نبی و ولی حلال مشکلات خود نه پندارد و حاجات خود را یکی از ایشان طلب ننماید و هیچکس را قادر بر حل مشکلات و دفع بلیات تحصیل بنافع نداند
همه را مثل خود در جنب قدرت و علم حضرت حق عاجز
و نا…ر و هرگز بنابر طلب حوائج خود نزرو نیاز کسی از انبیا و اولییا و صلحا و … نیارد
و آدمی این قدر داند که ایشان مقبولان یادگا صمدیت اندو شمره مقبولیت ایشان همین ست …. تحصیل رضای مند پروردگار را اتباع ایشا باید کرد و ایشان را پیشوایان همین طریق باید …
ایشان را قادر بر حوادث زمان و عالم اله و الا علان … امر محض کفر شرک ست
هرگز ….وث بآن …..
ترک بدعات پس بیانش انکه در جمیع عبادات و معاملات و امور …. و معاویه (؟) طریق خاتم الانبیا محمد رسول الله صلی الله و سلم را بکمال قوت و علومی همت باید گرفت
و انچه مردمان دیگر بعد پیغمبر خدا صلعم از قسم رسوم اختراع نموده اند مثل شادی و ماتم و تحمل قبور و بنای عمارت بران اسراف در محال اعرک و تعزیه سازی و امثال …. هرگز پیرامون نیاید گردید
و حق الوسع سعی در محو کردن ان باید کرد اول خود ترک باید نمود بعد از آن هر مسلمان را بسوی ان دعوت باید کرد که چنانکه اتباع شریعت فرضست همچنین امر بالمعروف و نهی عن المنکر نیز فرض ست
و چون این امر دین نشین شد پس جمیع دلالین حق را باید که همین امور را پیش نظر خود ساخته با یکدیگر بیعت نماید
خصوصا مستعد هدایت مسلمین محمد منشی ولی الله صحب اعانهم الله تعالی که بردست این فقیر بیعت نمیده اند
و این فقیر آن اموررا روبروی ایشان کما حقه اظهار نموده
و ایشانرا متحا ز باخذ بیعت تعلیم اشعال از جانب خود نموده پس بر دمه (؟) سه ایشان لازمست که اول خود تمسک بامورمزکور الصد (؟) نمایند و قلب و قالب خود را متواجه بسوو حق کنند و اتباع شریعت اعراده ظاهرا و باطنا پیش گیرند
و تمامی انجاس اشراک و الوات بدعات را از خود دور نمایند
و بعد از ان جمیع طالبین حق را بسوی ان ترغیب کنند و در أخذ بیعت بردست خود محض برضاء الله و خالصته الله به نیت ترویج احکام دین از خود ساعی سوند (؟) و ترغیب و امر نمایند هرگز انجام از ان ننمایند چه درین بیعت که بردست یاران فقیر واقع خواهد شد فائده شدنی است انشا الله تعالی کلمهگویان از رسوم شرک و بدعت پاک خواهد شد و تعظیم شرع در دل ایشان جا خواهد گرفت که اصل غرض این بیعت عین ست
و فقیر دعاها خواهد کرد که ان بیعت مثمر ثمرات جمیله به جزیله گردد و تعلیم و تفهیم طالبان سعی بدل و جان نمایند وازایشان اخذ بیعت کنند و ایشان را تعلیم اشغال فرمایند حق حل وعلا این فقیر را و جمیع مخلیص مجبین ما را فلامره موجدین و مخلیصین و متبعین شریعت غر اگر داند فقیر عبد العزیز سعداللهبوري پسرهء جناب مولانا امام الدین مرحوم
آمین
بسم الله الرحمن الرحیم اله توبه کیا مینی سب بدی کامون سی دور سبی بد باتون سی الله تونبشدی (؟) لا اله الا الله محمد رسول الله الله کی سوا کوی دوسرا معبود بندگی کی لائق نهین هی اور محمد صلی الله علیه سلم الله کی … مین بیت کیا …
اور قادریه اور نقشبندیه اور مجددیه اور محمدیه کی اوپرهاتهه فقیر خلیفهء خلیفهء سید احمد شهید کی ح ولی الله خلیفهء مولوی محمد عبد لعزیز صحب کی
الله تو قبول کر اور نعمتین ان طریقون کی الله میری نصیب کر آمین
Translation
In the name of God, most beneficent, most merciful.
From the poor Muhammad Abdul Aziz: With pure minds, the seekers of the path of the True Lord (Hazrat Haqq) and the searchers of the path of that Absolute Guide – in general, and those who love this Faqir of the [true?] Lord in presence and in absentia;
In particular, (those for whom) it is no secret that the purpose of allegiance to the five orders is to attain the path of pleasure of the True Lord; the path of the True Lord is strict, and the observance of the Law is bright;
Anyone who seeks the pleasure of the True Lord except through the Law of Mustafa denies the religion and is undoubtedly a mendacious, misguided person. His claim is invalid, unheard and baseless.
The law of Mustafa is based on two things: first, abandonment of polytheism and second, abandonment of heresies (innovation).
However, abandonment of polytheism is explained as follows: that he does not believe anyone – any king, genie (jinn), spiritual master, mentor, teacher and disciple of the Prophet and the guardian – as the solver of his problems, and does not ask for the fulfillment of his needs from any of them, and does not consider anyone capable of solving problems and beneficial in repelling troubles. He sees everyone like himself, incapable and … as opposed to the power and knowledge of the True Lord. (He) never seeks from any of the prophets, saints, […] for the demand of one’s needs. A person knows this much that they are accepted as reminders of the eternity (the Lord) and their acceptance is in this: …. to teach about causing the pleasure of the Lord. They must be followed and they must be accepted as leaders in this very way… Considering them to be capable over the events of the time and the world of God and God Almighty is pure disbelief and polytheism. Never… that…
Then comes the abandonment of innovations: it is stated as follows: that in all worships, activities and affairs [….] the path of the seal of prophethood of Muhammad, the Messenger of God (peace and blessings be upon him), should be upheld with full force and knowledge. What other people after the Prophet of God (peace and blessings of God be upon him) have invented as different kinds of traditions, such as joy and mourning, maintaining graves and building extravagant mansions in the […], making Taziyah and the like …. And one should make broad efforts to eradicate these: one should first abandon these practices, and then one should urge every Muslim to do the same, since observance of the Law is mandatory as is the commandment of the good and the prohibition of the evil. And since it is the order of the religion, all the brokers of the Truth who keep the commands in front of them must pledge allegiance to each other. Particularly gifted for guiding Muslims is Muhammad Munshi, the friend of God, may God bless him and grant him peace, who has pledged allegiance to this poor man.
And this poor man has stated these instructions in front of them; and he has taught them the taking of allegiance and the teaching of things on his own behalf, so … It is necessary for them to cling to the aforesaid instructions and pay attention to the Truth in their hearts and minds, and proceed with following the Law publicly and privately, and remove all forms of polytheism and innovations from themselves; And after that, all the seekers of the Truth should be persuaded towards it, and take allegiance in their hands only for the sake of God and the purity of God, with the intention of promoting the rules of religion, of persevering (?) and persuading thereto and so on; and never do that with the intention that taking oath of allegiance at the hand of Faqirs would be beneficial.
God willing, the speakers of the words will be cleansed of polytheism and innovation and respect for the Law will take hold in their heart so that the real intention of taking oath of allegiance will be such. And Faqir will pray that this allegiance be fruitful in beauty and abundance; that they will demonstrate the teaching and understanding for the seekers in their mind and heart, and have allegiance from them, and teach them to do good deeds. May the True and High Lord know this Faqir and all the sincere lovers amongst us as existent, pure and followers of the Law.
Faqir Abdul Aziz Sadullahpuri, the son (?) of the late Maulana Imam al-Din, Amen.
[Urdu sidenotes]
In the name of God, the most merciful, the most compassionate. Lord, I have repented that I would stay away from all bad deeds and from all bad words. Allah, you … (?). There is no god but Allah, and Muhammad is Allah’s Messenger. (The same formula in Urdu).
I pledged allegiance in Qadiriyya, Naqshbandiyya, Mujaddiyya, Muhammadiyya Orders in the hands of Mr. Maulvi Abdul Aziz the Faqir, the viceregent of the viceregent of Syed Ahmad Shahid.
Allah, please accept it, and Allah, allow the blessings of these Orders be showered to my fate.
The Khilafatnamah of Imamuddin Bangali’s suborder reflects core attributes of the TiM including its conception of orthodoxy, its claim to multiple pre-existing Tariqahs, and denunciation of emplaced Indo-Islamic practices.
The Nizampuri-Azamgarhi Silsila was a parallel suborder to that of Imamuddin Bangali’s, and must be understood in the above-discussed context of a reconfigured Sufism. Among the many darbars or Sufi lineages in Bengal established during the colonial period that traced their origin to Syed Ahmad Berelvi, Nur Muhammad Nizampuri’s (d. 1856 CE) suborder proved to be the most consequential. Born in a family that traced its lineage to Ghazni of central Asia, Nur Muhammad attained higher Islamic education in the Calcutta Alia Madrasa. He joined Syed Ahmad Berelvi when the latter had come to Kolkata to recruit men. After the Balakot disaster, Nizampuri returned to Bengal As a returnee mujahid. He suffered persecution from the British administration and often had to escape arrest. (31) At some point, he began preaching his message in Bengal.
We will now briefly discuss the successors of Nur Muhammad Nizampuri to show how milieu and ideals interacted to shape their spiritual persona.
The most able successor of Nizampuri was Shah Fateh Ali Waisi (1825-1886), also from Chattogram. (32) In his youth, he gained recognition as a mainstream personality in the upper echelons of the Muslim community in Kolkata, the capital of the British English Empire. He gained an illustrious following: His most influential and seminal disciples were Abu Bakr Siddique of Furfura darbar (d. 1939), Syed Ahmad Ali the founder of Sureshwari Darbar, Ghulam Salmani, and many others. The Nizampuri legacy secured its future through Waisi’s dissemination.
The next in line in the succession chain of the Nizampuri-Azamgarhi suborder is Ghulam Salmani (1854 or 1858-1912 CE). Although Salmani never attained the kind of fame by some of his spiritual brothers named above, he belonged to the respectable class of Kolkata. As a respected academic personality, he received the title Shams al-Ulama from King George V in 1911. (33) His disciples included aristocratic and notable personalities of Bengal. (34)
The leaf that disciples like Ghulam Salmani probably took from Waisi was that Sufis needed to consolidate their grounding among the newly emerging Muslim middle classes whether the urban educated strata or the mercantile bourgeoisie. A new economic ethic was hinted in his conception of the Sufi self. In his wasiyatnama, Salmani dictated that it is better to earn one’s living through legitimate business and employment while it is wise to avoid earning livelihoods through collecting donations (chada) for religious seminaries (maktabs and madrasas), tributes to spiritual masters (Piri-Muridi), general charity (zakat or fitra), or commoditizing spiritual power (e.g. selling amulets or tabij).
The fourth figure in the succession chain is Ghulam Salmani’s caliph Syed Abdul Bari (1859/1860-1901). Bari was not a scholar like his spiritual predecessors, but he accumulated personal charisma.
In his early explorations into Sufism, Bari was dismayed to find strands of antionomianism in actually-existing tariqahs. Following the advice from his Quran instructor Mirza Niaz Ali, Bari went to a certain Pir called Shah Najibul Islam. The story goes that when Bari pledged allegiance to the Pir, other disciples told him that now that he is a murid of the Shaikh, he is not obliged to perform orthodox religious rituals anymore. Perturbed by such heterodoxy, Bari forswore the allegiance and gave up on the institution of pir-muridi itself for the time being. However, at some subsequent point, he met a Chishtiya seeker called Miyan Karim Bakhsh, identified as a survey inspector in available accounts, who had come to Kolkata. Bari found the precepts and example of Karim Bakhsh credible and salutary and pledged allegiance to him. His subsequent spiritual journey proved extremely enriching. At some point he left his job in the railway and faced severe economic hardship. During these times, he had various kinds of visions featuring figures like Muinuddin Chishti, Ali ibn Abu Talib, and Abd al-Qadir Jilani among others. The visions not only provided him spiritual nourishment but also alleviated his hardship: as he began to receive gifts (futuh) from devotees. (35) He then met Ghulam Salmani from whom he learnt the secrets of the ten subtle centers in the body (lataif-i-ashara). He also had an oneiromantic conversation with Shaikh Ahmad of Sirhind. Following this dream meeting Bari was initiated into the Mujaddidiya order by Ghulam Salmani. His spiritual gifts got upgraded as he began receiving direct instructions from such ancient luminaries as Shaikh Ahmad of Sirhind, Abd al-Qadir Jilani, Abd al-Hasan Shadhili, and Shaikh Baha al-Din Naqshband – besides Uwais Qarni and Muin al-Din Chishti – all in his dreams. Instead of seeking out the secrets of spiritual subtleties from existing representatives of the various Sufi orders, his oneiromancy allowed a certain disintermediation whereby he laid claim to the origins and through a process of synchronic reduction could do away with the accretionary successor chains: gaining khilafat in seven orders. (36) The new Sufism was appropriating classical Sufism without going through rites of incorporation and allegiance to the traditional orders: a pure profit without incurring the necessary expenses. In a more secular interpretation, it may be said that the dream figures of older masters of classical Sufism would serve as legitimizing props for the new drama of reformist Sufism.
It is no wonder that Bari reached out to the departed masters rather than current representatives of the traditional Sufi orders, which were facing a serious legitimacy crisis by this time. The story goes that when Abdul Bari met Maulavi Muhammad Nayeem Firangimahal at Lucknow and the latter asked him whether he was part of a pir-muridi relation, Bari retorted that: Pir-muridi is your business, while my business is to show the path of God to those who seek it. (37) This statement discredits the formal structuration of traditional Sufism while claiming a more effective delivery of the spiritual function of Sufism that Bari avowed to espouse. However, the denunciation of pir-muridi posed a risk for his legacy: As a relatively low-profile person, when Bari died at the age of forty, he left behind only 28 murids and two caliphs. (38)
Before going to the next successors of the Nizampuri suborder who would be central to our narrative of spread of Bengal Sufism into the Arakan-space, it would be useful to explain the self-fashioning of reformist Sufis of the suborder. The table below lists the occupations of the successors of Nur Muhammad Nizampuri relevant for this paper.
Name
Occupation
Fateh Ali Waisi
High official
Ghulam Salmani
Professor
Karim Bakhsh
Government official
Syed Abdul Bari
Former government official
Hamid Hasan Alavi
School teacher, landed gentry
Maulana Faiz Ahmed
Landed gentry
Abdus Salam Arakani
Landed gentry
The table shows that the masters of this suborder were mostly from the respectable middle and upper strata of society. This specific sociological location reflects a selection principle active in dissemination and succession in the suborder premised on a certain new social self-imaginary created by changing socio-economic parameters in colonial society. Nur Muhammad Nizampuri, Fateh Ali Waisi, and Ghulam Salmani received substantial education and took respectable jobs. Syed Abdul Bari didn’t receive institutional education or prestigious employment, but it was compensated by his esoteric achievements.
Among the few disciples left behind by Bari, it was Hamid Hasan Alavi alias Azamgarhi Hujur or Bara Hafezzi Hujur (1871-1959), the son of Bari’s Chishtiya Pir Miyan Karim Bakhsh, who would perpetuate his legacy in the form of what would be known as the Azamgarhi or Hamidia silsila. (39) It was with Hamid Hasan that the Nizampuri suborder spread strong roots in Arakan, as we will explain shortly.
Born in a Zamindar family, Hamid Hasan had developed proclivity for long and far-flung missions in the footsteps of his father who used to travel across Bengal and beyond as a survey inspector. In 1901, Hamid Hasan was serving as a teacher in a primary school in Akyab, Arakan, when he was summoned by his master Abdul Bari. Hasan was nominated as a caliph by Bari who was at the cusp of death.(40)
Hamid Hasan took upon the mission of the Nizampuri suborder quite seriously. (41) In his subsequent life, he would tend his agricultural estate during June to January every year, and in the remaining months, he would go out on missions. His tireless efforts led to a massive expansion of the Nizampuri suborder: he left as many as 44 caliphs, 24 in Chattogram-Arakan axis and 20 in Indo-Pak regions. (42) In his wasiyat, he identified his mission ordained by Bari as a global call. He warned his followers of disagreement in the community (jamiat).(43)
Chattogram was the most fertile ground for Hamid Hasan’s mission, and his success in Akyab and Myanmar was only an extension of the Chattogram chapter.
In other words, Chattogram-Arakan constituted a single chapter. (44) Hamid Hasan carried on his annual mission till the year 1939 when the Second World War began and the Bengal-Burma frontier gradually became a theater of war. Bengal itself was profoundly affected by the war. (45) This was followed within a few years by departure of the British and creation of the postcolonial states: India, Pakistan, and Burma. For 16 years, Hamid Hasan didn’t visit his Chattogram-Arakan field. Finally, in 1955, Hamid Hasan paid his last visit to Chattogram.(46) In 1959, he breathed his last.
The disciplined and indefatigable efforts of Hamid Hasan of Azamgarh created a lasting legacy in the Chattogram-Arakan belt. The eponymous Azamgarhi or Hamidiya suborder was one of the most prominent Sufi orders in Chattogram. In South Chattogram, there is a series of mosques and tombs through Cox’s Bazar down to Arakan that are established by the disciples of Hamid Hasan.
There are a few key reasons why Hamid Hasan’s missions created powerful impact in the Chattogram-Arakan region: expanding missionary frontier as well as agrarian frontiers (to be discussed below), integration of social elites, ideological alignment with the orthodox-modernist nexus, and indefatigable propaganda using new forms of mobility and outreach. We have explained in an earlier section about new textual culture, institutional development, changes in economic ethic and so on as facilitating a re-structuration of Sufism. In areas like Chattogram or Arakan, new madrasahs were established by the local gentry and elite: often integrated into the new educational system. (47) When Azamgarhi brought his message, it gained a certain acceptance in this community.
Colonial modernity appropriated certain fields of life education, health care, criminal law, property administration and so on, and the new structuration of life displaced the fields of spiritual charisma. The miraculous powers of Sufis were not necessarily exorcized by the iron laws of science. Instead, Sufi charismatic power was displaced to new avenues or fields of investment. For example: in a discussion with Abdul Bari, Hamid Hasan raised the miraculous power (karamat) of Sufis. The master said that it’s not a great miracle to revive the dead, but to make a hell-bound man be rerouted to heaven. (48)
At the Buddhist Frontier: Abdus Salam in Arakan
As mentioned, with the efforts of Hamid Hasan, the Nizampuri-Azamgarhi suborder found a strong grounding in Arakan. In this section, we will introduce Bengali-Chattogrami Sufi called Abdus Salam Arakani of the Nizampuri-Azamgarhi Tariqah whose ancestors had settled in Arakan with reference to an undated Letter of Successorial Authority signed by him. The postcolonial afterlife of the Nizampuri-Azamgarhi Tariqah across the borders of the new nation-states would also be discussed.
Expansion of the Nizampuri-Azamgarhi suborder in Arakan was facilitated by the growth of a rice economy in colonial Burma that led to influx of Bengali or Indian Muslims into a place that already had a significant Muslim presence. In 19th century, British colonization of Burma triggered export-oriented growth in the rice economy of Burma and Rakhine. This was linked with the settlement of Bengalis – mainly the Muslims – into South Chattogram and then into Arakan. New townships emerged in Akyab district of Arakan. In the Islamo-Buddhist frontier of Arakan, a potential front for Islamization was opened. Hamid Hasan Azamgarhi and his disciple Abdus Salam Arakani launched their operations in this frontier with the goal of Islamization which involves both potential conversions as well tending to the existing flock, i.e., maintaining the orthodoxy of the Muslims in the frontier.
Earlier Islamization process in South Asia had been closely related to investments of sacred associations into territories and spaces through the embodied practices of the Sufis themselves as well as the manifold representations of the same through architecture, hagiography, and popular lore. (49)
When Islam was first propagated into Bengal, the territory was identified as Ajab and Gharib, the language and the script were seen as defiled by indic associations at the frontier of encounter of victorious Turks and the local populace. In the early Bengali Sufi poetry, there is significant anxiety about whether Bengali language and script could serve as a medium for transmitting Islamic messages. By 17th-18th century, a relatively robust Bengali Muslim literary tradition was established that accumulated sufficient legitimacy and valorous associations to shed much of the hesitancy. The 18th century Bengali Sufi poetry from Chattogram for example boasted of a sacred geography dotted by the memories of saints and a glorious literary lineage starred by the likes of Syed Sultan and Alaol. The same dynamic of assimilative sanctification was initiated in Arakan. In this section, we would try to show that expansion of Muslim settlements, Sufi networks as well as certain kinds of representation rendered the alienness of Arakan accessible to the Indo-Muslim subjects.
Close relationship between Bengal and Arakan is documented since the 15th century, when Mrauk-U was established as the capital of the Arakanese Kingdom. (50) The Arakanese kingdom adopted Perso-Islamic regalia including Perso-Islamic names and titulature, Persian inscribed coins, and court etiquette. More importantly, Mrauk-U became a key center of a multi-ethnic Muslim community. Mardan (early 17th century), Daulat Qazi, Sayyid Alaol (c. 1610-1680), Sayyid Muhammad Akbar Ali (active in 1673) were active in the Bengali literati in Roshang. These Bengali Muslim poets would eulogize the Arakanese monarchy and documented the close affinity among the monarchy and the Muslim nobility and elite in a Buddhist-majority society.(51)
However, the close Arakanese-Bengali relations was not invariably irenic. While a group of Bengali Muslims – besides a plurality of non-Buddhist residents of Arakan – were settled comfortably in Arakan, the Arakanese kingdom kidnapped and enslaved Bengalis from coastal Bengal and used them as slave labor. (52) This precolonial structure was ruptured when the Mrauk-U Kingdom was toppled by a Burmese invasion in Arakan (1784) soon to be followed by British annexation of the territory (1826). (53)
British colonization of Arakan affected the demography of Arakan as it integrated the realm into the broader space of the Raj. One of the key debates in relation to the colonial transformation of Arakan relates to the inflammatory question of the provenance of a Muslim population in Arakan. While precolonial Bengal and Arakan had dominant ethnic groups in respective territories, these were not modern nation-states with ethnic citizenship or visa system. Precolonial Chattogram and Arakan as adjacent regions had organic as well as coercive migration patterns as we have discussed above. Right after British annexation of Arakan, in an 1826 estimate the share of the Muslim population in the province was found to be significant.
In any case, the colonial period saw an expansion of seasonal as well as settlement migration from Bengal to Arakan, especially from Chattogram region.(54) The preexisting Muslim population had connections in Chattogram, which provided a basis for need-based migration to Arakan. However, migration was not a one-way street leading from Bengal to Arakan. In 1784 during the invasion of Arakan and in subsequent fluxes, a significant number of Arakanese came to take shelter or in some cases settle in Bengal.(55) The case of Tyta Kufy, Pehlun Raja and Khutu who fled to Bengal for example is well-known. Many Arakanese refugees settled in Bengal. Since Arakan economy consistently appropriated slave labor from Bengal for working its lands before 1784, subsequent immigration can be seen as wage labor taking the place of earlier slave labor and voluntary migration replacing forced human trafficking just as the economic pie was expanding.
Labor migration from Bengal to Arakan saw a visible uptick with the opening of Suez in 1869 that expanded rice trade. The British began promoting settlement in unappropriated land.(56) Akyab was developed as a key port and large seasonal migration as well as settlements began from Chattogram since 1870s.(57) As Southern Chattogram was mostly settled by 1880s, during 1891 to 1901, Chattogrami settlers began setting down their roots in northern Arakan, marking a natural expansion of Chittagong’s agricultural frontier.(58) In view of the expansion of migration, new Muslim-majority localities added (59) to the preexisting precolonial Muslim presence. Maundaw (the Naf settlement), Buthidaung and Rathedaung – quite close to the Chattogram-Arakan border(60) – emerged as the key Muslim settlements in Arakan.(61) By early 20th century, besides the multi-generational Muslim inhabitants of Arakan, there was a community of first-generation settlers, a cyclical immigrant workers’ flow for working the fields during rice harvest, as well as immigrants who worked in the towns.(62)
As a result of increasing Muslim settlement and migration, Akyab emerged as a major post in the expanding frontier of Muslim population.(63) In this nascent, peasant community of Muslims, Urdu rather than Bengali was the language of education. In 1894, there were nine Urdu schools with 375 students in Akyab. By 1902, the number of schools were raised to 72 as a result of promotion by the British.(64) It was in this context that Hamid Hasan Azamgarhi and his Arakan chapter can be located. As we mentioned, Azamgarhi worked as a school master in Burma in the early 1900s. His key disciple in Arakan was Abdus Salam Arakani, the scion of a well-off landed family of Akyab. The missionary Azamgarhi and the settled Abdus Salam were agents of a certain kind of transitional governmentality in this expanding religio-agrarian frontier.(65)
To understand the religious culture of colonial Arakan, it may be mentioned that a new textual culture probably underlined Islamic orthodoxy. Compared to the earlier courtly literature of romances, the Arakan-based Bengali Muslim writers of the 18th-19th centuries produced more nomothetic literature. Ainuddin for example wrote a work drawing from Tafsir Husaini and Fath al-Aziz.(66) Fath al-Aziz is a work by Shah Abdul Aziz (1746-1824), while Tafsir-i Husaini had been added with the Quran translation by the Wali-Allah family. Ibrahim alias Asirang, a Faqir of Shariah and a son of a Qadi and courtier at the Roshang court patronized Ainuddin in this bibliogenetic enterprise.(67)
It is in this context that we can understand the life and work of Abdus Salam Arakani (d. 1986), the Arakan-based caliph of the Nizampuri-Azamgarhi suborder. Abdus Salam, also known as the Arakani Hazrat, was the son of Panchkari Saudagar, a big trader and zamindar who lived in the Buthidaung of Arakan. When Salam was only in class eight, he went to meet Hamid Hasan. He served the Pir for 22 years and attained caliphate. Salam received higher education from Calcutta Alia Madrasa and the Aligarh University. As an influential person and a respected leader of the silsila, Abdus Salam expanded the Azamgarhi footprint in his region. There are many caliphs, disciples and devotees of Abdus Salam Arakani in the Chattogram-Arakan region. According to Ahmedul Islam Chowdhury, he had 11 khalifas located across Chattogram and Myanmar.(68) Salam’s own father-in-law’s house was in Cox’s Bazar, thus marking his immediate social network precisely distributed across the Bengal-Arakan border.(69)
We will now introduce a khilafatnama or successorial document granted by Abdus Salam Arakani to his disciple (murid) Nurul Amin. We quote the full text and translation:
Translation:
God the great says, “Surely those who pledge allegiance to you ˹O Prophet˺ are actually pledging allegiance to Allah. Allah’s Hand is over theirs. Whoever breaks their pledge, it will only be to their own loss. And whoever fulfils their pledge to Allah, He will grant them a great reward.” (Quran 48:10)
We chant his praise and pray for his honored messenger.
The Letter of Succession
I Faqir Abdus Salam – may I be forgiven, father: Late and Forgiven (Maghfur) Haji Ahmad Ali alias Haji Panchkari Saudagar, a resident of Gudampara area of Buthidaung
Police Station in Akyab area of the realm of Burma Muluk, one of the edge-kissers of the heavenly court of My master (maula) and guide (murshid) Haji Hafiz Hamid Hasan Alawi, shaded high (maddajilluhul ali) – hereby (declare that): my dear Maulana Muhammad Nurul Amin Sahib, father Mr. Haji Yar Muhammad Sahib, a resident of Kaliash area of Chandnaish police station in Chittagong district, who is one of my associates – since he has learned from me each lesson of the high order Mujaddidiya and reached a station so that this faqir has confidence in him, hence on this basis (he) is (hereby) allowed by me to nurture those who seek the path of truth, to teach others the true path that I have taught him, to hold initiation (bayat) if necessary, and always focus on following the example of the Prophet (peace and blessings of Allah be upon him) and abstain completely from innovations (bidah) and Sufi rituals such as death anniversary (Urs) and audition (Sama).
May the benevolent and great God keep him and his worship in his safety, only on the Prophet and the great Creator.
From
Faqir Abdus Salam Afua ne
Muhammad …
Islamia … Chandanpura, Chittagong, 12 rajab, AH 1404 (1984)
Text:
قال الله تعالی إِنَّ الَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ إِنَّمَا يُبَايِعُونَ اللَّهَ يَدُ اللَّهِ فَوْقَ أَيْدِيهِمْ ۚ فَمَنْ نَكَثَ فَإِنَّمَا يَنْكُثُ عَلَىٰ نَفْسِهِ ۖ وَمَنْ أَوْفَىٰ بِمَا عَاهَدَ عَلَيْهُ اللَّهَ فَسَيُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا
نحمده و نصلی علی رسوله الکریم
خلافتنامه
من فقیر عبد السلام غفرله ولد حاجی احمد علی عرف حاجی پایجکری سوداگر مرحوم و مغفور متوطن گودام پارئ تهانه بوڑیڈنگ من مضافات اکیاب (ملک برما) یکی از آستانه بوسان بارگاه فلک پایگاه حضرت مولانا مرشد نا حاجی حافظ حامد حسن علوی مدظلے العالی ام اکنون عزیزم مولانا محمد نور الامین صاحب ولد جناب حاجی یار محمد صاحب ساکن کلی آءش تہانہ چندناےش من مضافات ضلع چاٹگام که یکی از متعلقین من است و او طریقہ عالیہ مجڈیہ را سبقا سبقا از من آموختہ و حالتی بہم رسانیدہ کہ این فقیر را بروی اعتمادی بہم رسیدہ بنابرین من ویرا اجازت میدہم کہ طالبین راہ حق را تربیت نماید و بر نہجی کہ من ویرا آموختہ ام دیگران را بیاموز و بضرورت بیعت ہم بگیرد واتباع سنت نبویہ علیہ الصلوت و السلام را داءما پیش نظر دارد واز بدعات و رسومات صوفیہ ہمچون عرس و سماع و غیرہ قطعا محترز باشد
ایزد تبارک تعالی ویرا وہمگی و ابرتگان ویرا در حفظ وامان خود داراد بالنبی والہ الامجاد . فقط
از طرف
فقیر عبد السلام عفی عنہ
مجہر خ… ….
اسلامیہ ل… چند … چاتگام ۶ ر رجب
Abdus Salam Arakani’s khilafatnama copies from the format of Hamid Hasan Azamgarhi. We here reproduce the text of Hamid Hasan’s khilafatnama to Abdul Majid.(70)
بسم الله الرحمن الرحیم
نحمده و نصلی علی رسوله الکریم
…. اما بعد فقیر حامد حسن علوی غفر له که یکی از آستانه بوسان بارگاه فلک پایگاه حضرت سید عبد البری شاه قدس سره الحسنی و الحسینی است اکنون …. محمد عبد المجید ساکن گرنگیاه تہانہ ساتکنیه من مضافات چاٹگام که یکی از متعلقین من است و او طریقہ عالیہ مجڈیہ را سبقا سبقا از من آموختہ و حالتی بہم رسانیدہ کہ این فقیر را بروی اعتمادی بہم رسیدہ بنابرین من ویرا اجازت میدہم کہ طالبین راہ حق را تربیت نماید و بر نہجی کہ من ویرا آموختہ ام دیگران را بیاموز و بضرورت بیعت ہم گیرد باشه واتباع سنت نبویہ علیہ الصلوت و السلام را داءما پیش نظر دارد واز بدعات و رسومات صوفیہ ہمچون عرس و سماع و غیرہ قطعا محترز باشد
ایزد تبارک تعالی ویرا وہمگی و ابرتگان ویرا در حفظ وامان خود داراد بالنبی سلی الله علیه وسلم والہ الامجاد رضوان الله تعالی علیهم اجمعین فقط
۱۳۶۶ سنه ۱۶ ….
فقیر حامد حسن علوی
The same format is followed in the khilafatnama issued by Hamid Hasan to Abdul Majid’s younger brother Abdur Rashid (1900-1994 CE), which confirms that there is a fixed format of the Persian khilafatnama of the Azamgarhi suborder. The difference between Hamid Hasan’s Khilafatnama and that of his disciple Abdus Salam is that in the latter there is additional attention to paternity and geography. Shaikhs of the Azamgarhi suborder in alignment with the broader TiM ethic place strong emphasis on abstaining from innovations within which they places urs and sama. While they uphold institutions like bayat, they explicitly identify urs and sama as ‘sufi rituals’. While Imamuddin Bangali warns about both polytheism and innovation, the Azamgarhi shaikhs identify innovation as well as rusumat as the more pressing problems in their context. More specifically, urs and sama are explicitly denounced in the document.
Living in a Muslim-Buddhist nexus in a frontier region, Abdus Salam was inscribed within a certain objective anxiety which would be reified in the form of the anti-rusumat ideology. Hence, while he copy-pasted the template of the khilafatnamas of the Azamgarhi order, he cathected the template with local meanings. Indeed, reproducing a templated text doesn’t mean that the meaning and pragmatic implicature remain the same in the second iteration. Repetition a la Deleuze comes with a difference: to lightheartedly borrow words of Jorge Luis Borges: “his goal was never a mechanical transcription of the original; he had no intention of copying it.” Rather in issuing the same format, he wanted to “produce a number of pages which coincided—word for word and line for line—with those of” his master.(71)
Before discussing the longer history of Sufi approach towards urs and sama further, it would be important to understand how the controversy over institutions like urs and sama are basically grounded on the onto-theological debate on wujud and shuhud, or the dichotomy of what we call – at the risk of great simplification – immanent monism vs transcendental noumenalism, as discussed in the next section. It must be clarified that the goal here is not to recount the history of the debate that is rather well-known. We only seek to illustrate how Bengal, a place held to be marginal in the Islamic geography, did not only passively receive the outcomes of onto-theological debates conducted in the so-called heartlands of Syria (Taimiyya), Persia (Semnani), Punjab (Sirhindi), or Delhi (Wali-Allah). Instead, we would show that the preIslamic Buddhist thought of Bengal and its surrounding regions in turn shaped the debates raging in the Islamic heartland. In this demonstration, we focus on the figure of Ala al-daula Semnani, an early critic of the wujudi ideology who had to grapple with Buddhist thought from the East the roots of which could be partly traced back to Bengal and its vicinities.
Journey of Metaphors: Debating Onto-theology in Persia and Bengal
The literature on Bengali Sufism has mostly interpreted it in terms of a localized society that underwent Islamization with agrarian and socio-economic changes. Islamization has been understood as a deposition with some adaptations in a passively-receiving society. The grand ideologies of Sufism in Bengal have been interpreted in terms of preconceived notions of Islam, interreligious relations, and historical sociologies. Yet, socio-economic basis or political reality is not an exhaustive explanation or etiologically adequate to explain ideological phenomena.(72) It is very important to locate the ideas of the Bengali Sufi authors in terms of the grand onto-theological debates of Islamdom. One of the most critical onto-theological debates in Sufism or Islam as such has been between the two doctrines: unity of being (wahdat al-wujud) and unity of witness (wahdat ash-shuhud). It was precisely within the parameters of this debate that our Azamgarhi shaikhs and their spiritual predecessors stretching back to Ahmad Sirhindi articulated their denunciation of popular spiritual practices known as rusumat.
It could be suggested that Islamic intellectuals like Ibn Taimiyya, Ahmad Sirhindi or Shah Wali-Allah’s critique of popular spiritual practices were at least partly induced by an objective anxiety about dissolution or contamination of the Muslim community in association with non-Islamic community or powers: the Mongols, the Indians, and the Sikhs, Marathas, and so on respectively. For Abdus Salam, it was the Buddhists. The wujudi and shuhudi ideologies were not mere onto-theologies but also onto-theo-political ideologies that had deep implications on a subject’s relation to alterity.
In this section, it will be discussed how the articulation of Islamic orthodoxy was not necessarily an ever-linear diffusionist process involving journeys from Islamic heartland to the margins. In the making of the discursive traditions like Islam and others, there were crisscrossing flows of ideas and ideologies that would interact in various points of interactions. Thus, the critique of wahdat al-wujud was originally initiated in the Islamic heartlands but it involved a very curious adversarial interlocutor: Buddhists carrying the traditions of Bengal and India. It was a Buddhism that traveled from Bengal to Tibet and then to Mongol Persia, a region with a longstanding history of Buddhist in-mixing. (73)
The story begins when under the Mongol Ilkhanate (1256-1335), Buddhist rule was established in Islamic Iran. Early Ilkhanid rulers like Arghun Khan (r. 1284-91) pursued a policy of favoring Buddhists and sometimes persecuting Muslims. Even after conversion to Islam by Ghazan Khan, the prominent presence of Buddhist alterity remained significant in Ilkhanid Iran’s royal space.(74) Attracted by such state patronage, Mahayana Buddhists from China (Chan school), Uighur; and Vajrayana Buddhists from Tibet (Shamanism) and Kashmir, as well as Indians flocked to Ilkhanid Iran for expanding influence.
This was a period of intense tension at the heart of Islamdom. Jalal al-Din Rumi (1207-1273) and Ibn al-Arabi elaborated inclusive ideologies. On the other hand, the formidable Ibn Taymiyyah (1263-d. 1328) a Mamluk subject from neighboring Syria presented a stringent critique of Ghazan’s Muslim kingship, accusing that it’s thinly veiled Buddhism (75). Since Islam was a strong ideology that could not be washed away by political vicissitudes, reassertion of Muslim identity was very important for Muslim intellectuals under Mongol kingship.
Amid this encounter between Islam and Buddhism, the 14th century Persian Sufi intellectual Ala al-Daula Semnani of the Kubrawi order reclaimed the Islamic ideology.
This involved a certain degree of xenophobic ejection and ideological abjection of alterity, i.e. various non-Muslim presences, whether the Mongols or others, like Indian or Tibetan Buddhists. Semnani’s encounter with the Buddhists was framed within this logic of self-reinforcement vitiated by a sense of xenophobia.(76) At the same time, Semnani’s close dialogue with the Buddhists of Vajrayana and Mahayana schools reflects a complex, dialectical mode of engagement rather than unmitigated hate-rhetoric. In this process of engaging with alterity, Semnani articulated a critique of Ibn al-Arabi’s wahdat al-wujud. We will recount a few episodes of this articulation:
1. Semnani engaged in a memorable debate with an Indian bakhshi (bhikshu) at the court of the Mongol King Arghun Khan. The bakhshi was a childhood mate or acquaintance of Semnani. The proximity to Buddhists allowed Semnani to imbibe teachings and ideas of that tradition. In engaging the bikshu in debate, Semnani’s intention was clearly assertion of superiority of his own Islamic tradition. In the debate, Semnani referred the bikshu to Vinaya Pitaka of Theravada buddhism where trampling on sentient beings like plants are seen as crimes. Semnani described such an action as producing veil (hejab) between the person and God. Semnani also said that for Sakyamuni, even eating a fruit born in a tree springing from ground soaked by wine (khmr) is a sin, and yet the monk had drunk a belly-full of wine. He triumphantly concluded that the monk didn’t know his Sakyamuni. The bakshi was astonished at Semnani’s powerful argument, defeating the opponent by the latter’s own canon.
2. Semnani also held that Buddhists of his age believe that humans reincarnate and enter the bodies of lower animals or inanimate objects. He contended that the true teachings of the old Buddhists was rather that it is the seeker (salik) who – as the same person – enters various phases.(77)
The childhood acquaintance between Semnani and the bikshu thus made them not either mutually-reconciled friends nor violent enemies, but allowed the creation of a well-developed antagonistic discourse sharpened by mutual familiarity. Yet besides the overt ejection of alterity that was central to Semnani’s approach, there is a trace of introjection of alterity in this process, as Semnani distinguishes between true Buddhists of yore and false Buddhists of the present era.
3. Semnani’s xenophobic ejection of alterity is further reiterated in his brief exchange with the King himself. Arghun Khan took the Islamologist aside and asked why his creed called upon its followers to attack others as infidels (kafirs). In responding to this question, Semnani likened earth as a garden where for growth of plants the useless branches would have to be trimmed to allow growth of the better branches, a kind of gardening practiced in Arghun’s own royal garden. The kafirophobic assertions should not be taken as pure opposition to the King himself. The Kubrawi order of Semnani underwent expansion under Mongol rule with waqf grants from the rulers.
Semnani’s ideology marked certain developments which give us to think how even in such a context of xenophobic abjection, one could also adapt and appropriate aspects of others even if displaced through translation. This relates to the fact that Semnani articulated a theory of seven subtle spiritual centers (latifahs) within the body. (78) These can be, prima facie, mapped onto the seven chakra of Saiva-Buddhist Tantra. It has been a matter of debate if Semnani “borrowed” this theory from the Indian Yogic theory of chakras. Using concepts like borrowing, fusion, influence, and so on in explaining interreligious and intercultural contexts has been critiqued by scholars like Carl Ernst and Tony K Stewart. Instead of shallow comparativism that tries to show similarity and echoes across preexisting cultures, scholars are now more receptive to the singular, differential aspects of cultural phenomena. Certain scholars have thus argued that Semnani could not have borrowed his theory of subtle spiritual centers from yoga.(79) However, Semnani’s theory of latifahs represents an important new formulation which cannot be conceived in divorcement from the new spiritual imaginations mapping the body and its spiritual quests in the specific context shaped by the presence of Buddhists, Indians, and other social groups.
Semnani also likened the human body to a waterbody (hauz) and five senses as five holes. There is a fount (the heart) at the bottom which is covered. The devil (Shaitan) wants the hauz to be filled with water flooding in through five senses. Though man can help himself against the devil’s machinations by following the shariah, that cannot prevent inflow of dirt. The master (ustad) helps the seeker to shut the five senses and unearth the inner fountain, connecting it with the master’s own inner fountain and ultimately the original fountain (sarcheshme asli). Such an articulation by Semnani is not too far off from the indic yogic notions of meditative union with the absolute. While an elaborate analysis of Semnani’s doctrine for understanding his ideological construction is beyond the scope of this paper, the above account of Semnani’s complex relationship with alterity hints that Semnani’s ideology might be understood as a complex bricolage that should not be reduced into an essentialist regress towards scriptural foundationalism or only in terms of singularities that can only be linked to and identical to a preformed Islamic tradition, even if his own normative self-representation might veer towards that. Normative discourse must not be taken normatively, at face value, in a historico-genealogical exercise.
On the wahdat al-wujud debate, Semnani’s remarks were very significant. The wujudi and shuhudi positions in this debate could be captured in two metaphors: an ocean’s relation to its waves versus the sun’s relationship with its shadow. The immanent monism of wahdat al-wujud favored the metaphor of an ocean’s relation to its waves to explain the Ultimate Truth’s relationship to worldly phenomena. On the other side, Ala al-Daula Semnani, Ibn Taimiyya, and Ahmad Sirhindi made the retrascendent turn in ontology: we may identify them as transcendental noumenalists. The Naqshbandi saint and poet Jami interpreted Semnani to have opposed Wujudism in his correspondence with al-Kashani.(80) Semnani strongly denounced the notion that souls that emerged from the ocean would return to the ocean. He identified such a notion as both wujudi as well as Buddhistic. This – he said – identifies the essence (dhat) of God with pure being, a profoundly problematic notion in his reckoning.
The second metaphor of the sun and its shadow was advanced by the shuhudis or transcendental noumenalists, and its most clear articulation can be found in Ahmad Sirhindi, who not only claimed spiritual succession from Semnani but actually had predecessors from the Kubrawi order. He made a clear distinction between God’s essence (dhat) and attributes (sifat). He added that the Wujudis falsely prioritize the attributes of God. He posited an original circle (dayira-e asl) in which there is a root of attributes (shuyun). The shuyun – which links to the divine essence as well – must not be confused with the attributes. There is a two-degree shadowing between divinity and the worldly phenomena: The material world (alam-e jism) is a shadow of the spiritual world (alam-e arawah), which in turn is the shadow of the root of attributes (shuyunat). The unity of being (tawhid-e wujud) is linked to the heart’s passions leading to dissolutive submergence of the self into the absolute (fana), but the higher monism is unity of witness (tawhid-e shuhud). (81) Those who claim to gain spiritual insights through unveiling (kashf) without following Muhammadan shariah are but following pre-Muhammadan prophets.(82)
In this dense theoretical articulation, the Mujaddid was not merely toying with ontology but attempted a thorough departure and revision of the Sufi path. Later, Shah Wali-Allah, influenced by his Medinan master Abu Tahir al-Kurdi (an admirer of both Taimiyya and al-Arabi), sought to reconcile wahdat al-wujud and wahdat ash-shuhud.(83) Wali-Allah posited that like a sun, God’s essence emanates intellect and the great body (shakhs al-akbar). Men emerge from great body and the universal soul. The theoretical hocus-pocus between wujudism and shuhudism does not however hide the fact that the question was ethico-political.
An ironical twist is that, Ahmad Sirhindi accepted Semnani’s doctrine of the latifahs, thus adopting or introjecting a doctrine which might have a certain affinity or affiliation with the indic tradition, even though Sirhindi would probably eject any such association as intolerable alterities if these appeared as part of a properly indic ideology.
Even if we accepted that Semnani’s concept of latifahs had no translational or bricolagic relation with the indic yogic theory, when Sufis in Bengal in 17th century onwards articulated an Islamic yogic theory in the vernacular language, they linked the concepts of yogic chakra with Islamic concepts of subtle spiritual centers in a conscious process of translation and transcreation. Bengal has a long, vibrant tradition of onto-theological thinking. In the works of Haji Muhammad of 17th century, for example, there are uses of the metaphor of the ocean and the waves. Syed Sultan, Haji Muhammad, Kazi Mansur, or Abdul Hakim were not mere translators and religious propagandists, but had profound engagement with onto-theology.
There is always a split between the imaginary, normative self-representation of a subject in discourse and the emanating sense that actually transpire, giving rise to slips, irony, and contradictions, thwarting an a priori totalization of the symbolic order by the subject.
The above discussion shows that crisscrossing flows of ideas and ideologies could travel in various directions, sometimes helping shape Islamic ideology in its very heartland – whether through conjunction or disjunction – and the evolving outcomes could make their return in unfamiliar shapes. After touching upon the onto-theological foundation of the divergence at the heart of Sufism, we will now return to how the transcendental noumenalists tried to root out pious practices like urs and sama that had been ‘emplaced’ in the Indo-Islamic context.
Outlawing Rusumat
The Islamic reform movement opposed institutions like Sama and Urs in a matter of prioritizing (1) a certain concept of nomos or rule-boundness over tradition and the love dialectic inherent in Sufism, (2) a new economic ethos, and (3) a certain alignment between the orthodox and the modernist.
The nomothetic turn in Sufism tried to reduce the classical Sufi ideology. The Sufis are represented in the early classical Sufi literature as pious men who would push religious observance to the extremity in all aspects of their lives, while disregarding mediocre worldly concerns in their passionate search for knowing the ultimate reality. To find ultimate reality, the Sufis would stretch the senses of the existent reality, and in so stretching, they would reverse the ordinary senses of many phenomena. Dialectical or ironic reversal is thus a common trope in Sufism. Sufi thought as represented in for example the Risala of al-Qushayri is articulated through creation of a series of dualisms, triads, quads, or other multiples. The Sufis are represented in biographical and hagiographical literature as dialogically exploring the values and meanings of actions and phenomena. Often different practitioners would come up with strikingly different takes on the same issue. Thus, a variegated distribution of possible positions would emerge and a Sufi could traverse such a positional distribution through different strategic trajectories. Sufi Tariqah in this sense is not a pregiven path of prescribed maqamats or manzils, but strategic and differential traversals for making sense of the deeper reality by an existential self.
Many ancient Sufis would seek to appropriate the entirety of human experience to a sacred purpose. The carnal, the sensible, the empirical – all of it is invested with the sense of the sacred. The cosmogonic connection between God and human beings – as in the alastu bi rabbikum scene – is forever present at hand while the immanent and the transcendent get fused into each other. The heart is the key machine through which human immanence could be connected to transcendence. Ibn al-Arabi declared his heart as ‘capable of every form’ linking to the Christian convent, idolators’ temple and pilgrams’ Kaaba. He and his followers cast the heart of the Sufi as the microcosm of the Universal man.
Thus Sufis could take different interpretive and practical positions with respect to the same problem or could reverse the positions within the same frame of interpretation. When we talk about rusumat covering practices like sama or urs, this complex ethical dialectic is at work.
Sama is a program for audition, and it could involve any combination of multiple elements: audition of poetry, singing, instrumental music, and dancing. It has perennially exercised the minds of the Islamigentsia. Some Sufis authorized sama provided that the motive is pious intention rather than sensuality.(84) Al-Ghazali opined that sama as pleasant sounds cannot be banned for pleasure but must be judged by their content. Sama must not be held with wrong kind of companions like prohibited women or beardless youths.(85) Certain Sufis argued that Sama is merely a sensory support to induce hal, but adepts could accomplish the same goal without such a support. Despite such depreciation of the sensory nature of sama, Sufis were frequently portrayed in the Tabaqat and Tazkirah literature as being affected by sound, speech or formal sama, and going into ecstasy. (86) Even al-Qushayri who tried to purify Sufism by cherry-picking examples of the orthodox Sufis from eighth to eleventh century mentioned many an anecdote that reveal that musical and poetical performances were routinely enjoyed by Sufis and socialites in cities like Baghdad. Parties would be organized with Sufis in attendance where music would lead to ecstatic dances, breaking the inhibitions of worldly disciplines of selves and rapturous experience of divine reality. Though leading Sufis of this period such as al-Junayd were opposed to music and dances, such opposition was articulated within a de facto pluralist social context where Muslims could take a range of positions and engage in a range of practices even when censured by other Muslims. The nuanced conversations among Sufis on issues like music reflects that it was not easy to universalize a blanket position to judge the myriad extant or possible ideas and practices or the selves and situations in relation to which those ideas and practices would inhere.
There is a famous hadith that relates how once the prophet’s companion Abu Bakr prohibited Ansar girls from singing, and how the prophet himself overturned Abu Bakr’s prohibition. The interpretation of this tradition varies widely. Abu Hamid al-Ghazzali, his brother and others found approval of sama in this hadith. On the other hand, Ibn Taimiyya, Ibn al-Jawzi et al took it to be expressing a disapproval of sama as signaled by Abu Bakr’s initial prohibition. It is interesting that some Sufis who claimed inheritance from the first two caliphs Abu Bakr or Umar were critical of Sama.
Within the Indian tradition, the sama debate could get quite contentious. The great Chishti saint Nizamuddin Auliya was once summoned by his adversaries to a debate where he was asked to defend the current practice of sama. Nizam cited the above-mentioned prophetic tradition about Ansar girls. The qadi retorted that Nizam was no authority of interpretive jurisprudence (mujtahid) to directly interpret prophetic traditions and must rather rely on the fiqh school – in this case the Hanafi madhab – for making his argument. This exasperated the Chishti saint who was an expert on hadith among other things. The tension was however resolved when a Shaikh of the Suhrawardi order showed up in the scene having just returned from his journey across the wider Islamic world. The latter testified that sama is practiced by Shaikhs in the heartlands with no interference by the rulers.(87)
The other key institution of contention for Nizampuri-Azamgarhi order was urs or saintly wedding, a festival to commemorate the demise of a saint. Following the death of a saint, their enshrinement would also emplace the locality as an enduring sacred territory, and urs ceremony would be like an annual celebration of the event. This ritual traveled from Iran and Central Asia to South Asia leading to a complex interaction between the elite and the mass as well as the regional and the local. Nile Green traces back urs to the great saint Abu Said ibn Abi’l Khayr (d. 1049 CE): the saint is said to have instructed disciples to gather around a chadar, perform sama, burn incense and so on. The detractors are known faces: Ibn al-Jawzi (d. 1200 CE) criticized urs as an innovation, while Ibn Taymiyya (d. 1328 CE) was a major early critic of popular festivities, shrine-visiting, creation of structures like khanqah, dargah, zawiyah, and so on. His influence extended to as far as contemporary India during his lifetime.(88) Despite such criticisms, the tradition of mawlid and urs gained traction in subsequent centuries in West Asia and Iran. Sufis like Rumi or Ruzbihan Biqali cultivated a mystique of bridehood in relation to God, enriching the affective discourse of urs. With Mongol invasions of Central Asia, Iran and West Asia in the thirteenth century, the urs ritual reached India. In the shrine of Farid al-Din Ganj-i-Shakr in Punjab, urs ceremony featuring mahfil-e-sama and langar is first mentioned in thirteenth-fourteenth centuries. Sharaf al-Din Maneri’s malfuzat mentions that Nizam al-Din Awliya was invited to various urs programs by Rukn al-Din. Over the Mughal era into 18th century, the urs evolved into ever more colorful festivals with various forms of merriment mixing earthly and spiritual forms of merriment. (89) Early modern urs involved various forms of wedding party merriment such as colorful processions, spatial adornment, music involving dance by women and boys, and feasts. In Mughal Bengal, the Hindu society celebrated various festivals like gajan or Durga puja, while Christians would also have their various festivals featuring wondrous public displays and processions. Such coexistence invoked figures of comparison as well as contrast.
After Shah Wali-Allah, anti-innovation ideology gained traction, and urs was placed under a more critical lens. His spiritual successor Muhammad Ismail enumerated polytheistic and innovative practices (shirks and bidahs) that have to be eliminated: ‘pir-worship’, various ceremonies and pilgrimages to shrine, offerings to shrines, lighting lamps, magic, Muharram, Shia-esque practices, and extravagant ceremonies in marriage or funeral, and so forth.(90) It was not easy to establish such a puritanical position in the vast, vibrant Sufiscape of India. When Sayyid Ahmad Berelvi visited Salon of Awadh where urs would be held with fanfare, Shah Karim Ata the place-holding pir (sajjadanashin) said that feeding the poor was much more important than jihad. (91) Thus, the older auratic, redistributive, and spiritual-erotological ethic of Sufism was still strong against the more puritanical and scripturalist-traditionist position of the reformist Sufis. The fight raged on: Reformist Sufis like Syed Abdul Bari suggested that reciting fatiha after the evening prayer was sufficient for the purposes of urs (92), thereby substituting the vast social festival by individualized practice of piety.
By individualizing piety, the oppositional ideology of the reformist Sufis of the Nizampuri-Azamgarhi tariqah collapsed the difference between shariat and tariqat. As Maulana Abdul Majid and Abdur Rashid of Garangia – khalifas of Hamid Hasan – said during a discussion: tariqat for them is essentially a schematic form of the shariat itself.(93) In such a conceptualization, the earlier affective discourse of Sufism underwent a radical nomothetic reduction. As the new Sufis assumed a transcendental noumenalist position, they deterritorialized the Sufi ideology and tagged practices like urs as a folk ritual in peripheral Islam, thereby marginalizing South Asian spiritual culture. These reformists strategized different mobility, routes, destinations, and acquisitions, as evinced in our discussion of the TiM, Nizampuri, Azamgarhi Tariqah saints. For reformists and modernists, the localized, emplaced religious practices could be seen as static, immobile unchosen pregivens irresponsive to changing times and the knowledge of the wider world – either of Islamdom or the modern world.
Despite such opposition, institutions like sama or urs did not die down. These practices – marginalized in the reformist-modernist discourse – thrived in the very margins or rather recentered the ‘margins’. New performance genres and traditions emerged in Bengal at this time. New forms of folk music, performance spaces, spiritual genealogies and so forth were weaved beyond the strictures of the ossifying structure of reformist Sufism.
The Final Fate of Abdus Salam Arakani’s Community: Xenophobic Ejection in Arakan
As the twentieth century wore on, changing socio-economic situation in Burma affected prospects for the Muslim inhabitants and migrants. In 1920s-30s, land became scarce, giving rise to competition among the Rakhines and Muslims. Settlement of Muslims in central Arakan beyond the northern district of Akyab sparked tension. (94) In 1937, the colonial administration separated Burma from India. The very next year, anti-Indian riots broke out in Burma. In 1941, under India-Burma immigration agreement, the British stopped unskilled labor immigration from India to Arakan, though due to labor shortage, Burma itself soon asked India to import 35,000 workers into Arakan. (95)
When the Second World War broke out, the strained socio-political fabric of Arakan rapidly disintegrated. A section of nationalist Burmese – the Thakins or Burma Independence Army – had joined the Japanese cause in 1940. The Japanese invaded Burma in April 1942 and the British administration in Arakan fell. The disappearance of British authority triggered an ethno-religious conflagration in the state. In central Arakan, Muslims were killed or displaced. The fleeing Muslims fled north to Buthidaung and Maundaw as well as Chattogram. Retaliatory violence ensued in Muslim-dominated northern Arakanese townships like Maundaw and Buthidaung where the Rakhines were driven away and killed. Muslim leaders like Yasein and Sultan Mahmud failed to contain the violence. A communal exchange of populations was thus enforced through violence. The Muslim leaders – loyal to the British – established an administration of northern Arakan with bazaar-based peace committees. (96)
In 1942-44, Akyab was at the very heart of British-Japanese war. The British trained a V-force or Muslim voluntary force for war support. The Japanese came into Buthidaung and Maungdaw and occupied the same. In 1943, the British captured Maungdaw while the Japanese kept Buthidaung. When the British advanced, the Muslim forces often engaged in vengeful violence as in Rathedaung.(97) In February 1944, through the Battle of Admin Box, the British Indian Army routed the advancing Japanese forces and inflicted heavy casualties on them. They thus captured the northern Akyab. However, the Japanese – with support from Subhas Bose’s Indian National Army and local Arakanese – kept the Akyab town. In 1945, the British took Akyab and the Japanese surrendered.
Amid such war and racial-religious violence, Abdus Salam Arakani crossed the military line and with much difficulty came to Lohagarh in 1944. Sometime between 1945 and 1947, he and Abdul Majid of Chattogram went to visit their master Hamid Hasan in Azamgarh. They visited the tomb of Ahmad Sirhindi during this trip and returned home. (98) Abdus Salam visited Chattogram regularly during the fifties, sometimes going on joint missionary trips with Abdul Majid. Abdus Salam seems to have been trying to keep up a tradition that was being loosened by the postcolonial reality. While the Muslims in Arakan identified themselves as a part of the greater Indo-Islamic Muslim community at the heyday of the religio-nationalist Pakistan movement. After the partition, however, they sought to situate themselves as a distinct Muslim community of Myanmar and highlighted the Rohingya ethnonym. (99)
Whether Abdus Salam Arakani was active in the Muslim community politics or not (100), he and his family remained attached to Arakan, where he died in 1967. His two sons died in Arakan as well. (101)
The later history of the Muslim community in Arakan has been mired with genocidal violence. In 1978, the Arakanese army operations led to displacement of 2.5 lac Rohingyas into Bangladesh. Riots began breaking out between the remaining Rohingyas and the Rakhine majority, taking on a dangerously violent scale in 2012-13. In 2018, the Burmese government carried out a crackdown on the Rohingya and the Buthidaung town faced genocidal violence.( 102) The army carried out massacres and destruction in the Godampara area (called Gudanpin in Arakanese) where Abdus Salam once lived and led his community. The village is reported to have been almost wiped out. Mass graves in the location reportedly bear evidence of mass killings. (103) The grandchildren of Abdus Salam Arakani reportedly migrated to Saudi Arabia.
Arakan and Bengal remain today as all too close yet elusive and alien neighbors – crossing, fuzzying and yet maintaining the partition between the Indic-Islamic space and the distinct socio-cultural region of Southeast Asia. Xenophobic ejection of alterity in the postcolonial state system is grounded in the reassertion of the self, threatened by a “tainted” in-mixing of otherness. The imaginary of ideological and civilizational purity is propped up by the politics of the nation-state. Yet, such a politics is no less fragile in the times of a fragmentary late capitalism.
Conclusion
Bengal and its adjacent regions – though marginal to Aryan Brahminical culture – were once at the center of Buddhism, especially seeing efflorescence of Vajrayana and Tantra. Islamization at the Bengal “frontier” again emplaced the delta as a frontier, a margin, a strange liminal space. However, it is important to disavow the fascination with centers and heartlands and conceptualize historical emergences as results of complex inter-constitution among various flows and currents of texts, metaphors, bodies, and ideas. In this non-centrist, non-arborescent conception of Islamic spirituality would reveal that ideas traveled from Bengal to Persia, shaping the debate on Islam and its others and interacting with the early articulations of the onto-theological debates around immanent monism vs transcendental noumenalism. In the long colonial transition, Indian Sufism was to a great extent reconfigured as an oppositional ideology, mobilizing against the “local” religious culture of Islam. This involved a retranscendence of the reformists in relation to their emplaced existence in the vein of Semnani, Taimiyya or Sirhindi. Syed Ahmad Berelvi’s Tariqah-i-Muhammadiyya had a seminal impact on Indian Sufism, transmitting its impact to Bengal. Sub-Tariqahs within TiM spread the impact to all directions: including the Bengal-Arakan axis. Precolonial Arakan had a visible Muslim population – part of which was slave labor – since the times of Bengal Sultanate. Colonial opening of the Arakan frontier allowed economic migrants to explore this horizon as an opportunity, buoyed by the internationalization of Arakan’s rice economy. The Nizampuri-Azamgarhi suborder also took roots in this outpost to convey the ideas and ideologies of reformist Indo-Islam. However, the second world war followed by constitution of postcolonial states led to a refrontierization between Bengal and Arakan, defined in ethnic and religious identitarian terms, which eventually destroyed the presence of the Nizampuri-Azamgarhi suborder in Arakan. The overdetermination of nation-state politics and identitarian reification of ideologies however remains ever exposed to rhizomatic multiplicities and flows leading to unexpected reversals.
Tahmidal Zamiis the Coordinator of Bengal History Collective. He can be contacted at [email protected]
Nizam Ash-Shams is an Independent Researcher
Notes:
Rizvi, Shah Wali-Allah and his Times
In his articulations on jihad, Shah Abd al-Aziz didn’t call for immediate war on the British forces, but he vilified the dominant Sikh power.
Jalal, Partisans of Allah: Jihad in South Asia, pp. 76-77.
Pearson, Islamic Reform and Revival, pp. 36-37.
It was precisely for this conception of jihad that the mujahids mostly abstained from the 1857 war of independence. Pearson, Islamic Reform and Revival, p. 35, pp. 80-82; Jalal, Partisans of Allah, pp. 80-81.
Faraidi movement mainly spread in Faridpur, Backergunj, Jessore, Tipperah, Dacca, Mymensingh, Pabna and Noakhali. See: Khan, History of the Fara’idi Movement.
In 1843, Inayat Ali carried out campaigns in 24-Parganahs, Jessore, Faridpur, Pabna, Rajshahi, Malda and Bogra, recruiting men from Bengal, especially East Bengal. In early 1860s, 900 recruits from Bengal were present in the NW frontier. Pearson, Islamic Reform and Revival, pp. 187-189. In 1843, Inayat Ali carried out campaigns in 24-Parganahs, Jessore, Faridpur, Pabna, Rajshahi, Malda and Bogra, recruiting men from Bengal, especially East Bengal. In early 1860s, 900 recruits from Bengal were present in the NW frontier. Pearson, Islamic Reform and Revival, pp. 187-189.
Ahmad, The Bengal Muslims 1871-1906, p. 48.
Jalal, Partisans of Allah, p. 72.
Pearson, Islamic Reform and Revival, p. 54.
His movement was propagated mainly in Noakhali, Dhaka, Mymensingh, Faridpur and Barisal. He seceded from TiM in 1867. Rafiuddin Ahmad, The Bengal Muslims 1871-1906, p. 49.
Rafiuddin Ahmad, The Bengal Muslims 1871-1906, p. 51.
Ibid, p. 53.
The mushreks (polytheists) had certain practices in those times.
They would float the rafts of Khidr in water.
They’d create the shrines of Ghazi and Kalu,
And the polytheists of the rivers (?) would worship the same.
They would take care to worship the cenotaph of Bibi Fatima.
All of them would offer worship to twelve figures in twelve months.
Dancing, music, folkways, and the fatiha of the polytheists,
And all the innovations that they had –
They would watch the Dussehra, the cart-pulling and the charak,
And each one would offer worship in the name of the Pir.
In Muharram, the polytheists would lament
In the name of Imam Hasan and Husain.
They would raise structures in the name of the five masters,
And all of them would observe fasts,
If someone had their first menstruation,
Plantain trunks would be planted in four corners of the house.
All those accretions have been smashed,
And the sun of Islam has reached its zenith.
Haji Sharitullah bringing his eminent presence here,
Established the true path around Bangala.
(My translation based on original Bengali provided in Ahmed, History of the Fara’idi Movement, pp. 244-45)
Amir Hasan Sijzi’s Fawaid al-Fawad.
Nile Green shows how in the asylums of Bombay during 1880s to 1900 there were many beggars, medicants and faqirs. Green, “Jack Sepoy and the Dervishes”.
Green, “Jack Sepoy and the Dervishes”.
Wali-Allah even tried to explain how God formulated the text of Quran in the most effective manner. Rizvi, Shah Wali-Allah and his Times.
See use of the term in: Green, “Jack Sepoy and the Dervishes”.
Pearson, Islamic Reform and Revival, pp. 90-98.
Pearson, Islamic Reform and Revival, 142.
Syed Ahmad Khan identified himself as an Wahhabi – in terms of upholding Shah Abd al-Aziz and Muhammad Ismail – as he shot down the importance of taqlid and upheld ijtihad. However, he wasn’t a great admirer of Sayyid Ahmad Berelvi, and instead of Tariqah-i-Muhammadiya, he was more attached to the Naqshbandiyya preached by Shah Golam Ali. For Sayyid Ahmad Khan, anti-traditionalism meant embracing a certain engagement with rationalism of the Mutazillites as well as modern Western knowledge. Pearson, Islamic Reform and Revival, pp. 190-191.
Pearson, Islamic Reform and Revival, pp. 90-98.
Robinson, “South Asia to 1757”, 222-23.
Robinson, “South Asia to 1757”, p. 226.
Robinson, “South Asia to 1757”, 230.
The older Islamigentsia were pushed into an economic crisis. Mullahs who adopted the reformism of TiM would often had to rely on the traditional practices for economic sustenance: being forced to draw income from amulets, fatiha, and so on. Ahmad, The Bengal Muslims. The Qawmi Madrasa system led by Deoband continued the community-support system of rice-collection.
Munshi Meherullah encouraged public sermonizing programs (waz) and organized Dharmottejika, one of the early anjumans Islam in Jashore. He linked his organization, the Sudhakar group, to the rural elite and urbans. Abul Fazal in his autobiography mentions an incident where he went to meet a famous Pir. When he found the Pir was almost naked, and the food that was given to visitors was very poor, he felt a loathing. Abul Hashim evoked pristine Islam as preferable to ‘corrupt’ ‘imperial’ Islam of Iraq. Hashim himself stressed rationality and mystic core of religion as opposed to its outward ritualistic aspect.
Pearson, Islamic Reform and Revival, pp. 191-193.
In the context of Egypt, Richard McGregor similarly speaks of ‘transversal affiliations’ that is a marker of ‘end of medieval Sufism. McGregor, “Is this the end of Medieval Sufism?”
Huda, The Saints and Shrines of Chittagong, p. 159
Waisi was born in a family claiming origin from Mecca and living in Satkania in South Chittagong region. His father left home to be a mujahid in Berelvi’s army and never returned. Fateh Ali completed studies in the Hooghly Madrasa and Kolkata Aliya Madrasa. Hanif, Biographical Encyclopedia of Sufis (South Asia).
Chowdhury, “Bharater furfuray shayita sufi golam salmani (rah.)”. In another source his year of birth is 1858 and his father’s name is Ghulam Rahman. Rao, The Indian Biographical Dictionary, p. 157.
Ismail, Development of Sufism in Bengal, p. 272.
https://sufischool.org/orders/abdulbarishah.html
Ibid.
Partly quoted in: Chowdhury, Aynaye Darbare Garangia, p. 5.
Hamid Hasan had a neat annual calendar of personal and missionary activities. Following the instruction of his master’s master (dada-pir), he would conduct three-month travels in Bengal. He tried to give a certain fixity to his teachings and prepared a tract compiling the teachings of Syed Abdul Bari called Kitab al Talimat. When a disciple asked if these rules could be simplified and dumbed down for the laity, he said that teachings (sabqs) could not be changed for even one iota.
Fourteen from Chattogram, one from Cox’s Bazar, six from Akyab, and three from Yangon. one from Punjab, one from Fatehpur, three from Allahabad, nine from Azamgarh, one from Balia, three from Purnia of Bihar, one from Mumbai, and one from Karachi.
Chowdhury, “Qutbul Alam Sultanul Aulia”.
When understanding the missionary propaganda of the reformist Sufis in various parts and frontiers of Bengal, it should not be seen as an Islamic exceptionalism. During the same period, during 1880s-1900s, Brahma preachers were preaching a new monotheism within Bengal and at the margins like Assam, Tripura as well as in other Indian provinces. In short, the socio-religious life was astir with various reformist currents.
His route gives us an idea of how he took the trouble to traverse the remoter regions of South Chattogram and beyond to consolidate his network. Azamgarhi’s route down Chattogram:
Chattogram City →(1) Chandanpura and Halishahar (Boat journey on Chaghtai Canal to Karnafuli )/→(2) Baharghat Sampan Station in Satkania (Small boat journey along Dolu Canal to Garangia)/→ (3) Adunagar Kha^’ r Haat boat station (People carry him on horse,palanquin or tanjam or sedan chair)/→(4) Chunati in South Chattogram
In each of his sojourns, he would reside with local influential disciples. In 1931, when the Chittagong-Dohazari rail link was established, he began traveling by rail. He would travel directly from Chattogram to Dohazari and from there, he would be carried to Chunati on horseback, palanquin or sedan chair. See Chowdhury, Aynaye Darbare Garangia, p. 10.
The British war efforts left devastating impact on East Bengal, stirring up a famine in 1943 that starved millions of people to death.
He boarded a train from Dhaka, the new provincial capital of East Pakistan and reached the port city.
A comment must be added here about the specificity of Chattogram as a cultural space for Sufism. Sufis here speak the Chattogrami dialect of vernacular Bengali, even in spiritual visions. Thus, a murid of the Azamgarhi shaikh Abdul Majid of Garangia (1894-1977) heard him speak in Chattogrami dialect in a spiritual vision. Chowdhury, Aynaye Darbare Garangia, p. 39.
Chowdhury, Aynaye Darbare Garangia, p. 5. Miraculous power of Azamgarhi shaikhs is attested in numerous incidents by their disciples, most of which involved spiritual and secret visions as well as some incidents of healing of the ill.
See: Green, Making Space.
Arakanese legends mention that King Man Raja Kvan was usurped from his throne due to his mismanagement. He was then assisted by a western Sultan to recover his throne. Most scholars identify the Bengali Sultans as the said Sultan, though Jacques Leider seeks to question this claim by saying that there is no solid evidence to support the legendary account. See: Leider and Htin. “King Maṅḥ Co Mvan’s Exile in Bengal”.
The poet Alaol mentioned that the Muslim community of Arakan was led by the royal official Majlis Nabaraj. Another poet Mardan mentioned the city of Kanchi which was probably a township close to Mrauk-U, where Ulama, Maulana, Kayasthas, and Brahmins inhabited. Qazi Sulayman in roshang would hold cultural soirees and was an accomplished musician himself. Sufism also had a firm presence in this Muslim dispersion amidst a Buddhist majority. Alaol for example received initiation into Qadiriyyah Tariqah in Arakan.
Khazeni, The City and the Wilderness, 149. A 1777 account by Major RE Roberts of EIC says 3/4th of “Rekheng” inhabitants “are said to be natives of Bengal”, held in slavery. See: Tonkin, D. Migration from Bengal to Arakan.
During 1826-1862 Arakan was part of Bengal presidency. In 1862, Arakan and Lower Burma (conquered in 1852) was conjoined into one territory. Arakan was divided into Akyab, Kyauk Phyu and Sandoway. Leider, “Chittagonians in Colonial Arakan”, p. 188.
Leider identifies push factors like famine, overpopulation and cyclones (1876, 1897, 1919) as well as pull factor like available land, workers’ wages, and familiarity behind this migration. See: Leider, “Chittagonians in Colonial Arakan”, pp. 187, 203.
In 1798 alone, no less than 10,000 came to Chittagong. The reasons might have been oppression or fiscal exactions by the Burmese King, who brought many as slaves to his capital Amarapura, where they resided in the Arakan Quarter.
They would create five-year revenue plans for settlement, considering incentives like five-year revenue holiday and second-class lands to settlers. The 1888 Nolan report sought to promote migration from Bengal to Burma and noted there was area of 296,000 acres of waste land. See: Tonkin, Migration from Bengal to Arakan.
In 1872, the Chittagong Collector mentioned that there are around 15,000 annual immigrants from Cox’s Bazar to Arakan. Leider, “Chittagonians in Colonial Arakan”, pp. 190-92, 201.
Leider, “Chittagonians in Colonial Arakan”, p. 190-193.
By 1888, Naaf (later Maungdaw) township had 70% Bengali Muslims who brought a lot of land under cultivation and revenue.
10 km, 25km and 55km away respectively from the border.
Leider, “Chittagonians in Colonial Arakan”, p. 188
Tonkin, Migration from Bengal to Arakan.
In 1931, Buthidaung had 90,000 and Maungdaw 140,000 people. See: Leider, “Chittagonians in Colonial Arakan”, p. 216.
See: Chan, A. “The Development of a Muslim Enclave”.
Indrani Chatterjee uses the concept “monastic governmentality” to understand forms of ideas, ideals, and governance of behavior in precolonial South Asia, where meanings and desires were not necessarily governed by the colonially imposed ideas of property, propriety, identity, and so on. See: Chatterjee, “When “Sexuality” Floated Free”.
Karim and Sharif, A Descriptive Catalogue of Bengali Manuscripts, p. 581.
Karim and Sharif, A Descriptive Catalogue of Bengali Manuscripts, p. 594.
He performed pilgrimage to Mecca twice in his life.
Chowdhury, Aynaye Darbare Garangia, p. 55.
Chowdhury, Aynaye Darbare Garangia, p. 28.
Jorge Luis Borges, “Pierre Menard: Author of the Quixote”.
Thinkers like Louis Althusser or Jean-Paul Sartre discussed this issue within the discursive tradition of materialism within twentieth century.
Khurasan had a string of Buddhist monasteries in second and third centuries CE and this continued down to 8th century. After the arrival of Islam, the Abbasid dynasty employed some Buddhists in its translation projects.
Prazniak, “Ilkhanid Buddhism”; Faryamanesh, “Buddhism in the Ilkhanid Court”.
Taimiyyah considered the Buddhists as mushriks. He also denounced the rational administrative policies that smacked of the yasa or Mongol code. See: Prazniak, “Ilkhanid Buddhism”; Faryamanesh, “Buddhism in the Ilkhanid Court”.
He wrote that his heart was full of pain to see that the idol-worshippers pervaded the world while Muslims were under their domination. In the diyar-e Islam, temples were being erected and the waqf of mosques and khanqahs were converted into those.
Semnani created a series of steps in the Sufi search for the ultimate self. This involves going from the false self-supremacy of the Pharaoh, to that of self-denying identification with God as done by Hallaj, then gradually making one’s way where the ego is submitted to the Thou. One follows the Shariah at the end. Thus, Semnani sought to annihilate the antinomian Sufi tendencies.
These are: qalebi (nufuse falaki and aqul), nafsi (nafse kulli), qalbi (aqle kulli), serri (medade nuri), ruhi (dawate nuni), khafi (qalme qudsi), haqqi (faiz that comes from haqq to the sefat of the wajed during the waqt-e tajalli).
Noushabadi and Fini, “The Role of Buddhism in the Period of Ilkhanid.
William Chittick argues that for al-Arabi, wujud meant both being or existence as well as finding or unveiling, and thus like the early Sufis, al-Arabi and his immediate disciples didn’t make any fundamental dichotomy between wujud and shuhud but used them as a close, almost interchangeable terms. Chittick, “Waḥdat Al-Wujūd in India”.
Sani, Mukashifate Ayniya.
Sani, Mukashifate Ayniya.
Nizami, “The Impact of Ibn Taimiyya in South Asia”.
Avery mentions in this regard Al-Qushayri’s (986-1072) Risala and Abu Nasr al-Sarraj al-Tusi’s (d. 988) Kitab al-Luma. See: Avery, A Psychology of Early Sufi sama.
Avery mentions that al-Ghazali’s brother Majd al-Din wrote Bawariq al-Ilma offering a strong defense of sama. Also see: Ali b. Uthman al-Jullabi al-Hujwiri’s (d. 1072) seminal work Kashf al-Mahjub. Kenneth S Avery, A Psychology of Early Sufi sama: Listening and altered states, Routledge, 2004.
Abu Abd al-Rahman al-Sulami’s (b. 937 or 942) Tabaqat al-Sufiya narrated how Harith al-Muhasibi (d. 857) took part and got ecstatic in a sama concert. See: Avery, A Psychology of Early Sufi sama.
Suvorova, Muslim Saints of South Asia, pp. 109-110.
KA Nizami argues that Muhammad bin Tughlaq (1325-1351) was familiar with ideas of Ibn Taymiyya and accordingly he enlisted religious men into state service – identifying state and religion as twins. Tughlaq stopped jumah and id prayers in his domain until he received recognition form caliph in Cairo. He also forced Sufis to give up walaya or divine spatial assignment and reassigned them to distant locations for government service. See: Nizami, “The Impact of Ibn Taimiyya in South Asia”.
Green, Making Space, pp. 33-65.
Chapter 2 of Sirat al-Mustaqim. See: Pearson, Islamic Reform and Revival, 85.
Liebeskind, Sufism, Sufi Leadership and ‘Modernisation’, pp. 318-319.
Chowdhury, Aynaye Darbare Garangia, p. 5.
Chowdhury, Aynaye Darbare Garangia, p. 63. Their oppositionalism was also illustrated by postcolonial political action. During the Pakistan era, Abdul Majid of Garangia was a leader of Jamiat al-Ulama and waged a campaign against Ayub Khan’s reform of Muslim family law. Chowdhury, Aynaye Darbare Garangia, p. 73.
Leider, Territorial Dispossession and Persecution.
Leider, “Chittagonians in Colonial Arakan”, p. 201.
Leider, “Conflict and mass violence in Arakan”.
Leider, Territorial Dispossession and Persecution.
Chowdhury, Aynaye Darbare Garangia, p. 24.
In 1940s, in the wake of Pakistan movement, a series of histories were written by Arakani Muslim scholars recounting the history of Muslims of Burma. In 1948, Jamiat al-Ulema of North Arakan from which Sultan Ahmed and Abdul Gaffar were elected denied significant immigration from Chittagong to Arakan. At this period, the Rohingya identity was embraced by the Muslims in Arakan. The Rohingya identity was first named when Buchanan in 1799 report mentioned that three dialects. First spoken by Muslims who call themselves Rooinga. See: Tonkin, Migration from Bengal to Arakan.
In 1950s, Abdul Gaffar and Mohammad Taher Ba Tha came out as advocates of Rohingya identity, as mentioned by Leider. In 1961, the Mujahids stopped their militancy. Akyab became Mayu Frontier District, i.e., a separate administrative zone during 1961-64.
In 1950, Mujahids or radical Muslims broke out in rebellion which lasted till 1961. The rebels were led by Omra Miah and Abdus Salam of Panzai Bazar. This Abdus Salam might be the one who led the peace committee in Panzai Bazar in 1942. Panzai Bazar seems to be at the north of Buthidaung while Godampara was probably at the south. He most likely was not Abdus Salam Arakani.
Chowdhury, “Hazrat Shah Maolana Abdus Salam Arkani (rah)”.
Dhaka tribune, “Breaking Buthidaung”.
Arakan Times, “7 arrested by army in Buthidaung South”; Rohingya khobor, “Increased military activity around mass grave areas”.
References
1. Ahmad, R. The Bengal Muslims 1871-1906: A Quest for Identity, Oxford, 1981.
2. Arakan Times, “7 arrested by army in Buthidaung South”, November 25, 2016. https://www.arakantimes.org/2016/11/25/7-arrested-by-army-in-buthidaung-south
3. Avery, KS. A Psychology of Early Sufi sama: Listening and altered states, London, 2004.
4. Chan, A. “The Development of a Muslim Enclave in Arakan (Rakhine) State of Burma (Myanmar)”, SOAS Bulletin of Burma Research, Vol 3.
5. Chatterjee, I. “When “Sexuality” Floated Free of Histories in South Asia”. The Journal of Asian Studies, 2012, vol. 71, pp 945962. doi:10.1017/S0021911812001246
6. Chittick, WC, “Waḥdat Al-Wujūd in India”, in Sufism and ‘Irfan: Ibn al-‘Arabi and His School, pp. 29-40.
7. Chowdhury, AI. “Qutbul Alam Sultanul Aulia Hazrat Maulana Mohammad Abdul Majid (R) Hazrat Bara Hujur (R) Garangia”, December 2003.
8. ——-. Aynaya Darbare Garangia, Chattogram, 2011.
9. ——-, “Hazrat Shah Maolana Abdus Salam Arkani (rah)”, Dainik Purbokone, December 24, 2018.
10. ——-. “Bharater furfuray shayita sufi golam salmani (rah.)”, Dainik Purbokone, March 4, 2019.
11. Dhaka tribune, “Breaking Buthidaung: The second chapter in the Rakhine conflict”, September 6th, 2017, https://www.dhakatribune.com/bangladesh/nation/2017/09/06/breaking-buthidaung-rakhine-conflict
12. Faryamanesh, M. “Buddhism in the Ilkhanid Court”, tr. Faride Qasemi, in Religions and Sects in the Ilkhanid Iran, ed. Masoud Faryamanesh, Centre for International Research and Education (CIRE), 1839 Iranian era.
13. Green, N. “Jack Sepoy and the Dervishes: Islam and the Indian Soldier in Princely India.” Journal of the Royal Asiatic Society 18 (2007): 31 – 46.
14. ——-. Making Space: Sufis and Settlers in Early Modern India. Oxford, 2012.
15. Hanif, N. Biographical Encyclopedia of Sufis (South Asia), New Delhi, 2000.
16. Huda, MS. The Saints and Shrines of Chittagong, Ph.D Thesis submitted to the University of Chittagong, 1985.
17. Ismail, M. Development of Sufism in Bengal, Ph.D Thesis at Aligarh Muslim University, 1989
18. Jalal, A. Partisans of Allah: Jihad in South Asia, Cambridge, 2008.
19. Karim, MA and A. Sharif. A Descriptive Catalogue of Bengali Manuscripts in Munshi Abdul Karim’s Collection, Dhaka, 1960.
20. Khan, Dr MUA. History of the Fara’idi Movement, Dhaka, 1984.
21. Khazeni, A. The City and the Wilderness: Indo-Persian Encounters in Southeaast Asia, California, 2020.
22. Leider, JP. “Conflict and mass violence in Arakan (Rakhine State): the 1942 events and political identity formation”, February 2017.
23. ——-. “Chittagonians in Colonial Arakan – Seasonal and Settlement Migration”, in Colonial Wrongs and Access to International Law, ed. By Morten Bergsmo, Wolfgang Kaleck and Kyaw Yin Hlaing, TOAEP, 2020, pp. 177-227.
24. ——-, Territorial Dispossession and Persecution in North Arakan (Rakhine), 1942-43, 2020b, TOAEP Policy Brief 101.
25. Leider, J. and JPKM Htin. “King Maṅḥ Co Mvan’s Exile in Bengal: Legend, History, and Context.” Journal of Burma Studies 19 (2015): 371- 405.
26. Liebeskind, C. Sufism, Sufi Leadership and ‘Modernisation’ in South Asia since c. 1800, Ph.D Thesis submitted for Royal Holloway, University of London, 1995.
27. McGregor, R. “Is this the end of Medieval Sufism? Strategies of Transversal Affiliation in Ottoman Egypt”, in Sufism in the Ottoman Era: 16th-18th Century, Cairo, 2010.
28. Nizami, KA. “The Impact of Ibn Taimiyya in South Asia”, Journal of Islamic Studies, 1 (1990), 120-149.
29. Noushabadi, MM and KK Fini. “The Role of Buddhism in the Period of Ilkhanid, with Emphasis on the Opinions of ʿAla al-Doleh Semnani”, Journal of Historical Researches of Iran and Islam, Spring-Summer 2020, 14:26; pp. 245-266.
30. Pearson, HO. Islamic Reform and Revival in Nineteenth-century India: The Tarīqah-i-Muhammadīyah, New Delhi, 2008.
31. Prazniak, R. “Ilkhanid Buddhism: Traces of a Passage in Eurasian History”, Comparative Studies in Society and History 2014; 56(3):650–680.
32. Rao CH. The Indian Biographical Dictionary, Madras, 1915.
33. Rizvi, SAA. Shah Wali-Allah and his Times: A Study of Eighteenth Century Islam, Politics and Society in India, Canberra, 1980.
34. Robinson, F. “South Asia to 1757”, in The New Cambridge History of Islam: The Islamic World in the Age of Western Dominance, ed. Francis Robinson, Cambridge, 2009, pp. 212-239.
35. Rohingya khobor, “Increased military activity around mass grave areas”, February 4, 2018. https://rohingyakhobor.com/increased-military-activity-around-mass-grave-areas/
36. Sani, HMA (Shaikh Ahmad Sirhindi). Mukashifate Ayniya. Translated into Bengali by Dr AFM Abu Bakar Siddik, Narayanganj, 2009 (sixth edition).
37. Suvorova, A. Muslim Saints of South Asia: The Eleventh to Fourteenth Centuries, London, 2004.
38. Tonkin, D. Migration from Bengal to Arakan during British Rule 1826-1948. Occasional Paper Series, Burssels, 2019.
Trade in slave girls in Sylhet
December 18, 2021
Note: This news item was published in Dundee Courier on August 11, 1873. Dundee Courier sourced the news from Calcutta Englishman.
Now that the fever for the suppression of the slave trade is strong amongst those in authority over us, it may not be inopportune to call attention to a regular system of slavery which is alleged a correspondent of the Dacca Prokash to be in existence near Sylhet.
The letter says that, “in spite of the law prohibiting the sale and purchase of female slaves, the practice has been kept up with so much secrecy that it is not possible for Government to detect the culprits. Sometimes a polygamist delivers one of his wives to a rich man to work for life as his slave; at another time a debtor, to satisfy a decree obtained against him, surrenders a daughter (who may be a young woman or a little girl), or his sister, to the creditor for short time, which arrangement, however, continues in force like the Permanent Settlement Act. Sometimes it happens that a vicious woman, to preserve her standing in society, makes a present of her natural daughter to the powerful headman of the community, and at other times men of property send messengers to poor men greedy of money, and bring their daughters under their influence by offering them small sum, and promising to marry them.
“The purchase and sale of slaves in the ordinary way has not altogether disappeared. The children of former slaves are still working in the houses of their masters in the same capacity. There are those, too, who have in manner made the marriage of slave girls a sort of trade. They marry as many as 5, 10, and 15 girls each. If a respectable man happens to have a slave girl in his house, he brings slave boy and gives her in marriage to him, but she has but little of his society after the ceremony is over. The practice of employing maidservants does not obtain this place, and men who are looked upon as respectable, in order to maintain their position, must keep at least one female slave.”
Ziaur Rahman’s coup as seen by the US
November 3, 2021
US Ambassador to Bangladesh Davis Eugene Boster, in a telegram sent to the US State Department on November 10, 1975 , provided an interesting account of one of the most eventful weeks ( November 3-10, 1975) in the history of Bangladesh. Here we publish the telegram verbatim.
Telegram 5470 From the Embassy in Bangladesh to the Department of State Dacca, November 10, 1975,
CINCPAC for Polad
Subj:
Last Week in Bangladesh in Retrospect
1. It may be useful to offer a capsule summary of the chaotic events of last week in Bangladesh which saw three different governments, much killing, and the avoidance of civil war, with attendant possibility of Indian intervention, by the narrowest of margins. This account is based on the best information available to the Embassy from all sources.
2. The confrontation between Brigadier Mosharraf, Chief of the Army General Staff, who had been embittered by his failure to share in the promotions received by some of his colleagues after the assassination of President Mujib by the Majors on August 15 and who was also believed to be on a list of army officers to be investigated which had recently been drawn up by the Majors, began in the early hours of Monday morning, November 3. We do not know positively whether Mosharaff was the architect of the confrontation, as many contend, or whether, as one good source has told told us, he simply went along with subordinates who were determined to end the special role of the Majors in the Moshtaque government, a role which had resulted, among other things, in the harrassment of some of the military officers. This source also held that one of Mosharraf’s objectives—although he was undoubtedly mindful of the personal glory that might await him—was to take control of his subordinates’ plans in such a way as to avoid major bloodshed.
3. Mosharraf and his allies quickly took control early Monday morning of the Army cantonment as well as most of the city of Dacca and pressed their confrontation with the Moshtaque government by flying a MIG fighter and armed helicopter over the city in a show of strength which was also intended to intimidate the tank crews loyal to the government. Against this background, Mosharraf levied four demands on Moshtaque: 1) that Mosharraf replace Major General Ziaur Rahman, his personal rival, as Chief of Staff; 2) that the Majors be returned to regular army discipline; 3) that the tank forces loyal to the government be disarmed; and 4) that Moshtaque remain in office. Outgunned and apparently intent above all on avoiding bloodshed, which would also have invited Indian intervention, Moshtaque eventually yielded after negotiating during the course of a long day a compromise with Mosharraf by which the Majors and some of their colleagues, to whom Moshtaque was indebted for his presidency, were permitted to depart Bangladesh. Before this compromise had been reached, the Moshtaque government had called on the army forces at Comilla to come to its aid but had been refused on the grounds that the Comilla commander would only respond to the orders of the Chief of Army Staff (who was then under arrest) or the Chief of the General Staff (i.e., Mosharraf).
4. The confrontation brought another bloody result which, we have good reason to believe, had been part of an earlier contingency plan to be carried out in the event that Moshtaque were to be killed, i.e., the murder of his former colleagues in the Awami Party leadership who were now his political enemies—former Prime Minister Mansoor Ali, former Vice President Syed Nazrul Islam, former Prime Minister, Finance Minister and Indophile Tajuddin Ahmed, and former Industries Minister Kamaruzzaman. These leaders were killed, evidently at the order of one or more of the majors, early Monday morning at Dacca jail. The event added a note of mystery to Mosharraf’s acquiescence later in the day to the departure of the Majors, one version having it that Mosharraf did not yet know of the deed when the plane left Dacca at midnight Monday. Many observers also noted that one effect of the murders was to remove the logical leadership of any pro-Indian Government.
5. With the explosive situation defused to a degree by the departure of the Majors, negotiations between Moshtaque and Mosharraf continued on Tuesday and Wednesday, resulting in Mosharraf’s designation as Chief of Staff late Tuesday night, and eventually in Moshtaque’s resignation early Thursday morning with the simultaneous announcement that a non-political figure, Chief Justice A.S.M. Sayem, would be appointed President. Sayem was sworn in on Thursday and promptly dissolved the Parliament. Reports, which we accept, were rife that the Cabinet had already resigned in protest against the murder of the former government leaders.
6. But it now became clear that Mosharraf’s assumption of power in the army was unpalatable to most of his fellow officers and enlisted ranks, both because General Zia evidently held a much wider popular following among them but also, and very importantly, because Mosharraf was widely seen, whether accurately or not, as an instrument of Indian policy. This perception was buttressed by the pro-Mujib procession on Tuesday and Wednesday’s hartal to protest the killings at Dacca jail. The lower ranks revolted in the early hours of Friday morning, quickly overthrowing the Mosharraf forces and, according to virtually all accounts, killing Mosharraf. Extensive firing went throughout the city all night and all during the day Friday, most of it celebratory after Mosharraf was ousted. One authoritative source has told us that only about thirty were killed in the overthrow; other reports have reached us which put the figure in the hundreds.
7. The successful revolt of the lower ranks now brought a new problem, the rampant indiscipline of the enlisted men, many of whom now turned on officers against whom they might have grudges and others began presenting demands on the Army leadership for a better deal in their future treatment. Widespread reports were current throughout the weekend that large numbers of military officers had fled or were at least staying away from the cantonment out of fear of the rampaging sepoys, and several reports reached us of the murder of military officers and of their wives.
8. Meanwhile the post-Mosharraf government took shape in a meeting early Friday morning between General Zia, Moshtaque and presumably other principal aides. Moshtaque was offered the presidency anew but declined on the ground that, in the still explosive situation, the country required a non-political, non-controversial President. Consequently the decision was reached to keep Justice Sayem in the presidency and to turn over to him as well the functions of Chief of the Martial Law Administration, a role which had been filled briefly by General Zia. We were pointedly assured that these arrangements enjoyed full support both within the military and within the political leadership so that the way was now clear for the restoration of stability in the country.
9. As of Monday morning, November 10, the situation had returned to an apparent normalcy, with international air service resumed on Sunday, but the general uneasiness was still being fed by reports of continued killings among the military and of possible Indian actions along the border. The prospect was for, at best, a continued state of tension and uncertainty.
10. Comment. Three conclusions implicit in the above account should be underlined. The first is that the actions of the main participants in the coup and counter-coup appear to have been non-political, except in the sense that Mosharraf had the additional disadvantage of appearing to be pro-Indian. The army forces which overthrew Moshtaque and the majors appear to have acted primarily out of a sense of grievance against the majors. The counter-coup was the work of lower ranks who far preferred Zia to Mosharraf and who were also concerned where Mosharraf’s loyalty might lie. We have no reason to believe that any of the regimes of the past week were anti-American, pro-Indian, or pro-Soviet in character.
11. The second is that we have no evidence that India was responsible for any of the week’s actions.
12. The third is the confirmation of how strongly and pervasively anti-India antipathies are felt here-from the top of the leadership to the lowest groups of the society. Although we have no evidence that Mosharraf was pro-Indian, and some that he was not, he was widely identified as such and the wild celebrations here of his overthrow carried distinctly anti-Indian overtones.
Note:
Source: National Archives, RG 59, Central Foreign Policy Files. Secret; Immediate; Limdis. It was repeated priority to Bangkok, Colombo, Islamabad, Kabul, Katmandu, Moscow, New Delhi, Rangoon, Beijing, Calcutta, and CINCPAC. The Embassy warned of a possible coup against the Ahmed Government repeatedly in a series of analytical telegrams, including 5088, October 21 and 5300, November 3. (Both ibid.) In telegram 5398, November 7, the Embassy reported meeting with representatives of Major General Ziaur Rahman, who emerged as the center of the post-November 10 government. (Ibid.)
The Embassy provided a narrative account and analysis of the military unrest and resulting coup of November 3–10.
Thru’ a woman’s eyes
September 19, 2021
Zeb-un-Nissa Hamidullah
I speak as a Bengali today. Always in the past, the Pakistani has been uppermost, the Bengali mattered least of all. But today I and millions of other Bengalis feel we must raise our voice and cry: ” Is this what we should expect from Pakistan?”
The shooting of three students at Dacca has shocked me to the very core of my being. With the red blood that oozed out of their young bodies, staining red the soil of Pakistan, something oozed into my soul that will not be silenced.
Provincialism? An ugly word one that I personally have always abhorred. Apply it now, perhaps I deserve it. Perhaps I would rather deserve it than deserve the Ministerial chair of East Pakistan. Perhaps most Bengalis would rather be called by that name than forget the soil that gave them birth.
Believe me, death does not kill a cause; frequently it creates a cause and brings to it adherents who might otherwise never have taken sides. The more people are killed the more will others (sic) rise to take the torch from dying hands. Thus by killing three you create three thousand fighters.
For most of us, I am speaking of the average intellectual Bengali, the question of the State Language was never a controversial one. We accepted the fact that a nation, to be united in the true sense of the term, must have a single State language. Urdu was the obvious choice and all of us accepted it. But it appears that the whole question has been so callously mismanaged that it has created greater disruption in the State than the recognition of Bengali as a State Language might have done.
The peculiar circumstances of our State demanded infinite care and understanding in tackling the different wings of Pakistan. You cannot force laws willy-nilly down the throats of citizens, even if it were a bitter medicine the stomach would revolt and vomit it up. Nor can you deny a people the right to express their own opinions: not if you are true in your assertion that Pakistan was made for Pakistanis.
For some time past I have heard that the people of the Eastern wing of Pakistan were more than a trifle dissatisfied. Now, I am only an ordinary person. If I could come to know of this state of affairs, surely the Government whose duty it is to keep a watch on the pulse of the public should have realised the way things were going. If they did not then they were guilty of unforgivable ignorance. If they did know it then they are guilty of gross and callous mismanagement of the situation.
“Pakistan Zindabad” is a slogan that comes all too easily to the lips of politicians. Perhaps they have repeated it so many times that it no longer has any meaning for them; or perhaps their particular interpretation of the slogan (in their state language of Pakistan) means “sit tight in your position and live only for self.”
I say perhaps because I sincerely hope that it is otherwise and that the Government will seriously consider whether the country is growing from strength to strength in spirit or whether its callous indifference to the feelings of the people is not undermining the very existence of the state.
I am not happy, nor do I think are other Bengalis at being placed in a position where we feel great bitterness against our state. Perhaps the people at the helm of affairs will toss their heads and say,” What does she know about politics?” And I will have to admit that I know very little. But one thing I do know and that is that you can never achieve anything in this world by hurting people and stifling their legitimate aspirations, but that love, kindness and understanding combined with a genuine desire to see the other person’s point of view, is sufficient to solve the most intricate of problems. I want to forget that I am a Bengali again and become only a Pakistani, so do millions of others. Will the government make it possible?
Zeb-un-Nissa Hamidullah (1921-2000) was one of the first South Asian women journalists. She was the editor and publisher of one of the most popular Pakistani pictorials, Mirror.
The article was published in the Dawn (Pakistan) on Feburary 25, 1952.
ফররুখ ভাই
September 16, 2021
পটুয়া কামরুল হাসান
আজ কবি ফররুখ আহমদ নেই। প্রায় সকলের চক্ষুর অন্তরালে থেকেই তিনি চির অমরত্বের লীলাভূমিতে চলে গেলেন, চলে গেলেন বিনা নোটিশে বলা চলে। কবি ফররখ আহমদ বাংলাদেশের সাহিত্যক জগতে যেমন ছিলেন একক এবং অদ্বিতীয় তেমনি ছিলেন বিতর্কের উজানে শক্ত পেশীবহুল বৈঠা মেরে নৌকা বেয়ে নিয়ে যাওয়ার নাইয়া।
ফররুখ আহমদ-এর সাহিত্য আলোচনা বা তাঁর বিতর্কিত আদর্শ দর্শনের বিষয়বস্তু নিয়ে লেখা আমার উপপাদ্য নয়।
আমার লেখার বিষয় যে ব্যক্তিকে নিয়ে তিনি কবি ফররুখ আহমদ নয়। আমার ফররুখ ভাই। এখানে আমার বলার পিছনে কারণ আছে, কারণ ফররুখ আহমদ তাঁর অনুজ সকলের কাছেই ফররুখ ভাই ছিলেন কিন্তু তা সাহিত্যিক শিল্পী সমাজের মাঝের মানুষদের।
কিন্তু কবি ফররুখ আহমদ যখন থেকে আমার ফররুখ ভাই তখন তিনিও কবি খ্যাতি লাভ করেননি। কেবল খ্যাতি লাভ করাই নয় বরং তাঁর লেখায় মকস চলছে। এবং আমিও তখন শিল্পী খ্যাতি লাভ তো দূরের ক্লাসে ড্রইং পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশী নাম্বার পাওয়ার প্রতিযোগিতার মাঝেই আমার বিচরণ ক্ষেত্র। এমনি সময় এবং বয়সেই আমি পেয়েছিলাম ফররুখ ভাইকে। সে ১৯৩০ সালের কথা আমি তখন শিশু ক্লাসে ভর্তি হলাম যে স্কুলে সেটি সে সময়ের বাংলাদেশের অন্যতম এম-ই স্কুলের মধ্যে একটি। কলকাতার তালতলা এলাকার ইউরোপীয়ান এ্যাসাইলাম লেন-এ এই স্কুল অবস্থিত ছিল, মডেল এম-ই স্কুল নামে এক ডাকে সকলেই জানতো, ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মডেল স্কুল স্কীম এর সেটাই ছিল শেষ সরকারী স্কুল।
বিরাট এক পুরাতন জমীদার বাড়ি নিয়ে এই স্কুল। একই বাড়িতেই ছিল নর্মাল ট্রেনিং স্কুল । নর্মাল ট্রেনিং-এ যারা আসতেন, তারা তিন বছরের জন্য আসতেন এবং তারা বোর্ডিং থাকতেন এবং বোর্ডিংও ছিল ঐ একই বাড়িতে তাও হিন্দু এবং মুসলমান ছাত্রদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা। তার মধ্যেই ফুটবল ও বাস্কেটবল খেলার মাঠ এবং তা পুরো সিমেন্ট এর।
নর্মাল ট্রেনিং-এর শিক্ষার্থীরা যেহেতু স্কুল সংলগ্ন বোর্ডিং-এ থাকতেন এবং যেহেতু, তারা মাঝে মাঝে তাদের প্র্যাকটিস টিচিং-এ আমাদেরকে পড়াতেন সেহেতু আমরা তাঁদেরকে বলতাম বোর্ডিং স্যার । সোজা হিসাব আর কি যারা পড়াবেন তাঁদের স্যার বলতে হবে অতএব তাঁরা বোর্ডিং-এ থেকে পড়াতে আসেন অতএব তারা হয়ে গেলেন বোর্ডিং স্যার। | কবি ফররুখ আহমদ-এর ব্যক্তিগত সম্পর্কে যখন থেকে এসেছি তখনকার কথা বলতে গেলে এই মডেল এম-ই স্কুলের কথা বলা আমার কেবল ইতিহাস রচনা বা কেবল স্মৃতিচারণই নয় বরং ফররুখ ভাই আমার সাথে দেখা হলেই মডেল স্কুলের গল্প করতেন এবং সে যে কি অভিব্যক্তি অনুভূতি এবং হদয়ের কি আবেগ নিয়ে বলতেন তা ভাষায় প্রকাশ করা আজ সম্ভব নয় তবুও আমাকে লিখতে হচেছ এই জন্য যে ফররুখ ভাই বার বার আমাকে বলতেন মডেল স্কুল নিয়ে লেখ, অমন স্কুল আর হয় না। তাই তাঁর আদেশ পালন করছি।
রবীন্দ্রনাথ একটিই স্কুলে ছেলেবেলায় কয়েক দিনের জন্য গিয়েছিলেন এবং ঐ মডেল স্কুলেই একথা আমরা জানতে পারি ঐ স্কুলে ক্লাসে কাঠের গ্যালারি ছিল, স্লোপিং গ্যালারি। একবার কথা উঠেছিল সরকারি ঐ গ্যালারীটি নীলাম করে দিবেন। তার প্রতিবাদ প্রচারেই আমরা জানতে পারি এই গ্যালারীতে বসে যেহেতু রবীন্দ্রনাথ ছেলে বেলায পা ঝুলিয়ে এবং দুলিয়ে বসে বসে পড়ে গেছেন এবং এখানে বসেই বোধহয় তাঁর প্রথম কবিতা লেখা । এটা আমার অবশ্য তখন শিক্ষকদের কাছে শোনা সত্যাসত্য জানি না তবে রবীন্দ্রনাথ যে ঐ স্কুল এর ছাত্র ছিলেন এবং ঐ গ্যালারীতে বসে গিয়েছিলেন এ বিষয়ে কোন বিতর্কের অবকাশ ছিল না কারণ তখনকার মত সেই গ্যালারী আর নীলাম হয় নাই।
মরহুম এটিএম মুস্তফা, জনাব আবুল খায়ের প্রাক্তন সচিব বাংলাদেশ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প বিভাগের বর্তমান যুগ্ম সচিব জনাব নুরুজ্জামান , কবি হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ডাইরেক্টর ড: নাজিমুদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের কবীর সাহেব, শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার, খুলনা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ জনাব আবুল হাশেম প্রমুখ — এরা সকলেই সেই মডেল এম ই স্কুলের ছাত্র। আমার বড় ভাই জনাব আবুল হাসনাৎ প্রথমেই ঐ স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন প্রায় চার বছর পূর্বে। আমি ঢুকলাম ১৯৩১ সালে সে সময কে জি ক্লাস বলে কিছু ছিল না। তার জায়গায় বলা হত ইনফ্যান্ট ক্লাস। সেই বাচ্চা বয়সে সাথী হিসেবে পেলাম ফররুখ ভাইয়ের ছোট মুনির আহমদকে। সে আর একটি চরিত্র। শরৎচন্দ্রের ইন্দ্রনাথ চরিত্রের জীবন্ত সংস্করণ। ফররুখ ভাইয়ের মতই এক রোখা, তবে লেখাপড়া কিছুই করেনি ঐ মডেল স্কুল পর্যন্তই ইতি। কিন্তু কেন জানি না আমার সঙ্গ সে ছাড়েনি। কলকাতার আর্ট স্কুলেও আমার পিছু পিছু এক বছর পরে ভর্তি হয়েছিলেন। মাত্র এক বছরই ছিল।
পরবর্তীকালে ঢাকা কলাভবনে মডেল হিসাবে বহুদিন লাইফ ক্লাসে সিটিং দিয়েছিল। মুনির আমার সহপাঠী এবং আমার বড় ভাই ফররুখ ভাইয়ের স্কুল সহপাঠী অতএব খুব সোজা পথেই অগ্রজ এবং অনুজের সম্পর্ক গড়ে উঠলাে। আমাদের স্কুলের বকুলতলায় আমি আর মুনির গুলি খেলছি ফররুখ ভাই এসে বললেন কিরে তুই নাকি হাসনাতের ভাই, মুখ তুলে বললাম হ্যাঁ। সেই থেকেই ১৯৭৪ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত তুই সন্বোধনেই স্নেহের ডাক দিয়ে গেছেন। ফররুখ ভাইরা তিন ভাই ছিলেন, তাঁর বড়ভাই সিদ্দিক আহমদ। তিনি আজও ফরিদপুরে বসবাস করছেন। সিদ্দিক ভাইয়েরই ছেলে শহীদ সুফী। মোনেম বিরোধি আন্দোলনে ১৯৬৭ সালেহ সে নিহত হয় তার স্মৃতি স্তম্ভ আজ ফরিদপুর শহরে রয়েছে। ফররুখ ভাই ছিলেন ইসলাম এবং শরিয়তের গোড়া অনুসারি এবং তা এতো গোড়া এবং অন্ধ যে তা আমৃত্যু তিনি তাকে যুক্তি – তর্কের বাইরেই রেখে গেলেন। তিনি পাকিস্তানী আদর্শের একজন পর্বত কঠিন স্তম্ভ কিন্তু তাও তাঁর আপন দর্শনে রচিত পর্বত যে পর্বতের ধারেকাছে পাকিস্তানের কোন জাদরেল শাসকই ঘেঁসতে পারেনি।
আপন বিবেকের দিকে দৃষ্টি রেখে বলতেই হবে আপত্তি সত্ত্বেও পাকিস্তান আমলের বহু কিছু আমরা মেনে নিয়ে ছিলাম, আমরা যারা ১৯৭১ সালের সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলাম তাদের বহুসংখ্যক মহারথীই বহুবার পাকিস্তান সরকারের আমন্ত্রণে ঘুরে এসেছিলাম কিন্ত, নীতির যুদ্ধে যে লোকটিকে আমরা চিরকাল শত্রুশিবিরের লোক বলেই চিহ্নিত করে এলাম সেই ফররুখ ভাইকে গত তেইশ বছরে পাকিস্তান একটি দিনের জন্যও পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যেতে পারেনি। এটা আপনাদের কাছে অবিশ্বাস্য হলেও এটাই বাস্তব ঘটনা এবং পর্বত শিখৱের মতই—এমনি নিজের একান্ত নিজের মতবাদে অটল ছিলেন ফররুখ ভাই।
পরম বেদনা এবং অসহনীয় যন্ত্রণার ব্যাপার এই বাংলাদেশের এতবড় একজন আদর্শের পর্বত বাংলার সাধারণ মানুষের চোখের আড়াল করে রেখেছিল ফররুখ ভাইয়ের ধর্ম এবং শরিয়ৎ। পাকা সেগুন কাঠকেও যেমন ভিতরে ভিতরে উইয়ে কেটে দেয় ফররুখ ভাইকেও তেমনি তার ধর্মান্ধতার উই-এ খেয়ে শেষ করে ফেলল। বাইরে থেকে কিছুই বোঝা যায় না। অকস্মাৎ ঘর ভেঙে পড়লে দেখা যায় সকলের অলক্ষ্যে ঘরের খুঁটিতে উই-এর বাসা বেঁধেছিলো, ফররুখ ভাই যেন ঠিক তেমনি ভাবেই আমাদের সামনে থেকেই ভেঙ্গে পড়লেন। তাঁর মৃত্যুর মাত্র আধ ঘন্টা আগে আমি তাঁর ফ্ল্যাটের নীচের ফ্ল্যাটে গায়ক আবদুর লতিফের বাসায় গিয়ে শুনলাম আজ চারদিন ফরুরখ ভাই এর কথা বন্ধ হয়ে গেছে। স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। আমি প্রায় প্রতিদিনই লতিফের বাসায় একজন আড্ডাধারী মানুষ , লতিফের স্ত্রী আমার মামাতো বোন সেই সুবাদেই ফররুখ ভাইয়েরও যে বোন এবং লতিফ আমারই মত অগ্রজ [অনুজ] প্রতিম। লতিফ তখন শিল্পী হয়ে গিয়েছিলো। আশ্চর্য আমি কাজের ব্যস্ততার জন্য গত এক সপ্তাহ লতিফের বাসায় যেতে পারিনি। লতিফের স্ত্রী আমাকে একবার অনুরোধ করল ফরুরখ ভাইকে দেখতে যাওয়ার জন্য। খুব চিন্তায় পড়লাম। আমি ফররুখ ভাইয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়াবো, তিনি আমাকে দেখতে পাবেন অথচ কথা বলতে পারবেন না, এ যন্ত্রণা তাঁর এবং আমার দুজনেরই।
বললাম, কাল সকালে অবস্থা বুঝে আসবো। বাড়ি ফিরে জামা-কাপড় ছেড়েছিমাত্র, লতিফের ছেলে এসে সংবাদ দিল । সেই সংবাদই রাত্রের বেতারে এবং টেলিভিশনে প্রচারিত হল, কবি ফররুখ আহমদ ইন্তেকাল করেছেন। আমাদের তথাকথিত আদর্শের বিপরীত তীরের বিরাট বটগাছটা গোড়া উপড়ে পড়ে গেল। ফররুখ ভাই তাঁর আদর্শ না একগুয়েমি জানি না, যার জন্য মৃত্যুর দিন পর্যন্ত মানুষ হিসাবে সকলের ভ্রান্ত ধারণা নিয়েই চলে গেলেন । অথচ ফররখ ভাই ছিলেন সত্যিকারের নিপীড়িত আদম সন্তানদেরই অতি আপনজন না হলে সেই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আগেই একজন বৃটিশ সরকারের সনদ পাওয়া পুলিশ অফিসার এবং সৈয়দ-পুত্র নিজের নামের আগে সৈয়দ লেখা ত্যাগ করেছিলেন। কারও নির্দেশে নয়, কোন প্রভাবশালী নেতার ভয়েও নয় । হঠাৎ এক সময়ে আমরা দেখলাম ফররুখ ভাই আর সৈয়দ লেখেন না। প্রশ্ন করলাম একদিন। ফররুখ ভাই-এর ভাষাতেই বলি, তিনি উত্তর দিলেন, ‘অনেক ভেবে দেখলাম ও শালার সৈয়দের গুষ্ঠির মধ্যে থাকলে সত্যিকারের মানুষের গুষ্ঠির বাইরে থাকতে হবে আমাকে তোরা কি মনে করিস? ও শালার ফালতু ল্যাজটা কেটে বাদ দিয়ে দিলাম।
স্মৃতিচারণ মূলক লেখাটি সাপ্তাহিক বিচিত্রায় ১৯৭৪ সালে ছাপা হয়।
The horror in East Bengal
September 14, 2021
Nirad C. Chaudhuri
Though the news of the slaughter in East Bengal reached me before last Sunday (March 28) I did not write any commentary, because I was too upset to do so. Since then even at this distance the events there have pressed on my mind like a nightmare, and I have been unable to do any work on my books. Even now it seems to me that to write except under grim sense of duty, without a full sense of responsibility — weighing every word one writes, and with any object but the lessening the suffering would be unpardonable frivolity. There arise occasion in which a journalist must resist his inclination to air his views, and I am distressed to read from foreign and Indian journalists in India reports which only aim at giving the benefit of their views to the British public, which will do no good to tho people of East Bengal, nor enlighten the British people.
I will not write in this spirit, and shall write with the sole object of asking people in India, and more especially in Bengal, to conduct themselves in such a way that they will not contribute further to the agonies of the people of East Bengal. We can no longer give them any positive help. I shall write calmly because, as I see the matter, the failure to consider the situation which arose after the electoral victory of the Awami League realistically and dispassionately has been an element in the creation of the horrible situation of today.
The most tragic thing about it is that it could be foreseen and avoided. I do not wish to advertise my wisdom by quoting that I wrote in my commentary on the elections in Pakistan, which was published in the Hindusthan Standard for December 31, 1970. But I would refer my readers to it if they feel that there was no means of anticipating what has happened. In that commentary I drew attention to the military superiority of Western Pakistan and to the possibility of its being brought to bear and urged East Bengal leaders to exercise moderation. Though, I also expressed the fear that this moderation might not be forthcoming.
At one stage it seemed that a compromise would be arrived at. I hardly expected that the Pakitan Government under General Yahya Khan would be ready to have talks with Sheikh Mujibar Rahman and go some way towards accepting his terms. I also saw Sheikh Mujibar Rahman on the B.B.C. TV urging non-violence, calmness, and some restraint on his followers. So far as I remember, he once said that not to follow his advice would be catastrophic. So, when the final breakdown came, I was surprised. I cannot account for it. After that I saw his last appearance on the TV, and what I heard deeply worried me. I heard him saying to a foreign correspondent who asked him about the Army. “What can the army do? It cannot suppress or kill seventy-five million people.” He spoke almost in tones of contempt and derision of the Pakistan Army. I could not understand that.
Writing today i.e. April 4, without knowledge of what might happen between now and the day on which this piece will be published, I shall set down my view of the manner in which the outside world, especially the British Press and Indian people, have taken the events, and then state what I think should have been done and should now be done.
Let me give my advice first, for what it is worth: If that is likely to have any chance of influencing opinion– which I doubt. But one’s conscience is one’s own conscience.
My emphatic advice to all Indians and Bengalis is to say nothing that will induce the Muslims of East Bengal to put up further resistance. It would be the kindest thing to them to tell them to submit for the time being and avoid giving further provocation to the armed forces of Pakistan. I never believed that there was any resistance to speak of after the Pakistan army went into action, and the sort of resistance or reaction that is being still seen is nothing which a large collective body of Indians, Hindu or Muslim, is not capable of showing under a sudden fit of horror and anger. This also is likely to be suppressed with grievous loss of life, if it continues.
Anything more foolish than the military appraisements now being given by both British and Indian reporters and columnists cannot be conceived of. Much is being made of the monsoons as an obstacle to military operations. Those who are saying that sort of thing can have had no experience of living in East Bengal during the rains. They do not know that in the days in which wheeled transport was not general in East Bengal, the monsoon season was the time of mobility, not of immobility. Therefore all the married women went to visit their parents at that time and come back before the Pujah. Neither railway nor steamer transport was or is affected by the rains, and whatever immobility is likely is to be equal on both sides. Besides, air operations are not likely to be affected materially by the rains.
But the main point about the futility of these military estimates is that they attribute to the Pakistan armed forces a role which they do not intend to take up. The central Government of Pakistan is not interested in restoring normal life to EastBengal, or in carrying on peaceful administration unless East Bengal people themselves cooperate to restore it. Its object is to hold the country by military force as an occupied enemy territory, without caring what happens of the Bengalis. It has the power to maintain its forces in East Bengal, and inflict greater loss of life on the people than the latter can inflict on its armed forces. There is also the possibility of epidemics and famine to consider. All these considerations would make any well-wisher of the people of East Bengal hope that the desperate but futile resistance should сease at оnсе.
I shall now consider the attitude of The British Press, the Indian Government, and the Indian people, and even more, that of the people of West Bengal. To take the first, I cannot conceive of more irresponsible reporting and writing. Before the breakdown of the negotiations, the British correspondents played up the possibility, even the inevitability, of the secession in such a manner that it must have encouraged the East Bengal leaders, and infuriate the Pakistan Government and the army. After that, with the exception of two eye-witnesses, all others began to report heavy fighting and extensive resistance, and even the possibility of the encirclement and surrender of Pakistan troops, on the basis of the wildest rumours in India. In the last few days, the Press has played up the killing of the Punjabis at Jessore and the occupation of the town by a section of the East Bengal Rifles with the help of the local population in the most irresponsible manner, without considering what effect this reporting might have on the Pakistan Government. I have the worst misgivings about this. It would seem that those are reporting these events are either partisans or sensation-mongers.
Of the Government of India’s predicament, I have a fairly clear idea. It was bound to support the people of East Bengal morally on account of the public excitement. But I have a feeling that all this was a matter of form and not really eager support. In India we have a law prohibiting the advocacy of secession in any manner. Apart from that, the India Government cannot be unaware of its unpopularity in Bengal.
I shall, last of all, come to popular attitude.
So far as public opinion outside Bengal is concerned, the outcry is only an expression of hatred towards Pakistan, and not any love for the East Bengal Muslim. Certainty, a large body of opinion there expect a break-up of Pakistan, and the disappointment has not produced any moderation, on the contrary, still greater fury. But this outburst of feeling will hardly have any practical effect on policy.
The attitude of the Bengali people in West Bengal is a different matter, for though it may not harm the Government of Pakistan, or the Government of India by implication, it may harm these Bengalis themselves. Even from the inadequate reports which I am getting in England I have a feeling that the events in East Bengal are making the Bengali Hindus indulge two of their worst weaknesses: first, that of deriving vicarious satisfaction by imagining that their battle is being fought victoriously by others; and secondly, that of nursing self-pity and sense of grievance. We as fellow-Bengalis should realize that to spread reports about popular resistance in East Bengal and of its success is the worst conceivable mockery of the suffering of those unfortunate people. This sort of emotional enjoyment is unhumanly, and to believe in the possibility of a successful resistance by the masses of East Bengal is an exhibition of very pathetic intellectual incompetence.
In the present situation of what is called for is a true compassion for the people of East Bengal, which will respect their suffering and wish to spare them all future suffering. Against this plea of mine, it is useless to advance the easy argument that if a people are to get their independence they must also suffer. All true Patriotism and military spirit requires that in no case bloodshed should be permitted when the uprising or resistance becomes intellectually a gamble and emotionally a hysteria. Every nation which has the true soldierly spirit calls off resistance when it becomes rationally indefensible.
Nirad Chandra Chaudhuri, (born November 23, 1897, Kishorganj, East Bengal, British India [now in Bangladesh]—died August 1, 1999, Oxford, Oxfordshire, England) was a renowned Bengali author and scholar.
The article was published in the Hindusthan Standard on April 13, 1971
বাংলা-বুলির আপন পুঁজি
September 6, 2021
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
বাংলা ভাষায় যত সব শব্দ আছে, তাহার ভিতর কতকগুলি তাহার নিজস্ব, কতকগুলি ওয়ারিস সূত্রে পাওয়া, আর কতকগুলি ধার করা। ঢেঁকি, ডাঙ্গা, নে’টা, খাঁটি, ডোঙা এই ধরণের শব্দগুলি নিজস্ব। হাত, পা, আমি, তুমি, করে, দে’খে—এই ধরণের অনেক শব্দ উত্তরাধিকারী হিসাবে সাবেক আৰ্য্য ভাষা হইতে পাওয়া। হস্ত, চরণ, টেবিল, চেয়ার, চাবি, কামরা, কমর, বগল, হরতন, কুড়ি, মােটা শব্দগুলি ধার করা। ধার স্বদেশে বিদেশে। স্বদেশে আর্য্য, কোল, দ্রাবিড় ও ভােট বর্ম্মা ভাষা থেকে। বিদেশে পারসী, পারসীর ভিতর দিয়া আরবী ও তুরকী, আফগানী, পর্তুগীয, ফরাসী, ওলন্দাজ ও ইংরেজীভাষা থেকে। ধার করা শব্দ বাদ দিলে যাহা থাকে, তাহাই বাংলা-বুলির আপন পুঁজি।
ধার স্বদেশে হউক বা বিদেশে হউক, কখনই বড়াই করার বিষয় হইতে পারে না। কতক ধার দরকারী আর কতক বে-দরকারী। যেখানে বাংলার নিজের পুঁজি নাই, সেখানে ধার না করিলে চলে না। ধরুন গােলাপ, আতর, কাগজ, কলম, চশমা, কোর্মা, কালিয়া, বন্দুক, পেনসিল, রেল, মটর, রেডিও, চা, তামাক, চিনি—এসব ছাড়া সভ্য বাঙালীর চলে না, বাংলা ভাষারও চলে না। কিন্তু যেখানে খাঁটি বাংলা শব্দ ছিল বা আছে, তাহা ছাড়িয়া ধার করিতে যাওয়া শুধু বে-দরকারীই নয়, বাংলাভাষার ইজ্জত নষ্ট করাও বটে। সংস্কৃত হইতে ধার করা কি আর আর ভাষা হইতে ধার করা, সবই প্রায় এক কথা, ধার ধার-ই। এখানে দু’টী কথা মনে রাখা চাই। যেখানে অন্য ভাষা হইতে ধার করা শব্দ বাংলায় চলতি হইয়া গিয়াছে, সেখানে ধার তামাদি; কাজেই বাংলার নিজস্ব সম্পত্তির ভিতর গণতি করা যায়। এখানে নূতন করিয়া সংস্কৃত হইতে ধার করা ঠিক নয়। চলিত বাংলায় আঙ্গুরের বদলে দ্রাক্ষা, গরমের বদলে তপ্ত, চাকরের বদলে ভৃত্য, হাজারের বদলে সহষ, কলমের বদলে লেখনী, উকিলের বদলে ব্যবহারজীবী, বাগানের বদলে উদ্যান, রেলের বদলে লৌহবর্ত্ম, চেয়ারের বদলে কাষ্ঠাসন, স্টীমারের বদলে বাষ্পীয় পােত ব্যবহার করা গোঁড়ামি ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে যখন নূতন ধারের দরকার হইবে তখন সংস্কৃতের ভাণ্ডার হইতেই আমরা ধার করিব। সংস্কৃতের সঙ্গে বাংলার নাড়ীর সম্পর্ক আছ, কাজেই এ ধারে কোন দোষ নাই। কিন্তু চলিত বাংলায় নাক, কাণ, দুধ, ঘি, ভাই, বােন এই ধরণের শব্দের জায়গায় নাসিকা, কর্ণ, দুগ্ধ, ঘৃত, ভ্রাতা, ভগিনী, বসান বাংলাভাষার উপর বড় রকম জুলুম করা হয়। ইংরেজী ভাষায় nose, car, milk, butter, brother, sister শব্দগুলির আর কোনও প্রতিশব্দ নাই। কিন্তু তাই বলিয়া কি ইংরেজী গদ্য কি পদ্যের কোন হানি হইয়াছে?
ভদ্র হইবার অন্ধ মােহ আমাদিগকে এমনই পাইয়া বসিয়াছে, যে হালেই আমরা অনেক খাঁটি বাংলা শব্দের জায়গায় সংস্কৃত শব্দ বসাইতে আরম্ভ করিয়াছি। সংস্কৃতের ভক্তেরা ইহাতে আনন্দিত হইবেন সন্দেহ নাই; কিন্তু বাংলার ভক্তেরা ইহাতে খুশী হইতে পারেন না। যেমন দেখুন মিঠে, মউ, ভােগ, নাওয়া, পড়ুয়া, রসুই, পরখ, মিছা, উনই, শির-দাঁড়া, বুলি, ভূঁই, সাথী, পিয়াস, কলিজা, প্রভৃতি শব্দগুলি আজকাল প্রায় শােনা যায় না। স্বদেশী বিদেশী ধার যত বাড়িয়া চলিয়াছে, ততই বাংলা ভাষা আপন পুঁজি হারাইতে বসিয়াছে। এই সকল হারান ধন ফের বাংলায় চালান ঠিক কিনা সে বিচারের ভার বাংলা ভাষার ভক্তদের উপর ছাড়িয়া দিয়া আমি নীচে নমুনার জন্য কয়েকটা হারান শব্দের ফর্দ্দ দিতেছি। বলা বাহুল্য শগুলি সাবেক আমলের বইয়ে পাওয়া যায়।
বিদেশীর পাল্লায় কতকগুলি খাঁটি বাংলা শব্দ এখন ভাষা হইতে বাহির হইয়া গিয়াছে। নীচে তাহাদের একটি ফর্দ্দ দিতেছি। ইহাদিগকে ফের ঘরে তুলিয়া আনা যায কিনা, বিচার করা দরকার।
টীকা: অভিভাষণটি ১৯৩৬ সালে ( ১৩৪৩ বঙ্গাব্দ) চন্দনপুরে অনুষ্ঠিত বিংশ বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনে পাঠ করা হয়েছিল।
মুল্লুকে চলো: চা শ্রমিক আন্দোলনের শতবর্ষ
May 20, 2021
মোহন রবিদাস
আজ ২০ মে ঐতিহাসিক “চা-শ্রমিক হত্যা দিবস”। ব্রিটিশদের মিথ্যা প্রলোভনে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে আসা (১৮৩৪-৩৫ সালে)চা শ্রমিকরা ব্রিটিশ চা-বাগানমালিক কর্তৃক অত্যাচার-নিপীড়ন,অবহেলা-নির্যাতন সইতে না পেরে ১৯২১ সালের এই দিনে নিজ মুল্লুকে (আবাসভূমিতে) ফিরে যাবার জন্য “মুল্লুকে চলো আন্দোলন” সংগঠিত করেছিল।
যেহেতু তাদের কাছে কোন টাকা-পয়সা ছিল না তাই পায়ে হেঁটেই সিলেট থেকে চাঁদপুরের মেঘনা ঘাঁটে পর্যন্ত আসে। এখানে ব্রিটিশরা তাদেরকে বাঁধা দেয়।
বাঁধা অতিক্রম করে চা-শ্রমিকরা মেঘনা নদী পার হয়ে নিজের মুল্লুকে যেতে চাইলে এ ব্রিটিশ গুর্খা বাহিনী তাদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায় এবং হাজার হাজার চা-শ্রমিককে পেট কেটে মেঘনা নদীতে ভাসিয়ে।
চা-শ্রমিকদের রক্তে রঞ্জিত হয় মেঘনা নদীর পানি। চা-শ্রমিকদের রক্তেমাখা এই ইতিহাসকে স্মরণ করার জন্য প্রতি বছর পালিত হয় ২০ মে পালিত হয় “চা-শ্রমিক হত্যা দিবস”।
প্রসঙ্গত, ইংরেজরা অতি কৌশলের মাধ্যমে কম দামে শ্রম কিনে যাতে অধিক মুনাফা অর্জন করা যায় সেই লক্ষ্যে আজীবন কাজের শর্তে চুক্তিবদ্ধ করে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে (গাছ হিলায়ে গা তো পাইসা মিলেবে- গাছ নাড়লে টাকা মিলবে)১৮৩৪ সালের দিকে ভারতের বিহার, মাদ্রাজ,উত্তর প্রদেশ, উড়িষ্যা প্রভৃতি অঞ্চল থেকে কানু,তেলেগু, লোহার,রবিদাস,গোয়ালাসহ প্রায় ১১৬ টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে শ্রমিক হিসেবে সংগ্রহ করে।
কিন্তু চা-শ্রমিকরা এ অঞ্চলে এসে দেখে গাছ নাড়লে টাকা পাওয়া তো দূরের কথা হিংস্র জীব-জন্তুর প্রতিকূল পাহাড়-জঙ্গলময় পরিবেশে নিজের জীবন বাঁচানোই দুঃসাধ্য ব্যাপার।
অনাহারে-অর্ধাহারে,অসুখে-বিসুখে এক বীভৎস জীবনের সম্মুখীন হয়েছে তাঁরা। সে সময় আড়কাঠি ও গিরমিট প্রথার কারনে চা ম্যানেজার এই অসহায় মানুষগুলোর উপর একচ্ছত্র নির্যাতন করার অধিকার পায়।
কোন শ্রমিক ইচ্ছে করলেই চাকরি থেকে ইস্তোফা দিতে পারতো না। বাগান থেকে পালিয়ে গেলে তাদের ধরে আনা হতো। দেয়া হতো আমানবিক শাস্তি যা অপরাধ হিসেবে গন্য হতো না।
চাবুক বুটের লাথি ছিল এই নিরীহ মানুষগুলোর নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। এভাবে মালিকদের হাতে শ্রমিকের মৃত্যুকেও সাধারণ ঘটনা হিসবে দেখা হতো। মালিকদের কথাই সেখানে রাষ্ট্রিয় আদেশ হিসেবে গণ্য হতো। শ্রমিকদের ইচ্ছা আনিচ্ছা বলতো কোন কিছু কল্পনাই করা যেতনা।
বাগানের ভিতরে ছাতা মাথায় হাটাও আপরাধ হিসেব গন্য হতো। পুরুষ শ্রমিকদের বেতন চার আনা,মহিলাদের বেতন তিন আনা এবং শিশুদের বেতন দুই আনা। তখন চা বাগানে শিশু শ্রম বৈধ ছিল (যা বর্তমানেও আছে) কি পরিহাস! এই ইংরেজরা কৃতদাস প্রথা বাদ দিয়ে চালু করে এমনই বিভৎস আইন।
ওলন্দাজ বণিকরা ১৬১০ সালে প্রথম চীন থেকে চা আমাদনি শুরু করে।ইংরেজরা প্রথম চা আমদানি করতো চীন থেকে। চীন জাপান যুদ্ধের কারনে চীনের সাথে সম্পর্ক আবনতি হলে আমদানি বন্ধ হয়ে যায়।
ইংরেজরা বিকল্প চা উৎপাদনের জন্য তাদের ভারতবর্ষের উপর নজর পড়ে। ১৮৩৫ সালে বিজ্ঞানীদের নিয়ে একটি কমিশন গঠন করেন। তার নাম “রয়েল সোসাইটি” ভারতবর্ষে চা উৎপাদনের করার জন্য অনুসন্ধান করাই এই কমিশনের কাজ।
এই কমিটি কাজ শুরু করার আগেই শিলচর এবং করিমগঞ্জে চা গাছের সন্ধান পাওয়া এই বছরই প্রথম চীনের বাইরে বাণিজ্যিক ভাবে চা এর উৎপাদন কার্যক্রম গ্রহন করা হয়।
১৮৩৮ সালে সিলেট ও কাছাড়ে পরীক্ষামূলক ভাবে চা উৎপাদন শুরু হয়। ভারতবর্ষে আসামের লখিমপুরে, সিলেট ও কাছাড় জেলায় চা এর উৎপাদন ব্যাপকতা পায়।
চা শিল্প যেহেতু শ্রমঘন শিল্প। চা বাগান গড়ে তুলতে প্রচুর শ্রমিকের দরকার হয়। পাহাড়ি জঙ্গল পরিস্কার করা,রাস্তাঘাট নির্মাণ গৃহ নির্মাণ করা প্রাথমিক কাজ। তাছাড়াও দ্রুত বর্ধণশীল আগাছা নিয়মিত পরিস্কার করতে দরকার হয় অনেক শ্রমিক।
আসামে ১৮২৬ সালে লোকসংখ্যা প্রতিবর্গমাইলে ৯জন এবং ১৮৫৩ তা বেড়ে হয় প্রতিবর্গমাইলে ৩০জন। সেই সময়ে আসামের সকল প্রাপ্তবয়স্ক লোক দিয়েও তার চাহিদা মেটানো সম্ভব ছিলনা।
সিলেটে ১৮৫৩ সালে লোক সংখ্যা ছিল প্রতিবর্গমাইলে ২০০জন।এ ছাড়া ও আসাম বা সিলেটের মানুষ চা বাগানে কাজ করাকে অসম্মান মনে করায় তারা কাজ করতে অনাগ্রহী ছিল।
চা বাগান করতে হলে লোকজন তো লাগবেই।সহজ উপায়ে শ্রমিক সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়ে, শুরু করে লোক সংগ্রহের অনৈতিক কর্মকান্ড। স্থানীয় জনগণকে কাজে লাগানোর জন্য ১৮৩৪ সালে উল্লেখ যোগ্য দুটি পদক্ষেপ নেয়।
এক ক্রীতদাস প্রথা বিলোপ্ত করণ এবং কৃষকদের খামারে উচ্চ হারে কর আরোপ। এমনকি পান সুপারির উপরও কর আরোপ করে। তবু শ্রমিক সংগ্রহের ক্ষেত্রে তা খুব প্রভাব ফেলতে পারেনা।
চা রপ্তানির জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য ১৮৬৪–৬৫ সালে রেল লাইন স্থাপন করে এবং প্রসারিত করে ১৯০৪ সালে চটগ্রামের সাথে সংযুক্ত করে। এই কারনে স্থানীয় শ্রমিকদের তোষামোদের চেয়ে বাহির থেকে শ্রমিক আমদানি অনেক সহজ হয়ে যায়।
তাই বলেই তো শ্রমিকরা রেল চেপে চা বাগানে কাজ করতে আসবার কোন কারন নাই। সেই সময়ে শ্রমিক বলতে মূলত কৃষিতে উদ্বৃত্ত শ্রমিকেই বোঝানো হত। তখন মালয়েশিয়া এবং পশ্চিম ভারতের দ্বীপ পুঞ্জে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক রপ্তানি করা হতো।
চা করেরা এই তথ্য অবগত থাকায় নতুন করে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগের টোপ ফেলে।
বিহারের রাঁচী, হাজারিবাগ, সাঁওতাল পরগণা, ডুমকা ও গয়া, উড়িষ্যার ময়ূরভঞ্জ, গঞ্জাম,সম্বলপুর ও চাইবাসা এবং মধ্য প্রদেশের রায়পুর, রামপুরহাট ও জব্বলপুর প্রভৃতি জেলা থেকে মূখ্যত শ্রমিক সংগ্রহ করা হয়।
এ ছাড়াও উত্তর প্রদেশ,পশ্চিমবঙ্গ প্রভৃতি প্রদেশ থেকেও শ্রমিক সংগ্রহ করার হয়। নেপাল থেকেও এক পর্যায়ে শ্রমিক সংগ্রহ করা হয়।
১৮৪১ সালের দিকে শ্রমিক প্রেরণ কার্যক্রম বেগবান করার জন্য“ফ্রি কনট্রাক্টরস” পদ্ধতি তৈরি করে। এই আইনের বলে বড় অংকের টাকার বিনিময়ে কুলি সংগ্রহ করার জন্য চা–করেরা চুক্তি করেন স্থানীয় এজেন্টদের সাথে।
লোভী এজেন্টরা ( এদেরকেই আড়কাঠি বলা হয়,এবং এই প্রক্রীয়াই আড়কাঠি আইন।) স্থানীয় কিছু ধুর্ত লোককে আড়কাঠি হিসেবে বাছাই করে।
তারা অধিক মুনাফার আশায় নিজেদের মধ্যে শুরু করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। শ্রমিকদের দেখাতে থাকে নানান প্রলোভন। করতে থাকেন নানা রকমের মিথ্যাচার।
তারা গ্রামে গ্রামে সুসজ্জিত বেশে গিয়ে চা শ্রমিকদের সুখের জীবন ফুলিয়ে,ফাঁপিয়ে,বানিয়ে বলত। বলা হতো, চা-বাগানে নাড়ালে টাকা পড়ে। গরিব গৃহস্থের ছেলেমেয়েরা এসব শুনে সুখের স্বপ্ন দেখতো।
তার পর ঐ আড়কাঠির হাত ধরে একদিন বাড়ি ছেড়ে পা বাড়াত। ছাগল গরুর ব্যবসার মতো শ্রমিক সংগ্রহের ব্যবসা তখন জমজমাট। কোন ভাবে তাদের জাহাজের ঘাটে এনে দিতে পারলেই হাতে পেত কচকচে টাকা।
আড়কাঠিদের কাজ হচ্ছে কুলিদের জাহাজ ডিপোয় এনে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়া ।একবার স্বাক্ষর করাতে পারলেই চা মালিকদের জিম্মায় চলে যেত। ততক্ষন পর্যন্ত তাদের আদর আপ্যায়ন ভালই হতো।
হাত বদলে তারা এসে পড়তো জাহাজের কতৃপক্ষের কাছে।শুরু হতো তাদের উপর অমানবিক আচরণ। কুলিদের জন্য তো আর জাহাজের বাড়তি যোগান দেয়া যাবে না তাই ছাগল গরুর মতো তাদের জাহাজে উঠানো শুরু হল। জাহাজের ধারন ক্ষমতা যেখানে ২০০ জন সেখানে তোলা হতো ১০০০–১২০০ জন ।
মুল্লুকে চলো আন্দোলন
মুল্লুকে চলো আন্দোলন – চা শ্রমিক
শুয়ে থাকা তো দুরের কথা বসবার মতোও কোন স্থান ছিলনা। গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে তাদের দিন কাটাতে হতো। খাওয়া দেওয়া হতো খুবই কম,যে টুকো খাবার না দিলেই নয়।
জাহাজে ভ্রমনের ধাক্কার সাথে যোগ হতো রোগবালাই।কলেরা বসন্ত মহামারি রুপে দেখা দিল। তাদের জন্য জাহাজে কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকার প্রয়োজনীয়তা কেউ মনে করেনি। কাতারে কাতারে লোক জাহাজে মারা যেত।
জাহাজ এসে ভিড়ল বদরপুর বা কাঠিগড়ায়(পূর্বে এই দুটিই ছিল জাহাজ বন্দর)।জাহাজ যখন খালাস করা হচ্ছিল তখন অর্ধেক জীবন্তু এবং অর্ধেক নামছে লাশ হয়ে।
রোগ বিস্তারের অজুহাতে লাশ গুলো ফেলে দেয়া হতো পানিতে। চোখের সামনে দেখতো সৎকার বিহীন ভাই,বাবা,চাচা,বন্ধুর লাশ পানিতে ফেলা হচ্ছে ঝুপ–ঝাপ শব্দ করে।
যারা বেঁচে থাকল তাদের নিয়ে আসা হল শ্বাপদ সংকুল জঙ্গলে। যে সুখের দিনের কথা তারা চিন্তা করে জাহাজে উঠেছিল তা খুব দ্রুতই মিলিয়ে যেতে লাগল।
জঙ্গলেই তাদের থাকতে হবে। এখানেই কাজ করতে হবে। মারতে হবে সাপ,বাঘ,ভাল্লুক, হাতি, বিষাক্ত পোকামাকর আথবা তাদের হাতেই হবে তাদের মৃত্যু। জীবজন্তুর সাথে এবং জঙ্গলের সাথে লড়াই করে কমে যেতে থাকে তাদের সংখ্যা।
ম্যালেরিয়া,কালা জ্বর তাদের নিত্য সঙ্গী। চিকিৎসা বলতে কোন ব্যাপার তখন শ্রমিকদের জন্য ছিলনা।এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে চা চাষের জন্য ১৮৬৩-১৮৬৬ সালে এ অঞ্চলে ৮৪,৯১৫ শ্রমিক আনা হয় যার মধ্যে অনাহারে-অর্ধাহারে,অসুখে-বিসুখে ৩০,০০০ শ্রমিক মারা যান Griffiths(1967-70)।
আধিকাংশ চা বাগানের মালিকই তখন বৃটিশ কোম্পানি। ভারতবর্ষে তখন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন দানা বাধতে শুরু করে। এই আন্দোনলের কিছুটা বাতাস পায় চা শ্রমিকরাও।
ক্ষুধা,রুগ ভোগ,মৃত্যু, নিজ আপনজন থেকে দূরে থাকা, এবং আদৌ ফিরে যাবার অনিশ্চয়তা তাদের বিদ্রোহী করে তোলে।
তখন ১৯২০ সাল। শ্রমিক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে বাগান থেকে বাগানে। বিদেশি মালিকদের সব রকমের ব্যবসা বাণিজ্যে ও চা বাগান বয়কটের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়।
রাজনৈতিক আন্দোলনের মতো শ্রমিক আন্দোলনের হাল ধরার মতো বলতে গেলে কেউ ছিলনা। অদক্ষ ভাবে আন্দোলন গড়াতে থাকে। রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে তারাও চা বগান থেকে বের হয়ে আসে।
১৯২১ সালে ব্রিটিশ–বিরোধী আন্দোলন ও গণজাগরণ চা শ্রমিকদের অনুপ্রাণিত করে। এ সময় থেকে চা শ্রমিকদের শোষণ–বিরোধী সংগ্রাম সম্রাজ্যবাদ–বিরোধী জাতীয় শক্তি সংগ্রামের অংশ হয়ে দাঁড়ায়।
চরগুলা অঞ্চলের চা–শ্রমিকগণ ঐক্যবদ্ধভাবে বিদ্রোহ ঘোষণা করে চা বাগান থেকে বের হয়ে স্ত্রী,পুত্র,পরিজন, নিয়ে রেলপথ ধরে হাঁটতে থাকে। এ চা শ্রমিক আন্দোলনকে চরগোলা এক্রডাস বলা হয়।
সিলেট ও কাছাড়ের প্রায় ত্রিশ হাজার চা–শ্রমিক এ অন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। তাদের দাবি ছিল একটি – ইংরেজ মালিকেদর অধীনে কাজ করবেন না। তাদের নিজের আবাসভূমিতে (মুল্লুকে) ফিরে যাবে।
১৯২১ সালের ৩ মার্চ অনিপুর চা বগান থেকে ৭৫০ জন শ্রমিক বেরিয়ে আসলে শ্রমিকদের মধ্যে বাগান ছাড়ার তৎপরতা দেখা যায়।দলে দলে শ্রমিকরা বাগান থেকে বের হতে থাকে। উদ্দেশ্য একটাই নিজের মুল্লুকে ফিরে যাবে।
সেসময়কার অসহযোগ আন্দোলন তাদেরকে পুরনো গ্রামের সেই কথা আবার মনে করিয়ে দেয়। চা-শ্রমিকরা বুঝতে পারে, চা মালিকরা তাদের প্রতারণা করে জঙ্গলে বন্দি করে রেখেছে।
তাদের সোনালী অতীতে ফিরে যাওয়ার বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস অনুভব করে। পাগলের মতো কোন চিন্তা না করে বেরিয়ে যায় মাথা গোজার ঠাঁই ছেড়ে। কি ভাবে যাবে? কি খাবে? এসব চিন্তা তাদের একটি বারের জন্যও থামাতে পারে না। তারা বেরিয়ে পড়ে অজানার গন্তব্যে।
কি হবে আর থেকে এখানেও তো ধুকে ধুকে মরছি তো একবার বেরিয়ে দেখি না কি হয়। বন্দি জীবনের কারনে তাদের বাহিরের পৃথিবীটাও ছিল অপরিচিত। এই অপরিচিত পৃথিবী থেকে বেরিয়ে আসে স্ত্রী,পুত্র, কন্যার হাত ধরে। কি ভাবে যাবে ? রাস্তাঘাট চিনবে কি করে? তারা তো কেবল জানে চাঁদপুর জাহাজ ঘাট।
সেখানে যেতে পারলেই জাহাজে চড়ে বাড়ি ফিরা যাবে। জাহাজ ঘাট যাবে কি করে? সবাই জড়ো হতে থাকে রেলস্টেশনে। তখন চা-বাগান মালিক ব্রিটিশরা ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে শ্রমিকদের রেলের টিকেট না দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
উপায় খুব সহজে বেরিয়ে যায়। হাঁটা। এই রেল লাইল ধরেই হাঁট। সবাই সেই রেল লাইল ধরেই হাঁটতে থাকে চাঁদপুর জাহাজ ঘাটের উদ্দেশ্যে। তাই এই আন্দোলন “মুল্লকে চলো“ আন্দোলন হিসেবে বেশি পরিচিত।
ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত হাজার হাজার শ্রমিকরা এসে জড়ো হয় জাহাজ ঘাটে। জনপ্রিয় নেতা হরদয়াল নাগের নেতৃত্বে এদের জন্য চিড়া ও চাউল ব্যবস্থা করেন। কিন্তু শ্রমিকদের রান্না করার মনোবল এবং শক্তি কোনটাই ছিলনা। তারা কাঁচা চাউল চিবিয়ে ক্ষুধা নিবারণ করেন।
যখনই স্টিমার ঘাটে এসে ভীড়ে অমনি প্রাণ চঞ্চল হয়ে উঠে। সবাই ধাক্কা ধাক্কি করে স্টিমারে উঠতে ব্যস্ত হয়ে যায়। জাহাজ কর্মচারীরা চায় টিকেট। টিকেট কাটতে লাগে টাকা চা-শ্রমিকদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। কোথায় পাবে টাকা? কোথায় টিকেট? অনেক অনুনয় বিনয় করেও জাহাজ কর্মীদের মন টলানো যায়না।
এক পর্যায়ে জাহাজ তাদের সাথে ধাক্কা ধাক্কি শুরু হয়। সিঁড়ি দিয়ে একসাথে উঠতে গিয়ে ঝপাঝপ পড়ে পানিতে।
পরিস্থিতির উপর সরকারেরও তীক্ষ্ম দৃষ্টি ছিল।তাই প্রস্তুত রেখেছিল পুলিশ বাহিনী। হুইসেল বাজতেই একদল সশস্ত্র পুলিশ এগিয়ে আসে। জাহাজের সিঁড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়তে থাকে।
জাহাজের সিঁড়ি থেকে শ্রমিকদের রক্তাক্ত দেহ পরতে থাকে পানিতে।শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। অল্প সময়েই জাহাজ ঘাট শুন্য হয়ে যায়।
এই আক্রমনে কত জন শ্রমিক নিহত হয়েছিল? কত জন আহত হয়েছিল। তার কোন হিসাব নেই। লোকজন শুধু নদীতে লাশের সারি ভেসে যেতে দেখেছে।
সবচেয়ে পাশবিক ঘটনাটি ঘটেছে চাঁদপুর রেলস্টেশনে। রেলইয়ার্ডে ৩,০০০–৪,০০০ শ্রমিক জড়ো হয়েছিল। ২০ মে তাদেরও জাহাজ ঘাটে পৌঁছনোর কথা।
রাতের অন্ধকারে গুর্খা রেজিমেন্টের সৈন্যরা রেলওয়ে ইয়ার্ড ঘিরে ফেলে। সরকার পক্ষ থেকে নিষিদ্ধ এলাকায় কোন লোকজনকে যেতে নিষেধ করা হয়। সরলপ্রাণ ক্লান্ত শ্রমিকরা রহস্যটা বুঝতে পারেনি। গভীর রাতে সবাই যখন ঘুমে অচেতন। কমিশনার কে.সি দে-এর নির্দেশে গুর্খা সৈন্যরা ঘুমন্ত শ্রমিকদের উপর ঝাঁপিয়ে পরে।
শ্রমিকদের আর্তচিৎকারে আকাশ বতাস প্রকম্পিত হয়ে উঠে। রাতের অন্ধকারে অনেক লাশ গুম করে ফেলে গুর্খা বাহিনী।
এখানেও কতজন নিহত ,কত জন আহত হয়েছে তারও কোন হিসেব করা হয়নি। বাগান মালিকরা ভেবেছিল ত্রাসের সঞ্চার করে তাদের আবার বাগানে নিয়ে যাওয়া হবে। তাই একটি অতিরিক্ত কামরাসহ রেলগাড়ী স্টেশনে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল।
কিন্তু উদ্দেশ্য খুব একটা সফল হয়নি। আক্রমনের ফলে সমস্ত শহরে ছড়িয়ে পড়ে শ্রমিকরা। মাড়োয়ারী পাট ব্যবসায়ীরা তাদের পাটের গুদামে এবং মানুষজন তাদের বাড়ি ঘরে আশ্রয় দেয়।
চাঁদপুরে চা শ্রমিকদের উপর হামলার প্রতিবাদে ডাকা হলো হরতাল। রেল ও জাহাজ কোম্পানির কর্মীরা এই হরতালে সমর্থন জানায় এবং প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ গ্রহন করে।
ধর্মঘট পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। রেল কর্মচারীদের এই ধর্মঘট আড়াই মাস স্থায়ী হয় এবং ৪,৫০০ কর্মী চাকরিচ্যুত হয়। জাহাজ কর্মীদের ধর্মঘট চলে ছয় সপ্তাহ।
এদিকে চা-শ্রমিকদের খাদ্য যোগানোর জন্য হারাধন নাগের নেতৃত্বে রিলিফ কমিটি গঠন করা হয়। জনসাধারণ উদার ভাবে সাহায্যে হাত বাড়ান। এক পর্যায়ে সরকার শ্রমিকদের খাদ্য সরবরাহ করতে চাইলে শ্রমিকরা তা নিতে অস্বীকার করে।
কিছুদিন পরেই শ্রমিকদের মধ্যে কলেরা মহামারী আকারে দেখা দেয়। বহু শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেন। এই মহামারী নিয়ন্ত্রন আনতে স্বেচ্ছাসেবকরা প্রাণান্ত পরিশ্রম করে।
রেলস্টেশন থেকে পন্ডিত গঙ্গা দয়াল দীক্ষিতসহ নেতৃস্থানীয় শ্রমিক নেতাদের গ্রেফতার করা হয়। জেলখানা কতৃপক্ষের দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদে পন্ডিত গঙ্গা দয়াল দীক্ষিত অনশন করে প্রাণ বিসর্জন দেন। তারপর কি হয়??? তারপর রাজনীতি।
১) এ মর্মান্তিক ঘটনার পরও যেসব শ্রমিক নিজ মুল্লুকে যতে একান্ত ইচ্ছুক, কোম্পানি তাদের যাবার ব্যবস্থা করবে।
২) কিছু কংগ্রেস কর্মী গিয়ে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে।
৩) বাকীরা আসামে ফিরে গিয়ে আবার কাজ পাবে।
৪) কোম্পানি তাদের কাজ পেতে কোন অসুবিধার সৃষ্টি করবে না।
ছেলে ভোলানো চার দফার আপোষের মাধ্যমে আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটে।
উপরের ঘটনা্টি হলো ব্রিটিশ আমলের কিন্তু আজকের স্বাধীন বাংলাদেশে চা-শ্রমিকরা কেমন আছে তা নিচের আলোচনা থেকে বুঝা যাবেঃ
বাংলাদেশের ২৪১টি (ফাঁড়িসহ) চা বাগানে প্রায় ১৫ লক্ষ চা জনগোষ্ঠী ১৮০ বছর ধরে বসবাস করছে (বিটিবি,২০১৫) । যদিও এই চা শ্রমিকরা বাংলাদেশের নাগরিক কিন্তু পর্যাপ্ত নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না।
চা শিল্পের মাধ্যমে এই চা শ্রমিকরা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে অথচ তাদের জীবনমান উন্নয়নে কোন ধরণের সরকারি উদ্যোগ পরিলিক্ষিত হচ্ছে না।
শিক্ষা,স্বাস্থ্য,চিকিৎসা, বাসস্থান ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা থেকে তারা যেমন বঞ্চিত তো হচ্ছেই অপরদিকে নিজ জমির কোন দলিল-দস্তাবেজ না থাকায় তাদের বসত-ভিটা-কৃষি জমিও প্রতিনিয়ত দখল হচ্ছে। এই গবেষণার মাধ্যমে চা শ্রমিকদের ভূমি অধিকারসহ তাদের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
চা বাগানের অন্যতম প্রধান সমস্যা হল দারিদ্র্য। যেহেতু অতি দারিদ্র্যের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে,যে ব্যক্তির দৈনিক আয় ১.২৫ ডলারের কম এবং দৈনিক ১৮০০ কিলোক্যালরির কম খাদ্য গ্রহণ করে তাকে অতি-দারিদ্র্য বলে সেহেতু চা শ্রমিকরা অতি দারিদ্র্যের পর্যায়ভূক্ত।
কেননা,তাদের দৈনিক আয় ১.২৫ ডলারের কম (৮৫ টাকা)এবং তারা ১৮০০ কিলোক্যালরির কম খাদ্য গ্রহণ করে। অথচ চা-শ্রমিকের অতি-দারিদ্রতার বিষয়টি তো দূরের কথা দারিদ্র্যের বিষয়টিও পিআরএসপি,সপ্তম পঞ্চ-বার্ষিকী পরিকল্পনা ইত্যাদিতে উল্লেখ করা হয় নি। যার ফলে দেশের চা-শ্রমিকদের সমন্বিত উন্নয়ন ব্যবস্থা ছিটকে পড়ছে।
চা বাগান অঞ্চলে শিক্ষার হার খুবই কম। যে শিশুদের স্কুলে যাবার কথা তারা কাজ করে চা বাগানে। ২৪১ টি চা বাগানের মধ্যে কোন চা বাগানে কলেজ নেই, হাই স্কুল রয়েছে মাত্র দুইটি, আর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে হাতেগোনা কয়েকটি।
একদিকে যেমন ৫-৬ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে যেতে হয় অন্যদিকে শারীরিক অবয়ব ও ভাষাগত সমস্যার কারণে তারা মূল ধারার ছাত্র-ছাত্রীদের দ্বারা বিভিন্ন ধরণের লাঞ্ছনার শিকার হয়।
যে কারণে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত হবার আগেই অনেক শিশুই ঝরে পরে। দেশের অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য চাকুরী ও শিক্ষা ক্ষেত্রে যেমন কোটা সুবিধা রয়েছে, চা-জনগোষ্ঠীর জন্য তেমন কোন বিশেষ কোটা ব্যবস্থা নেই।
অথচ চা-জনগোষ্ঠী দেশের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া এবং বঞ্চিত জনগোষ্ঠী। দেশের অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য চাকুরী ও শিক্ষা ক্ষেত্রে যেমন কোটা সুবিধা রয়েছে, চা-জনগোষ্ঠীর জন্য তেমন কোন বিশেষ কোটা ব্যবস্থা নেই।
বাংলাদেশের চা বোর্ডের হিসাবমতে স্থায়ী চা শ্রমিকের সংখ্যা ১,১৯,০০০ জন অথচ মাত্র ৯৩৫০০ চা শ্রমিক প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুবিধা পাচ্ছে (সুত্রঃপ্রভিডেন্ট ফান্ড অফিসের সিটিজেন চার্টার)। শ্রম আইন অনুযায়ী যেখানে ৩ মাস কাজ করার পর একজন চা শ্রমিক স্থায়ী শ্রমিক হবার অধিকার রাখে সেখানে ২০-২৫ বছর কাজ করার পরেও প্রায় ২৫০০০০ চা শ্রমিককে অস্থায়ী রাখা হচ্ছে না যারা বঞ্চিত হচ্ছেন প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুবিধা থেকে।
চা-বাগানগুলোতে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবার মানের অবস্থা খুবই নাজুক কারণ এখানে স্বাস্থ্যসেবার নামে চলে রসিকতা। অধিকাংশ চা-বাগানগুলোতে হাসপাতাল নেই আবার হাসপাতাল থাকলে ডাক্তার নেই, ওষুধ নেই,প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামাদি নেই।
এই নেই নেই এর মধ্যে চলছে বাগানগুলোর স্বাস্থ্যসেবা। অভিজ্ঞ বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রী না থাকায় চা-বাগানগুলোতে মাতৃ হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। ১৯৬২ সালের টি প্লান্টেশন লেবার অডিন্যান্স এবং ১৯৭৭ সালের প্লান্টেশন রুলস-এ চা বাগানগুলোতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা মালিকের দায়িত্ব থাকলেও তা করা হচ্ছে না।
যক্ষ্মা, টাইফয়েড, ,রক্তশুন্যতা,ডাইরিয়া ইত্যাদি চা-শ্রমিকদের নিত্য দিনের সঙ্গী।
বর্তমানে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরী মাত্র ৮৫ টাকা।সম্প্রতি দেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। সেই সাথে বেসরকারি খাতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাও বৃদ্ধি করা হয়েছে।
যার ফলে স্বাভাবিকভাবে দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশের চা-শ্রমিকদের মজুরী ৬৫০-১০০০ টাকা বাংলাদেশের চা শ্রমিকরা পাচ্ছে মাত্র ৮৫ টাকা। স্বল্প মজুরীপ্রাপ্ত এই চা শ্রমিকরা বাজারের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সাথে তাল মেলাতে পারছে না বলে তাদের দৈনন্দিন জীবনে নেমে এসেছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ।
চা-শ্রমিকরা প্রজন্মনের পর প্রজন্ম চা-বাগানে বসবাস করলেও তারা তাদের বসতভিটার মালিকানা পায়নি। তারা যেন নিজ ভূমে পরবাসী। চা-বাগানে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার পাশাপাশি আবাসন ও পয়োঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দায়িত্ব বাগান মালিকের থাকলেও এটি নিয়ে কারও মাথা ব্যথা নেই।
চা-শ্রমিকরা ৮/১২ ফুট মাপের একটি ঘরে অন্তত তিনটি প্রজন্ম বাস করে; যা পুরো মানব সভ্যতার জন্য লজ্জাজনক। একটি ঘরে তিন প্রজন্ম বাস করা যেমন অস্বাস্থ্যকর তেমনি মানহানিকর ওই ঘরের সবার জন্য, সমাজের জন্য তো বটেই। এতে করে বাগানের শিশুদের আত্মসম্মান ও মানসিক বিকাশ হচ্ছে না।
দেশের বেশির ভাগ চা বাগান পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় সেখানে কূপ খনন বা নলকূপ স্থাপন তুলনামুলকভাবে ব্যয় বহুল। যার কারণে চা শ্রমিকরা গাং বা ঝর্নার পানি পান করে।
চা শ্রমিকরা যেন অন্ধকারাচ্ছন্ন বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপের বাসিন্দা।বেশিরভাগ বিদ্যুৎ-সংযোগ না থাকায় চা শ্রমিকরা বাইরের জগৎ সম্পর্কে তেমন ধারণা পায় না (টেলিভিশন দেখতে পারে না)। অপরদিকে চা শ্রমিক সন্তানরা কুপী বাতির সাহায্যে পড়াশোনা করে যা তাদের চোখের জন্য ক্ষতিকর।
শিশু শ্রমঃ বাংলাদেশের প্রতিটি চা বাগা্নেই শিশু শ্রমিক নিয়োজিত আছে যেখানে বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী {অধ্যায় ৩, ধারা-৩৪(১)} শিশুশ্রম নিষিদ্ধ।
বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী (অধ্যায় ২, ধারা-৫) চা বাগান কর্তৃপক্ষ কাজে নিয়োগদানের পূর্বে একজন চা শ্রমিককে নিয়োগপত্র দিতে বাধ্য।প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের কোন চা শ্রমিককে নিয়োগপত্র দেয়া হয় না।
আজীবন কাজের শর্তে চুক্তিবদ্ধ করে ভারতের বিহার, মাদ্রাজ,উত্তর প্রদেশ, উড়িষ্যা প্রভৃতি অঞ্চল থেকে কানু,তেলেগু, লোহার, রবিদাস, গোয়ালাসহ প্রায় ১১৬ টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে শ্রমিক হিসেবে সংগ্রহ এ অঞ্চলে নিয়ে আসা হয়।
যাদের প্রত্যেকের ভাষা, সংস্কৃতি, আচার-আচরণ, ধর্মীয় রীতিনীতি, পূজা-উৎসব, বিবাহপ্রথা,সমাজ কাঠামো দেশের মূল ধারার জনগোষ্ঠী থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
নৃ-তাত্ত্বিক সংজ্ঞানুসারে চা জনগোষ্ঠীর কেউ প্রাক-দ্রাবিড়ীয়,কেউ আদি অষ্ট্রালয়েড, কেউবা মঙ্গোলীয় আদিবাসীর অন্তর্ভুক্ত।কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এদেরকে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃত তো দে-ই নি, এমনকি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর তালিকায়ও এদেরকে অন্তর্ভুক্ত করেনি,যে কারণে এরা কোটা সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বরঞ্চ এদেরকে অন্তর্ভুক্ত করলে এরা দেশের সরকারি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ও চাকুরী ক্ষেত্রে নিজেদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারতো এবং নিজেদের দুরাবস্তার পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখতে পারতো।
চা চাষের জন্য সরকার কর্তৃক নির্দিষ্ট মেয়াদে ১,১১,৬৬৩.৮৩ হেক্টর জমি লীজ মঞ্জুর করা হয় যার ৫১.১১ % জমিতে চা চাষ করা হয়। একর প্রতি বাৎসরিক লীজের পরিমাণ ৫০০ টাকা।
অপরদিকে প্রতি একর কৃষি জমি ব্যবহারের জন্য চা শ্রমিকদের কাছ থেকে প্রতি সপ্তাহে ৩ কেজি রেশন কর্তন করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে জেলা প্রসাশক এই লীজ দেখভাল করেন।
চা-শ্রমিকরা দীর্ঘ ১৮০ বছর ধরে চা বাগানে বসবাস করছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা ভূমির অধিকার পায় নি – তারা যেন “নিজভূমে পরবাসী”। চা শ্রমিকদের ভূমির কোন দলিল-দস্তাবেজ না থাকার কারণে তাদেরকে নিম্নরূপ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়ঃ
বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ জরুরী হওয়া সত্ত্বেও ভূমির দলিল-দস্তাবেজ না থাকার কারণে চা শ্রমিকদের কোন প্রকার ঋণ দেয়া হয় না। যার ফলে চা শ্রমিকদের পক্ষে বৃহত্তর ব্যবসা উদ্যোগ গ্রহণ,কৃষি কাজে বিনিয়োগ ইত্যাদি।
চা বাগান মালিক কর্তৃক নির্ধারিত ঘর (৮ ফুট/১২ ফুট) ব্যথিত ঘর নির্মাণ করতে চাইলে বেশির ক্ষেত্রেই অনুমতি দেয়া হয় না। ভূমির অধিকার না থাকার কারণে এ সমস্যা হচ্ছে।
ভূমি অধিকার না থাকার কারণে চা শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত জমি দখলের শিকার হচ্ছে। সরকার,চা-বাগানের মালিক, প্রভাবশালী মহলের মাধ্যমে সাধারণত চা শ্রমিকরা জমি দখলের শিকার হয়।
চান্দপুর-বেগমখান চা বাগানের ১২৫০ টি চা শ্রমিকরা পরিবারের ৫১১.৮৩ একর কৃষি-জমি দখল করে সরকার “বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করছে। এই জমি দখল করার পূর্বে সরকার চা শ্রমিক পরিবারগুলোকে কোন প্রকার পুনর্বাসন, ক্ষতি-পূরণ দেয়া তো দূরের কথা তাদের সাথে কোন আলোচনায় করে নি।
তার কারণ একটাই চা শ্রমিকদের ওই জমির কোন কাগজ-পত্র নেই। লাখাই চা বাগানের ৭০ টি চা শ্রমিক পরিবারের প্রায় ১০০ একর কৃষি জমি দখল করে চা-বাগান কর্তৃপক্ষ কর্তৃক চা গাছ লাগানো হয়েছে।
লাক্কাতুরা চা বাগানের চা শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ না দিয়েই তাদের জমিতে প্রভাবশালী মহল কর্তৃক নির্মিত হয়েছে “সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। জমি দখলের এ রকম চিত্র প্রায় প্রতিটি চা বাগানেই দেখা যায়।
কোন চা শ্রমিক পরিবার চা বাগানে কাজ না করলে তাকে চা বাগান থেকে উচ্ছেদ করে দেয়া হয়।নিজভূমে পরবাসী এই চা শ্রমিকরা চার প্রজন্ম ধরে বসবাস করেও চা বাগান থেকে তথাকথিত “কালো আইন” নামে উচ্ছেদ হচ্ছে।
চা শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধি (কমপক্ষে ২৫০ টাকা), বিদ্যমান ভুমিসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধান এবং চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন অতীব প্রয়োজন।
চা-শ্রমিকদের নিম্নলিখিত দাবী আদায়ের লক্ষ্যে প্র্তিনিয়ত বিভিন্ন চা বাগানে আন্দোলন সংগ্রাম চলছেঃ
১।চা বাগানে বসবাসরত সকল জনগোষ্ঠীকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তালিকায় অন্তভূক্ত করা ;
২।দেশের সকল উচ্চশিক্ষা প্রতিষঠা্ন ও সরকারি চাকুরীতে কোটা সংরক্ষণ করা ;
৩।চা জনগোষ্ঠীর ভূমির অধিকার নিশ্চিত করা ;
৪।চা জনগোষ্ঠীর ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ইত্যাদি সংরক্ষণের জন্য একটি কালচারাল একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা ।
৫।চা বাগানে শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, কারিগরি বিদ্যালয়, কলেজ প্রতিষ্ঠা করা ;
৬।জাতীয় বাজেটে চা জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ দেয়া ;
৭।চা বাগানের বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে একটি কমিশন বা মন্ত্রণালয় গঠন করা;
৮। চা বাগান এলাকায় পর্যাপ্ত সরকারী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা ।
৯। চা বাগানের ছাত্র-ছাত্রীদের কারিগরি প্রশিক্ষণসহ বিশেষ বৃত্তির ব্যবস্থা করা ।
মোহন রবিদাস বিএসএস (সম্মান),এমএসএস(লোক-প্রশাসন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একজন চা-শ্রমিক সন্তান। বর্তমানে কমিউনিটি জাস্টিস ফেলো হিসেবে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাষ্ট (ব্লাস্ট) এ কাজ করছেন।
স্ত্রী-অধিকার একশ বছর আগে – ১৩২২ বঙ্গাব্দের একটি কাবিননামা
ভূমিকা
আমাদের হাতে উপস্থিত ১৩২২ বঙ্গাব্দের ২৬ চৈত্র তারিখে সম্পাদিত একটি কাবিননামা। বেশ বিস্তারিত এই কাবিনে ১০০ বছর আগে বাঙালি মুসলমান সমাজে বিয়েশাদির কিছু কৌতূহল জাগানিয়া বিষয়ের অবতারণা পাওয়া যায়। কালিয়াকৈর নিবাসী মাহাছুমা খাতুন এবং টুমায় নিবাসী আবদুচ্ছোবহানের বিয়ের কাবিননামা এটি। কাবিননামা মূলত একটা চুক্তি, যাতে স্ত্রী-পণ এবং কিছু শর্ত নিয়ে বরপক্ষ আর কনেপক্ষ সম্মতি জ্ঞাপন করে। দলিলের পাঠ আমরা নিচে দিলাম। আলোচনা ও টীকা পরে সংযোজিত হল।
দলিলের পাঠ
[সিল]
… stamp duty under the Indian Stamp Act 1899, S..
Date 1, No. 58 …
… paid …
শ্রীমতী মাহাছুমা [মাসুমা] খাতুন, পিতা শ্রী এলাই বখস(,) সাকীম কালীয়কর(,) থানে …(,) জাতী মুসলমান(,) ব্যবসা গৃহস্থ কাবিন গার্হস্থ্য স্থানে লিখিতং শ্রী আবদুচ্ছোবহান,পিতা শ্রী আবদুল (,) সাকীম টুমায় (,) থানে … (,) জাতী ঐ(,) ব্যবসা ঐ (,) কাবিন দাতা ফর্দ (?) দেএন মোহরের কাবীন নামা পত্র মিদং কার্যঞ্চাগে আমি আমার আপন খুসী খোসরাজী রাগবতে বহাল তবীঅতে সেচ্ছা পূর্বক কালীয়কর নিবাসী মৃত আসাবাদ্দী মাজির (মীয়াজি?) পুত্র শ্রী মোক্রম (মুকাররম) আলী ও টুমায় নিবাসী মৃত সেক আলী মীআজীর পুত্র … সেখ মীঞা কতিপয় সাক্ষীগণের সাক্ষ্যতায় হাজীরাণ মজলিশে আপনী বালেগা থাকা বশতঃ আপনীর খোদ এজেণ মতে আপনীর পিতা ছাহেবের ওকালতিতে ম ৩০০ \ তিনশত টাকা … মোহরাণা ধার্য করিয়া উহা স্বীকৃত করতঃ আপনীকে বিবাহ করিয়া আমার আপন জজিয়তে আনিলাম (।) উল্লেখিত মোহরানা মবলগ মজকুর মধ্যে স্বর্ণ রৌপ্যালঙ্কার আদি ম ৬০\ ষাইট টাকার অলঙ্কার, আপনীর পিতা ছাহেবের মারফত আপনীকে নগদ বুজাইয়া দিলাম (।)
উক্ত অলঙ্কার অদ্য হইতে আপনীর এক্তেয়ার করিয়া দিলাম জাহা আমি কোন রূপ অত্যাচার কিম্বা মন্দকার্যের দ্বারা আত্মসাৎ করিতে পারবনা। ছিলভর (সিলভার) ইত্যাদির দ্বারা উক্ত অলঙ্কারের পরিবর্তন ঘটাইতে পারিবনা কিম্বা কোন প্রকার খোয়ান গেলে তাহা আমি বিনা ওজরে ফুরণ (পূরণ) করিয়া দিব না দিলে সমুদয় অলঙ্কারের দাবীতে (?) নালেশ দাএর করতঃ ডিক্রী জারিক্রমে আমার স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তী নিলাম বিক্রীর দ্বারা আদায় করিয়া লইতে তৎকালীন আমি কি আমার ওয়ারিশান কোন প্রকার ওজর আপত্তী শ্রোত যোগ্য হইবেক না (।) তদ্বারা আদায় না হইলে আমার শরীর তাহার দাই (দায়ী) রহিবেক (।)
অলঙ্কার বাদ অবশিষ্ট ম ২৪০ \টাকার মধ্যে ম ১৪০ \ টাকা আপনী স্বয়ং কিম্বা পিতামাতা অথবা আপনীর কার্যমতো (?) যে ব্যক্তি মুরব্বি হইয়া ওপর (?) করান তৎকালীন আপনী আমার জাজীয়তে হাজির থাকা না থাকা কোন প্রকার আপত্তী উত্থাপন না করিয়া অত্র কাবিনের পৃষ্ঠে ওয়াশিল লিখাইয়া পরিশোধ করিব। তদ্ভিন্ন কোন রশিদ … দ্বারা উক্ত ব্যয় … (?) লইবনা (।) অবশিষ্ট ম ১০০\ একশত টাকা আপনী ও আমার বিবাহ কাএম থাকা পর্যন্ত ক্রমান্বয় পরিশোধ করিতে থাকিব (।) যখন যে টাকা দেই অত্র কাবীনের পৃষ্ঠে উশুল ভিন্ন উশুলের … পাইবনা (।) অত্র কাবীন আপনীর পিত্রালয় হইতে কোনরূপ ছল চক্র করিয়া নিয়া মোহরের টাকা উশুল দিতে কিম্বা আপনীকে আপনীর পিতামাতার অসাক্ষাতে বাধ্যকতা করিয়া মোহরের টাকা রেহাই বাদ দিতে তাহা আইনত গ্রাহ্য হইবেক না এবং প্রতিজ্ঞায় নিম্নলিখিত সত্য (শর্ত) সমূহ স্বীকৃত পূর্বক লিখিয়া দিতেছি তদাকার আচরণ করিব কস্মিণ কালেও ভিন্ন আচরণ করিব না।
১ম সত্য এই যে আপনীকে আমার আপন জজিয়তে আনিয়া পর্দা পুসিদা মতে রক্ষণাবেক্ষণ পূর্বক স্ত্রী পুরুষের আচার ব্যবহার পালন (?)করিতে থাকিব (।) বেসরা বেপর্দা লএক (?) কর্মে হুকুম করিবনা (।) আমার বাটীতে কোন কারণ বশত খানে তাল্লাসীর জন্য হুকুম সহকারে কোন কর্মচারি উপস্থিত হওয়ার পূর্বেই আপনীকে আপনীর পিত্রালয় নিয়া রাখিব বারবার এইরূপ কার্য হইলে আপনী সেস্থানে বসতি বাস করিতে ইচ্ছা করিলে তথায় নিজ ব্যয় ভূষণে উপযুক্ত বাসগৃহ প্রস্তুত করিয়া দিয়া নিম্ন লিখিত হারে খোরপোষ প্রদানে সক্ষম থাকিয়া স্ত্রীপুরুষের আচার ব্যবহারে দিন যাপন করিতেথাকিব। দিনরাত ঝগড়া ফ্যছাদ কিম্বা গালিগালাজ কি কোন প্রকার মাইর পিট করিতে পারব না করিলে দণ্ড বিধি আইনের বিধি মতে সাস্তি প্রাপ্ত হইব(।) সুখাসুখ কার্যোপলক্ষ্যে পিতৃ মাতৃ কিম্বা কুটুম্ব বাড়ি যাইতে বারণ করিব না (।) যাওয়া (আ)বশ্যক হইলে যাইবেন (।) ব্যয় ভূষণে পর্দা পুসীদা মতে তথায় পহুচাইব ও আনীব কস্মিন কালে তদন্যথাচরণ করিব না করিলে নিজ ক্ষমতায় যাইতে পারবেন এহেতু রাগান্বিত হইয়া গালিগালাজ কিম্বা মাইরপিট করিলে দণ্ডবিধি আইনের বিধান মতে সাস্তি প্রাপ্ত হইয়া থাকিব।
২য় সত্য এই যে আপনীকে (ব্যতীত) ২য় নেকাহ সাদি করিতে পারিব না এবং অন্য কাহাকে উপস্ত্রী রাখিয়া আপনিতে প্রণয় হইতে বিরত হইবনা (।) যদি তাহা করি তাহা হইলে সমুদয় মোহরানার দাবিতে নালিশ দাএর করিয়া ডিক্রি জারি এবং আমার স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি নিলাম বিক্রয় দ্বারা করিয়া লইতে পারিবেন এবং নিজ ক্ষমতায় আমার জজিয়ত বর্জিত করিয়া স্বাধীন ভাব অবলম্বন করিতে পারিবেন (।) আর যদি আপনী (রোগা)ক্রান্ত হয়েন নিজ ব্যয় ভূষণে উপযুক্ত চিকিৎসক ধরাইয়া চিকিৎসা করাইব না করিলে নিজ ক্ষমতায় পিত্রালয় যাইয়া আরোগ্য লাভ (করিবেন।) যে ব্যয় পড়িবে তাহা এবং নিম্ন হারে খোরপোষের দাবিতে নালিশ দাএর করতঃ ডিক্রী জারিক্রমে আমার স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রির দ্বারা আদায় করিয়া লইতে পারিবেন আর যদি একান্ত আমার ২য় (নীকাহ?) করা (আ)বশ্যক হয় তৎকালীন আপনীর সমুদয় মোহরের (ব্যয়) শোধ করতঃ আপনীর অনুমতি গ্রহণে করিব (।) ইহা না করিয়া নিজ ক্ষমতায় করিলে ২য় নেকাহ স্ত্রী আমার জজিয়ত ১/২/৩ তালাক প্রাপ্ত হইবেক (।)
আর যদি আপনির সহিত আমার পরিবার বর্গর সহিত বনিবনা না হয় তৎকালীন আপনি যেস্থানে বশত বাস করিতে ইচ্ছা করেন তথায় আমার নিজ ব্যয় ভূষণে উপযুক্ত বাসগৃহ প্রস্তুত করিয়া দিয়া মাসীক ম ৬\ ছয় টাকা হারে খোরপোষ প্রদানে সক্ষম থাকিয়া স্ত্রী পুরুষের আচার ব্যবহারে কাল যাপন করিতে থাকিব (।) ইহা না করিলে আপনীর উপর স্ত্রী সত্যের দায় দাবি করিতে পারিব না (।)
৩য় সত্য এই যে আপনীর অনুমতী ভিন্ন দূর দেশ পরবাস যাইতে পারিবনা একান্ত যাওয়া (আ)বশ্যক হইলে অগ্রে উল্লেখিত হবার ৭ মাসের খোরপোষ প্রসাদ (?) দিয়া যাইব (।) ৩ মাসের ঊর্ধ্বকাল পরবাস করিতে পারিব না (।) ম্যায়াদ অতিরিক্ত পরবাস করিয়া আপনীর খোরপোষের কষ্ট জন্মাইলে ৪র্থ সত্যের মর্মানুযাই (মর্ম অনুযায়ী) সত্যের ফল প্রাপ্ত হইবেন এবং উল্লাখীত হারে খোরপোষের দাবীতে থানের দাএর করিয়া ডিক্রী জারিক্রমে আমার স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তী নিলাম বিক্রয় দ্বারা আদায় করিয়া লইতে পারিবেন তদাভাবে আমার শরীর দাই (দায়ী) থাকিবে (।)
৪র্থ সত্য এই যে আমি দুরদেশ পরবাস যাইয়া অনুদ্দেশ হই কি … কারাবাসী হই কিম্বা উন্মত্ত জ্ঞানশূন্য হই কি পুরুষত্ব রহিত হইয়া স্ত্রী পুরুষের আচার ব্যবহারে অক্ষম হই কিম্বা উৎকট রোগ প্রাপ্ত হইয়া আপনীর ভরণ পোষণ প্রদানে ত্রুটী হ কিম্বা উপরোক্ত সত্য হতে (?) মধ্যে কোন এক সত্য লঙ্গন (লংঘন) করি এইসকল লক্ষণ আমার উপর বর্তালে আপনী আমার জন্য ১ বৎসর কাল সাবকাশ (?) থাকিয়া (?) আপনীর … আমার জজিয়ত হইতে ত্যাগ করার ক্ষমতা আছে (।) এই ক্ষমতা আপনীকে অর্পণ করিলাম (।) আপনী এই ক্ষমতার বলে আমার জজিয়ত হইতে ১।২।৩ তালাক ছালাছা প্রাপ্ত হইয়া স্বীয় শরীর মুক্তিক্রমে অন্যত্র নেকাহ শাদি বসিতে (পারিবেন।) তৎকালীন আপনীর উপর স্ত্রী সত্যের দায় দাবি ও জজিয়তের দায় দাবি সর্বাদালতে বাতিল ও নামঞ্জুর হইবেন অত্র (?) ভঙ্গ করিয়া কোন প্রকার দাবিদাওয়া করিলে বঞ্চনার অপরাধে সাস্তিপ্রাপ্ত হইব (।) এতদর্থে দেএন মোহরের কাবিন নামা পত্র লিখীত (?) দিলাম ইতি … ১৩২২ সন তারিখ ২৬শ চৈত্র অত্র দলিলের সমস্ত বিবরণ পাঠ করিয়া দলিলদাতাকে শুনাইলাম।
আলোচনা
বাংলার সামাজিক ইতিহাস রচনায় বিবাহ ইত্যাদি আচারের প্রথার গুরুত্ব অনেক। হিন্দুসমাজের বিবাহ আচার ইত্যাদি নিয়ে অনেক বইপত্র আছে। কিন্তু মুসলমান সমাজের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক প্রমাণভিত্তিক লেখার কিছু অভাব রয়েছে। ইসলামের শাস্ত্রীয় নানা গ্রন্থ আছে বটে, কিন্তু সেগুলোতে মূলত বিধিবিধান বা নরমাটিভ আলোচনাই পাওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবে বাঙালি মুসলমান সমাজে বিয়ে-শাদি আচারাদি কিভাবে আমল করা হত তার আন্দাজ পাওয়ার উপায় নাই। রাজরাজড়াদের বিয়েশাদি নিয়ে কিছু প্রমাণ সুলভ হলেও সমাজের মধ্যবিত্ত ও সাধারণের সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান সম্পর্কে জানার সুযোগ সীমিত। সেই জানাশোনা করতে হলে সাধারণ মানুষের কাছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা দুর্লভ নানা পুরানা নথিপ্রমাণের খোঁজ করা দরকার। এগুলো সংগ্রহ, পর্যালোচনা ও প্রকাশ করা তাই জরুরি। সেক্ষেত্রে আমাদের উপরের কাবিননামাটি অত্যন্ত ইন্টারেস্টিং। আমরা এই কাবিনে দেখতে পাই যে, কনের সুবিধা ও স্ত্রী-অধিকার কাবিন নামক এই বিবাহ দলিলের মূল বিষয় ছিল।
প্রথমেই দেখবেন, এই বিয়ে টি সম্ভবত বাল্যবিয়ে ছিল না। কনের প্রাপ্তবয়স্কতা এবং সম্মতি (এজেন) মুসলমানি বিবাহে আবশ্যক ছিল। দুই প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে এই বিয়েতে স্ত্রীর যেসব অধিকার উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যে প্রথম হচ্ছে মোহরানা বা স্ত্রীপণ, যা স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকায় পরিশোধ্য। এই পণ একান্তভাবেই স্ত্রীর সম্পত্তি। স্বামী তা কোনক্রমেই আত্মসাৎ বা এড়িয়ে যাওয়ার অধিকার রাখেন না। সেইসাথে দিতে হবে খোরপোষ বা ভরণপোষণ, চিকিৎসা, ও বাসস্থান। স্ত্রীর শিক্ষার অধিকারটি অবশ্য এখানে উল্লিখিত হয় নাই। ঠিইক এই সময়টিতেই রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন (১৮৮০-১৯৩২) নারীশিক্ষা আন্দোলন নিয়ে অগ্রণী হয়েছিলেন। তবু সাধারণ নারীদের প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার সুযোগ ছিল সীমিত। যা হোক, শিক্ষা বাদে স্ত্রীর বাকি মৌলিক অধিকারগুলো স্বামীকেই নিশ্চিত করতে হবে – এটাই এই দলিলে উল্লিখিত।
দ্বিতীয় অধিকারটি হল “স্ত্রী-পুরুষের আচার-ব্যবহার”। এর অর্থ হচ্ছে বৈবাহিক মেলামেশা। মৌলিক অধিকারের পর এল এই যৌগিক অধিকার। এই অধিকার ভারি গুরুত্বপূর্ণ জিনিশ। বিবাহে যে কেবল স্বামীই স্ত্রীর নারীসত্তার উপর দখলদার হন না, স্ত্রীও স্বামীর পুরুষসত্তার উপর অধিকার লাভ করেন, সেটা এই অধিকারে কবুল করা হয়েছে। একইসঙ্গে স্বামীর দ্বিতীয় বিবাহের ব্যাপারে আরোপ করা হয়েছে নানা শর্ত, যে সকল শর্ত পালন না করলে দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিবাহ স্বতই তালাক হয়ে যাবে।
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর আচরণ যাচ্ছেতাই হতে পারবে না। স্বামী যদি কটূকথা বলেন কিংবা মারধোর করেন, সেটা যে আইনি অপরাধ হবে, এবং দণ্ডবিধি অনুসারে সাজাও হবে, সেকথা খোলাখুলি বলা হয়েছে। সেই আমলে পারিবারিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে এই উচ্চারণ আমাদের শ্রদ্ধা আকর্ষণ করে।
স্ত্রী কেবল ব্যক্তিমানুষ নন, একজন সামাজিক মানুষও, ফলে তাঁর একটি ধর্মীয় বা নৈতিক সত্তাও থাকে। সেই সত্তার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এই দলিলে — বলা হয়েছে স্ত্রী যেন শরিয়তের বিধান যথা পর্দাপুশিদা মেনে চলতে পারেন সেই বিষয়ে স্বামীকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
বিয়ের মধ্য দিয়ে বাপের বাড়ির সাথে স্ত্রীর সম্পর্ক চুকেবুকে যাবে এমন কোন কথা নেই। অর্থাৎ বিয়ের আগের স্ত্রীর সামাজিক সত্তাটিকে স্বীকার করা দরকার। স্ত্রী প্রয়োজনে বাবা-মা বা আত্মীয় বাড়িতে যেতে পারবেন, এই বক্তব্যের দ্বারা সেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আবার স্বামীর পরিবারের সাথে যে স্ত্রীর বনিবনা নাও হতে পারে, এবং না হলে তাঁকে আলাদা বাসা বানিয়ে রাখতে হবে, সে কথাও স্পষ্ট করে বলেছে দলিল। কিংবা যদি স্বামীর বিদ্যমান গৃহ স্ত্রীর জন্য অনুপযুক্ত হয়, তাহলে স্বামী তাকে আলাদা বাসা বানিয়ে দেবেন।
এই যে নানাবিধ অর্থনৈতিক, নৈতিক ও সামাজিক অধিকারের তালিকা, এগুলো স্বামী যদি লংঘন করেন, তাহলে তাঁকে শুধু মোহরানা পুরাপুরি শোধ করতে হবে তাই নয়, আদায় করতে না পারলে ডিক্রি জারি করে তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি নিলামে বিক্রি করে হলেও দেনা শোধ করতে হবে। তবু যদি শোধ না হয়, তবে স্বামীর শরীর পর্যন্ত দায়ী থাকবে। শরীর দায়ী থাকা বলতে, সম্ভবত দাবি মেটাতে স্বামীকে গতর খেটে হলেও প্রাপ্য শোধ করতে হবে। এই কথার মধ্যে সম্ভবত সেকালের ইনডেঞ্চারড শ্রমের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
লক্ষ্য করার বিষয় এই যে বিয়ে এবং পারিবারিক সম্পর্ককে এখানে সামাজিক ও আইনি কাঠামোর অধীনে দেখা হয়েছে। বিয়েকে বা দাম্পত্যকে এখানে স্বামী স্ত্রীর পারস্পরিক আর্থ-সামাজিক দেনাপাওনা বা অধিকার চর্চা থেকে মোটেই পৃথক বা স্বাধীন করে দেখা হয় নি। “প্রণয়” কথাটি একবার এসেছে বটে, তবে তা প্রথাবৈধ ও প্রথাবিহিত স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের আবেগিক দিক হিসাবেই এসেছে।
কাবিনের দলিলটি মূলত স্ত্রীকে সম্ভাব্য নানা প্রকার বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করার কবচ হিসাবে কাজ করবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছিল। স্বামীর পক্ষে যত প্রকার অসদাচরণ বা অক্ষমতা সম্ভব, সেগুলো একে একে উল্লেখ করে তার প্রতিকার স্পষ্ট করা হয়েছে এখানে। অবশ্য এই যে এত সাতপাঁচ শর্ত উল্লেখ করা লাগল, তাতে স্বামীরা সেযুগে স্ত্রীদের অধিকার কিভাবে ক্ষুণ্ন করতে পারতেন, তারও একটা আলামত পাওয়া যায়। সেই অধিকার ক্ষুণ্নের মধ্যে ছিল স্ত্রীর অলঙ্কারে খাদ মেশানো থেকে শুরু করে মারপিট, কিংবা বিদেশে গিয়ে অনির্দিষ্টকাল গায়েব হয়ে থাকা।
সার্বিকভাবে এখানে স্ত্রী বা বিবাহিত নারীকে স্বতন্ত্র অর্থনৈতিক, নৈতিক ও সামাজিক সত্তা হিসাবে স্বীকার করা হয়েছে, যদিও সে যুগে তার সামাজিক অধস্তনতাও এখানে প্রকাশিত হয়েছে – কারণ স্বামী বা পিতাই তার অশরণের শরণ হিসাবে হাজির আছেন। আর আছেন আদালত বা রাষ্ট্র। স্বামী অর্থনৈতিক উপার্জনকারী এবং সামাজিকভাবে সক্রিয় সত্তা, আর স্ত্রী নির্ভরশীল। স্বামী প্রবাসে গমন করতে পারেন, যদিও স্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে ও শর্তাধীনে। স্ত্রীর প্রবাসগমন স্বভাবতই প্রথাবদ্ধ বাঙালি মুসলমান সমাজে কোন বাস্তব সম্ভাবনা হিসাবে উপস্থাপিত হয় নি।
দলিলের ভাষা সরল ও সহজ। তবে যতিচিহ্নের অনুপস্থিতি, বানানে প্রাচীনতা বা অপ্রচলিত বা ত্রুটিপূর্ণ প্রয়োগ, ইত্যাদি লক্ষণীয়। আরবি-ফার্সি শব্দ যতটুকু আছে তাকে বাহুল্য বলা যায় না, সেইসাথে নানা তৎসম শব্দও আছে – এবং এই উভয় প্রকার শব্দ বা প্রকাশভঙ্গি দলিলটিকে ভাবগম্ভীর ও আনুষ্ঠানিক মর্যাদা দান করতে প্রযুক্ত হয়েছে।
বাঙলার হিন্দু-মুসলিম ধর্ম ও সংস্কৃতির সমন্বয়
October 15, 2020
শশীভূষণ দাশগুপ্ত
বাঙলা দেশ পয়ার ছন্দের দেশ। বাঙলা সাহিত্যের প্রথম থেকে আরম্ভ করে আজ পর্যন্ত যত কাব্য-কবিতা রচিত হয়েছে, তার বারাে আনারও বেশি পয়ার ছন্দে ; ছন্দোগুরু রবীন্দ্রনাথেরও প্রধান ছন্দ পয়ারই বটে। শুধু সাহিত্যের ক্ষেত্রে নয়, ধর্ম এবং সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও দেখতে পাই সেই পয়ারেরই প্রভাব।
পয়ার ছন্দের প্রধান পরিচয় তার ভিতরকার সর্বাঙ্গীন তানধর্মে। সেখানে কোনাে মাত্রার কোনাে ধ্বনিই একক বা স্বতন্ত্রভাবে সার্থক নয় – সব জুড়ে জাগে একটি তান, আর সেই একতানের ভিতরেই ছােট-বড়াে সকল ধ্বনি তাদের নিজ-নিজ অস্তিত্বকে ডুবিয়ে দেয়। এই একতানতার পশ্চাতে রয়েছে একটি প্রকাণ্ড শােষণ শক্তি – সেই শোষণ শক্তিই ছােট বড় ব্যক্তিকে একেবারে স্বতন্ত্র বা উৎকেন্দ্রিক হয়ে পড়তে দেয় না – ছােট-বড় সকলকে জড়িয়ে একতানের সৃষ্টি করে। কিন্তু এ-কথা মনে করলে ভুল করা হবে যে, এই একতানতা শব্দের অর্থ, গুরুর গুরুত্ব অস্বীকার করা ; চরণের ভিতরে গুরু মাত্রা থাকলে সে মাত্রাটি নিজেই ভয়ানক ভাবে গুরু হয়ে উঠবার সুযােগ পায় না বটে, কিন্তু সে সমগ্র চরণের গুরুত্ব নানাভাবে বৃদ্ধি করে।
ঠিক তেমনি ভাবে বাঙলা দেশের ধর্ম এবং সংস্কৃতিকে ভাল করে বুঝে দেখলে দেখতে পাব, প্রাচীন যুগ থেকেই বাঙলা সমাজের একটা অসীম শােষণ-শক্তি আছে। এই জন্যই এখানে যত মত এবং পথ প্রচারিত হােক না কেন, তারা কেউই তাদের উদগ্র স্বাতন্ত্র্য নিয়ে বেশি দিন টিকতে পারে নি, – জন-সমাজের শােষণ-শক্তি তাদের টেনে ধরেছে ; ছোট বড় মাত্রাগুলির ভিতরে একটা স্বাভাবিক যােগ স্থাপন করে দিয়েছে। তাই যে যুগে যত মত এবং পথই জাঁকিয়ে ওঠুক না কেন, কিছুদিন পরেই দেখি, সমাজ তাকে আপনার মত করে রূপান্তরিত করে নিয়েছে এবং সেই রূপান্তরের ভিতর দিয়েই এসে পড়েছে চমৎকার একতান। তাতে করে ধর্ম বা সংস্কৃতির ক্ষেত্রে কোনাে মনীষারই অস্বীকার বা অমর্যাদা হয় নি – তাদের মূল্য এবং মর্যাদা সকলের সঙ্গে মিশে জাতীয় জীবনের মূল্য এবং মর্যাদাকেই বাড়িয়ে দিয়েছে।
এই জন্য বাঙলার কোনাে ধর্মেরই রঙ তেমন চটকদার নয়। পালরাজাদের সময়ে বাঙলার একটা বৃহত্তর অংশ জুড়ে যে বৌদ্ধধর্ম প্রচলিত ছিল, তাকে বৌদ্ধধর্ম নাম দেবার সার্থকতা খুঁজে পাওয়া সহজ নয়। আসলে সেটা বৌদ্ধধর্মও নয়, প্রচ্ছন্ন হিন্দুধর্মও নয় – সেটি বাঙলা সমাজের শােষণশক্তির ফলে রূপান্তরিত একটি মিশ্র-রঙ এবং মিশ্র প্রকৃতির নূতন ধর্ম। জনগণের টানা-হেঁচড়ায় পড়ে বুদ্ধদেব কখনও শিবঠাকুরের পিছনে গিয়ে লুকিয়েছেন– কখনও পশ্চিমবঙ্গের লৌকিক দেবতা ধর্মঠাকুরের সঙ্গে গলাগলি করে একেবারে একদেহ-একাত্মা হয়ে উঠতে চেয়েছেন ; আবার কখনও সেই ধর্মের ঠাকুরের সঙ্গে শিবঠাকুর একসঙ্গে মিশে গেছেন। বৈষ্ণবধর্মকে বৃন্দাবনের গোসাঁইগণ বিবিধ স্মৃতি ও তত্ত্ব গ্রন্থের ভিতর দিয়ে যতই ‘বিশেষ’ করে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করুন, গােসাঁইগণের গ্রন্থডোরকে ফাঁকি দিয়ে সেই ভক্তিধর্ম বাঙলার বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রূপান্তর গ্রহণ করেছে। বাঙলার শক্তিদেবীকে দিয়ে বাঙালী বাঁশী বাজিয়েছে, বাঙলার কৃষ্ণের জিভ বের করে তাঁর হাতে অসি দান করেছে। বাঙলার মুসলমান ধর্ম আজকের দিনে একটা কৃত্রিম উপায়ে বাঙলার সাধারণ ধর্ম (হিন্দুধর্ম ?/বাঙালী ধর্ম ?) হতে যতই স্বতন্ত্র বলে পরিচয় লাভের চেষ্টা করুক না কেন, বৃহত্তর বাঙালী সমাজ সেরূপ স্বাতন্ত্র্যের সুযােগ রাখে নি। ফলে পণ্ডিত মুন্সীগণ যত উগ্রভাবে হিন্দু এবং মুসলমান হন না, জনসাধারণ কেন এক ‘বাঙালী’।
কথাটির যথার্থ যথার্থ্য বােঝা যায় বাঙলার বাউলের দিকে তাকালে। এই বাউলধর্ম বাঙলার নিজস্ব ধর্ম। সে কথার অর্থ এ নয় যে, বাউলধর্মের ভিতরে যে সকল ভাব এবং কথা রয়েছে তা ভারতবর্ষের আর কোথাও কোন ধর্মে নেই ; বাউলদের যা কথা তা হিন্দুধর্মের বহুস্থানে আছে, মুসলমান ধর্মেও আছে। কিন্তু বাউল ধর্মের বৈশিষ্ট্য এই, এখানে হিন্দুধর্মের অনেক মর্মকথা এবং মুসলমান ধর্মের অনেক মর্মকথা অতি সহজভাবে থিতিয়ে পড়েছে। এই থিতানাের ভিতর দিয়ে তারা যে রূপান্তর লাভ করেছে, সেখানে ধর্মের ক্ষেত্রে বাঙালী-জীবনের একতান নিখুঁত হয়ে উঠেছে। এখানে অদ্বয়ের ভিতরে একটা দ্বৈত-বােধ এবং তাকে অবলম্বন করে যে সংস্কারবিহীন সহজ প্রেম-ধর্মের সুর ভেসে উঠেছে, সেখনে শাস্ত্রবাণী তাদের গুরুত্ব কিছুই হারায় নি – কিন্তু পৃথক মাত্রার উগ্রতা হারিয়ে ফেলেছে।
এই সহজ মিলনের একটি সুন্দর পরিচয় রয়েছে একখানি অখ্যাত কাব্যগ্রন্থে। গ্রন্থখানি আলিরাজা ওরফে কানু ফকিরের রচিত ‘জ্ঞান-সাগর’। কানু ফকির চট্টগ্রামের একজন গ্রাম্য কবি এবং প্রসিদ্ধ সাধক। শাহ কেয়ামদ্দিন-নামক একজন তত্ত্বজ্ঞানী সাধক কানু ফকিরের দীক্ষাগুরু ছিলেন। কানু ফকির প্রায় দেড়শত বৎসর পূর্বে এই গ্রন্থখানি রচনা করেছিলেন। তিনি যে শুধু কবি নন, যথার্থ সাধকও ছিলেন, তার প্রমাণ গ্রন্থ-মধ্যেই যথেষ্ট পাওয়া যায়। কারণ নিজে সাধক না হলে শুধু কবিত্ব-শক্তির দ্বারা এ-জাতীয় গ্রন্থ রচনা সম্ভব নয়। ‘জ্ঞান-সাগর’ ব্যতীত কানু ফকির এই জাতীয় আরও দু’একখানি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন–’সিরাজকুলুপ, ‘ধ্যানমালা’ এবং কারও-কারও মতে ‘যোগ-কলন্দর’ গ্রন্থখানিও কানু ফকির-কর্তৃকই রচিত।
এই ‘জ্ঞান-সাগর’ গ্রন্থের ভিতরে আমরা কি দেখতে পাই? এখানে দেখি, বাঙলার জনমন কি করে হিন্দুধর্ম এবং মুসলমান ধর্ম উভয় ধর্মের সাধন-প্রণালীকে শােষণ করে আত্মসাৎ করেছে। নবী বা রসুল (পয়গম্বর) আলির নিকট ধর্মের সকল সারতত্ত্ব উপদেশ করছেন– এই ভাবে গ্রন্থখানি লেখা হয়েছে।
নবী বলে সুন আলি অপরূপ বাণী।
প্রভুর আগমতত্ত্ব সুরম কাহিনী ॥
এখানে প্রথমেই ‘প্রভু’ কথাটি লক্ষণীয়। জগদীশ্বর আল্লা অর্থেই গ্রন্থ-মধ্যে সর্বত্র প্রভু শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। শব্দটি গ্রহণ করতে মুসলমান ফকিরের যেমন কোনাে আপত্তি নেই, তেমনই এর সঙ্গে হিন্দুদেরও বেশ একটা মনের যােগ রয়েছে। এই প্রভুর বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে,
এক কর্ত্তা এক হর্ত্তা এক জীব সার।
নানারূপ জলবিন্দু জগতে প্রচার ॥
এক কায়া এক ছায়া নাহিক দোসর ।
এক তন এক মন আনে একেশ্বর ॥
ত্রিজগৎ এক কায়া এক করতার।
একপ্রভু সেবে জনে সব জীবধর ॥
এটি হিন্দুধর্মের কথা না মুসলমান ধর্মের কথা? বাঙালি সমাজ-মনের ভিতরে এসে এখানে হিন্দুধর্ম ও মুসলমানধর্ম অতি সহজে এক হয়ে মিলে গেছে। পরে আবার বলা হয়েছে ––
সর্ৰ জগ এক সিন্ধু নানা রূপে জলবিন্দু
সর্ৰ স্থানে আছে ব্যক্তময় ।
জথাতথা রহে বারি চলে সর্ৰ স্থান ছাড়ি
সর্ৰ গিয়া সাগরে মজ্জএ ॥
তিন লােকে এক মাটী বর্ণ ধরে কোটী কোটী
পুর্ণী মাটী আখেরে সকল ।
জথা তথা বারি রহে দৃষ্টিগতে ব্যক্ত হএ
মাটি হতে সকল নির্ম্মিল ॥
এর ভিতরেও হিন্দু ধর্ম বা মুসলমান ধর্মের কোন মুদ্রাঙ্কণ নেই –– অথচ কোনাে ধর্মেরই এ কথাকে নিজের কথা বলে গ্রহণ করতে কোথায়ও আটকায় না। হিন্দুধর্মের তরফ থেকে যদি একে সাংখ্য বা বেদান্ত, অথবা সৎকার্যবাদ বা অসৎকার্যবাদ-প্রভৃতি কোনও একটি বিশেষ দার্শনিক মতবাদের সঙ্গে স্পষ্ট মিলিয়ে নিতে চাই –– তাও পারব না। কিন্তু পণ্ডিত-মুন্সী ছেড়ে বাঙলার যে কোনও সাধারণ হিন্দু বা মুসলমানের নিকট এ সকল কথার অর্থ জিজ্ঞাসা করলে তারা সহজে এবং নিঃসংশয়ে এর অর্থ বলে দেবে। এই ধর্ম-সমন্বয় কোনাে প্রচার-প্রচেষ্টা-জাত সমন্বয় নয়, এটি সমাজ-জীবনের সমন্বয়ের উপরে প্রতিষ্ঠিত ধর্ম-সমন্বয় –– এটি একই সমাজজীবনের মর্মবাণী। তাই একেই আমরা বলব বাঙালির ধর্ম বাণী।
তারপরে –
তিনলোক একসর এক প্রভু গৃহেশ্বর
আর জন সকল সেবক।
সেবকের এক কাম হইবারে অবিশ্রাম
প্রভু ভাবে সেবার ভাবক ॥
এ যেমন একদিকে প্রত্যেক ভক্ত মুসলমান সাধকের মনের কথা, তেমনই প্রত্যেক হিন্দু সাধকেরও মনের কথা। কানু ফকির প্রশ্ন তুলেছেন, সত্যকারের ফকির বা দরবেশ কে ? জবাবে তিনি বলেছেন ––
রত্ন মাটি সমান পারিলে করিবার।
কইছে প্রভু সে ফকির হয় সার ॥
সুগন্ধ দুর্গন্ধ যদি জানে এক সম।
সমান জানিলে লােক উত্তম অধম ॥
নরনারী পশুপক্ষী পতঙ্গ কীটসি ।
সকল সমাজ জানে তবে সে দর্ৰেশী ।
এই সত্য যেমন প্রচার করেছে মুসলমানের শাস্ত্র –– এই সত্যই প্রচার করেছেন উপনিষদের ঋষিগণ –– একস্থানে নয় –– বহু স্থানে, একবার নয় –– একাধিক বার। হিন্দুর প্রিয়তম ধর্মশাস্ত্র গীতা-গ্রন্থের ভিতরেও ত সর্বত্রই রয়েছে –– এই সত্য।
আবার দু-একস্থানে পাই, সকলই শূন্য থেকে –– “শূন্য’ই সারতত্ত্ব।
সংসারে ফকির শূন্য জপে শূন্য নাম।
শূন্য হন্তে ফকিরের সিদ্ধি সর্ৰ কাম ॥
ধাম শূন্য কাম শূন্য শূন্যে যার স্থিতি।
সে শূন্যের সঙ্গে করে ফকির পিরীতি ॥
শূন্যেতে পরমহংস শূন্যে ব্রহ্ম্ঞান ।
যথাতে পরমহংস তথা যোগ-ধ্যান ॥
অথবা,––
শূন্য সূক্ষ্ম তণু হএ রূপ শূন্যকার।
রূপের সাগরে সিদ্ধি জন্ম বণিজার ॥
শূন্য সিন্ধু হন্তে ব্যক্ত রূপের সাগর ।
সিদ্ধিরূপ সাগরে সমস্ত সদাগর ॥
এই ‘শূন্য’ কি? স্বভাবতই বৌদ্ধ ‘শূন্যে’র কথা মনে পড়ে যাবে। কিন্তু ভারতবর্ষে এই শূন্যবাদের প্রচারের পর থেকেই ভারতীয় জনগণ চারিদিক হতে এই শূন্যকে শােষণ করতে চেষ্টা করেছে। দেশজ সাহিত্যের সমৃদ্ধির ভিতর দিয়ে যখন জনগণের কণ্ঠ খানিকটা মুক্ত হল তখন দেখতে পাই, জন-সমাজে গৃহীত হয়ে ‘শূন্য’ তার শূন্যত্ব হারিয়ে ফেলেছে, –– কবীর-দাদূ প্রভৃতি সন্ত কবি, এমন কি মীরাবাঈ-এর মতাে ভক্ত কবিও শূন্য- সমাধির কথা বলেছেন ; উড়িষ্যার পঞ্চশাখার বৈষ্ণব কবিরা বরাবর শ্রীকৃষ্ণেকে ‘শূন্য-পুরুষ’ আখ্যা দিয়েছেন ; আমাদের পশ্চিমবঙ্গের বিষ্ণু বা রামরূপী ধর্মঠাকুরের সর্বদাই ‘শূন্যমূর্তি’। তাই এদেশের মুসলমান ফকিরের কাছে পরমসত্যও ‘শূন্য’ই বটে। বহু যুগের শােষণের ফলে এ ‘শূন্য’ যে তার ‘বৌদ্ধ-মাত্রা’ পনেরো আনাই হারিয়ে ফেলেছে তা বােধহয় আর প্রমাণ করতে হবে না।
গ্রন্থখানির ভিতরে স্থানে-স্থানে দেখতে পাই, পাণ্ডিত্য-শাস্ত্রজ্ঞান-প্রভৃতির অকিঞ্চিৎকরতা প্রদর্শন করে প্রেম-যােগের পথকেই বড় করে দেখানাে হয়েছে। ভারতের ধর্মসাধনার ইতিহাসে এই সুরটি ও জনগণের বহুদিনের একটি বিদ্রোহী সুর। যােগ-সাধনার দিক হতে এবং প্রেমসাধনার দিক হতে বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন সহজিয়া বা মরমিয়া সম্প্রদায় জনসাধারণের পক্ষ হতে শাস্ত্রবাদী পণ্ডিত সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে এই কথা বলে এসেছে। এখানেও পাই সেই সুরের সঙ্গেই সঙ্গতি।
শাস্ত্র সব ত্যাগ করি ভাবে ডুম্ব দিয়া।
প্রভু প্রেমে প্রেম করি রহিবে জুড়িয়া ॥
আবার,––
ত্রিলােক প্রভুর তনু লীলা কোন মতে।
পণ্ডিতের শক্তি নাহি সে তত্ত্ব বুঝিতে ॥
এ-সম্বন্ধে সব চেয়ে সুন্দর আলােচনা রয়েছে যেখানে কবি ‘অক্ষরের’ পাঠ এবং ‘প্রেমের পাঠ’-এর তুলনামূলক বিচার করেছেন।
অক্ষরে জগতের শাস্ত্র করিছে লিখন।
প্রেম পাঠ সম এক নহে কদাচন ॥
সার নহে অক্ষর জথেক শাস্ত্রকুল।
পড়িয়া পণ্ডিত সিদ্ধা প্রেম পাঠমূল ।
শাস্ত্র পাঠ অক্ষরে না পরে সিদ্ধি সাধ।
হৃদিমূলে পাঠ পড়ি পণ্ডিত বিখ্যাত ॥
অক্ষরে পাঠ পড়ে চর্ম্ম চক্ষে দেখি।
প্রেমপাঠ প্রকাশিত হৃদান্তরে আঁখি ॥
… … …
সংসার অক্ষর শাস্ত্র অসার সকল।
পরম আগম প্রেমপাট সিদ্ধিফল ॥
শুকা কাষ্ঠ তুল্য জথ অক্ষর লেখা।
পরম পিরীতি পাঠ রস-সিন্ধুময় ॥
চারি বেদ চৌদ্দ শাস্ত্র জথ পাট অক্ষর।
ব্যক্ত সব পাঠ শুকা কাষ্ঠ সমস্বর ॥
পরম প্রেমের পাঠ গম গােপত।
গুপ্ত প্রেম পাঠ পড়ি সিদ্ধি মুক্তিপদ ॥
এই যে প্রেমের পাঠ এটিই সূফীধর্মের মূলকথা। কিন্তু এই সূফীধর্মের সঙ্গে এখানে মিশে গেছে ভারতের সকল সহজিয়া বা মরমিয়া সাধকগণের মর্মবাণী।
বৌদ্ধ সহজিয়া সরহপাদ বলেছেন,––
পােথি পঢ়ি পঢ়ি জগ মুবা পংডিত ভয়ান কোই।
একৈ অস্মির পীব কাপঢ়ৈ সুপংডিত হােই ॥
‘পুঁথি পড়িয়া পড়িয়া জগৎ মরিয়াছে, পণ্ডিত হইল না কেহ ; যে পড়ে প্রিয়ের একটি অক্ষর সেই হয় সুপণ্ডিত।’
দাদূ বলেছেন, ––
পঢ়েন্ পাবৈ পরমগতি পঢ়ে ন লংঘৈ পার।
পঢ়ে ন পঁইচে প্রানিয়া দাদূ পীর পুকুর ॥
… … …
পঢ়ি পঢ়ি থাকে পংডিতা কিন্হূঁ ন পায়া পার।
মসি কাগদ কে আসিরে ক্যােঁ ছুটৈ সংসার ॥
কাগজ কালে করি মুয়ে কেতে বেদ কুরাণ ।
একই অঙ্মির প্রেম কা দাদূ পঢ়ৈ সুজান ॥
‘পড়িয়া পাওয়া যায় না পরম গতি, পড়িয়া লঙ্ঘন করা যায় না পার ; পড়িয়া পৌছায় না প্রাণীরা ; হে দাদূ, অন্তরের বেদনায় ডাক তাঁকে।… পড়িয়া পড়িয়া হয়রান হইল পণ্ডিত, কেহই তাে পাইল না পার, কালী কাগজের ভরসায় কেন ছুটিয়া চলিছে সংসার ? কাগজ কালা করিয়া করিয়া মরিল কত বেদ-কোরাণ ; একটি অক্ষর প্রেমের যে পড়িল, হে দাদূ, সেইত পণ্ডিত সুজন।’
একটু লক্ষ্য করলেই দেখতে পাব, ভারতীয় বিভিন্ন যুগের জনগণের কবিদের সহিত আমাদের সুদুর চট্টগ্রামে একজন বাঙালি কবিও কেমন সুন্দর করে তাঁর সুর মিলিয়ে দিয়েছেন।
সমস্ত বাঙালি মুসলমান ভক্ত কবি –– শুধু বাঙালি নয়, ভারতীয় সমস্ত মুসলমান ভক্ত কবিই সূফী মতাবলম্বী। তার কারণ, মতের দিক থেকে এবং পথের দিক থেকে সূফী ধর্মের সঙ্গে ভারতীয় মনের
একটি নিগূঢ় যােগ রয়েছে। এই ভারতীয় মনের প্রভাব অনেকখানি পড়েছিল ভারতীয় সূফী ধর্মের ক্রমবিকাশে। আমাদের কবি কানু ফকিরও মূলত সূফী। প্রেম সৃষ্টির আদিম এবং আসল সত্য। প্রেমে যেমন বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হয়েছে, সেইরূপ প্রেমেই বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড বিধৃত হয়ে রয়েছে। যে পরস্পর আকর্ষণ-বিকর্ষণের ফলে বিশ্ব-নিখিল একটা দুর্লঙ্ঘ্য নিয়মে আবর্তিত হচ্ছে, সেই আকর্ষণ-বিকর্ষণ বা সেই বন্ধনই তাে আদি প্রেম।
প্রথমে বহ্নির সঙ্গে বাবির (বায়ুর) পিরীতি।
হইল মাটির প্রেম জলের সঙ্গতি ॥
এ সব প্রেমে যদি মন না ডুবিত।
স্বর্গ মর্ত্ত্য পাতাল আদি কিছু না জন্মিত ॥
গগনের সঙ্গে হইল স্বর্গের পিরীতি।
স্বর্গ সঙ্গে মর্ত্যের পিরীতি আছে অতি ॥
ত্রিভুবনে প্রভু প্রেম আছএ জড়িত।
নরক পাতাল সঙ্গে আছএ পিরীত ॥
মর্ত্ত্যণ্ড চন্দ্রিমা গুরু বৃক্ষ জথ ধরি।
প্রেম হেতু গগন সঙ্গে রহিলেক জড়ি ॥
সাগরের সঙ্গে বারি জল সঙ্গে মীন।
ইন্দু সঙ্গে যামিনী রবি সঙ্গে দিন ॥
প্রেমেতে জগত বন্দী মীন বন্দী মুলে ।
কমলে ভ্রমর বন্দী মীন বন্দী জলে ॥
পুরুষের মন বন্দী নারী প্রেমরসে ।
নারী বিন্দু পুরুষের অসিদ্ধি মানসে ॥
এই প্রেম থেকেই যুগল ভাবনা এবং সেই যুগল ভাবনা থেকেই তাে সকল সৃষ্টি। আপনাতে যেদিন আপনি একা হয়েছিলেন প্রভু সেদিনও নিজেকেই নিজে দেখতে পান নি ; নিজের প্রেমরস আস্বাদনের জন্য তিনি করলেন যুগলের সৃষ্টি।
যুগলভাবনা যদি প্রথমে না হৈত।
করতা এ ত্রিজগতে কিছু না সৃজিত ॥
যুগ ভাবে ভক্তাপ্রভু আপে হইলেস্ত ।
প্রেম হেতু করতা এ জগ সৃজিলেন্ত ॥
প্রেম রসে মগ্ন হইল আপ্নে গোসাই ।
যুগ ভিনে কোন কর্ম্ম সিদ্ধি পন্থ নাই ॥
প্রেম রসে মগ্ন হইল আপনে গোসাই।
যুগ ভিনে কোন কর্ম্ম সিন্ধি পন্থ নাই ॥
… … … …
প্রথমে আছিল প্রভু এক নিরঞ্জন।
প্রেম রসে ডুঅি কৈল যুগল সৃজন ॥
কিন্তু এই প্রেমধর্ম বেশিক্ষন সূফী মতেই নিবদ্ধ রইল না। বাঙলার প্রেমধর্মের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে সহজিয়া সাধন। আদির’ যুগল প্রেম যে মর্ত্যে ধরা দিয়েছে নরনারীর যুগল প্রেমের ভিতর দিয়ে, সেই যুগল প্রেমের নিঃসীম অনুভূতির ভিতর দিয়েই তো খুঁজতে হবে আদির সর্ব ব্যাপী এক প্রেমকে। তাই বৈষ্ণব সহজিয়াদের সুরে সুর মিলিয়ে ফকির বলেছেন,––
রূপ বিনু প্রেম নাহি ভাব বিনু ভক্তি ।
ভাব বিনু লক্ষ্য নাই সিদ্ধি বিনা মুক্তি ॥
নবী কুলে প্রথম আদম ভক্ত হইল।
হাবা দেবী সঙ্গে রসকূপে ডুবি ছিল ॥
দেবকুলে অতি ভক্ত হইল মহেশ্বর ।
গৌরী দেবী সম্মুখে থাকিত দিগম্বর ॥
… … …
আছিল আয়েসা বিবি পরম সুন্দর ।
সেইরূপে মোহাম্মদ ভক্ত পয়গাম্বর ॥
নর পরী পশু পক্ষী কীট তরুবর ।
প্রেমরস বিনু কার নাই মুক্তিবর ॥
‘জ্ঞান-সাগর’ গ্রন্থখানির ভিতরে এই রুপে কবির লক্ষ্যে-অলক্ষ্যে বাঙলা দেশের সকল প্রকারের ধর্মমতেই মিশে আছে। এখানে সাংখ্য, তন্ত্র, নাথপন্থ, সূফীমত সব মিশে একাকার হয়ে উঠেছে। নারী-পুরুষের আলোচনার প্রসঙ্গে কবি বলছেন,––
স্থূল্য সাকার কামিনী ত্রিভুবন ।
নৈরাকার পুরুষ সে প্রভু নিরঞ্জন ॥
এখানে মুসলমান সূফী মতে স্থূল সৃষ্টি হল কামিনী, নিরাকার নিরঞ্জন-পুরুষ হলেন পুরুষ । সাংখ্য মতের প্রকৃতি-পুরুষের কথা এখানে স্বতঃই মনে আসে। এটির পরের পদে দেখি,––
বিশ্বরুপী আপনি পুরুষ নৈরাকার।
সাকার কামিনী জথ সমস্ত সংসার ॥
এখানে তন্ত্রের শিব-শক্তি এসে পড়েছে। আমার মনে হয় : ‘বিম্বরূপী’ এখানে ‘বিন্দুরূপী’র রূপান্তরিত অবস্থা । শিবই বৈন্দব তনু, স্থুল সংসার নাদ-রূপিণী শক্তি, –– নাদ-বিন্দুর তত্ত্বটিই এখানে আভাসিত হয়েছে। এর পরের পদ,––
চক্র হয় কামিনী পুরুষ দিবাকর ।
রামাকুল মৃত্যুপদ পুরুষ অমর ॥
ভ্রম হয় রামাকুল পুরুষ চেতন ।
নিদ্রাএ পীড়িত রামা পুরুষ জাগন ॥
এখানেও সাধারণ ভাবে সেই তন্ত্র মতেরই অনুবর্তন দেখছি। বাম-দক্ষিণবহা নাড়ীদ্বয়ই তন্ত্রে চন্দ্র-সূর্য এবং নারী-পুরুষরূপে কীর্তিত। শক্তিই মায়া –– পুরুষ বা শিবই চৈতন্য বা, জ্ঞান-মাত্র-তনু। কিন্তু অন্যত্র এই চন্দ্র-সূর্য সম্বন্ধে দেখতে পাই,––
অমরা সে মরা হএ মরা সে অমর ।
চন্দ্র হএ ভাবক ভাবিনী প্রভাকর ॥
এখানে চন্দ্র সােমাত্বক ভাবক এবং সূর্য অগ্ন্যাত্মক বা সংহারাত্মক ভাবিনী। চন্দ্র-সূর্যের এই তত্ত্ব আমাদের নাথপন্থের কথাই মনে করিয়ে দেয়।
এই নারী-পুরুষ সম্বন্ধে অন্যত্র দেখি,––
তন হএ কামাকুল জগৎ সংসার ।
মন হএ পুরুষ সেবক করতার ॥
তনের অন্তরে মন মনাস্তরে জ্যোতি।
জ্যোতির অন্তরে ধ্বনি উঠে প্রতিনিতি।
অনাহেতু শব্দ কহে সে ধ্বনির নাম।
সে ধ্বনির তত্ত্ব হন্তে সিদ্ধি মনস্কাম ॥
এখানকার এই অনাহত ধ্বনি থেকে জ্যোতি, জ্যোতি থেকে মন এবং মন থেকে তনুর উৎপত্তির ভিতরে বহু মুসলমান বিশ্বাসের সঙ্গে হিন্দুর শব্দ-ব্রহ্মের তত্ত্বটি এমনভাবে জড়িত হয়ে গেছে যে কাউকেই আর স্পষ্টরূপে চেনা যায় না। অথচ এখানকার তত্ত্বটি একটি নিজস্ব রূপ লাভ করেছে।
এই অনাহতে প্রতিষ্ঠিত হবার জন্য যে উল্টা-যােগের কথা বলা হয়েছে, সেই উল্টা-সাধন ভারতীয় সাধনারই একটি বৈশিষ্ট্য। এ-বিষয়ে আমি স্থানান্তরে বিশদভাবে আলােচনা করেছি। এই যােগসাধনাকে অবলম্বন করেই এসেছে গুরুবাদ তার সঙ্গে যুক্ত সূফী মুরশেদের তত্ত্ব।
এই ভাবেই বাঙালির সাধনায় ও সংস্কৃতিতে এসেছিল সহজ-সমন্বয়ের একতান। জাতীয় জীবনের সেই সত্যকে অস্বীকার করতে যাওয়ার অর্থ জাতীয় জীবনের স্বাভাবিক পরিণতিতেই বাধা দান। তাতে হয়ত সাময়িক অল্প-কিছু লাভ হতে পারে একটি বিশেষ শ্রেণীর––কিন্তু তাতে অনেকখানি লােকসান হবে সমগ্র জাতির।
শশীভূষণ দাশগুপ্ত (১৯১১-১৯৬৪) বাংলা দর্শন ও সাহিত্যের খ্যাতিমান গবেষক ।
মুজফফর আহমদ
নবযুগে কাজ করার সময়ের আর একটি গল্প বলি। ১৯২০ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত খেতাবধারীরা ( যেমন রায় সাহেব, খান সাহেব, রায় বাহাদুর, খান বাহদুর ইত্যাদি) এবং আইন সভার সভ্যরা লাইসেন্স ছাড়াও অস্ত্র কিনতে ও রাখতে পারতেন। আমার ঠিক মনে নেই, সম্ভবত অনারারি ম্যাজিস্ট্রেটরাও ওই ভাবে অস্ত্র রাখার অধিকারী ছিলেন। এ.কে. ফজলুল হক সাহেব আইন সভায় সভ্য ছিলেন। সেই অধিকারে তিনিও একটি রিভলবার কিনেছিলেন, কিন্তু সেটি রাখার যে ব্যবস্থা তিনি করেছিলেন তা অত্যন্ত চমৎকার । বাড়ীর নীচেরতলায় একটি স্টিল ট্রাঙ্কে তিনি তাঁর অস্ত্রটি রেখেছেলেন।এই ট্রাঙ্কের তালা কখনও বন্ধ করা হতোনা।
১৯১৯ সালের ভারতীয় শাসন সংস্কার আইন চালু হওয়ার পরে গবর্ণমেন্ট একটি হুকুম এই বলে জারী করলেন যে যাঁদের নিকট লাইসেন্স ছাড়া অস্ত্র আছে তাঁদের লাইসেন্স করিযে নিতে হবে। এই সময় ফজলুল হক সাহেবের মনে পড়ল তাঁরও একটি রিভলবার আছে, লাইসেন্স করিয়ে নেওয়া দরকার। তালা বন্ধ -না-করা ট্রাঙ্কটির ডালা তুলে তিনি অস্ত্রটি পেলেন না। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি পুলিসে খবর দিলেন। তার পরে শুরু হলো সাদা পোশাকওয়ালাদের আনাগোনা।
নজরুলকে আর আমাকে দু’চার কথা তাঁরা জিজ্ঞাসা করলেন। কিন্তু সেটা তেমন কিছু নয়। তবুও ওই বাড়ীতে তাঁদের আসা যাওয়া কিছুতেই বন্ধ হলো না। খোলাখুলিভাবে না বললেও তাঁদের মনে সন্দেহ হয়েছিল যে নজরুল ইসলাম আর আমি অস্ত্রটি সরিয়েছি নজরুলের ওপরেই তাঁদের সন্দেহ হয়েছিল বেশী। কারণ পুলিসের ধারণা জন্মেছিল যে আর্মি ফেরৎ ওই রকম একটি জওয়ান ছেলে অস্ত্রটি চুরি না করেই পারেনা। ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট মুহম্মদ ইউসূফ ফজলুল হক সাহবের সঙ্গে দেখা করার অছিলায় বসেই থাকতেন। এই ভাবে অনেক দিন ঘোরাঘুরি করার পরে সাদা পোশাকওয়ালারা আসা বন্ধ করে দিল। বলা বাহুল্য ফজলুল হক সাহেবের বাড়ির নিচের তলায় নবযুগের অফিস ছিল প্রেস ছিল অন্য বাড়ীতে।
ফজলুল হক সাহেবের একটি ছোকরা চাকর ছিল। সে বয়:সন্ধিক্ষণে পৌঁছেছিল। সেই সময়ে যৌবনাগমনের কিছু অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের বাসনায় তার মনে জাগা অস্বাভাবিক ছিল না। তার জন্যে টাকা চাই। ফজলুল হক সাহেবের দুই ভাগিনেয় ওয়াজির আলী সাহেব ও ইউসফ আলী সাহবে সহ আমাদের মনে সন্দেহ হয়েছিল যে ছোকরা চাকরটিই রিভলবার সরিয়েছিল। টার্ণার স্ট্রীটে অনেক এংলো ইন্ডিয়ানের বাস ছিল। তাঁদের ভিতর কিছু লোক চোরাই অস্ত্রের ব্যবসায় করত। কাজেই, সেই ছোকরা চাকরের পক্ষে অস্ত্র বিক্রয় কোনো অসুবিধা ঘটেনি। এক বা একাধিক এংলো ইন্ডিয়ানদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে সে এই কাজ করতে পারে। কিন্তু পুলিশ ওই দিকটাতেই ঘেষল না। সাধারণ ক্রিমিনালদের পেছনে ছোটাছুটি করলে পলিটিক্যাল পুলিসের ইজ্জৎ থাকবে কেন? সেই কাজের জন্য তো আলাদা পুলিশ আছে। তা ছাড়া, সন্দেহ তো বিশেষভাবে নজরুলের ওপরে হয়েছিল।
মুজফফর আহমদ (১৮৮৯-১৯৭৩) ছিলেন অবিভক্ত ভারতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের পথিকৃৎ
লোকসংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ মুহম্মদ মনসুরউদ্দীনের এই সাক্ষাৎকারটি ১৯৮৩ সালে নেওয়া হয়। মনসুরউদ্দীনের শান্তিনগরস্থ বাড়িতে সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলেন আব্দুল মান্নাস সৈয়দ ও আবদুল মোহিত। সাক্ষাৎকারটি আবদুল মান্নাস সৈয়দ ও আবিদ আজাদ সম্পাদিত মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন স্মৃতি-এলবাম নামক গ্রন্থে ১৯৮৮ সালে ছাপা হয়।
প্র. লোকগীতি সংগ্রহের উৎসাহ প্রথম আপনার কিভাবে জাগে?
উ. ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের সংগৃহীত লালন ফকিরের কয়েকটি গান প্রকাশিত হয়েছিলো। সেই গানগুলি পড়ে অভিভূত হয়েছিলাম। তারপর রবীন্দ্রনাথের মতো মহান ব্যক্তিত্ব এই ধরনের সংগ্রহ-কাজ করেছেন ব’লে উৎসাহী হ’য়ে উঠলাম। আমাদের গ্রামের এক বৈরাগীর গান শুনতাম। আমার লোকসংগীতের প্রথম উৎসাহদাতা রবীন্দ্রনাথ আর নামহীন ঐ বৈরাগী। এ সময় আমি দেশের বাড়িতেই ছিলাম।
প্র. আপনার সময়ের কথা কিছু বলুন।
উ. আমরা ছিলাম খুব গরিব। শিলাইদহে বিরাহিমপুর পরগনার মাদার তলায় আমাদের এবং আমাদের গ্রামের অনেকের জমিজমা ছিলো। নদী সেসব জমি গ্রাস করে। ঠাকুর-পরিবারের জমিদারির অন্তর্গত ছিলো সে-সব। আমি যখন পাবনার এডওয়ার্ড কলেজে আই.এস.সি পড়তে যাই- ১৯২২-২৩ সালের দিকে- শুনলাম রবীন্দ্রনাথ এসেছেন। এক ভদ্রলোক আমাকে রবীন্দ্রনাথের কাছে নিয়ে যান; সেই আমি প্রথম দেখি রবীন্দ্রনাথকে। সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুরও সেখানে ছিলেন। তারপর ১৯২৬ সালে বি.এ. পাশ ক’রে কলকাতায় যাই। ঐ বছর পাবনায় ভীষণ দাঙ্গা হয়েছিলো। উঠি সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুরের 53 old Ballyganj 1st কি Second Lane- এর প্যাগোডা ধরনের বাড়িতে (শেষবার কলকাতায় গিয়ে বাড়িটা কিছুতেই খুঁজে বের করতে পারিনি)। তখন আমার না আছে সুটকেস্, না লেপ-তোষক-একেবারে শূন্য, নিঃস্ব। তাঁরাই সেসব ব্যবস্থা করে দিলেন। শহীদ ও শাহেদ সোহরাওয়ার্দির চাচা আব্দুল্লাহ আল মামুন সোহরাওয়ার্দির পরামর্শে কলকাতা বিশ্ব-বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভরতি হই। দীনেশচন্দ্র সেন ছিলেন সেখানকার অধ্যাপক। তিনি বাংলা সাহিত্য পড়াতেন ইংরেজিতে। একদিন এক কাণ্ড হয়েছিলো। ‘গৌরীদান’ বিষয়টির ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন তিনি। তিনি ব’লে ফেললেন, মুসলমান নবাব-বাদশারা হিন্দু মেয়ে পেলেই নিয়ে যেতেন। আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, স্যার, এ রেফারেন্সটা কোথায় পেয়েছেন? শুনে তিনি তো ভীষণ রেগে উঠলেন-ক্লাসই নিলেন না সেদিন। আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলো। সে বললো, তুমি খুব অসুবিধায় পড়বে। আমি ছিলাম পাবনার গাঁইয়া। বললাম, দরকার হ’লে দেশে ফিরে গিয়ে বাপ-দাদার মতো চাষবাস করবো। শেষ-পর্যন্ত দীনেশ সেনের স্নেহই পেয়েছিলাম। দীনেশ সেন বাংলা ডিপার্টমেন্ট থেকে লোকসাহিত্য বিষয়ক একটি প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার আহ্বান করেন। নাম ছিলো ‘স্যার আশুতোষ প্রাইজ’।তাতে অংশ নিয়ে বিজয়ী হলাম আমি আর ধীরেন মুখার্জি।
পঁচাত্তর টাকা করে এক-একজন পাই। সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন টেররিস্ট আন্দোলনের গোপন এক হোতা, আমরা তখন জানতামই না, পরে টের পাই। প্রমথ চৌধুরী থাকতেন পাম অলিভ-এ আমাদের বাড়ির কাছেই। সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর জোড়া-সাঁকো ঠাকুরবাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন আমাকে। রবীন্দ্রনাথের কাছে।
কারমাইকেল হোস্টেলে থাকতাম কিছু দিন। সে সময় আমরা ‘তরুন জামাত’ নামে একটি সংগঠন করেছিলাম। আমি ছিলাম প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি ছিলেন মীর্জা আলাউদ্দিন বে। সে সময় আমরা এক চমৎকার অনুষ্ঠান করেছিলাম, তাতে এসেছিলেন প্রমথ চৌধুরী, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, উপেন গাঙ্গুলি, এস.ওয়াজেদ আলী, মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, দীনেশচন্দ্র সেন, হুমায়ুন কবির প্রমুখ। ‘কারমাইকেল হোস্টেল ডিবেটিং সোসাইটি’রও প্রেসিডেন্ট ছিলাম আমি। মিস্ ফজিলাতুননেসার বিলেত যাত্রা উপলক্ষে সোসাইটির তরফ থেকে আমরা একটি সংবর্ধনার আয়োজন করেছিলাম। নজরুল ও কাজী মোতাহার হোসেন দুজনই ফজিলাতুননেসার প্রেমে পড়েছিলেন। সংবর্ধনার দিন আমি অবশ্য থাকতে পারিনি। যদ্দুর মনে পড়ে, হোস্টেলে ফিরে শুনেছিলাম নজরুল এসেছিলেন এবং গানও গেয়েছিলেন।
প্র. আপনার সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ “হারামণি”, “হারামণি”র লেখক হিশাবেই লোকে আপনাকে এক ডাকে চেনে, এই বই সম্পর্কে কিছু জানতে চাই।
উ. আমার সংগৃহীত লোকগীতি পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছিলো। এগুলো একত্রিত ক’রে ছাপতে দিই। করিম বক্স ব্রাদার্স বইটি ছাপে। আমার সাধ হয়, রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে এই বই-এর ভূমিকা লিখিয়ে নেবো। এই উদ্দেশ্যে সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিঠি নিয়ে শান্তিনিকেতনে যাই। শান্তিনিকেতন গেস্ট হাউজে উঠি। রবীন্দ্রনাথের সেক্রেটারি তখন কবি অমিয় চক্রবর্তী। গিয়ে দেখি তাঁর বিদেশিনী স্ত্রী বাংলা শিখছেন। তিনি আমাকে উপহার দিলেন অমিয় চক্রবর্তীর “খসড়া” বইটি।[এটি স্মৃতি-বিভ্রম। কেননা “খসড়া” বইটি বেরিয়েছে ১৯৩৮ খৃস্টাব্দে। বেগম চক্রবর্তী সম্ভবত তাঁকে দিয়েছিলেন অমিয় চক্রবর্তীর কবিতা-পুস্তক “কবিতাবলী” বা “উপহার” এর কোনো একটি। অমিয় চক্রবর্তী রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য সচিব ছিলেন ১৯২৬-৩৩ সময়কালে – আবদুল মান্নান সৈয়দ] যাই হোক, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা হয় এবং আরজি পেশ করি। রবীন্দ্রনাথ তখন পৌষ সংক্রান্তির দিনে কি-একটা নাটক হবে, তাই নিয়ে ব্যস্ত। বললেন, আমার বাউল নিয়ে আমি পারছিনে, তুমি আর-এক বাউল নিয়ে এলে হে? ঠিক আছে, এসেছো যখন, দুলাইন লিখে দেবো। আমি তাই নিয়েই খুশি। আমার সংগ্রহের তাড়াটি রবিন্দ্রনাথের কাছে দিয়ে আমি এ্যান্টি-রুমে গিয়ে বসলাম। এ্যান্টি-রুমে ব’সে আছি, বুক দুরুদুরু করছে, দোয়া-দরুদ পড়ছি-না জানি কি লিখে দেন। কিছুক্ষন পরে আমাকে ডেকে আমার নামটি লিখে দিতে বললেন একটি কাগজে। আবার এসে এ্যান্টি-রুমে ব’সে বুক দুরুদুরু- করা অপেক্ষা। -এক্ষুণি হয়তো ডাকবেন- ভাবতে ভাবতে বেশ কিছুক্ষণ পরে ডাকলেন। গিয়ে দেখি লম্বা লেখা- তিন স্লিপ। রবীন্দ্রনাথ বললেন, তুমি আমার দিনটাই নিয়ে গেলে। আমি তো মহাখুশি। অন্য সবাইকে দেখালাম। তাঁরাও বললেন, গুরুদেব প্রচুর প্রশস্তি লিখে দিয়েছেন আপনার। এই ভুমিকাটিই শিরোধার্য ক’রে “হারমণি” প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়। এটি ‘প্রবাসী’তে প্রকাশিত হয়েছিলো। সেবার শান্তিনিকেতনে ওঁদের অনুরোধে ওমর খৈয়াম বিষয়ে একটি বক্তৃতাও দিয়েছিলাম।
পরে “হারামণি”-র অন্য একটি খণ্ডের জন্য আবার রবীন্দ্রনাথের সম্মুখীন হয়েছিলাম। কিন্তু তিনি তখন এত ব্যস্ত যে ভূমিকা লিখে দিতে পারেননি। তবু একেবারে বঞ্চিত করেননি। একটি আশীর্বাণী লিখে দিয়েছিলেন। ২৩ শে জুলাই ১৯৩৭ শালে লেখা এই আশীর্বাণীটি এইঃ ‘তোমার গ্রাম গীতি সংগ্রহের অধ্যবসায় সফলতা লাভ করুক এই আমি কামনা করি।’
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে শেষ দেখা হয় আমার ১৯৪০-এর দিকে, সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুর সময়। রবীন্দ্রনাথ আমাকে চিনতে পারেন। বলেন, ‘তুমি লালন ফকিরের গান সংগ্রহ করেছো না?’ তাঁর শরীর তখন ভেঙ্গে গেছে একেবারে।
“হারামণি”-র জন্যে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর একটি বাউলের ছবি এঁকে দিয়েছিলেন। প্রথম তিনি এঁকেছিলেন একটি বাউল- মাথায় তার চূড়া। কী-যে বোকামি করেছিলাম। ছবিটা আমার পছন্দ হয়নি, মাথার ঐ চূড়া। তখন যদি সেটা রেখে দিয়েই আরেকটা ছবি এঁকে দিতে বলতাম। একটা ছোট ছেলে যাচ্ছিলো বারান্দা দিয়ে, অবন ঠাকুর তাকে ডেকে ঐ মাথায় চূড়াঅলা ছবিটি দেখিয়ে জিগেশ করেছিলেন, কেমন হয়েছে রে? ছেলেটি শুধু বলেছিলো, বেড়ে! পরদিন অবন ঠাকুর আর-একটা বাউলের ছবি এঁকে দিয়েছিলেন, সেটিই “হারমণি”তে ব্যবহৃত হয়। এই ছবিটিও প্রকাশিত হয়েছিলো ‘প্রবাসী’-তে- আমারই একটি লেখার সঙ্গে। অরিজিনাল ছবিটা প্রবাসী থেকে হারিয়ে যায় আমারই নির্বুদ্ধিতায়-সম্ভবত কেউ গাপ করেছিলো।
“হারমণি” প্রথম খণ্ড প্রকাশের পরে বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়েছিলে। ‘স্টেট্স্ম্যান’, ‘এ্যাডভান্স্’, ‘লিবার্টি’ প্রভৃতি পত্রিকায় দীর্ঘ রিভিয়্যু বেরিয়েছিলো।পঁয়তাল্লিশ বছরের পরিসরে (১৯৩১-৭৬) “হারমণি”-র আটটি খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে।
প্র. নজরুল ইসলাম, জয়নুল আবেদীন ও জসিমউদ্দীনের সঙ্গে আপনার পরিচয় ও সান্নিধ্যের সংবাদ জানতে চাই।
উ. সনেটকার রিয়াজউদ্দীন চৌধুরী ছিলেন বড়ো লোকের ছেলে। রীতিমতো সুদর্শন, কিন্তু উচ্ছন্নে গিয়েছিলেন। যাই হোক, কারমাইকেল হোস্টেল থেকে নজরুলের পানবাগানের বাড়িতে তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন আমাকে। সেখানে ছিলেন ওস্তাদ জমিরুদ্দীন। পরে নজরুলকে কয়েকবার দেখি ‘কল্লোল’ অফিসে। নজরুল রাঁচি থেকে লম্বা চিঠি লিখেছিলেন তাঁর “মক্তব-সাহিত্য” বইটি পাঠ্য করবার জন্য। আমি চিরকাল এলোমেলো, নজরুলের সে-চিঠি হারিয়ে ফেলেছি, রবীন্দ্রনাথের চিঠিও আমি হারিয়েছি। আমি “মক্তব-সাহিত্য” পাঠ্য করার ব্যবস্থা করেছিলাম। মিস ফজিলাতুননেসার সংবর্ধনায় নজরুলকে একবার কারমাইকেল হোস্টেলে নিয়ে এসেছিলাম আমরা।
আমার জগৎটি আলাদা ছিলো ব’লে নজরুলের সঙ্গে ঠিক ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসিনি। তিনি আমার “শিরনি” বই-এর একটি ভুমিকার মতো লিখে দিয়ে ছিলেন, তাতে লিখেছিলেন ‘ক্লারিওনেট আর তানপুরার আসরে মেঠো রাখালকে ধরে এনেছেন, আর কার কেমন লাগবে জানিনে কিন্তু আমার চোখে জল এসেছে।’
১৯৩৫ সালের পর থেকেই জয়নুল আবেদীনের খ্যাতি ছড়িয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় হয় অনেক পরে- ঢাকায়। শেষ পর্যন্ত তিনি আমার প্রতিবেশী হয়েছিলেন। ঘনিষ্ঠ। মাঝে-মাঝে যেতাম। বাংলাদেশ ও বাঙালি সংস্কৃতির গভীরতম অনুরাগী হিশাবে তাঁকে জেনেছি।
১৩২৮-এর চৈত্রে প্রবাসীতে জসীমউদ্দিনের একটি কবিতা প’ড়ে আমি বিস্মিত এবং মুগ্ধ গিয়েছিলাম। তারপর চিঠিপত্রে আমাদের যোগাযোগ হয়। প্রথম দেখা হয় ফরিদপুরে যখন Bengal Provincial Conference হয় তখন। সে সভায় গান্ধী এসেছিলেন। নজরুল ইসলাম ও এসেছিলেন। নজরুলের “ভাঙার গান” তখন বৃটিশ সরকার বাজেয়াপ্ত করেছে। ঐ সভায় গোপনে বিক্রি করা হচ্ছিল বইটি। আমি এক কপি কিনেছিলাম। যাই হোক, ঐ সভাতেই জসিমউদ্দীনের সঙ্গে আলাপ, এবং ক্রমে ঘনিষ্ঠতা হয়। ‘ভারতী’তে পরে লোকগীতি সম্পর্কে জসীমউদ্দীন এবং আমার লেখা একসঙ্গে ছাপা হয়। একটা সময় ছিলো যখন জসীমউদ্দীন, আব্বাসউদ্দীন, গোলাম মোস্তফা এঁরা সব একসঙ্গে থাকতেন কলকাতার লোয়ার রেঞ্জে। জসীম উদ্দীনের ডাক নাম ছিলো ‘সাধু’। সেই শ্মশানটাও দেখিয়েছিলো যেখানে গিয়ে ও জপ করতো। জসীমউদ্দীনের বাড়িতে আমি গেছি-ওর মা-র হাতের পিঠে খেয়েছি। আমি বিয়ে করেছিলাম ফরিদপুরের রাজবাড়িতে, জসীমউদ্দীন সেখানে আমার শ্বশুরবাড়িতে এসেছিলো একবার। ঐ বাড়িটার চার পাশ ছিলো পানি দিয়ে ঘেরা। একজন এসে বললো, আমাকে কে ডাকছে। গিয়ে দেখি, জসীমউদ্দীন পানির ওপারে দাঁড়িয়ে। নৌকা পাঠিয়ে দিলাম। এপারে এসে বললো, পথে আসার সময় একটা গাছের নিচে বসেছিলো কিছুক্ষণ। সেখানেই বোধহয় ওর কবিতার খাতাটি হারিয়ে ফেলেছে। জসীমউদ্দীনের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত যোগাযোগ ছিল। শেষদিকে তো হাসপাতালে হাসপাতালেই থাকতো। “নকশী কাঁথার মাঠ” লিখতে গিয়ে আটকে গিয়েছিলো একটা জায়গায়-বিয়ের বর্ণনায়। তখনো ও বিয়ে করেনি, কাজেই বিয়ের আচার-অনুষ্ঠান জানতো না। পরে তো ফুটফুটে এক বউ বিয়ে করে আনলো। ওর প্রতিষ্ঠিত ‘সাহিত্য সাধণা সংঘে’র সভায় অনেকবার গিয়েছি।
প্র. লালন ফকির সম্পর্কে দু’একটি মন্তব্য করবেন কি?
উ. লালন শাহ সম্পর্কে প্রথম লিখি ১৩৩৩-এর অগ্রহায়ণ সংখ্যা ‘বঙ্গবাণী’ পত্রিকায়। তাঁর গীতিকা সংগ্রহের কাজ তো করেছিই। আমার বিশ্বাস, তাঁর বহু গান এখনো সংগৃহীত হয়নি। কেউ-কেউ বলেন, রবীন্দ্রনাথ সংগৃহীত যে-সব গান রবীন্দ্রসদনে আছে সেগুলোই খাঁটি-অন্যগুলো নয়। আমি এটা বিশ্বাস করি না। লালন শাহের শিষ্যেরা অনেকেই তাঁর গান লিখে রাখতেন। লালনের ভাষায় যখন তার ‘পোনা মাছের ঝাঁক’ আসতো অর্থাৎ আবেগের বান ডাকতো, তখন তিনি গানগুলি শিষ্যদের শিখিয়ে দিতেন। পরদিন আবার শুনতেন। এবং ভুল হ’লে সংশোধন করতেন। সুতরাং রবীন্দ্র-সদনের বাইরেও অনেক জায়গায় খাঁটি লালন-গীতি পাওয়া যেতে পারে।
আমার ইচ্ছা ছিলো ‘Corpus of Lalon Shah’ প্রণয়ন করা। লালন-গীতির বিভিন্ন পাঠ মিলিয়ে একটি Composite Text তৈরি করা। সে সব সম্পদনা-কাজের সময় আর পাবো না। লালন-গীতির যে-তরজমা করেছেন ব্রাদার জেমস, কবীর চৌধুরী তা দেখে দিয়েছেন, শিগগির বেরোবে। শুনেছি ভারত সরকার লালন-গীতির স্বরলিপি প্রণয়নের একটি প্রকল্প গ্রহণ করছেন। যদি তা হয় তাহ’লে এখান থেকেই গানের টেপ নিলে সুরের শুদ্ধতা অধিক রক্ষিত হবে-কেননা পশ্চিমবঙ্গে এবং এখানেও অনেক সময় লালন-গীতির সুরবিকৃতি ঘটছে।
লালন ফকির সম্পর্কে সম্প্রতি ব্যাপকভাবে গবেষণা হচ্ছে। কোথাও-কোথাও পরস্পরবিরোধী মতামতও। এসব থেকে প্রকৃত সত্য একদিন বেরিয়ে আসবে। আমি আশাবাদী।
ব্যানার ছবি: সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ও কবি বেগম সুফিয়া কামালের সঙ্গে।
ঈশাপুরের পর্তুগিজ মহিলা জমিদার অরাদ্য বারোজ
October 4, 2020
আবদুল হক চৌধুরী
পলাশী যুদ্ধের পর মীরজাফর ইংরাজ কর্তৃক বাংলা বিহার ও উড়িষ্যার নবাব পদে নিযুক্ত হয়। পরে তাঁকে পদচ্যুত করে তদীয় জামাতা মীরকাসেমকে নবাব পদে নিযুক্ত করা হয়। তিনি ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দের ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখের চুক্তির শর্ত মোতবেক ইংরাজ সেনাবাহিনীর ভরণপোষণের জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বর্ধমান মেদিনীপুর ও চট্টগ্রামের রাজস্ব উসুলের দায়িত্ব প্রদান করেন। কোম্পানি ১৭৬১ খ্রিস্টাব্দের ৫ জানুয়ারি তারিখে মিঃ হ্যারি ভেলস্টকে চট্টগ্রামের চিফ পদে নিযুক্ত করে। কোম্পানির আমলেই এ জিলায় রাজস্ব বৃদ্ধির মানসে জরিপ প্রবর্তন, সুলতানি ও নবাবি আমলে প্রদত্ত লাখেরাজ মদদ-ই-মায়েস প্রভৃতি খাতের জমি বাজেয়াপ্ত করে ও প্রাচীন রাজস্ব আদায়ের প্রথা রহিত করে পঁচিশ জন জমিদারের উপর রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এঁদের মধ্যে দুজন ছিলেন পর্তুগিজ খ্রিস্টান, এরা মদদ-ই-মায়েস লাভ করেন। পরবর্তীকালে আরো দুজন ইংরেজ দুইটি জমিদারি পত্তনি নেয়। এই চারজন খ্রিস্টান জমিদার হলেন:
১। পর্তুগিজ কেপ্টেন হাবার্ট সাদারল্যান্ড নামক একব্যক্তি ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে কুতুবদিয়া দ্বীপ খয়রাত-ই-মদদ-ই মায়েস জীবিকা নির্বাহের জন্য নিষ্কর লাভ করেন।(১)
২। আন্দর ফর্নাদ (Ander Fernands) নামক এক পর্তুগিজ ঈশাপুর পরগণায় জমিদারি লাভ করেন। এই পর্তুগিজ জমিদার বংশের শেষ মহিলা জমিদার আওরাদে বারোজ এই প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয়।(২)
৩। বিবি মেরি স্পার্কস নামক জনৈক মহিলা ১৭৬৬ খ্রিস্টব্দে চকরিয়া থানার পহর চাঁদায় বিরাট জমিদারি লাভ করেন।(৩)
৪। রবার্ট ওয়েব ল্যাজ নামক ব্যক্তি ১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দে মহেষখালি দ্বীপ জমিদারি লাভ করেন।(৪)
মধ্যযুগে চট্টগ্রামে বণিক ছদ্মবেশী পর্তুগিজ বোম্বেটেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ও দৌরাত্মের কাহিনী ইতিহাসের পাঠক মাত্রেরই অল্পবিস্তর জানা আছে। তারা আরাকানরাজের পৃষ্ঠপোষকতায় চট্টগ্রামের ধনসম্পদ লুন্ঠন ও নারী-পুরুষ নির্বিশেষের উপর নির্বিচারে জোর-জুলুম চালিয়ে যে অমানুষিকতার পরিচয় দিয়েছিল, এ দেশের জনসাধারণ তাই সমসাময়িককালে পর্তুগিজদের হারমাদ নামে আখ্যায়িত করেছিলেন। হারমাদদের অত্যাচারের কাহিনী ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ আছে, আর তার বাস্তব চিত্র বিধৃত আছে সমসাময়িককালের সত্য ঘটনা অবলম্বনে চট্টগ্রামের নিরক্ষর পল্লিকবিদের রচিত নূরন্নেহার ও কবরের কথা, নছর মালুম প্রভৃতি পালাগানে (কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত পূর্ববঙ্গ গীতিকা)।
পর্তূগিজদের চট্টগ্রাম আগমনের পরবর্তীকাল থেকে চট্টগ্রামি ভাষায় জোরজুলুম অর্থে ‘হারমাদ্যাই’ শব্দটি (হারমাদ শব্দ থেকে উদ্ভব) হয়েছে। চট্টগ্রামে কেউ কারো নিকট থেকে কোন কিছু জুলুম-জবরদস্তি কেড়ে নিলে বা নিতে চাইলে তাকে হারমাদ্যাই করা অর্থাৎ পর্তুগিজদের মত জোর-জুলুম করে নেয়া বলা হয়।
চট্টগ্রামে আগমনকারী পর্তুগিজদের মধ্যে কিছুসংখ্যক বৈষয়িক বুদ্ধিসম্পন্ন ভাল লোকও ছিলেন। ডক্টর আহমদ শরীফ এতিম কাসেম বিরচিত আওরা দ্যা বারোজ প্রশস্তির ভূমিকায় লিখেছেন পর্তুগিজ বণিকদের কিছুসংখ্যক লোক চট্টগ্রামে জমি খরিদ করে মালামালের আড়ত, চাষাবাদ করাতেন এবং প্রজাপত্তনি দিতেন; সেই সূত্রে জমিদারির মালিক হতেন। উত্তর চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার অন্তর্গত সুবিখ্যাত প্রাচীন ঈশাপুর পরগণায়ও তেমনি একটি পর্তুগিজ পরিবার চারপুরুষ ধরে জমিদার ছিলেন। ঈশাপুর পরগণার কবি এতিম কাসেম আওরাদ বারোজ প্রশস্তি নামক ক্ষুদ্র কাব্যখানি (রচনাকাল ১৭৭৫-৮০ খ্রিস্টাব্দ) এই পর্তুগিজ বংশীয় মহিলা জমিদারের কৃপালাভের আশায় তাঁর প্রশংসা ও তোয়াজ করে রচনা করেছিলেন। উক্ত কাব্যে বর্ণিত জমিদার আওরাদে বারোজ ও তদীয় শ্বশুরকুলের পরিচয় লিপিবদ্ধ আছে:
সে বংশে জনম এক আওরাদে বারুচ পরতেক
সে বংশেত জন্ম আসি ভেল।
আল্লাহ কৃপার ফলে জন্মিয়াছে মহীতলে
তানকীর্তি দেশান্তরে গেল।।
আল্লার হুকুম হৈল ভাগ্য আসি প্রবেশিল
আদ্যে লেখা আল্লার ফর্মান।
ঈশাপুর দেশে আসি প্রকাশিল যেন শশী
তিতানান্নে–পতি হৈল তান।।
এবে তিতানান্নে বাণী শুন সবে মনে জানি
কহিবম কাহার তনয়।
আন্দর ফর্নাদসুত কালুচ ফর্নাদ যুত
তান পুত্র তিতানান্ন হএ।।
তানগর্ভে উতপন- সৃজিয়াছে নিরঞ্জন
রুপজিনি চন্দ্রিমা সমান।
বয়স না হইতে নিধি হরিয়া নিলেক বিধি
তিতানান্ন হইল নির্ধন।
আপনা পতির যথ মাল সিল্লিক (মুল্লুক যথশত)
তানদস্তে হইল সমর্পন।(৫)
মাহবুব-উল-আলম সাহেব চট্টগ্রামের ইতিহাস ৩য় খন্ড কোম্পানী আমলের ৪৮ পৃষ্ঠায় আওরাদে বারোজ পরিচিতি প্রসঙ্গে লিখেছেন : তিনি প্রথমে বিয়ে করেন সুইডেনবাসী চার্লেস এডমানকে অতঃপর ডিয়েডরিচ মার্কোয়াডকে। ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দের এক রিপোর্টে জানা যায় যে এডমান বার্ষিক নয় হাজার টাকা আয়ের জমির মালিক হইয়া বসিয়াছেন। ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে অরাদ্য বারোজের মৃত্যু হইলে মার্কোয়াড তাহার প্রচুর ভূসম্পদের মালিক হন। জোয়ান দ্য বারোজ নামে তার এক ভাই ছিল। চট্টগ্রাম জিলার প্রধান পর্তুগিজ পরিবার ফ্রীটাসদের সহিত দ্য বারোজদের আত্মীয়তা ছিল। উপরোক্ত সূত্র দুটো ও আমাদের সংগৃহীত তথ্যের সাহায্যে নিম্নে আওরাদে বারোজ পরিচিতি লিপিবদ্ধ করলাম। ঈশাপুর পরগণায় সর্বপ্রথম যে পর্তুগিজ বণিক জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তার নাম হলো আন্দর ফর্নাদ (Ander Farnandes) । তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হলে তৎপুত্র কালুচ ফর্নাদ (Caluch Fernandes) পৈত্রিক সূত্রে উক্ত জমিদারির মালিক হয়েছিলেন। তিনি পরিণত বয়সে পরলোকগমনের পর তার একমাত্র পুত্র তিতানান্ন এই জমিদারির মালিক হন। কিন্তু তিনি অল্প বয়সে নিঃসন্তান অবস্থায় পরলোকগমন করেন। তখন তার বিধবা পত্নী আওরাদে বারোজ ঈশাপুর পরগণার জমিদারির মালিক হন। অতঃপর তিনি সুইডেনবাসী চার্লস এডমানকে দ্বিতীয় স্বামীরূপে গ্রহণ করেন। সম্ভবত তাঁর মৃত্যুর পর ডিয়েডরিচ মার্কোয়াড নামক এক ব্যক্তিকে আওরাদে বারোজ তৃতীয়বার স্বামী গ্রহণ করেছিলেন।
আওরাদে বারোজ অত্যন্ত দয়ালু ও প্রজাবৎসল জমিদার ছিলেন। প্রজাদের প্রতি তাঁর দয়া-দক্ষিণ্যের কথা ঈশাপুর পরগণার প্রাচীন ব্যাক্তিদের মুখে আজো কিংবদন্তীরূপে প্রচলিত আছে। তিনি প্রজাদের নিকট বিবি নামে খ্যাত হয়েছিলেন। তাঁর বার হাজার প্রজা ছিল। তাঁর জমিদারি পরিচালনা করতেন দেওয়ান দেবী দাস। এবং জমিদারি সেরেস্তার অন্যান্য কর্মচারি ছিলেন রামদুলাল, জয়নারায়ণ, রামভদ্র ঠাকুর, মোহাম্মদ খোসাল, আজিজ উল্লাহ, হিস্মত উকিল ও তিতা গাজী এবং অনেক পাইক-পেয়াদাও ছিলো।
আওরাদে বারোজের জমিদারি ছাড়া ব্যবসা-বানিজ্যও ছিল। তিনি চট্টগ্রামি কারিগরদের দ্বারা জাহাজ নির্মাণ করিয়ে দেশে বিদেশে পন্যদ্রব্য বানিজ্য উপলক্ষে পাঠাতেন। প্রাচীণ ঈশাপুর পরগণার জাঁহাপুর ফতেপুর গ্রামে আরকানি আমলে নির্মিত মাটির দূর্গ কোট-এর উত্তর-পশ্চিম কোণের মধ্যে একটি দিঘি খনন করেছিলেন। সেটা এই এলাকার জনসাধারনের নিকট বিবির দিঘি নামে সুপরিচিত।
এই দিঘি সংলগ্ন কোটের পশ্চিম পাড়ের বাইরে অবস্থিত ছিল আওরাদে বারোজের জমিদারি কাছারি ও কুঠিবাড়ি। তা বর্তমানে নিশ্চিহ্ন হয়ে নাল জমিতে পরিণত হয়েছে। এই জমি এখনো কাছারি ভিটা নামে খ্যাত হয়। বর্তমানে বিবির দিঘির পাড় কেটে নাল জমি করা হয়েছে। শুধু মধ্যে জলীয় অংশের কিছু অবশিষ্ট আছে। ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তীর সময় তাঁর নামে তরফ আর.ডি. বারোজ নামে খ্যাত একটি তরফ সৃষ্টি হয়েছিল। তিনি ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে পরলোকগমন করেন। তাঁর মৃত্যুর পর তদীয় উত্তরাধিকরী ৩য় স্বামী ডিয়েডরিচ মার্কোয়াড উক্ত জমিদারির মালিক হন। তিনি উক্ত তরফ ফরিদপুরবাসী জমিদার নিত্যানন্দ কুণ্ডর নিকট বিক্রি করে দেন। ডক্টর আহমদ শরীফের মতে তাঁর শুদ্ধ নাম Aorade Barrose। জনাব মাহবুব-উল-আলমের মতে অরাদ্য বারোজ কিন্তু তার নামীয় তরফের আর. এস. জরিপের খতিয়ানে আর.ডি. বারোজ রূপে তাঁর নাম মুদ্রিত আছে।
কুণ্ডবাবুদের জমিদারি কাছারি ছিল বর্ণিত কোট-এর দক্ষিণ পাড়ে। তাদের কাছারি এলাকার পাকা ভবনটি পর্তুগিজ আমলে তৈরি ভবনের মত দেখতে খুব উঁচু। সম্ভবত এই ভবনটি এই পর্তুগিজ জমিদার পরিবারের আমলে তৈরি। কোটের দক্ষিনপারে কুণ্ডবাবুরা জমিদারি কাছারি ছাড়া দাতব্য চিকিৎসালয়, ডাকঘর, ডাকবাংলা ইত্যাদি জনহিতকরমূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন। কোটের অগ্নিকোণে একটি দিঘি খনন করিয়েছিলেন। সেটা এখন কুণ্ডর দিঘি নামে খ্যাত হয়। এখন জমিদারি নেই, কুণ্ডদের উত্তরাধিকারীরা ভারতীয় নাগরিক। এখানকার ডাক্তারখানা, ডাকঘর ইত্যাদি আজো কুণ্ডদের নামে খ্যাত হয়। তরফ আর.ডি. বারোজের খরিদমূলে মালিক জমিদার বাবু নিত্যানন্দ কুণ্ডর গুনগান করে উনবিংশ শতকের ঈশাপুর পরগণার নানুপুর গ্রামের কবি আজগর আলী পণ্ডিত তদীয় কাহিনীকাব্য চীন লেস্পতিতে (রচনাকাল ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দ) বর্ণনা করেছেন:
জেলা সহর চট্টগ্রাম ইছাপুর পরগনা নাম,
মহাত্মা সকল করে বাস।
আমিরী কবিরী শান ধনে জনে পূজ্য মান,
সদা…হাবিলাস।।
রাজ্যের ঈশ্বর ভাল নিত্যানন্দ মহীপাল,
পূত্র ন্যায় পালে প্রজাগন।
ন্যায় বন্ত অতি ধীর ধর্মে কম্মে যুধিষ্ঠীর,
দানে জিনি কুন্তির নন্দন।।
সপ্ত মৌজা ইছাপুর উত্তর সে নানুপুর,
সাধু মান্য সতত সঞ্চয়।
সর্ব লোক এক মতি কর জোগাওন্ত নিতি
মহিপালে আদরে তোষয়।।
কবি তোয়াজের ভাষায় জমিদার নিত্যানন্দ কুণ্ডকে রাজা এবং ঈশাপুর পরগণাকে রাজ্যরূপে বর্ণনা করেছেন।
৫. বাংলা একাডেমি পত্রিকা,ভাদ্র-চৈত্র, ১৩৬৫ বাংলা, পৃ. ৩৫।
আবদুল হক চৌধুরী (১৯২২-১৯৯৪) চট্টগ্রামের ইতিহাস রচনার একজন পথিকৃৎ। তিনি চট্টল তত্ববিদ হিসেবে খ্যাত ছিলেন।
সুত্র: আবদুল হক চৌধুরী, প্রবন্ধ বিচিত্রা : ইতিহাস ও ঐতিহ্য, বাংলা একাডেমী : ১৯৯৪
ব্যানার ছবি: কর্ণফুলী নদীর তীরে পর্তুগীজ-আরাকানি শক্তির সাথে মুঘলদের লড়াইয়ের একটি চিত্র। ঘটনার সময়কাল ১৬৬৬। সুত্র: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যাদুঘর
ফিচার ছবি: ১৬০০ খ্রীষ্টাব্দে চট্টগ্রামে পর্তুগীজদের প্রতিষ্ঠিত চার্চ ।
তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের একটি অপ্রকাশিত চিঠি
September 6, 2020
ভক্তকে লেখা প্রখ্যাত সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ে একটি চিঠি। চিঠির তারিখ ৪ঠা জুলাই ১৯৬৩। ততদিনে দেশ ভাগ হয়ে গেছে। কিন্তু সাহিত্যিক ও সাহিত্যানুরাগীদের বন্ধনে চিড় ধরেনি। চিঠিটিই তার সুন্দর প্রমাণ। চিঠির প্রাপক আমিনা বেগম (লুসী)।চিঠি থেকে অনুমান করা যায় তার বাড়ি সম্ভবত চট্টগ্রামে ছিল । আমিনা বেগম ২০১০ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
চিঠিটি আমিনা বেগমের মেয়ের স্বামী কবির জামির সৌজন্যে পাওয়া। চিঠির একটি পাঠ ছবির নিচে দেওয়া হল।
সুচরিতাসু,
ভক্তি ভাজনেষু- সম্বোধনের উত্তরে ‘তুমি’ লিখলে কি রুষ্ট বা ক্ষুব্ধ হবে? সম্ভবত হবেনা। হলেও মার্জনা পেতে দেরী হবেনা। কারন আমি জানি- আমি বঙ্গভাষাভাষীর স্নেহভাজন। তাছাড়া বাপ মেয়েকে তুমি বলে, ছেলে মাকে তুমি বলে।
ভারী ভাল লাগল তোমার পত্র। সুচিন্তিত পত্র। একটি অতিসূক্ষ রসবিচারের পরিচয় আছে। বই পড়ে, মনে স্বপ্ন সঞ্চার- শুধু লেখকের দ্বারা হয়না- পাঠকের মন চাই। বীজের অঙ্কুর ঊষর মাটিতে হয়না- উর্বর ক্ষেত্রেই সম্ভব।
কথাটা বা প্রশ্নটি ঠিকই তুলেছ। রামায়ণের রাম বাস্তবে ছিলেন কিনা- বা কেমন ছিলেন- এ আলোচনা- মহাকাব্যের রমণীয় মূর্তিটির উপর একটি কালো ছায়া ফেলে ম্লান করে দেয়। মহাকাব্যের অপরূপ মূর্তিটিই এ ক্ষেত্রে সত্য, বাস্তবই মিথ্যা। এই অপরূপ কায়াগুলির ছায়াও পড়েনা- সুতরাং- মাটির বুকে ছায়ার মতও পড়ে থাকার তার অধিকার নেই।
ব্যাপারটা ঘটেছিল- বহুজনের প্রশ্ন থেকে। বহু মানুষের বহু বিচিত্র মন। তারা অবিরাম জানতে চেয়েছিল- এই কাহিনী ও কাহিনীর চরিত্রগুলির কতটা বা কতদূর সত্য। এক শ্রেণীর তথ্য কৌতুহলী আছেন। তাদের মনে রসের চেয়ে রসগোল্লার ছানার ক্ষুধা বড়। তোমার মনটি- শিশিরগ্রাহী তৃণশীর্ষের মত পেলব- অথবা পুষ্প দলের মত কোমল। হয়তো সহজাত। অন্যথায় স্বপ্নে তুষ্ট থাকতে পারতে না। বাস্তবে কত দূর সত্য তা জেনে বিচার করতে বসতে আমি কতটা রোমান্টিক।
আগামী সংস্করণে এটি তুলে দেব। এবং- তোমার অনুমতি বা সম্মতি পেলে- পত্রখানি ভূমিকার অন্তর্গত করে দেব।
পরিশেষে প্রশ্ন তোমার নাম লুসী কেন? আমার কল্যাণ কামনা আশীর্ব্বাদ গ্রহণ কর। চট্টগ্রামে যে দারুণ প্রাকৃতিক দূর্যোগ গেল তা থেকে নিরাপদ আছ- এর জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিই। যারা আহত হয়েছেন- ক্ষতিগ্রস্থ শোকাহত হয়েছেন- তোমার মারফতে তাঁদের জন্য আমার অন্তরের বেদনা ও সহানুভুতি জানাই।
তোমার পত্রখানি সযত্নে রক্ষা করলাম।
শুভার্থী
তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়
বাঙ্গলায় মঘদৌরাত্ম্যের বিবরণ
September 6, 2020
লেখক: শ্রী দীনেশচন্দ্র ভট্টাচার্য
১৬৬৬ খ্রীষ্টিয় সনে বাঙ্গলার বিখ্যাত নবাব সায়েস্তা খাঁ চাটিগ্রাম জয় করিয়া মঘ-ফিরিঙ্গিদের চরম শাস্তি বিধান করেন এবং বাঙ্গালী জনসাধারণ প্রায় অর্ধশতাব্দী ব্যাপী দারুণ অত্যাচার হইতে রক্ষা পাইয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিয়া বাঁচে। চল্লিশ বংসর পূর্বে শ্রদ্ধেয় যদুনাথ সরকার মহাশয় পারস্য-
ভাষায় লিখিত প্রামাণিক ইতিহাস হইতে চাঁটিগাঁ বিজয় ও চাঁটগার ফিরিঙ্গি জলদস্যুদের বিবরণ প্রকাশ করেন।( J.A.S.B, 1907, pp. 405-425) কিন্তু বাঙ্গলার ইতিহাসের এই তমশাচ্ছন্ন যুগের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ এখনও লিখিত হয় নাই । কারণ, মঘদৌরাত্ম্যের সুদীর্ঘকাল ব্যাপী ঝটিকা নিম্নবঙ্গের প্রায় ঘরে ঘরে যে করুণ অবস্থার সৃ্ষ্টি করিয়াছিল রাজদরবারে তাহার প্রকৃত বৃত্তান্ত পৌঁছিবার অবসর পায় নাই এবং অধিকাংশ স্থলে প্রজার বিলোল ক্রন্দনধ্বনি আকাশে সাময়িক তরঙ্গ তুলিয়াই ক্ষান্ত হইয়াছে, কচিৎ তাহার স্মৃতি তৎকালীন সমাজ-হৃদয়ে জাগরুক থাকিতে সমর্থ হইয়াছে। এ
বিষয়ে আমদের সংগৃহীত অজ্ঞাতপূর্ব কতিপয় ছিন্নপত্রের বিবরণ প্রকাশ করার পুর্বে মঘদৌরাত্মের উৎপত্তির বিচিত্র ইতিহাস সংক্ষেপে বিবৃত হইল।
পাঠান রাজত্বকালে চাটিগ্রামের আধিপত্য লইয়া চতু:শক্তির সংঘর্ষ উপস্থিত হ্য়–পাঠান, আরাকান, ত্রিপুরা ও ফিরিঙ্গি। সোনারগাঁর সুলতান ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ (১৩৩৯-৪৯ খ্রী:) সর্বপ্রথম চাটিগাম জয় করেন। তাহার সময়ে অনেক ধর্ম্মমন্দিরাদি চাটিগামে নির্মিত হইয়াছিল এবং
তাহাদের ধ্বংসাবশেষ সায়েস্তা খাঁর সময় বিদ্যমান ছিল। ( J.A.S.B, 1907, pp. 4২১) তখন হইতে চাটিগ্রাম বাঙ্গলার পাঠান রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। এবং কালে চাটিগ্রামে একটি টঙ্কশালাও প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। দনুজমর্দ্দনদেব, মহেন্দ্রদেব ও জালালুদ্দীনের চাটিগ্রামী মুদ্রা আবিষ্কৃত হইয়াছে (Bhattashali: Independent Sultans of Bengal, pp. 119, 123-5) ইহাদের তারিখ ১৪১৭-২০ সন মধ্যে। দশ বংসর পরে পলায়িত আরাকানরাজ ‘মেঙ ছৌ-মুন’ গৌড়ের সুলতানের আশ্রয়ে চব্বিশ বৎসর থাকিয়া তাহার সাহায্যে রাজ্যেদ্ধার করেন – ইহা জালালুদ্দীনের রাজত্বকালীন ঘটনা।
আরাকানের ইতিহাসে পাওয় যায় ৭৬৮ মঘী সনে (১৪০৬ খ্রী:) ঐ রাজা তৎকালীন চাটিগ্রামের উজীরের সাহায্যে গৌড়সুলতানের আশ্রয় লাভ করেন । আরাকান-চাটগ্রাম-সম্বাদের ইহাই প্রথম সুত্রপাত | চাটিগামের ইতিহাসের এই তমসাচ্ছ্ন যুগের একমাত্র আলোকদাতা হুইল আরাকানী ভাষায় লিখিত আরাকানের ইতিহাস গ্রন্থ এবং শতাধিক বর্ষ পুর্বে ১৮৪৪ সনে ফেয়র (Phayre) সাহেব তাহা হইতে যে অতি সংক্ষিপ্ত সারসংকলন করিয়াছিলেন তদতিরিক্ত কোন কথাই এখন পর্যন্ত প্রকাশিত হয় নাই। পনের বৎসর পুর্বে রেঙ্গুনে প্রকাশিত আরাকানের বিস্তৃত ইতিহাসের দ্বিতীয় খণ্ডে (পৃ. ৪১৫) পাঠানযুগ হইতে বর্তমানকাল পযন্ত বিবরণ সংগৃহীত পাওয়া যায়। ছ্ন্দ-মালাকার রচিত ১২৯৩ বর্মাব্দে প্রকাশিত “রখইঙ, রাজওয়াঙ, খহ-ক্যাম” অর্থাং আরাকানের নুতন ইতিহাস আমরা সংগ্রহ করিয়াছি এবং তন্মধ্যে বহু নুতন কথা আবিষ্কৃত হইয়াছে | আরাকান রাজ-গণ পরে ক্রমশ চাটিগ্রামে অধিকার বিস্তার করিলেও রাজা-উজীরের এই সামান্য সংঘর্ষে প্রজাসাধারণের শান্তিভঙ্গ হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায় না। গৌড়সুলতানের প্রতিভু চাটিগ্রামের উজীরগণ অবাধে আরাকানের আদান-প্রদান চালাইয়া আত্ম-রক্ষা করিয়াছে সন্দেহ নাই।
BANGLADESH ON RECORD UNDERGRADUATE STUDENT SMALL GRANTS PROGRAM
September 1, 2020
CALL FOR PROPOSAL
Bangladesh on Record has initiated a new Undergraduate Student Small Grants Program. Two undergraduate students will each receive Tk 15,000 to support their research projects. Funding will be for three months, after the proposal has been awarded.
ELIGIBILITY: The applicant must be an undergraduate student.
TOPIC: The topic of the proposal must be within the broad subject area of the history of Bangladesh.
SUBMITTING A PROPOSAL – REQUIREMENTS:
The proposal should include ALL of the following components:
Descriptive title of the proposed research (suggested word count = 25)
Name, address, email, and telephone number of the applicant
Brief Summary of the proposed research (suggested word count = 300)
A CV ( use a separate word document or PDF)
SUBMISSION PROCESS: Send the proposal and CV to [email protected] . Write ‘BANGLADESH ON RECORD UNDERGRADUATE STUDENT SMALL GRANTS PROGRAM’ in the subject line of the e-mail. For further contact: 01728471997
DEADLINE – SEPTEMBER 15, 2020 AT 11:59PM.
THE REVIEW PROCESS: Proposals will be reviewed by the Bangladesh on Record small grants program review committee and the most promising applicants (4-5) will be asked to attend an online interview session. Two finalists will be awarded the grant. The selection process is expected to be completed by September 20, 2020.
RESEARCH TIMLINE
Activity
Implementation date
Fund disbursement
Attending three lectures on historiography, research methodology and research paper writing.
September 20-25, 2020
Tk 3000
First Draft
October 20
Tk 4000
Second Draft
November 20
Tk 4000
Final Draft
December 10
Tk 4000
Presentation
December 15
———-
OUTPUT: A 5000-word research paper (including reference)
COURTESY: The BANGLADESH ON RECORD UNDERGRADUATE STUDENT SMALL GRANTS PROGRAM is funded by:
বঙ্গবন্ধুর সেই আলোকচিত্রটি …
August 14, 2020
লেখক: পাভেল রহমান
বঙ্গবন্ধুর এই ছবিটি কে তুলেছিলেন ? এ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে পাওয়া গেছে নতুন সব তথ্য। সেই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের পর পরই ধানমন্ডি৩২ নম্বরের বাড়িতে গিয়ে কিছু ছবি তুলেছিলেন দেশের প্রখ্যাত সাংবাদিকরা । তাঁদেরই একজন দৈনিক বাংলা র প্রধান আলোকচিত্রী (প্রয়াত) গোলাম মওলা। তাঁর তোলা ছবি প্রিন্ট করেছিলেন সহকর্মী বাবু আনসারী। বাবু আনসারী এবং আরও কয়েকজনের স্মৃতিকথা নিয়েই এই প্রতিবেদন।
সেনাবাহিনীর জিপটা এসে ঢুকল দৈনিক বাংলার ভেতর। ১ নম্বর ডিআইটি এভিনিউ তখন দৈনিক বাংলা র ঠিকানা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঢাকা শহরের রাস্তায় ট্যাংক আর সেনাবাহিনীর জিপ ছাড়া সাধারণ গাড়ির চলাচল নেই বললেই চলে। পথচারী আর দৈনিক বাংলা র কর্মচারীরা সেই কারণে একটু বাড়তি ঔৎসুক্য নিয়ে তাকায় দৈনিক বাংলা য় ঢুকে পড়া জিপটির দিকে। জিপ থেকে সেনাসদস্যদের পর পরই নামলেন ছোট্ট ক্যামেরার ব্যাগটি হাতে দৈনিক বাংলার তৎকালীন প্রধান আলোকচিত্রী গোলাম মওলা। চোখের মোটা পুরু লেন্সের চশমাটা বারবার নেমে আসছে নাকের দিকে। যে কোনো অ্যাসাইনমেন্ট থেকে ফেরার সময় মোটরসাইকেল থেকে যে উদ্দীপনা নিয়ে গোলাম মওলা নামেন, আজ যেন সে উদ্দীপনার লেশমাত্র নেই। সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠার শক্তি পর্যন্ত তাঁর নেই। দৈনিক বাংলার ছোট্ট লিফটটায় ঠাসাঠাসি করে গোলাম মওলাসহ জওয়ানেরা উঠে এলেন বার্তাকক্ষে। আরও এক ধাপ ওপরে ডার্করুম। কিন্তু ডার্করুমে যাওয়ার শক্তি পর্যন্ত তাঁর নেই। বার্তাকক্ষের বড় টেবিলটার সামনে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লেন তিনি। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। হাতের ইশারায় এক গ্লাস পানিও চাইলেন। চশমাটা খুলে টেবিলে রেখে রুমাল দিয়ে মুখটা মুছে নিলেন।
চোখ বন্ধ করতেই যেন বীভৎস দৃশ্যগুলো ভেসে উঠল।
ভয়াবহ সব দৃশ্য।ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের সিঁড়ির মাঝ খানটায় ঘুরতেই বঙ্গবন্ধুর লাশ দেখে হৃদযন্ত্রের গতি বেড়ে গিয়েছিল তাঁর। এমনিতেই উচ্চরক্তচাপ। নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলেন না। সাদা পাঞ্জাবির মধ্যে লাল রক্তের ছোপ। বুকের দিকটায় একটু বেশি লাল। লাল রক্ত, সিঁড়িতে কোথায় পা রাখবেন, শুকনো জায়গাটি পর্যন্ত নেই। সেনাসদস্য কজন বঙ্গবন্ধুর লাশ টপকে ওপরে উঠে গেলেন। ১২০ মিমি রলিকর্ড বক্স ক্যামেরায় ফ্ল্যাশগানের কর্ড ততক্ষণে লাগিয়ে ফেলেছেন গোলাম মওলা। ফোকাস করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর মুখটায় চোখ রাখতে পারছিলেন না। বারবার মনে হচ্ছিল তাঁর, ‘ কী দেখছি আমি ? এই মানুষটির কত দুর্লভ ছবিই না তুলেছি। ৭ মার্চের ভাষণ, স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, আরও কত কত ছবি। আর আজ এ কী ছবি তুলছি আমি। এই ছবিটিও আমাকে তুলতে হলো।’ চোখ ঝাপসা হয়ে আসে গোলাম মওলার।একটা, দুইটা, তিনটা ফ্ল্যাশের আলোয় ঝলসে ওঠে রক্তস্নাত ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের সিঁড়ি।
বঙ্গবন্ধুর ছবি তোলার পর জওয়ানেরা ইশারায় গোলাম মওলাকে সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসতে বললেন। মুহূর্তে থমকে গেলেন তিনি। সিঁড়িতে উঠবেন কোন দিক দিয়ে। পুরো সিঁড়িতে যে বঙ্গবন্ধুর নিথর বিশাল দেহ। এতটুকু জায়গা নেই। পায়ে যদি বঙ্গবন্ধুর গায়ে ছোঁয়া লেগে যায়, কী করবেন তিনি। ওপর থেকে কেউ একজন ধমকে উঠল, ‘উঠে আসেন।’ সিঁড়ির রেলিং ধরে যত্ন করে বঙ্গবন্ধুর শরীর বাঁচিয়ে পা রাখলেন। পা রাখতেই চোখে পড়ে গেল আলপনার ছাপ। মাত্র কদিন আগেই বিয়ের উৎসব লেগেছিল বাড়িটায়। এক ধাপ, দুই ধাপ খুব সন্তর্পণে পা ফেলে উঠে পড়লেন দোতলায়। রক্তস্নাত ঘরগুলোতে পড়ে আছে লাশগুলো। বেগম মুজিব, রাসেল, সুলতানা কামাল । শেখ জামাল, রোজী জামাল । একেকজন একেক জায়গায়। ছবি তুললেন একটির পর একটি। আলাদা আলাদা করে সবার ছবি। ফ্লোর জুড়ে শুধু রক্ত আর রক্ত। এত নিস্তব্ধতা বাড়িজুড়ে। কোথাও কোনো সাড়াশব্দ নেই।
কি একটা শব্দে চোখ খুলে তাকালেন গোলাম মওলা। দৈনিক বাংলার বাবু আনসারী তখন দৈনিক বাংলা র সিনিয়র ফটোসাংবাদিক। গোলাম মওলা বাবু আনসারীকে দেখে যেন অবলম্বন খুঁজে পেলেন। ক্যামেরার ব্যাগ থেকে বেশ কয়েকটা ১২০ এক্সপোজ রোল বেড় করে দিলেন বাবু আনসারির হাতে। বাবু আনসার তখন দৈনিক বাংলায় গোলাম মওলার সহকারী । রলিকর্ড ক্যামেরার ভেতর থেকে বাকি ফিল্মটাও বের করলেন টেনে। বললেন, ‘আমি আর পারছিনা। ফিল্মগুলো ডেভেলপ আর প্রিন্ট করে উনাদের দিয়ে দাও বাবু।’ বাবু আনসারী তাকিয়ে দেখলেন, গোলাম মওলার পেছনে দৈনিক বাংলা র বার্তাকক্ষে দাঁড়িয়ে আছেন সেনাবাহিনীর দুজন অফিসার। তাঁদের দুজনের চোখজোড়া লাল টকটকে। এমনিতে ভীতবিহ্বল সবাই। লাল চোখ দেখে ভয়ের মাত্রা আরও বেড়ে গেল। ডার্ক রুমে গিয়ে ফিল ডেভলাপ করে প্রিন্ট করে তুলে দিয়ে দিল বাবু আনসারি । গোলাম মওলা আর দ্বিতীয় বার বঙ্গবব্ধুর বীভৎস নিথর দেহ আর দেখতে চান না ।
কিন্তু কি দুর্ভাগ্য সেনবাহিনীর অফিসার জওয়ানরা সেই দিন ডার্ক রুম থেকে নষ্ট প্রিন্ট গুলিও যেখানে ফেলে আসেন নি সেখানে বিদেশে পাচারের মিথ্যা অজুহাতে গোলাম মওলা কে অভিযুক্ত করা হয়েছিল । বিশেষ ব্যবস্থায় তারা ছবি বিক্রি করেছেন বিদেশ আর মিথ্যা অজুহাত দিলেন দেশের অন্যতম শীর্ষ আলোকচিত্রী গোলাম মওলার উপর । যে মানুষটি প্রেস ফটোগ্রাফির সাথে স্পোর্টস ফটোগ্রাফি ফিচার ফটোগ্রাফির অপূর্ব সমন্বয় করে সংবাদপত্রে জগতে নিজেকে শীর্ষে নিয়ে গিয়েছিলেন ।
মা, বাবা, ভাই আর আত্মীয়স্বজন হারিয়ে প্রবাসে পাগলপ্রায় শেখ হাসিনা। ভয়াবহ সেই ৩২ নম্বরে ফিরে আসতে চান তিনি। কিন্তু তা তখন সম্ভব হয়নি দীর্ঘ দিন। প্রবাস জীবনে খুঁজে ফিরছেন কিছু একটা । অন্তত সেদিনকার কোনো স্মৃতি। কী ঘটেছিল, কোনো ছবি যদি পাওয়া যায়। খবর পাচ্ছিলেন পঁচাত্তরের ঘাতকেরা কিছু ছবি প্রচার করার চেষ্টা করছে। তিনিও খুঁজতে শুরু করলেন ছবিগুলো। কোথায় পাওয়া যায়? অনেকের কাছে ধরণা দিয়েছেন এরই মধ্যে। বিখ্যাত টাইম , নিউজউইক কিংবা নিউইয়র্ক টাইমস -এর সব নামকরা সাংবাদিকের কাছে দিয়েছেন ধরণা। তাঁর প্রচেষ্টা সফল হলো। ১০ বছর পর নিরন্তর প্রচেষ্টায় অর্থের বিনিময়ে জোগাড় করে ফেললেন গুলিবিদ্ধ-রক্তাক্ত বাবার শেষ ছবিটি।
দেশে ফিরে ১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ সে এক দারুণ সময় তাঁর। বাবার গুলিবিদ্ধ ছবিটি তিনি ছড়িয়ে দিতে চান হত্যার বিচারের দাবিতে। এক সন্ধ্যায় দৈনিক বাংলার বাণী র ডার্করুমে নিজেই হাজির হলেন তিনি। শেখ সেলিম তখন বাংলার বাণীর সম্পাদক। ভ্যানিটিব্যাগ থেকে সযত্নে বের করে আনলেন নেগেটিভটি। বাবার রক্তমাখা সেই ছবি । ৩২ সে কয়েক জনার সাথে গোলাম মওলার তোলা সেই ছবিটি । যেই ছবিটি বিপদ গামীরাই পাচার করেছিল বিদেশে ।
বাংলার বাণীর ডার্ক রুমে মাত্র তিনজন মানুষ । ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘরে এনলার্জারে আলো বিচ্ছুরিত হয়ে দেয়াল থেকে ফিরে আসছে। তিনজন মানুষের চোখেই পাওরের চশমায় রিফ্লেক্সন হচ্চে সেই ছবিটি । ডার্ক রুমেও যেন সেই নিঃশব্ধতা । তিন জনার নিশ্বাসের শব্দ কানে এসে লাগে । দীর্ঘ দিনের পটু প্রেস ফটোগ্রাফার ই সাথে দক্ষ এক ডার্ক রুম ম্যান স্বপন সরকার সাদা-কালোপ্রিন্ট করে ফেললেন সেই ছবিটি । পিতার লাশের সেই ছবিটি , ধানমণ্ডির ৩২ সের সিঁড়িতে প্রাণহীন পিতার ছবিটি এই প্রথম চোখে দেখে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না কন্যা শেখ হাসিনা । বড় ভাই শেখ সেলিম কি সান্ত্বনা দিবেন প্রিয় বোনকে।
গোলাম মওলার তোলা সেই ছবিটি স্বপন সরকারের হাতে প্রথম প্রিন্ট হয়ে বাংলার বাণীর প্রেস থেকে ছড়িয়ে পড়লো বাংলার শহর থেকে গ্রামে, পোস্টার থেকে পত্রিকায় ছড়িয়ে পড়ল গ্রাম বাংলার সবখানে নিথর দেহের হাজার বছরের শ্রেষ্ঠবাঙ্গালী , বাঙ্গালীর নয়নের মণি , জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ।
পাভেল রহমান একজন প্রখ্যাত আলোকচিত্রী
ত্রিশের দশকে রংপুর কারমাইকেল কলেজ: স্মৃতিচারণ
August 14, 2020
লেখিকা: ড. সতী ঘোষ
বাংলাদেশে রংপুর শহরের কারমাইকেল কলেজের ছাত্রী ছিলাম আমি ১৯৩২- ১৯৩৪ এ। ঐ কলেজে আমাকেই প্রথম মহিলা ছাত্রী নেওয়া হয়েছিল, তার আগে মেয়েদের নেওয়া হত না।আমার পরেই সব ক্লাসেই মেয়েদের ভর্তি করা শুরু হয়। আমি ইংরাজীতে অনার্স নিয়ে বি এ পড়তাম এবং রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকেই বি এ পাশ করেছিলাম।
প্রথমেই কলেজের বাড়ীর কথাটা বলি। ইসলামি শিল্প রীতিতে তৈরি বিরাট লম্বা ধরণের একতলা বাড়ী। ছাতের ওপরে একটা খুব জোরালো বাতি জ্বলত, হাজার দুহাজার – কত ওয়াট হবে জানিনা, স্টেশন থেকে দেখা যেত। রংপুর শহরে ঢুকতে স্টেশন থেকে কলেজের প্রাঙ্গণের পাশ দিয়ে যেতে হত। বিরাট মাঠের মধ্যে কলেজের বাড়ী, বিঘে বিঘে জমি, যেন তেপান্তরের মাঠ, মাঠের চারিদিকে দূরে দূরে অধ্যাপকদের ছোট ছোট বাড়ী, ছোট বড় মিলিয়ে ৩/৪ খানা ঘর, বারান্দা দেওয়া।দুটো হস্টেল ছিল, একটা বিজ্ঞানের ছাত্রদের, একটা কলা বিভাগের ছাত্রদের।
আমাদের সময়ে কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন ডক্টর ডি এন মল্লিক, কেম্ব্রিজের র্যাংলার। প্রেসিডেন্সি কলেজের অঙ্কের অধ্যাপক ছিলেন, অবসর নিয়ে রংপুর কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষ হয়ে আসেন। ভদ্রলোক ব্রাহ্ম ছিলেন। খুব হাসিখুশী, ফুর্ত্তিবাজ, ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গেও ব্যবহার খুবই ভাল ছিল। পক্ককেশ বৃদ্ধ – মাথার সব চুলই সাদা, কিন্তু ফর্সা গায়ের রং আর বুুদ্ধিপ্রদীপ্ত চেহারা, চলা-ফেরা বৃদ্ধের মত মোটেই ছিলনা, খুব খাটতে পারতেন। ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কাজ করতেন, বাড়ী এত কাছে, তবু টিফিনের সময় বাড়ী যেতেন না, শুধু এক গ্লাশ লেবুর জল খেতেন, ওঁর ঘর পেরিয়ে আমি অনার্স ক্লাস করতে যেতাম। দেখলেই হেসে হেসে বলতেন – “সাহিত্য পড়ে আর কি করবে? অঙ্ক কর, অঙ্কই জীবনে কাজে লাগবে।”
অধ্যাপকদের মধ্যে ইংরাজী অনার্স পড়াতেন – অমূল্যধন মুখোপাধ্যায় এম এ, পিআরএস। এঁদের মধ্যে অমূল্যবাবু কলকাতার আশুতোষ কলেজে চাকুরী নিয়ে আসেন, প্রিয়রঞ্জন সেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরাজীর লেকচারার হন, সুধাংশুবাবু ইংলণ্ডের লীডস ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি পাশ করে কলকাতা রিপন কলেজে ইংরাজী অধ্যাপক নিযুক্ত হন।
আমার বাবা ড. নগেন্দ্রমোহন গুপ্ত , রংপুর ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি প্রথম বাঙালি ভিয়েনা ইউনিভার্সিটি থেকে রসায়ন শাস্ত্রে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। ডক্টর মেঘনাদ সাহা আমার বাবার কাছে জার্মান ভাষা শিখেছিলেন। আমার বাবার পিএইচডির বিষয় রসায়ন হলেও বটানিও একটা বিষয় ছিল। তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজে আই এ , আই এস সি পরীক্ষার একটা বিষয় বটানির জন্য বটানি বিভাগ খোলান, এবং নিজে সেই বিভাগে বটানি পড়াতেন। আমার ভগ্নীপতি জিতেন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত কারমাইকেল কলেজ থেকে বি এ পাশ করে এম এ তে প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়ে কারমাইকেল কলেজেই অঙ্কের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। রংপুর কারমাইকেল কলেজের ছাত্রদের মধ্যে নাট্যকার তুলসী লাহিড়ীর নাম করা যেতে পারে। পরে তিনি বি এ পরীক্ষায় বাংলা ভাষায় প্রথম হয়ে “বঙ্কিম মেডেল” পেয়েছিলেন। আর একজন কারমাইকেল কলেজের ছাত্র – রংপুরের তাজহাটের রাজপুরোহিতের ছেলে রবীন্দ্রনাথ মৈত্র “মানময়ী গার্লস স্কুল” লিখে যশস্বী হয়েছিলেন।
কলেজের একটা পত্রিকা ছিল। খুব ভালো ভালো লেখা বেরোত। একজন মেধাবী ছাত্র, গিরিজাপ্রসন্ন রায়চৌধুরী – জমিদারের ছেলে। সংস্কৃত অনার্সে কারমাইকেল কলেজ থেকেই প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। আমার বাবার কাছে জার্মান পড়তে আসতেন। বি এ পাশ করবার পরই মেনেনজাইটিস রোগে তাঁর অকালমৃত্যু ঘটে। গিরিজাপ্রসন্ন রবীন্দ্রনাথের “মদনভষ্মের পর” – এর সংস্কৃত পদ্যে অপূর্ব অনুবাদ করেছিলেন, দু-চার লাইন এখনো মনে আছে – কলেজ পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। এখনো মাঝে মাঝে ভাবি, কলেজ-পত্রিকাগুলো রেখে দিলে পারতাম – রংপুরের স্মৃতি।
সম্পাদকের নোট: ড. সতী ঘোষ (গুপ্ত) ( ১৯১৩-১৯৯২) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনার সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি বাংলা বৈষ্ণব সাহিত্য নিয়ে পিএইচডি করেন। পূর্ববঙ্গে তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা। দার্জিলিংয়ের মহারাণী গার্লস স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করে ১৯৩০ সালে বেথুন কলেজে ভর্তি হন। সেখানে অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। ১৯৩২-৩৪ এ রংপুর কারমাইকেল কলেজে ইংরাজীতে বিএ পড়েন।এরপর ১৯৩৬ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৩৮ সনে এম এ পাশ করেন। পরের বছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক ভূপেন্দ্রনাথ ঘোষের সঙ্গে বিবাহ-বন্ধনের আবদ্ধ হন। পরবর্তীতে অধ্যাপক সুকুমার সেনের অধীনে গবেষণা করেন।
সুত্র: সতী ঘোষ: জীবনী/স্মৃতিচারণ
চিত্রপটে প্রতীক ও প্রকৃতি: চিত্রকর হাসি চক্রবর্তী স্মরণে
August 11, 2020
লেখিকা: ছায়া দে
হাসি চক্রবর্তী, ডাক নাম বাচ্চু; একমাত্র তাঁর মাকেই এই নামে ডাকতে শুনেছি, যখন তিনি আসতেন এদেশে ছেলের কাছে। মামাবাড়ি গৌরনদীতে জন্ম(১৯৪৮), বেড়ে উঠেছেন বরিশালে নিজেদের বাড়িতে। বি,এম কলেজের সামনাসামনি বেশ খানিকটা খোলামেলা জায়গা জুড়ে একটি দোতলা কাঠের বাড়ি, পুকুর, গাছপালা, ঝোঁপঝাড়, কোথাও একটি পদ্মপুকুর সাথে একটি ভীষণ ভয় ধরানো ভোর, অশ্বিনীকুমার টাউন হল, শংকরমঠ, জীবনানন্দের বাড়ি, কোথায় একটি কালীবাড়ি, বি এম কলেজের পুরো চৌহদ্দি —এসব ঘিরে কেটেছে তাঁর শৈশব, কৈশোর আর প্রাক যৌবনের দুরন্ত সময়গুলি। বাংলাদেশের এই চিরায়ত প্রকৃতির সাথে সমান্তরাল ভাবে বহমান একটি চিরন্তন দারিদ্র, পিতা সুশীল চক্রবর্তী ও জ্যা্ঠামনি ফণী চক্রবর্তীর বামপন্থী রাজনৈতিক দর্শন ও বার বার কারাভোগ, মায়ের জীবনসংগ্রাম –সবকিছু ছাপিয়ে ফল্গুধারার মতো নিরন্তর বহমান একটি পারিবারিক আনন্দধারার মধ্যে গঠিত হয়েছে তাঁর ব্যক্তি ও শিল্পীমানস। স্কুল জীবনে ছবি আঁকার শুরু ও আকর্ষণ; অনুসন্ধিৎসু মনের দশর্ন-পর্যবেক্ষনের অভিজ্ঞতা অর্জনের আকাঙ্খা কখনো কখনো সামাজিক নিষেধের সীমানাও ডিঙ্গিয়েছিল— সে গল্পও শুনেছি।
১৯৬৭ তে ঢাকা আর্ট কলেজে। বাবা-জ্যাঠা তখনও রাজনৈতিক বন্দী, মায়ের অনুমোদনে আর্ট কলেজে ভর্তি। মফস্বল থেকে আগত একজন যুবকের জন্য রাজধানী ঢাকা অবশ্যই একটি নতুন অভিজ্ঞতা। তরুন মনের রাজনেতিক ভাবনায় আন্দোলিত হয়ে কিছুদিন মাথায় লাল ঝান্ডা বেঁধে মিছিল-শ্লোগান করলেও খুব কম সময়ের মধ্যে রাজনীতির মোহমায়া ত্যাগ করে হাসি চক্রবর্তীও একজন শিল্পশিক্ষার্থীর সমূহ ব্যতিক্রমী কার্যক্রম ও চর্চার মধ্যে প্রবেশ করতে বাধ্য হন।
একটি শিল্পশিক্ষার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাপদ্ধতি ও শিক্ষা ব্যবস্থা প্রধানত ব্যবহারিক, মাধ্যমিকের তাত্ত্বিক পঠন পাঠন থেকে তা সম্পূর্ণ আলাদা। পরবর্তী ডিগ্রী গ্রহনের ক্ষেত্রেও এমন কি অন্যান্য ব্যবহারিক বিষয়(বিজ্ঞানের কোন বিষয়, মেডিকেল, ইন্জিনিয়ারিং বা আর্কিটেচার) থেকেও আলাদা। কারণ অন্যান্য বিষয়ের যে রকম নির্দিষ্ট ব্যবহার উপযোগিতা রয়েছে, শিল্পকলা তথা চিত্রকলায় সেইরকম নয়, বরং স্থান ও কালের সাথে সামন্জস্য রেখে নিজের সৃষ্টিশীলতাকে পঠিত কলাকৌশলের মাধ্যমে প্রকাশ করতে হয়, যা শিল্পীর নিজস্ব শিল্পদর্শনকে ধারণ করবে, এবং একই সাথে শিল্পীকে নিজস্ব পরিচয়ে চেনাবে। তাই প্রতিষ্ঠানে শিল্পশিক্ষার একাডেমিক পদ্ধতিতে শিল্পশিক্ষার পাঠ গ্রহন করতে করতে একজন শিল্পশিক্ষার্থীকে যেমন তার স্থান, কাল ও সময়কে নিজ অভিজ্ঞতায় ধারণ করতে হয়, তেমনি ক্রমে এক অদৃশ্য দর্শক শ্রেণীর সাথে পরিচিত হতে হয়, যা পরবর্তীতে তাঁর পুরো শিল্প জীবনের অণুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। সাথে সাথে একটি নিজস্ব শিল্পভাষার আবিষ্কারও একজন শিল্পীর প্রধান ভাবনার বিষয় হয়ে উঠে।
হাসি চক্রবর্তী যখন ঢাকা আর্ট কলেজে পাঠ গ্রহন করতে এলেন সেইসময় চিত্রকলায় সিনিয়র শিল্পীদের দুটি শক্তিশালী ধারা প্রবহমান। প্রথম ও প্রধান ধারার শিল্পীরা তাঁদের শিল্পচিন্তা প্রকাশে বিষয়বস্তুকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। এই ধারার প্রধান শিল্পী শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন,পটুয়া কামরুল হাসান, এস.এম.সুলতান, সফিউদ্দিন আহমেদ, খাজা শফিক আহমদ, আনোয়ারুল হক, মোস্তফা মনোয়ার প্রমুখ শিল্পীদের ছবিতে বাস্তববাদী রীতির বিকাশ ঘটেছিল।পরবর্তীতে তাঁদের ছাত্রদের একটি মেধাবী দল সরাসরি পাশ্চাত্য শিল্পকলার সাহচর্যে এসেছিলেন। তাঁদের হাত ধরে এদেশের চিত্রকলায় এসেছে পাশ্চাত্যধর্মী উপস্থাপনের রীতিনীতি। বিদেশ ফেরত সে শিল্পীদের কেউ কেউ বিশুদ্ধ রীতিতে, কেউ কেউ আধা বিমূর্ত রীতিতে শিল্পচর্চা করেছিলেন। সেই দ্বিতীয় দলের প্রধান শিল্পীরা হলেন শিল্পী আমিনুল ইসলাম, মোঃ কিবরিয়া,হামিদুর রহমান, আ রাজ্জাক, মুর্তজা বশীর, রশীদ চৌধুরি, দেবদাস চক্রবর্তী, কাইয়ূম চৌধুরি, আ.বাসেত, ভাস্কর নভেরা আহমেদ, সৈয়দ জাহাঙ্গীর, নিতুন কুন্ডু, হাশেম খান, সমরজিত রায়চোধুরি, আবু তাহের, আ মতিন, শিল্পী মাহতাব,শামসুল ইসলাম নিজামী আনোয়বর জাহান প্রমুখ। যুদ্ধ পরবর্তী দেশে বিরাজমান অস্থিরতায় অপেক্ষাকৃত তরুনশিল্পীদের স্বপ্ন ও সামর্থের সম্বন্বয়ে চিত্ররচনায় তরুণ শিল্পীদের এই দুটি ধারার কোনটিই যথেষ্ট মনে হয়নি। হাসি চক্রবর্তী তাঁর সেই সময়কার শিল্পভাবনা ও প্রয়াসকে তাঁর ‘আমাদের শিল্পকলা ও শিল্পদর্শন” প্রবন্ধে বিস্তারিত প্রকাশ করেছেন।
“ বস্তুত আমাদের সময় ছিলো অস্থির এবং আমরা ছিলাম তরুণ। যুদ্ধপরবর্তী বাংলাদেশের সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিক টানাপোড়েন শিল্পীসমাজকেও অস্থির করে তুলেছিল। চিত্রকলায় যা কিছু আমাদের চারপাশে ছড়ানো ছিল, মন তাতে স্বস্তি থুঁজে পাচ্ছিল না। অথবা এভাবে বলা যায়, আমরা নিজেদের জন্য এমন একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করতে চেয়েছিলাম যা হবে স্বতন্ত্র এবং শ্রেষ্ঠ। আমাদের পূর্বসূরিদের ছবির আবেগ থেকে আমাদের উপলব্ধি ছিল ভিন্ন, বলার কথা ছিল অন্য— তাই আমাদের প্রয়োজন ছিল একটি ভিন্ন প্রকাশভঙ্গি। অভিজ্ঞতার ঝুড়ি তখনো তেমন সমৃদ্ধ নয়; কিন্তু প্রকাশিত হবার আকাঙ্খা ছিল তীব্র, বলা যায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তীব্র। মনে রাখতে হবে যে, আজকের মতো আমাদের সামনে বিশ্বের সবগুলো দরজা- জানালা এমন হাট করে তখন খোলা ছিলনা। বিশ্বের অন্যান্য দেশের চিত্রকলার যেটুকু খবর শিল্পকলার ইতিহাসের পাঠ্য হিসেবে আমাদের সামনে এসে পৌঁছেছিল, তা আমরা পরীক্ষার খাতা পর্যন্ত টেনে নিতে রাজি ছিলাম, কিন্তু সেসব বিষয় বা চিত্রের রীতি বা আভাস ক্যানভাসে টেনে আনার মতো প্রলুব্ধ আমাদের করেনি। আমরা আমাদের জন্য একটি পৃথক চিত্রভাষার অন্বেষণ করছিলাম — যার ঠিকানা আমাদের পুরোপরি জানা ছিল না। বিদেশ ফেরত শিল্পীশিক্ষকদের কাজের সাথে পরিচিত হওয়া ছাড়া নিম্নমানের মুদ্রিত বিদেশি চিত্রের কিছু রিপ্রোডাকশন আমাদের দেখা ছিল। কিন্তু আমাদের প্রয়োজন ছিল এমন ইঙ্গিতময়তা ও রূপের — যা একই সাথে দৃশ্য এবং অর্থময়তার সংঘাতে তীব্র হয়ে উঠতে পারে, প্রতীকী আভাসে ধারণ করতে পারে আমাদের ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা, ব্যর্থতা ও সাফল্যের প্রয়াসকে। সেই অন্বেষায় আমাদের ছবি কমবেশি প্রতীকধর্মী হয়ে উঠলো। আমাদের তখনকার ছবিতে সময়ের অস্থিরতা, নৈরাশ্য, প্রতিবাদ, আক্রোশ এবং যৌবনের রোমান্টিকতা ইত্যাদি প্রতীকী চেহারায় প্রকাশিত হতে চেয়েছে স্ব-স্ব শৈলী অনুযায়ী। কারো কারো ছবিতে স্যুররিয়ালিস্টিক লক্ষণও লক্ষ্য করা গেছে। অর্থাৎ মূর্ত, বিমূর্ত বা আধাবিমূর্ত — যে রীতিতেই অঙ্কিত হোক না কেন প্রতীকী ব্যঞ্জনায় প্রকাশিত হওয়া ছিল এই ধারার চিত্রীদের বৈশিষ্ট্য।”
সে ধারার প্রধান শিল্পীরা হলেন শিল্পী চন্দ্রশেখর দে, হাসি চক্রবর্তী, মনসুর-উল-করিম, কাজী হাসান হাবিব, বনিজুল হক, শাহাবুদ্দিন, অলক রায়, কে,এম,এ কাইয়ুম মোমেনুল রেজা, আসেম আনসারী, মারুফ আহমেদ,ইব্রাহিম, ফরিদা জামান, নাঈমা হক, নাসিম আহমেদ প্রমুখ শিল্পী। ছাত্রাবস্থায় এই মানসিকতার ১২ জন শিল্পী ১৯৭৩ সালে “পেইন্টার্স গ্রুপ” নামে বাংলাদেশ চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয় ছাত্র সংসদ গ্যালারিতে একটি গ্রুপ প্রদর্শনী করে, যা সেসময়কার শিল্পী সমাজে প্রচন্ড আলোড়ন সৃষ্টি করে। ছাত্রাবস্থায় একাডেমিক কাজের বাইরে এরকম ‘মডার্ন’ কাজের পরিক্ষা-নিরীক্ষা শিল্পশক্ষকদের তেমন পছন্দের ছিল না। কিন্তু এই গ্রুপের অন্যতম সদস্য শিল্পী চন্দ্রশেখর দে বিশ্বাস করেন এই প্রথাবিরোধী ধারাটিই বাংলাদেশের শিল্পাঙ্গনে আধুনিকতাকে আহ্বান করে এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে সম্ভাবনার পথ খুলে দেয়।
ঢাকা আর্ট কলেজ থেকে বি.এফ.,এ শেষ করে ১৯৭২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে এম.এফ.এ করতে এসেছিলেন হাসি চক্রবর্তী। এম.এফ.এ শেষ করে চট্টগ্রাম চারুকলা কলেজে প্রথমে খন্ডকালীন, পরে পূর্ণকালীন শিক্ষক হিসেবে, আরো পরে অধ্যক্ষ এবং চারুকলা কলেজ সরকারী চারুকলা কলেজে পরিণত হলে আবারও শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। ২০০৭ সালে সরকারী নিয়ম অনুসারে অবসরে যান সরকারী চারুকলা কলেজ থেকেই। তবে চারুকলা কলেজে তাঁর চাকুরীকাল নিরবিচ্ছিন্ন ছিল না, ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ বদলী হয়ে যান এবং দশ বছর পর সরকারী চারুকলা কলেজে পুনরায় ফেরত না আসা পর্যন্ত ওখানেই কাজ করেছেন।
হাসি চক্রবর্তী চট্টগ্রামে এসেছিলেন একজন সহায় সম্বলহীন এক তরুন হিসেবে। যুদ্ধ পরবর্তীতে তাঁর জীবনযাত্রা ছিলো একেবারে একা ও শেকড়হীন। বরিশালে পৈত্রিক সহায় সম্পত্তি হারানো, ’৭৩ সালে বাবার মৃত্যূ এবং যুদ্ধ পরবর্তী নানা বিপর্যয় ও সামাজিক ভাঙ্গনে পুরো পরিবারের দেশান্তর তাঁকে একেবারে স্বজনহীন স্থায়ী ঠিকানাহীন একজন শহুরে মানুষে পরিণত করেছিল। ১৯৭৬ সালে বিয়ে। আমার পঠনপাঠন বাংলা সাহিত্য নিয়ে; সেই সময়ের অনার্সের নিয়মানুসারে অনার্সের প্রধান বিষয়ের পাশাপাশি দুটো সাবসিডিয়ারি বিষয়ও অধ্যয়ন করতে হতো। আমার অধীত দুটি বিষয়ের একটি ছিলো চারুকলা। পরবর্তীতে প্রায় আঠারো বছর চারুকলা কলেজে প্রি ডিগ্রী ক্লাসে ‘বাংলা’ বিষয় এবং বি,এফ.এ ডিগ্রী ক্লাসে ‘নন্দনতত্ত্ব’ নামে একটি বাধ্যতামূলক বিষয়ে আমি পাঠদান করেছি। চারুকলা বিষয়ে আমার যে যৎকিঞ্চিত জানা বা জ্ঞান তার প্রায় সবটুকু হাসি চক্রবর্তীর কাছ থেকেই পাওয়া। একজন চিত্রশিল্পীর চিত্রভাবনা প্রথমে ‘লেওয়াটে’ ও ধীরে ধীরে রঙে-রেখায়-ফর্মে ক্যানভাসে ক্রমে কিভাবে ছবি হয়ে ওঠে তা দেখেছি। সাথে কত শিল্পী-বন্ধু, কত জ্ঞানী-গুণী শিল্পীর পরস্পর কথোপকথন, ম্যারাথন আড্ডা- বাসায়, মেঝের উপর পড়ে থাকা স্কেচ খাতায় যার যা খুশি যখন খুশি আঁকাআঁকি, তাদের সাহচর্য, ক্রোধ, নিন্দা, প্রশংসা সবকিছুর ভিতর দিয়ে চারুকলার একটা রহস্যময় জগত রং, রেখা, ভাষা-পরিভাষা নিয়ে আমার সামনে ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয়েছে।
চারুকলা বিষয়ে আমাকে সরাসরি তাত্ত্বিক শিক্ষা নিতে হলো যখন হাসি চক্রবর্তী তাঁর কিছু শিল্পবিষয়ক চিন্তা ভাবনাকে লেখায় রূপ দিতে চাইলেন। লেখার কাজটা আমাকে করতে হলো: ভাষায় তাঁর ভাবনাকে রূপ দেয়া কিছুটা কঠিন যখন আমি চিত্রশিল্পী নই, যখন ভাবনাটা পুরোপুরি আমার নয়, আবার তা শ্রুতিলেখনও নয়। তার আগে আমি তাঁর একক প্রদর্শনীর ক্যাটালগগুলিতে তাঁর কথাকে ভাষায় রূপান্তর করেছি মাত্র। শিল্পীর সাথে ক্রমাগত আলাপ ছাড়াও তখন থেকে বাংলায় লেখা দেশি বিদেশি নানা শিল্পসমালোচকের শিল্প ইতিহাস, শিল্পতত্ত্ব বিষয়ক প্রবন্ধ ও বই কখনো একা, কখনো একসাথে পড়েছি। আজ এই লেখাটিও এসব জানাজানি চেনাচিনির আলোকে লেখা।
হাসি চক্রবর্তীর ১৯৭৫ এ আকাঁ চার কি পাঁচটি ছবি — (যতটা মনে পড়ে ছবিগুলি তাঁর মাস্টার্সের কাজ) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী আয়োজিত “প্রথম নবীন শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনী ১৯৭৫”তে ছিল। সে প্রদর্শনীতে “কম্পোজিসন উইথ আই” ছবিটি চিত্রকলা মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার লাভ করে। এই প্রদর্শনীর ছবিগুলিই আমার দেখা তাঁর প্রথম ছবি। ‘কম্পোজিসন উইথ আই’, ‘ইমেজ অব লাভ’ সিরিজের সম্ভবত তিনটি ছবি। হার্ডবোর্ডের উপর তেলরঙে আঁকা ছবিগুলিতে নানা বস্তু ও ফর্মের উপস্থাপনা আপাতসম্পর্কহীন মনে হলেও সব মিলিয়ে বেশ একটি জমাটি রচনা এতোটাই উজ্জ্বলতায় নির্মিত হয়েছিল যা চোখকে ছবি থেকে দৃষ্টি ফেরাতে দেয় না। ‘কম্পোজিসন উইথ আই’ ছবিটি হাসি চক্রবর্তীর সমগ্র চিত্রচর্চার একটা দিক নির্দশনা দেয়। সমস্ত পটভূমি জুড়ে একটি হরিণ, বেশ বড় আকৃতির একটা মানব চক্ষু, শ্রেণীবদ্ধ তিনটি মাছের শরীরের পাশে মাছের কাঁটা, জ্বলন্ত মোমবাতি, প্যাঁচা – এসব নিয়ে বিন্যস্ত কম্পোজিসন। প্রতীকধর্মীতা তাঁর ছবির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলেও পরবর্তী সময়ে ক্রমে বুঝেছি তাঁর ছবিতে ব্যবহৃত এই সব প্রতীক বিশেষ মনস্তাত্ত্বিক বা তাত্ত্বিক অর্থের চেয়ে দৃশ্যগত অভিজ্ঞতার রসেই বেশি পুষ্ট।
১৯৭৬ সাল থেকে হাসি চক্রবর্তীর জীবনভর চিত্ররচনার পুরো অধ্যায়টি আমার সামনে রচিত। তেলরঙ তাঁর প্রধান মাধ্যম, ১৯৮২ সালে বিমূর্ত ধারার একটি সিরিজ অঙ্কনে এনামেল রং মাধ্যমে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা ছাড়া তাঁকে তেলরঙ ছাড়া আর কোন মাধ্যমে তেমন স্বাচ্ছন্দ্য দেখিনি। চিত্ররচনায় ক্রমে বিষয়বস্তুর উপস্থাপনা চেয়ে রং ব্যবহারে তাঁর অধিক মনোযোগ লক্ষ্য করেছি।রঙ তৈরিতে স্বনিয়ন্ত্রিত এক শৃংখলা এবং রং ব্যবহারে নিজস্বতা তাকে তখন থেকেই অন্য শিল্পীদের চেয়ে আলাদা করে চিনিয়েছে। তাঁর প্রথম পর্যায়ের চিত্রকলায় বিষয়বস্তু হিসেবে নানা রকম প্রতীক ব্যবহারের প্রবণতা ক্রমে প্রকৃতির সহজ রূপায়নে রূপান্তর হয়েছে। তাঁর অঙ্কিত পুরো চিত্রযাত্রায় আমার মনে হয় তাঁর ছবিগুলোর মধ্যে একটা ধারাবাহিক রূপান্তর আছে; তাঁর রঙ ও রঙের ব্যবহার-পদ্ধতি, বিষয় ও বিষয়-উপস্থাপনরীতির সূক্ষ্ম পরিবর্তন এক ছবি থেকে আর এক ছবিতে গড়িয়ে গেছে। চিত্রকলা একটি দর্শন ইন্দ্রিয়নির্ভর শিল্পমাধ্যম, তাই একজন চিত্রশিল্পীকে তাঁর চিত্রকর্ম নিয়ে বার বার দর্শকশ্রেণীর সামনে দাঁড়াতে হয় এবং চিত্রপ্রদর্শনী ছাড়া আর কোন উপায়ে তা সম্ভব নয়। চিত্রশিল্পীদের কাছে তাই সবসময় একক প্রদর্শনীর মতো যৌথ প্রদর্শনীগুলিও সমান গুরুত্বপূর্ণ, তাতে যেমন নিজের সৃষ্টির ক্রমপরিবর্তনের সুরটি দর্শকশ্রেণীর কাছে মেলে ধরা যায়, তেমনি অনুসন্ধিৎসু দর্শকও এক শিল্পীর শিল্পকর্মের সাথে অন্য শিল্পীর শিল্পকর্মকে মিলিয়ে দেখার অনির্বচনীয় উপভোগেরও সামিল হতে পারেন। শিল্পকলার যুগধর্মটিও অবলীলায় যৌথ প্রদর্শনীতে ধরা পড়ে।
হাসি চক্রবর্তী তাঁর সময়ে আয়োজিত ও আমন্ত্রিত দেশে বিদেশের প্রায় সব যৌথ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন। সংক্ষেপে তা লিপিবদ্ধ করলাম।
Group Exhibitions
Calcutta, India, Paintings from Bangladesh, 1971
Delhi, India, Paintings from Bangladesh, 1972.
Ethnological Museum of Dresden, East Germany, Contemporary Bangladesh Art Exhibition, 1978.
Whitechapel Art Gallery of London, United Kingdom, Selected Fifty Paintings of Bangladesh, 1979.
Dhaka, Bangladesh, Asian Art Bangladesh, 1981.
Sofia, Bulgaria, Contemporary Bangladesh Art Exhibition, 1982.
Dhaka, Bangladesh, 2nd Asian Art Biennale Bangladesh, 1983.
Czechoslovakia, Selected Drawings and Prints from Bangladesh Exhibition, 1984.
Kualalumpur, Malaysia, Contemporary Paintings of Bangladesh, 1985.
Dhaka, Bangladesh, 3rd Asian Art Biennale Bangladesh, 1986.
National Gallery of Modern Art, New Delhi, India, Contemporary Paintings of Bangladesh, 1987.
Alhamra Art Gallery Lahore, Pakistan, 1st Art Biennale of Pakistan, 1988.
Fukuoka, Japan, 4th Asian Art Biennale Bangladesh and 3rd Asian Art Show, 1989.
Harare, Zimbabwe and Zambia, Contemporary Paintings of Bangladesh, 1990.
Dhaka, Bangladesh, 5th Asian Biennale, 1991.
Habana, Cuba, Forth Habana Biennale, 1991.
India, Contemporary Painting Exhibition of South Asian Country Festival, 1992
Dhaka, Bangladesh, 6th Asian Art Biennale Bangladesh, 1993
Dhaka, Bangladesh, 7th Asian Art Biennale Bangladesh, 1995
Dhaka, Bangladesh, 8th Asian Art Biennale Bangladesh, 1997
Dhaka, Bangladesh, 9th Asian Art Biennale Bangladesh, 1999
Dhaka, Bangladesh, 10th Asian Art Biennale Bangladesh, 2001
Anniversary Exhibition, rooted creativity Bengal Gallery of Fine Arts.2010
Bangladesh Shilpakal Academy, Dhaka, National Art Exhibitions 1976,1977,1982,1985,1986,1989,1992.
Bangladesh Shilpakal Academy, Dhaka. Young Painter’sExhibitions, 1976, 1980, 1982, 1989.
১৯৭৬সালে হাসি চক্রবর্তীর প্রথম চিত্রপ্রদর্শনী চট্টগ্রাম ক্লাবে। এর চার বছর পর ১৯৮০ সালে দ্বিতীয় একক প্রদর্শনী সাজু আর্ট গ্যালারি, গুলশানে। এই চার বছরে দর্শকশ্রেণীর কাছে তাঁর নিজস্ব একটি চিত্রভাষা পরিচিত উঠেছে। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত ‘নবীন শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনী’তে সকল মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ শিল্পীর পুরস্কার লাভ করেছেন। বিষয় উপস্থাপনে প্রতীকধর্মীতাকে একেবারে ত্যাগ না করলেও তাঁর ছবিতে রং ক্রমশ প্রধান হয়ে উঠছে এবং প্রকৃতির রূপ রূপায়নে স্থিত হয়েছেন।তাঁর সমগ্র শিল্পচর্চায় শিল্পী বারবার তাঁর চিত্রকলার অন্যতম উপাদান হিসেবে রঙের প্রাধান্যের কথা জানিয়েছেন। তিনি চিত্রপটে র্ং, রেখা ও কম্পোজিসনের সাবলীল বাঁধুনি দিয়ে একটি অনন্য শৈলী রচনা করতে চান যা একান্তভাবে তাঁর পরিচয় বহন করবে। ড্রইং শিল্পীর নিত্যদিন ও ক্ষণের সঙ্গী। তাঁর ড্রইং নিরাভরণ কালির ঋজু,স্পষ্ট,একরৈখিক,সামান্য কিন্তু অসামান্য-রূপী এবং ইংগিতধর্মী, তাই কাব্যিক।
তৄতীয় প্রদর্শনী ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে। শৈশব-কৈশরের নদীনালা জড়াজড়ি এক মায়াবি প্রকৃতির বরিশাল ছেড়ে এলেও সবুজ বনানী আর সমুদ্র ও পাহাড়বেষ্টিত চট্টগ্রামের প্রকৃতি তাঁর সৃষ্টিশীলতার অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে এবং ক্রমে বিষয়বস্তুতে প্রতীকের পাশাপাশি প্রকৃতির সরল রূপায়ন প্রধান হয়ে ওঠে। ‘প্রকৃতির রূপবৈচিত্র্য আমাকে আকর্ষণ করে, তাই যখনই মনে মনে একটি ছবি করতে চাই তখন তা-ই হয়ে ওঠে।” – এ্টি তাঁর এই প্রদর্শনীর মূল সুর। ১৯৮৯ সালে চতুর্থ একক প্রদর্শনী জার্মান কালচারাল সেন্টারে, এবং পঞ্চম প্রদর্শনী ১৯৯৩ সালে যোজন কন্টেম্পোয়ারি আর্ট গ্যালারিতে। শিল্প সমালোচকদের বিবেচনায় হাসি চক্রবর্তীর চিত্রভাষা ততদিনে পরিণত রূপ ধারণ করেছে। ক্যানভাসে আলোছায়া নির্মানে বিষয়বস্তু নয়, রঙ-ই হয়ে উঠেছে তাঁর প্রধান হাতিয়ার। এই প্রসঙ্গে ছাত্র হাসি চক্রবর্তীর চতুর্থ একক প্রদর্শনীর ছবি সম্পর্কে বিশিষ্ট তৈলরঙ শিল্পী ও শিল্প-শিক্ষক মোহাম্মদ কিবরিয়ার (M0hammed Kibria) বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ। ‘His skill in the art of colour-mixing in Canvas is worth-seeing. Of all the colour, the use of black is prominent which has made his paintings powerful and complete. Besides, has use of blue and yellow colours has made his paintings suggestive and successful.’
তিনিই আবার শিল্পীর পঞ্চম একক চিত্রপ্রদর্শনীর চিত্রমালায় রঙ ব্যবহারের বৈচিত্রকে একজন সচেতন পর্যবেক্ষণকারীর দৃষ্টিতে সনাক্ত করেন। ‘ Though Hashi especially works on basic forms but he is again keeping white space in his works which is different from his earlier works. Use of colour is quite bold. His creative thoughts are very clear. His experiences are clearly noticeable in his paintings.’
শিল্পীর শেষ দুটি একক প্রদর্শনী সুইডেনে, ১৯৯৪ ও ১৯৯৫ সালে। ব্যক্তিগত ইউরোপ ভ্রমনের সময় ওখানেই একেঁছেন ছবিগুলি। তাঁর নিজের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘I have tried to draw the speed of colour and line. In a different way, it’s the speed of life.’
১৯৯১-১৯৯২ এর পর থেকে তাঁর ছবিতে সমাজ জীবনের নানা টানা পোড়েন, ব্যক্তিগত ও পারিপার্শ্বিক জীবনযাত্রার নৈরাশ্য,অস্থিরতা, জটিলতা মূর্ত,আধা মূর্ত, ও বিমূর্ততায় প্রকাশ পেয়েছে।
কোন শিল্পীর ছবিকে কখনই ভাষায় যথাযথভাবে ব্যক্ত করা যায়না। চিত্রকলা হচ্ছে স্থির রূপকল্পের বিন্যাস, চিত্রিত কোন বস্তুর প্রতিরূপ বা প্রতীকের বর্নণাও চিত্রটির যথাযথ পরিচয় দিতে পারে না। এই ধরনের লেখা শিল্পীকে তাঁর স্থান কালের প্রেক্ষাপটে স্থাপন করে তাঁর শিল্প-প্রবণতার আভাস দিতে পারে মাত্র। যে কোন চিত্রশিল্পীই তাঁর চিত্রে স্থির রূপকল্পটি এমনভাবে নির্মান করতে চান যা তাঁর শিল্পদর্শনকে যেমন প্রকাশ করে, তেমনি রূপকল্পটির অপ্রকাশ্য প্রবাহটিকেও দর্শকের কাছে কোনো না কোনো ভাবে প্রবাহিত করে দিতে পারে। পরবর্তী প্রজন্মের শিল্পীদের দেশের শিল্পকলার মূল প্রবাহের সাথে যুক্ত করাতে হলে অবশ্যই পূর্ববর্তী শিল্পীদের ভূমিকা ও শিল্পরীতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে।
চিত্ররচনার পাশাপাশি হাসি চক্রবর্তীর সাংগঠনিক কাজের আগ্রহও তাঁর জীবনযাত্রাকে অনেকটাই পরিচালিত করেছে। ঢাকা আর্ট কলেজে পড়াকালীন সময় ‘পেইন্টার্স গ্রুপ’কে ঘিরে তাঁর যে সাংগঠনিক স্পৃহা পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম চারুকলা কলেজ, ‘ফাইভ ফিংগারস্’(১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত শিশু সংগঠন), এবং চাকুরি থেকে অবসর গ্রহনের পর শিশু কিশোরদের জন্যে প্রতিষ্ঠিত ‘হাসিস্ স্টুডিও’ এর উদাহরণ। হাসি চক্রবর্তীর জীবনে শিল্পী রশিদ চৌধুরির প্রভাবের কথা উল্লেখ করে বন্ধু চন্দ্রশেখর বলেন, “শিল্পী রশিদ চৌধুরি হাসিকে একটি অন্যধরনের স্বপ্নের ভিতরে নিয়ে গিয়েছিলেন। চারুকলা কলেজকে ঘিরে এক অদ্ভূত Passion আমার মনে হয় ওকে একেবারে নেশাগ্রস্ত করে রেখেছিলো,—-কিন্তু কলেজকে ঘিরে নানা ঘাত প্রতিঘাতের সেই সময়গুলিতে আঁকা কোন ছবিতে ঘাত প্রতিঘাতের কোন প্রতিফলন ছিলো না। ‘Image of Love”, ‘The Episode Of Forest.’ সিরিজের ছবিগুলি সেই সময়ের আঁকা ছবি।’
ছবি আঁকার পাশাপাশি তিনি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক দেয়ালচিত্র অঙ্কন, প্রচ্ছদ, পোস্টার ইত্যাদিও করেছেন সমান মনোযোগ ও যত্নের সাথে। শিল্পকলা ও শিক্ষা বিষয়ক কিছু লেখালিখিও করেছেন, ‘রেখা ও লেখায় হাসি চক্রবর্তী’ নামে তাঁর একটি গ্রন্থ রয়েছে।
হাসি চক্রবর্তী ব্যাক্তি চরিত্রে আসঙ্গলিপ্সু এক মানুষ, জন্মস্থানের শিকড় উপড়ানো এই যুবক সারা জীবন বন্ধুবান্ধবের হৃদয়ে শিকড় ছড়াতে চেয়েছে। মারাত্মক আবেগপ্রবণ ও রাগপ্রধান তিনি শেষ বয়সে নিসঙ্গ এক মানুষ। পুরোদস্তুর পারিবারিক হয়েও হৃদয়ে সন্ন্যাসী। প্যালেটে রং তৈরির কারিগর তিনি, ছবিতে রঙের কবি, স্থির শান্ত এক প্রকৃতি প্রেমিক।
ছায়া দে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ। তিনি চিত্রকর হাসি চক্রবর্তীর স্ত্রী।
একজন সৈনিকের স্মৃতিকথা
August 8, 2020
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারি একজন সাধারণ মুক্তিযোদ্ধার অসাধারণ স্মৃতিকথা এই বইটি। যুদ্ধের শুরুতে বীরবিক্রম সৈয়দ আমীরুজ্জামান রাজশাহীতে ইপিআরের বেতারকর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেই অবস্থান থেকে কোন নির্দেশ বা ঘোষণার অপেক্ষা না করেই দেশপ্রেমের টানে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সিগন্যাল কোরের একজন সদস্য হয়েও তিনি অস্ত্রহাতে লড়াই করেন, অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে অংশ নেন , তাতে যথার্থ বীরত্বের পরিচয় দেন। যুদ্ধের শেষদিকে তিনি আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।বিজয়ের কয়েকদিন পর ভারত থেকে দেশে ফিরে আসেন তিনি।তাঁর যুদ্ধদিনের স্মৃতিকথা বই আকারে প্রথম প্রকাশিত হয় ২০০৮ সালে। ২০১৬ সালে বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ বের হয়। সৈয়দ আমীরুজ্জামানের পুত্র সৈয়দ তহা ফজলুল ওয়াহেদের অনুমতিক্রমে বইটির সফট কপি সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হল।
বীরবিক্রম সৈয়দ আমীরুজ্জামান ১৯৬২ সালের মধ্যভাগে ইপিআরের সিগন্যাল শাখার সদস্য হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামের রামগড়ে যান। প্রতিকূল পরিবেশ ও সীমিত সম্পদ নিয়ে কিভাবে সীমান্তরক্ষীদের কাজ করতে হয় সে বিষয়গুলো তারিখ অনুসারে তিনি খাতায় লিপিবদ্ধ করে রাখতেন এবং স্ত্রী রাজিয়া খাতুনকে নিয়মিত চিঠি লিখে জানাতেন। সেই দিনলিপি ও চিঠিগুলি নিয়ে ২০১১ সালে রামগড়ের ডায়েরি প্রকাশিত হয়। সৈয়দ আমীরুজ্জামানের পুত্র সৈয়দ তহা ফজলুল ওয়াহেদের অনুমতিক্রমে বইটির সফট কপি সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হল।
‘Hello Tajuddin’: A historic telephone conversation
July 23, 2020
Here we are publishing verbatim a report on the first telephone conversation between Sheikh Mujibur Rahman and Tajuddin Ahmad after Bangabandhu’s arrival in London on January 8, 1972 following his unconditional release from Pakistani detention. This report was published in Morning News on January 9, 1972. — Editor, Bangladesh on Record
Mujib informed of people’s armed struggle
Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman yesterday asked Premier Tajuddin first of all of the welfare of his people and enquired if my people were murdered by the barbarous Pakistani Military Junta.
The Bangabandhu was talking to the Premier on a London-Dacca long distance telephone call.
The Sheikh asked, “Hellow Tajuddin! I have been surrounded by Pressman. What should I speak to them? How are my countrymen? Have they been murdered by the Pakistani Military junta?”
BSS adds: The Prime Minister replied: ” Your beloved Bangladesh is now a free and independent country of the world. People of this country very responsibly carried out your directives. They have shed enough blood for their independence but they did not bow down their heads before their murderers.”
Releasing the gist of the conversation between the Bangabandhu and Mr. Tajuddin , Finance Minister, Mr. Mansur Ali and two other Awami League leaders , the Prime Minister’s Secretariat last night said Sheikh Mujibur Rahman had enquired about his ailing parents and conveyed a message to them that he would soon be with them “to kiss their feet”.
জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের চোখে কয়েকজন ব্যক্তিত্ব
July 22, 2020
জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের এই সাক্ষাৎকারটি উত্তরণ পত্রিকায় ছাপা হয়। আহমদ ছফা এবং কাজী আকরম হোসেন এই পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে বিভিন্ন সময় দায়িত্ব পালন করেছেন। সাক্ষাৎকারটি প্রকাশের সঠিক তারিখ এই মুহুর্তে আমাদের জানা নেই। সাক্ষাৎকারটির কোন বানান পরিবর্তন করা হয়নি।– বাংলাদেশ অন রেকর্ড সম্পাদক
সাহিত্য-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কিত কতিপয় বিষয়ে জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের মতামত উত্তরণের এই সংখ্যাটিতে তুলে ধরছি রাজ্জাক সাহেবের বয়স হয়েছে। বেশ কিছুদিন থেকে শরীরটিও ভালো নেই। সাধারণত: বাড়ির বাইরে কোথাও যান না। একনাগাড়ে কথা বলতে গেলে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। আমাদের প্রত্যাশা ছিলো অর্থনীতি-রাজনীতিসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রশ্নে সাম্প্রতিককালে তাঁর মনে কি ধরনের ভাবনা চিন্তা জন্ম নিচ্ছে সেগুলো পাঠকের কাছে নিবেদন করব।
জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে এই সময়ে গ্রন্থিল রাজনীতি-অর্থনীতি সম্পর্কিত বিষয়গুলো উত্থাপন করা থেকে আমাদের বিরত থাকতে হয়েছে। আমরা রাজা রামমোহন রায় সম্পর্কে তাঁর মতামত জানতে চেয়েছিলাম। শুরুতেই তিনি একটা ছোট রসিকতা করেছিলেন। দিল্লীর বাদশাহ রামমোহনকে রাজা খেতাব দিয়েছিলেন। দিল্লীর বাদশাহর বার্ষিক পেনশন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধে বৃদ্ধির ওকালতি করার জন্য তাঁকে ইংল্যান্ডে পাঠানো হয়েছিল এবং ইংল্যান্ড যাত্রার পূর্বে তাঁর ভদ্র পরিচয়ের চিহ্ন স্বরুপ রাজা টাইটেলটি দেওয়া হয়েছিল অথচ দিল্লীর সম্রাটের কোন রাজত্ব সেই সময় ছিলোনা।ইংরেজ রেসিডেন্ট তাঁর লালকেল্লার কর্মকাণ্ডও অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করতেন। তিনি ইংরেজদের কাছ থেকে বার্ষিক পেনশন পেতেন।বিনিময়ে ইংরেজরা তাঁর সম্রাট পদবীটি রেখে মেনে নিয়েছিলো। রামমোহন সাম্রাজ্যহীন সম্রাটের দেয়া খেতাবটি সারা জীবন ধারণ করে রইলেন, এটা খুবই আশ্চর্যের!
রামমোহনকে তিনি সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করেন| তাঁকে আধুনিক ভারতের জনক বলা হয়ে থাকে। জাতীয় অধ্যাপক রাজ্জাক এই মূল্যায়ন সঠিক বলে মনে করেন না ।তাঁর মতে রামমোহনের সমস্ত চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু ছিল ধর্ম ।তিনি যা কিছু লিখেছেন তাঁর সিংহভাগই ধর্মবিষয়ক। ভারতবর্ষে এই ধরণের ব্যক্তিত্ব রামমোহনের পূর্বেও ছিলেন বরং বলা যেতে পারে রামমোহন রায় এই ধারার শেষ প্রতিনিধি।
অধ্যাপক রাজ্জাক রামমোহন যা বলেছেন, তার চাইতে যা করেছেন তাকেই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। রামমোহন ধর্মের কথা বলেছেন। কিন্তু লিখেছেন বাংলাভাষায়। এটাই রামমোহনের জীবনের সবচাইতে বড় কৃতিত্ব। রামমোহন রায় আরবী, ফার্সী, সংস্কৃত এবং ইংরেজী ভাষায় অসাধারন ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন ।কিন্তু লিখবার সময় ডানে বামে না তাকিয়ে বাংলা ভাষাটিকেই অবলম্বন স্বরূপ গ্রহণ করেছিলেন। এটা একটা অচিন্তিত পূর্ব ঘটনা। সে যুগে কেউ বাংলা ভাষায় লিখছে এ কথা চিন্তা করাও একরকম অসম্ভব ছিলো। রামমোহন রায় বাংলা ভাষার মাধ্যমে লিখতে শুরু করে একটি অনন্যসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। ব্রাহ্ম ধর্ম প্রচার নয় বাংলা ভাষা চর্চাই তাঁর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তিস্তম্ভ।
অধ্যাপক রাজ্জাক আরো বলেন উনবিংশ শতকে ইংরেজ রাজত্বের একটি অন্যতম প্রধান ঘটনা হলো দেশীয় ভাষা (ভার্নাকুলার ) সমূহের উত্থান। রামমোহনের পূর্বে দিল্লীর দরবারে, অযোধ্যায় এবং আরো কতিপয় ক্ষমতাকেন্দ্রে দেশীয় ভাষার চর্চা হতো। ঐ চর্চা শুধু কতিপয় ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ ছিলো। কাব্য, কিংবা রোমান্স রচনা ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে দেশীয় ভাষাসমূহের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি। একমাত্র রামমোহনই দেশীয় ভাষাকে সিরিয়াস চিন্তা-ভাবনার বাহন হিসেবে রুপদান করেছিলেন।
আমাদের পরবর্তী প্রশ্ন ছিলো পণ্ডিত ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পর্কে । অধ্যাপক রাজ্জাক বিদ্যাসাগর মহাশয়কে বিদ্যা-বুদ্ধি, সততা, ন্যায়নিষ্ঠা এবং সাহসের উনিশ শতকের একজন নায়ক-পুরুষ মনে করেন। কিন্তু বিদ্যাসাগরের দৃষ্টিভঙ্গির সীমাবদ্ধতার কথাও উল্লেখ করলেন। বিদ্যাসাগর বাঙালী বলতে বাঙালী হিন্দুকেই বুঝতেন। বাংলার মোট জনসংখ্যার অর্ধাংশ যে মুসলমান ঘুণাক্ষরেও এ চিন্তা তাঁর মনে উদয় হয়নি। বিধবা বিবাহ, শিক্ষার প্রসার এ জাতীয় নানা কল্যাণমূলক কর্মের মধ্যে তিনি নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর ত্যাগ-তিতিক্ষা, চরিত্রের বলিষ্ঠতা নিয়ে কোন প্রশ্ন উঠেনা। কিন্তু তিনিও বাঙালীর কল্যাণ বলতে বাঙালী হিন্দুদের কল্যাণ বুঝতেন।
পরে আমরা তাঁর কাছে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবকে উনিশ দশকের [শতকের] বাঙালি বুদ্ধিজীবিরা কোন চোখে দেখেছিলেন সে বিষয়ে কিছু কথাবার্তা বলতে অনুরোধ করি।তিনি বললেন, উনিশ শতকের যে সকল বাঙালি বুদ্ধিজীবী ১৮৫৭ সালের দিকে নানা সামাজিক ভূমিকা পালন করেছিলেন ঘেটে তাঁদের একটা তালিকা প্রস্তুত করে যাচাই করে নিতে পারেন। ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেশবচন্দ্র সেন, কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত এই সকল ব্যক্তির মধ্যে বেশির ভাগ চুপ করে ছিলেন দুএকজন ব্যতিক্রম ছাড়া কেউ বিশেষ কিছু বলেননি। এই রকম একটি বিশাল ব্যাপক ঘটনায় তাঁদের কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত হলোনা, এটা খুবই দুঃখের বিষয়। তাঁর মতামতের সারকথা হলো উনিশ শতকের বাঙালী বুদ্ধিজীবিরা ব্রিটিশকেই সমর্থন করেছিলেন। এ বিষয়ে অধিক সংবাদ জানার জন্য তিনি রিচার্ড টেম্পলের স্মৃতিকথাটি পড়তে পরামর্শ দিলেন।বইটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে নাকি পাওয়া যাবে।
আমাদের পরবর্তী জিজ্ঞাসা ছিল উনিশ শতকের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সমাজকে কিভাবে প্রভাবিত করেছিল সে সম্পর্কে । প্রত্যুত্তরে জাতীয় অধ্যাপক একটা সহজ দৃষ্টান্ত উল্লেখ করলেন। সমাচার দর্পণ, তত্ত্ববোধিনী, বঙ্গ দর্শন ইত্যাদি যে সকল সাময়িক পত্রিকা শিক্ষিত বাঙালীর মনন চর্চার ফসল হিসেবে গড়ে উঠেছিল সেগুলোর প্রচার কতদূর বিস্তৃত ছিলো তার একটা হিসাব নিতে বললেন। তিনি জানালেন, কোন পত্র-পত্রিকাই পাঁচশো কপির বেশী ছাপা হতোনা। শহর কলকাতার বাইরে ঐ সকল পত্র-পত্রিকা বিলি হতোনা বললেই চলে। বঙ্কিমের উপন্যাস সমূহও ঐ একই পর্যায়ের মধ্যে পড়ে।মাত্র মুষ্টিমেয় মানুষই এই নতুন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আওতাভুক্ত ছিলো।
অন্যদিকে বটতলার পুঁথি সমূহ হাজারে হাজারে মুদ্রিত হতো এবং বৃহত্তর বাংলার সবখানে ছড়িয়ে যেত। এ বিষয়ে বিশদ জানার জন্য কোলকাতার পরিবর্তন পত্রিকার সম্পাদক পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের লেখা বইটি পড়তে বললেন। বইটির নাম সেই মুহূর্তে মনে করতে পারলেন না । এই পুঁথি সমূহ বৃহত্তর বাংলার জনগণের রস পিপাসা মেটাতো।
বাঙ্গালী সমাজের উপর উনিশ শতকের শিক্ষিত ব্যক্তিদের নানা সাংস্কৃতিক প্রয়াসের চাইতে এই পুঁথিসমূহের প্রভাব অনেক বেশি। তবে পুঁথিগুলোর ঋণাত্মক দিক এই যে তাতে আধুনিক চিন্তার কোনো স্ফূরণ ঘটেনি। তবে একথাও সত্য যে ঐ পুঁথিসমূহ ছিল যথার্থ অর্থেই সেক্যুলার। বাংলা সাহিত্যের সাম্প্রদায়িকতা জিনিসটির চাষ উনিশ শতকের শিক্ষিত ব্যক্তিরাই সর্বপ্রথম করেছিলেন।
আমরা রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে তাঁকে কিছু বলতে বললাম। রবীন্দ্রনাথের বিষয়ে তিনি খুবই সংক্ষিপ্ত মন্তব্য রাখলেন। তাঁর মতে রবীন্দ্রনাথ বিরাট প্রতিভা, খোদা প্রদত্ত অসীম ক্ষমতার অধিকারী। যা-ই বলেছেন, মানুষের মর্মে ঘা দিয়ে বাজিয়ে তুলেছেন। এই অলৌকিক ক্ষমতা নিয়ে তো আর আলোচনা চলে না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধ সমূহে যে সুস্থ কাণ্ডজ্ঞানের প্রকাশ ঘটেছে জাতীয় অধ্যাপক তার খুব তারিফ করলেন। তবে ব্যক্তি হিসেবে রবীন্দ্রনাথ উনিশ শতকের ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো বড় বড় ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি স্থান পাওয়ার যোগ্য কিনা সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করলেন।
রবীন্দ্রনাথের পর আমরা কাজী নজরুল ইসলাম প্রসঙ্গে আসি।কাজী কবির প্রতি জাতীয় অধ্যাপকের এক ধরণের দুর্বলতা যে রয়েছে তা কারও দৃষ্টি এড়িয়ে যাবার মতো নয়। যাহোক, তিনি বললেন, অনেকেই যে রবীন্দ্রনাথের সাথে নজরুলের তুলনা করেন এটা একটা হাস্যকর ব্যাপার। রবীন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথই আর নজরুল নজরুলই। জনপ্রিয়তাকে সাহিত্যের একটা গুন বলে অনেকে ধর্তব্যের মধ্যে আনেনা। এটা ঠিক নয়। জনপ্রিয়তা সাহিত্যের উপক্ষেণীয় বিষয় নয়। সে দিক দিয়ে বিচার করলে নজরুলের কবিতা, নজরুলের গানকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি মানদণ্ডে বিচার করতে হবে। যেকোন নান্দনিক সৃষ্টিকর্মকে জনগণের অনুভবের আওতায় এনে দিতে পারা, কম কথা নয়। নজরুলের গান সেকালে অত্যন্ত অল্পসময়ের মধ্যে যে জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলো বৈষ্ণব পদাবলী ছাড়া অন্য কোন বাঙালী সংগীত স্রষ্টার সঙ্গে তার তুলনা চলেনা। বৈষ্ণব পদাবলীও একদিনে বা একবছরে কিংবা একজন কবির প্রচেষ্টায় হঠাৎ করে সমাজের গভীরে প্রবেশ করেনি। একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটি হতে পেরেছে। তার সঙ্গে শ্রীচৈতন্যের বৈষ্ণব ধর্ম প্রচারের একটা প্রত্যক্ষ যোগাযোগও অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু নজরুলের গান একেবারে হঠাৎ করে জনগণের গভীর সংবেদনায় নাড়া দিয়ে বসে। জাতীয় অধ্যাপক তাঁর ছাত্র জীবনের কথা উল্লেখ করে জানালেন, আমরা ছাত্র থাকার সময় ঢাকা শহরের ঘোড়ার গাড়ির প্রতিটি গাড়োয়ানের মুখে মুখে ফিরতো নজরুলের গান। বাংলার কোন সংগীতস্রষ্টার ভাগ্যে এটা ঘটেনি। নজরুল অনুরাগ অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের মনে এত গভীর যে ঘন্টার পর ঘন্টা অবলীলায় বলে যেতে পারতেন । কিন্তু তাঁর স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে আমাদের রাশ টানতে হলো। তাঁর সঙ্গে আরও নানা বিষয়ে কথা হয়েছে। আশা আছে সময় ও সুযোগমতো আগামীতে প্রকাশ করব ।
একজন রূপকথার মানুষ
July 7, 2020
লেখিকা: তন্বী নওশীন
শিরীন বানু মিতিল আমার মা। এর চেয়ে সুন্দর কোন সত্য আমার জীবনে নেই। এর চেয়ে গর্বের কোন পরিচয় আমার নেই। এই মানুষটা ছিলেন একজন “মানুষ”। অনেক বিশেষণ এখানে বসানো যেতে পারে। মাকে তো আমি সেভাবে চিনতাম না। মার সাথে যারা কাজ করেছেন তারা মাকে অনেক ভাল চিনতেন। মার সাথে যারা বেড়ে উঠেছেন- তাঁর ভাইবোনেরা, তাঁর বন্ধুরা- তারা তাকে চিনতেন একভাবে। তাকে যারা বেড়ে উঠতে দেখেছেন তারা তাকে চিনেন নিশ্চয়ই আরেকভাবে।
আমি অনেক ভাগ্যবতী যে আমি এই মানুষটির গর্ভে জন্মগ্রহন করেছি। আর সত্যি বলতে সেই কারনেই তার বিশেষত্ব যে কি তা বুঝে উঠতেই লেগে গেছে অনেকটা বছর। পৃথিবীতে দুই রকমের মানুষ আছে- অথবা মানুষের দুই রকম আছে। এক হল যা কিছু নিজের তাইই শ্রেষ্ঠ। আরেক হল আমার যা তা আর অন্য দশজনের মতই অতি সাধারন। যারা আমাদের পরিবারকে চিনেন- নানা-নানীর গল্প জানেন, মাকে চিনেন- তারা জানেন যে এই মানুষগুলো ছিলেন দ্বিতীয় রকমের। তারা মাটির সাথে মিশে চলতে পছন্দ করতেন। নিজেদের খুব বড় কোন কিছু থাকলেও তা নিয়ে গর্ব না করাটাই গর্বের, বিনয়ই সত্যিকারের আত্মমর্যাদার- এই মানসিকতার চর্চা এই পরিবারের মানুষদের। সেই কারনে মাকে চিনতে এবং তা নিয়ে গর্ব বোধ করতে আমার বেশ অনেকটা বড় হতে হয়েছিল এবং স্বাধীন চিন্তা তৈরী হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল।
মার যে পরিচয়ের জন্য সবাই তাকে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করত তা হল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্রহাতে রনাঙ্গনে যুদ্ধ করা নারী যোদ্ধা। মা কখনো এই বিষয়টি খুব অসাধারন কিছু বলে মনে করতেন না। তিনি চমকপ্রদ, রোমাঞ্চকর বা অসাধারনত্ব দেখানোর জন্য যুদ্ধে জাননি। তিনি ছিলেন একজন সামগ্রিকভাবে দায়বদ্ধ মানুষ এবং অপ্রয়োজনীয় সামাজিক শৃঙ্খল-যা সমাজ বিভিন্ন ছুতায় আমাদের উপর চাপিয়ে দেয় তা থেকে মুক্ত। তাই মার কাছে যুদ্ধে যাওয়া ছিল নিজের আত্মপরিচয়ের প্রতি সৎ থেকে সামনে যা কর্তব্য তা পালন।
মেয়ে হিসেবে যেই অসুবিধা টুকু সামনে আসে বা সমাজ চাপিয়ে দিতে চায় সেই বাধাটুক পেরোনো তাঁর কাছে ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। আমি এতবছর পর সেভাবেই বুঝি। সেকারনে মা তাঁর নিজের গল্প বলতে চাইত আরো অনেক মেয়েকে প্রেরণা দেয়ার জন্য। মা নিজের কথা বলার সুযোগটুকু ব্যবহার করতে চাইত আরো অনেক নারীর গল্প বলার জন্য। মা নিজের অসাধারন গল্পটাকেও সত্যিই বিশ্বাস করত আর দশজনের মতই সাধারন বলে। তাই তিনি কোনদিন তাঁর গল্পটা, তাঁর পরিচয়টা বিক্রির চেষ্টা করেননি। সবার উপর ছাপিয়ে গিয়ে নিজে বিশেষ হবার চেষ্টা করেননি। মা মারা যাবার পর অনেকেই বলছিলেন উনার সম্পর্কে জানতাম না কেন, উনি কেন জাতীয় পুরষ্কার পাননি বা উনি কেন আরও উদযাপিত না- সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর এটুকু থেকে বোঝা যেতে পারে।
আমরা এমন একটা সময়ে বাস করি যখন নিজেকে বড় করে দেখানোটাই নিয়ম। পাঁচ দিয়ে গুনে গুনে পঁচিশ আদায় করাটা টিকে থাকার জন্য জরুরী। সেই কারনে এটা খুব স্বাভাবিক যে মার এই সাধারনের সাথে মিশে চলাটা অনেকেই বুঝতে পারননা। আমি সেকারনেই এই কথাগুলো স্পষ্ট করছি। মা মারা যাবার পর দেখলাম অনেকেই বেশ মেলোড্রামা করে বলছেন- উনি স্বীকৃতি পাননি দেখে খুব অভিমানে চুপ করে গেছেন। বড় কষ্ট নিয়ে চলে গেছেন।
না। তেমন মানুষ তিনি ছিলেনই না। মা সেরকম বিশেষ তো হতেই চাননি। অভিমান কিসের? হ্যাঁ, যুদ্ধপরাধীদের বিচার নিয়ে তার কষ্ট ছিল। দেশে স্বাধীনতার পর স্বাধীনতা বিরোধীদের উত্থান নিয়ে তার কষ্ট ছিল। দেশে বীরাঙ্গনাদের প্রতি সমাজের অন্যায় আচরন নিয়ে তার কষ্ট ছিল। তিনি সেই কষ্ট নিয়ে লড়াই করে গেছেন। তিনি ৭১ ঘাতক-দালাল নির্মূল জাতীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি নারীদের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে সারা জীবন কাজ করে গেছেন। শিরীন বানু মিতিল অভিমান, কষ্ট, স্বীকৃতির অভাবে চুপ করে থাকা কোন অগভীর নাটকিয় চরিত্র ছিলেন না। তিনি ছিলেন শেষ সময় পর্যন্ত তার বোধ, তাঁর লড়াইয়ের প্রতি সৎ থাকা একজন লড়াকু মানুষ।
আর হ্যা, তিনি ছিলেন অসম্ভব বড় মনের একজন মানুষ। মানুষের প্রতি তার ভালবাসা ছিল আশ্চর্য হবার মত। সেই গল্প আমার চেয়ে যারা তার কাছে এসে সেই নিঃস্বার্থ ভালবাসার পরিচয় পেয়েছেন তারাই বলতে পারবেন। আমরা যেই সময়ে বাস করি- সেরকম সময়ে আমার মার মত মানুষেরা রূপকথার গল্পের নায়কের মত। আজ তার মৃত্যু বার্ষিকীতে তার ভালবাসার যারা, যারা তাকে ভালবেসেছেন, তার কাছে এসেছিলেন- তাদের সবাইকে সেই রূপকথার গল্পের মত মানুষটিকে মনে করিয়ে দেয়া- তাকে নিয়ে সবচেয়ে প্রিয় স্মৃতিটা স্মরন করিয়ে দেয়া আর একটু হলেও তার মত হতে চাওয়ার ইচ্ছাটুকু জাগিয়ে রাখা- এটুকুই আমার এই লেখার উদ্দেশ্য।
আবহমান কাল থেকে ভারতের নানা দিগদেশে মল্লক্রীড়া চলিয়া আসিতেছিল। কিন্তু বর্ত্তমান সময়ে যতই আমরা শিক্ষিত হইতেছি অর্থাৎ যতই দাসত্বের উৎকৃষ্ট শৃঙ্খল চাকরির জন্য প্রস্তুত হইতেছি ততই এই স্ফুর্তি জনক দৈহিক শক্তি রক্ষার উপাদেয় পন্থাটি বিস্মৃত হইতেছি। এবং দেহের ঘুণের দংশনে জর্জ্জরিত হইতেছি – ম্যালেরিয়ার ভক্ষ্যরূপে পরিণত হইতেছি। আজকাল মল্লক্রীড়া একটি হীনজনোচিত কার্য্যের মধ্যে পরিগণিত হইয়া পড়িতেছে। পৌরাণিকযুগে কিন্তু ইহা সাধারণের ন্যায় রাজা ও রাজপুত্রগণের অবশ্যকর্ত্তব্য ছিল। শক্তিরক্ষা তখনকার দিনের একটা গৌরবের বিষয় ছিল। এখনও পশ্চিমদেশীয় বড় বড় ধনী জমিদার- পুত্রগণের জন্য এ ব্যবস্থা মধ্যে মধ্যে দেখিতে পাওয়া যায়। কিন্তু ক্রমে তাহাও বিরল হইয়া আসিতেছে। আমাদের বর্ত্তমান রাজা ও রাজ পুরুষের মধ্যে ব্যায়াম- শিক্ষা এবং কুচকাওয়াজ,ঘোড়দৌড়, শিকার প্রভৃতি দৈহিক কসরতের ব্যবস্থা কিরূপে সতেজে চলিয়া আসিতেছে তাহা লক্ষ্য করিবার বিষয়। এজন্য তাঁহাদের স্বাস্থ্য এখনো সতেজ রহিয়াছে। দুঃখের বিষয় বাঙ্গালী যেদিন হইতে পল্লীজননীর অংকে থাকিয়া জলে পড়িয়া দীর্ঘ দুই ঘণ্টা-কালব্যাপী সাঁতার-কাটা, “হাডুডুডু খেলা”,পরখেলা( গোল্লাদাইর,গুলিডাঙ্গা খেলা ছাড়িয়াছে, যেদিন হইতে ডন, কুস্তী,মুগুরভাঁজা ছাড়িয়াছে, সেদিন হতে হাঁটা পথে দিনে ৩০/ ৪০ মাইল পাওদলে চলিয়া যাওয়ার কথায় আঁৎকাইয়া উঠিতে শিখিয়াছে সেদিন হইতে তাহাদের হাড়ে ঘুণ ঢুকিয়াছে। বৃদ্ধ বয়সেও একজন ইংরেজ যেরূপ বালকের উৎসাহে ছুটাছুটি, হুটোপাটি খেলার কৌতুকে যোগদান করে তাহা আমাদের নূতন করে শিখিয়া লওয়া কর্ত্তব্য মনে করিতেছি। কিন্তু যদি অন্যদেশীয় কোন ভদ্রসন্তান আজকাল ডন ও কুস্তীর আখাড়ায় কসরৎ করিয়া “ লালমাটী” মাখিতে আরম্ভ করেন তবে তিনি বিংশ শতাব্দীর “ আদর্শ বাবুদের” নিকট ঘৃণাস্পদ হইবেন সন্দেহ নাই। আজকাল স্কুলের ছাত্রদিগের মধ্যে কেহ কেহ ফুটবল, ব্যাটবল খেলায় যোগদান করিয়া এবং কেহ কেহ বা স্যান্ডোর প্রণালীতে ডাম্বেল ভাঁজিয়া কসরত করিতেছেন বটে।
মল্লক্রীড়ার এই দূর্গতির দিনে কয়েক বৎসর যাবত চট্রগ্রামে বাস করিয়া তাহার যে একটা সজাগ চিত্র দর্শন করিতেছি এবং তাহার ভিতর যে একটা চেতনার আভাস পাইতেছি তাহাই আজ পাঠকগণের নিকট উপস্থিত করিতে প্রয়াসী হইলাম।
সুবেবাঙ্গালার অন্যান্য জিলায় এরূপ সমারোহ মল্লক্রীড়া অনুষ্ঠিত হয় কি না তাহা জানি না। বাল্যকালে বঙ্গদেশের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ নগরী কলিকাতায় এবং যৌবনে ঢাকায় বাসকালে ২/১ টি পশ্চিমী পালোয়ানের কুস্তী-ক্রীড়ার অভিনয় দর্শন করিয়াছি, কিন্তু এত সমারোহ ও এত আড়ম্বর তাহাতে দেখি নাই।। এবং সেখানে মল্লক্রীড়া এরূপ কৌলিক বারমাসে তের পার্ব্বণের পর্য্যায়ভুক্ত নহে। এখানকার মল্লক্রীড়ার( বলীখেলার) অনুষ্ঠাতারা প্রত্যেক বৎসর নির্দ্দিস্ট দিনে এই ব্যাপারের অনুষ্ঠান করিয়া থাকেন। পিতার অনুষ্ঠান পুত্রে রক্ষা করিয়া আসিতেছে। অনুষ্ঠানের তারিখ পূর্ব্ব হইতে সর্ব্বত্র বিজ্ঞাপনাদি এবং নিমন্ত্রণপত্র বিলি করিয়া প্রচারিত হইয়া থাকে। নানা স্থানের বলীগণকে আহ্বান করা হইয়া থাকে।
চট্রগ্রামের “বলীখেলার” একটা সার্ব্বজনীনতা আছে। এই জিলার প্রায় প্রত্যেক গ্রামে বলীখেলার ছোট বড় মেলা হইয়া থাকে। “ গাজনের ঢাকে” কাঠি পড়িলে যেমন পূর্ব্বকালে চড়কের সন্ন্যাসীদের পিঠ সুড়সুড় করিত, চৈত্র মাসে চট্রগ্রামের বলীদের মধ্যেও তেমনি একটি উন্মাদনা পরিলক্ষিত হয়। এজন্য সম্পন্ন হিন্দু ও মুসলমানগণের মধ্যে অনেকেই রাশি রাশি অর্থ ব্যয় করিয়া থাকেন। সমস্ত জিলা ব্যাপিয়া কতগুলি “বলীখেলা” হয় তাহার সংখ্যা করা দুরূহ। এক চট্রগ্রাম নিজ সহরেই ১৫/২০টি খেলার “ থলা”( স্থল) হইয়া থাকে। তাহাতে দেশের নানা স্থান হইতে বলীগণ আসিয়া নিজ নিজ দক্ষতা দেখাইয়া যথা যোগ্য পারিতোষিক লাভ করিয়া থাকে। আমরা তন্মধ্যে একটি সর্ব্বশ্রেষ্ঠ খেলার বিবরণ দ্বারা পাঠকগণকে তাহার একটা আন্দাজ দিতে চেষ্টা করিব।
আমরা যেটির বর্ণনা করিব তাহা “ আবদুল জব্বরের বলীখেলা” বলিয়া প্রসিদ্ধ। এই খেলা গত ১৩ই বৈশাখ সোমবার হইয়া গিয়েছে। প্রতি বৎসরই বৈশাখ মাসের এমনি তারিখে এ খেলা হইয়া থাকে। চট্রগ্রাম সহরের ঠিক বক্ষঃস্থলে পুরাতন কাছারীর (বর্ত্তমান থানা ও মাদ্রাসা স্থলের) ইমারতের নিম্নস্থ ময়দানে এই খেলার স্থান করা হইয়া থাকে। ময়দানের মধ্যস্থলে মল্লগণের জন্য নির্দ্দিস্ট রঙ্গস্থল বাদ রাখিয়া চারিদিকে লোহার কাঁটা- তার দিয়া দোহারা বেড়া দেওয়া হয়। তৎপর সেই রঙ্গস্থলের ঠিক মধ্যস্থলে একটি উচ্চ সুপারীগাছের থাম পুঁতিয়া তাহার উপরিভাগে একটি বায়ুচক্র বসাইয়া দেওয়া হয়, বায়ু প্রবাহের তাড়নায় তাহা অবিরাম গতিতে ঘুরিতে থাকে, এবং তন্মধ্যে বসান কয়েকটি ছবির তরঙ্গায়িত গতি দেখিতে পাওয়া যায়। সুপারীগাছের থামটি রঙ্গীন কাগজ দিয়া মুড়িয়া দেওয়া হয় এবং তাহার অগ্রভাগ হইতে কতকগুলি রশিতে ঝুলান বিচিত্র বর্ণের পতাকাশ্রেণী চারিদিকে বংশদণ্ডের উপর নানা বর্ণের পতাকা – সকল উড়িতে থাকে।রঙ্গস্থলের এক পার্শ্বে কয়েকটি সামিয়ানা খাটাইয়া নিমন্ত্রিত দর্শকগণের বসিবার বন্দোবস্ত করা হয় ( ১ নং চিত্র দ্রষ্টব্য) রবাহূত ব্যক্তিগণ, চারিদিকে দাঁড়াইয়া বসিয়া গাছে ছাদে চড়িয়া এই দৃশ্য দর্শন করে। পাহাড়ের ঢালুগাত্রে লোকগুলি কেমন গ্যালারীর ন্যায় উপবেশন করিয়াছে তাহা ২ নং চিত্র দর্শন করিলেই সহজেই অনুমান করা যাইবে। এই ব্যাপারে উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী হইতে আরম্ভ করিয়া উকীল আমলা এবং সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিগণ সকলেই নিমন্ত্রিত হইয়া থাকেন। এই উদ্দেশ্যে অনেক আফিস আদালতের অর্দ্ধ কাছারী হয়।
খেলার দিন রাত্রি প্রভাতের পূর্ব্ব হইতে চট্রগ্রামের স্থানীয় ডোম বাদ্যকরগণের ঢোল কাড়া সানাইয়ের মিশ্রিত একঘেয়ে আওয়াজে প্রাণ ওষ্ঠাগত হইয়া উঠিতে থাকে। এবং ঘন ঘন বোমের আওয়াজ হইতে থাকে। নানা স্থান হইতে দোকানীরা আসিয়া মেলার উপযোগী দোকান সাজাইতে আরম্ভ করে। মেলায় “নাগরদোলা”, “রাধাচক্র” এমন কি ছোটখাট ভুয়ে- গেঁয়ে সার্কাসের দলও আগমন করিয়া থাকে।
ক্রমে বলীগণ আসিয়া উপস্থিত হয়। এক-একজন বলীর সহিত তাহার সহচর সাথী প্রায় ১০০/১৫০ লোক দলবদ্ধ হইয়া আগমন করে। রঙ্গস্থল হইতে ঢোল বাজাইতে বাজাইতে যাইয়া তাহাদিগকে “ থলার” মধ্যে আগবাড়াইয়া আনিতে হয়। একে দুয়ে, দশে বিশে, দলে দলে প্রায় ৫০০০ হাজার দর্শক ক্রীড়াস্থলে সমবেত হয়। মোটর গাড়ী, মোটর বাস, গাড়ী ঘোড়াও অবিরামগতিতে সহর তোলপাড় হইতে থাকে। উত্তেজিত জনসঙ্ঘকে পথে আসিতে আসিতে বলীখেলার কথা ভিন্ন অন্য কথা বড় একটা বলিতে শোনা যায় না। কোন বলী বড়, কাহার “তাকত” বেশী, কাহার সঙ্গে কাহার কুস্তী হইবার সম্ভাবনা, কে কাহাকে হারাইবে, ইত্যাকার কোলাহলে সহর মুখরিত হইয়া উঠে। কেহ কাহাকে জিজ্ঞাসা জিজ্ঞাসা করিতেছে “ সালাম মাউ, কডে যাওর?” অন্য উত্তর দিতেছে “ এক খানা বলীখেলা চাইতাম যাইর”। ইত্যাদি। দেখিতে দেখিতে স্থানটি লোকারণ্যে পরিণত হয়। বেলা দশটার পর মল্লগণ আসরে অবতীর্ণ হইতে থাকে। তখন সজোরে ঢোলে কাঠি পড়িতে থাকে এবং আরো ঘন ঘন বোম ফুটিতে থাকে। শিক্ষিত ব্যক্তিগণের মধ্যে কেহ কেহ উপস্থিত থাকিয়া মধ্যস্থতা করিয়া থাকেন। বেলা দশটার পর হইতে জনতার ভিড় এত বাড়িতে থাকে যে তখন রাস্তা দিয়া গাড়ী ঘোড়া চলাচলও প্রায় বন্ধ হইয়া যায়। বেলা আরম্ভ হইলে মল্লগণ রঙ্গস্থলে অবতীর্ণ হইয়া বাদ্যের তালে তালে নৃত্য করিতে থাকে এবং মালসাটে প্রতিপক্ষকে ক্রীড়ায় আহ্বান সূচক সংকেত করিতে থাকে। এখানকার খেলার নিয়ম এই যে ৮/ ১০ জোড়া বলী বা পালোয়ান এক সঙ্গে কুস্তি আরম্ভ করে।
মল্লগণের মধ্যে একজন অন্যজনকে “ চিৎপটকন” দিতে পারিলেই তাহার জিত হইল। কোন বলী কাহাকেও হারাইতে পারিলে উপস্থিত জনতার মধ্য হইতে যে গভীর আনন্দধ্বনি উত্থিত হয় তাহাতে গগন বিদীর্ণ হইবার উপক্রম হয়। যে বলী জয়লাভ করে সে খেলাদাতার নিকট হইতে যথোপযুক্তরূপে বস্ত্র ও অর্থাদি পুরস্কার লাভ করিয়া থাকে। এরূপে অনেক জোড়া বলী যার যার কেরামৎ দেখাইয়া পুরস্কার লইয়া যায়।
দুঃখের বিষয় ঢাকার, কলিকাতার ও পশ্চিমী পালোয়ানগণের খেলার প্রতিযোগিতায় প্রতিপক্ষগণ একে অন্যকে হারাইবার জন্য যে সকল অপূর্ব্ব কৌশল ( প্যাঁচ) দেখাইয়া থাকে, এক এক জোড়া মল্লের খেলায় যেরূপ ২/৪ ঘন্টা সময় অতিবাহিত হয়, এখানকার মল্লগণের খেলায় তাহার অনুরূপ বড় বেশী কিছু দেখিতে পাওয়া যায় না। – এক এক জোড়ায় খেলায় ১০/ ১৫ মিনিটের বেশী সময় লাগে না। ইহার কারণ স্থানীয় বলীগণ অধিকাংশই “ভুঁইফোঁড়”,এখানে কুস্তী কসরৎ শিক্ষার জন্য তেমন কোন নির্দিষ্ট “আখড়া” নাই; নিজে নিজে যে যত দেহের শক্তি সঞ্চয় করিতে পারে সেই তত বড় বলী বলিয়া পরিগণিত হয়। এখানে বলী খেলায় যেরূপ একাগ্রতা আছে, যেরূপ উন্মাদনা আছে, তাহাতে যদি কসরৎ ও কৌশলাদি শিক্ষার তেমন কোন ব্যবস্থা থাকিত তবে সোনায় সোহাগা হইতে সন্দেহ নাই। আশা করি খেলার অনুষ্ঠানকারীগণ এ বিষয়ে বিশেষ মনোযোগী হইবেন এবং সময় সময় ঢাকা প্রভৃতি স্থান হইতে নামজাদা পালোয়ান দিগকে আনাইয়া বলীখেলার প্রকরণ শিক্ষার ব্যবস্থা করিয়া ইহার উন্নতিসাধনে যত্নবান হইবেন।
সন্ধ্যার প্রাক্কালে খেলা ভাঙ্গিয়া যায়। তখন রুদ্ধ জল- স্রোত হঠাৎ মুগ্ধ হওয়ার ন্যায় জনসঙ্ঘ গৃহাভিমুখে প্রস্থান করে। বহুদূর হইতে আগত বলীগণ তাহাদের পাথেয়ও খোরাকী ইত্যাদি পায়। এ উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠাতার ৪০০/ ৫০০ টাকা ব্যয় হইয়া থাকে। চট্রগ্রাম মুসলমান প্রধান স্থান বলিয়া দর্শকগণের মধ্যে প্রায় পনর আনাই মুসলমান। পাঠকগণ চিত্রগুলি মন দিয়া দেখিলে টুপীর বাহুল্যে এই তথ্য উপলব্ধি করিতে পারিবেন।
চট্রগ্রামের বলীখেলার ভিতর যে চেতনাটুকু এখনও ক্ষীণ দীপালোকের মত জ্বলিতেছে তাহাতে কিঞ্চিৎ উৎসাহের তৈলসেক করিয়া যদি ইহাকে সর্ব্বত্র এইরূপ সচেতন করা যায় এবং পূর্ব্ব কালের ব্যায়াম কৌশলপূর্ণ ক্রীড়াদি পুনরায় নিঃসঙ্কোচে গ্রহণ করিয়া আমাদের ভাবী বংশধরগণের ব্যায়ামের ব্যবস্থা করা যায়, তবে এই পোড়া বাঙলায় আবার স্বাস্থ্যের উজ্জলতেজ প্রদীপ্ত হইয়া উঠিতে পারে।
শাস্ত্রে আছে- “শরীমাদ্যম খলু ধর্ম্মসাধনম”।
ছবির সুত্র: চট্টগ্রামের প্রসিদ্ধ ফটোগ্রাফার বন্ধুবর শ্রীযু্ক্ত শশীভূষণ দস্তিদার মহাশয় কষ্টস্বীকার করিয়া চিত্রগুলি তুলিয়া দিয়া আমাদের চিরকৃতজ্ঞভাজন হইয়াছেন। — লেখক।
ব্যানার ছবি: চট্টগ্রামে বলি খেলার একটি দৃশ্য (২০১৪)। ফটোগ্রাফার: মোহাম্মদ আবদুল্লাহ।ছবির সুত্র: উইকিমিডিয়া
Slavery in 19th Century Dhaka
June 28, 2020
JAMES TAYLOR
Note: This account of slavery in Dhaka during the 19th century is taken from James Talyor’s book ‘A Sketch of the Topgraphy and Statistics of Dacca’. The book was published in 1840. James Talyor was appointed by the East India Company as a surgeon in Dhaka. – Editor, Bangladesh on Record
Slavery prevails to a greater extent here [Dhaka] than in the Western districts of Bengal, a circumstance which is perhaps attributable to the frequent occurrence of destitution and distress, occasioned by the sudden inundations to which this part of the country is liable. Male slaves are distinguished by the name of Bhandaree by the Hindoos, and by that of Gholam among the Mussulmauns ; and female slaves are called Dassee by the former, and Bhandee by the latter. Almost all the female domestics in Hindoo and Mussulmaun families are slaves. In Mussulmaun houses they act as cooks, but among the Hindoos they are never employed in this capacity, the only articles of diet they are allowed to prepare, being choorah, kooee, &c.
Male slaves are employed as agricultural labourers, and do the various kind of work about a farm, as ploughing, weeding, reaping, fishing, cutting wood and grass, &c. or they act as domestic servants in Hindoo families, carrying water from the river, preparing the hookah and pan, and cleaning cooking utensils. A Bhandaree or Gholam is frequently the husband of six or eight female slaves in the neighbourhood, but most of his marriages are fictitious and are got up by the proprietors of the female slaves to screen their own intercourse with them. The marriage of a slave is conducted in the same way as that of a poor ryott. The expense is defrayed by the owner of the serf, but in the fictitious marriages, the proprietors of the female slaves pay the costs of the ceremony, and also bestow a small sum on the bridegroom.
The maximum value of a male slave in the present day is estimated at rupees 150, and that of a female one at rupees 100. The latter are always sold at an early age and avowedly to attend the daughters of the purchasers.
In a majority of instances, slaves are treated with kindness and leniency by their masters. The work exacted from them is seldom oppressive, and generally, is even less than a hired servant would be required to perform. In most cases they partake of the diet used by the family, and are allowed the common luxuries of betel nut and tobacco. Many of those born in bondage in the houses of the wealthier classes, are taught to read and write along with the children of the family.
The sale of persons in slavery is not so common now, it is alleged, as it was in former times, although it is admitted, that it is still carried on to a considerable extent. Formerly slaves were sold along with landed property, and the transfer was generally ratified by separate deeds of a sale. The maximum value of a male slave in the present day is estimated at rupees 150, and that of a female one at rupees 100. The latter are always sold at an early age and avowedly to attend the daughters of the purchasers. Many of them, however, are infamously disposed of to prostitutes in the town. Most of the slaves in this part of the country, are aware of the protection held out to them by Government, and instances frequently occur of individuals claiming it from the Magistrates. Many of them who have been thus liberated are scattered over the country, and in several villages in the district of Mymensing have formed small communities which serve as rallying points or places of refuge for those who have obtained their freedom or who choose to desert their masters. Slaves in general are distinguished by the appellation of “Sing,” but those who can read and write after their liberation, assume the rank of Kayets.
Many slaves in the district work for only a certain number of months or days in the year, and are allowed wages for the rest of their labour. It is mentioned in the records of the district for the year 1777, that the slaves of the Zemindar of Toroff in Mymensing, rose in a body and murdered the whole of the family.
Digitisation
June 12, 2020
Digital preservation is the most viable and the only major technological alternative available to us for safe guarding our fast diminishing heritage. In order to contribute to any preservation effort and bring about a positive change, technological advances have to be met with equal amount of concern, enthusiasm, will to take concrete steps and initiative in the right direction.
Bangladesh on Record from its very inception has been at the helm of preservation effort, aimed as saving our heritage. Providing digitization services to individuals and institutions since 2019, it has been instrumental in digitally archiving hundreds of rare books, magazines and other literature thus far.
Bangladesh on Record provides digitization services both on site and off site, depending on the constraints. If the material to be digitized warrants special care and cannot be transported to the Bangladesh on Record offices due some reasons, then Bangladesh on Record provides its digitization services right at the place where the material is situated. In such cases, the equipment and the staff is temporarily moved to the close vicinity of the place to carry out the project.
The output of the digital projects may vary, but under standard conditions it includes, RAW and jpeg images of the originals. Other derivatives like TIFF, OCR etc. may also be extracted from them depending on the need. The complete digitized material is handed over to the custodian compiled in DVDs and/or Hard disk as per requirements and official agreement.
Individuals and institutions interested in getting their collections digitized can contact the Bangladesh on Record representative by writing to [email protected]. Once we receives a request, we initiates further procedures necessary for the undertaking a digitization project.
Portrait of a freedom fighter: Syed Amiruzzaman Bir Bikrom
May 20, 2020
Zahid Rahman
During Bangladesh’s liberation struggle, out of all the fearless and patriotic people who have fought in the battlefields 676 freedom fighters were awarded various titles of heroism for their great valour and bravery; among which, the BirBikrom title was awarded to only 175 of the freedom fighters and Bir Bikrom Syed Amiruzzaman had been one such recipient.
In 1971, Amiruzzman was posted as a Havildar of the EPR force and served as the “main signal mechanic” for the Rajshahi sector headquarter. During the great war of ’71, he was a platoon commander of sector number seven’s fourth Lalgola sub sector’s liberation war group. This sector essentially consisted of the huge number of EPR members located in northern Rajshahi and Dinajpur.
Liberation war and all his different life-stories are compiled in Syed Amiruzzman’s book Bangladesher Muktijuddho: Ekjon Sainiker Sritikotha [The Liberation war of Bangladesh: A soldier’s memoir”. The book was published in 2008 during the Ekushey Book Fair. His birth and various life struggles including narration of various war incidents during his time serving for Sector 7 is beautifully illustrated in his book. At the same time, he has also described his own opinions and views.
Summary of Syed Amiruzzman’s duties during the war of liberation:
1) On the night of 25th March, when the Pakistani invading forces started indiscriminate killings of the innocent Bengalis in different parts of the country, freedom fighter Amiruzzaman waited for no one’s orders and in his own accord, via the wireless signal, spread messages of patriotism and bravery among his co-workers. He invited everyone to join the war. Via the signal office’s radio, he further alerted the Bangladesh police and the other freedom fighters of the whereabouts of the invading forces as well as other details of war.
2) Under the leadership of Bir Bikrom Syed Amiruzzman, on 27th March, the Bengali soldiers broke the arsenal of the then EPR headquarters of Rajshahi and seized arms and ammunition.
3) On the 27th, along with the freedom fighters progressing from Naogaon, he met with Subedar Monowar at Nowhata.
4) On the night of the 30th, along with his friend Aminullah and signal operator Moizuddin, he carried all the radio equipment of the sector and took shelter at the house of Major Mohammad Shawkat. He then began all necessary signal arrangement.
5) On the 31st, he walked on foot from Rajshahi to the Shordoho Police Education Centre to meet with Captain Rasheed. On his way home, he met with the troops coming from Naogaon at Baneswar. They let their need of radio equipment known to Amiruzzaman. After that, Amiruzzaman returned to Kazihata, Rajshahi, to the house of Subedar Major Mohammad Shawkat.
6) On 1st April, he carried the signal equipment to Baneswar and returned to Rajshahi city on 2nd April.
7) On 4th April, with all the radio equipment from the EPR sector’s signal branch, he joined with Major Gias taking with him his co-worker and friend Aminullah.
8) On 13th April, Rajshahi city was captured by the Pakistani invading forces. Captain Gias’s force had left their weapons and ammunition at the Muraripur headquarters and formed a base at Abhaya. On 15th April, Amiruzzaman, on his own initiative, took along with him the Bihari driver Fateh Mohammad, Sajemul Haque, and Kala Miah and retrieved the freedom fighters’ weapons and ammunition from Muraripur and brought them to the base at Abhaya.
9) In the month of May, he led Bir Protik Bodiuzzaman Tunu, Muhammad Saidur Rahman, Mahabub Ul Gani Bablu, Mir Mohammad Morshed Ali Bokul, and Nasirul Huda Bachu; and cut off the electricity supply of Rajshahi city by destroying the 33,000 V power line. (This was aired on Swadhin Bangla Betar)
10) In the month of June, he led Muhammad SaidurvRahman, MahabubvUl GaniBablu, Mir Mohammad Morshed Ali Bokul, and Nasirul Huda Bachu cut off the rail connections with Rajshahi by destroying the Kapasia rail line. (This was aired on Swadhin Bangla Betar)
11) In the month of June, when an international team of observers visited Rajshahi city for inspection, to alert the active presence of the freedom fighters, he conducted several grenade attacks.(This was aired on Swadhin Bangla Betar)
12) Under his leadership a group of freedom fighters killed infamous Rajakar Bahar Khan at Charghat. ( The news was aired on Swadhin Bangla Betar)
13) He set up a liberation war camp at Chilmari village at Daulatpur, Kushtia.
14) He actively participated in the demolition of Haripur Bridge on the Rajshahi-Chapainawabganj road on 15th August. (This was aired onSwadhin Bangla Betar)
15) He took active part in the Abhaya Bridge operation on the Rajshahi-Chapanbabganj road.
16) On September, at Narendrapur of the Chapainawabganj Upazila headquarters, he set up a base for the advancing freedom fighters. He served there until November 12 and took part in various skirmishes.
17) In the then Chapainawabganj subdivision at Islampur, during the terrible battle on the night of 11th November, he provided 3-inch-mortar support for the advancing freedom fighters. In this battle, the freedom fighters were trapped in the River Padma. On November 12, at 10 a.m. he led the expedition for the rescue of the trapped freedom fighters and got wounded in the battlefield. He took treatment in the Berhampore hospital in India. On 20th February, 1972, he returned home.
Bir Bikrom SyedAmiruzzman was born in January 1927 in Harindi village under Sreepur Upazila of Magura District. His parents were Syed Abdul Wahed and Mosammat Altafunnesa. Five brothers – Syed Bodiuzzaman, Syed Imam Jafor Sadiq, Syed Imam Saiful Islam, and Syed Mohammad Halimuzzaman; and two sisters, Sayeda Anowara Begum and Sayeda Moriom Khatun – among them, he is the third. One thing is mentionable, his younger sister, Sayeda Moriom Khatun’s husband, Munshi Mujibur Rahman, was murdered during the liberation war by Magura’s notorious Razakar Riju and Kabir.
Amiruzzaman received his education at Maktab at the adjoining Madanpur village of Jessore District board. At Maktab, as his primary teacher, he received the renowned Moulvi Abdur Razzak of Tunipara village. After studying at Maktab for three years, he went to live with his married older brother, Syed Bodiuzzaman, at his house in Kolkata. Syed Bodiuzzaman passed his B.A. degree from Kolkata University in the year 1915. He was the officer-in-Charge of Khidirpur police station as an inspector of the Kolkata police. Amiruzzaman was admitted to third grade in 1935 at Khidirpur Academy School in Calcutta. He studied in this school till sixth grade.
In 1939, due to the death of his father and his older brother’s illness, he had to return from Kolkata to Magura. Accomodation at Magura was arranged at Syed Bodiuzzaman’s “Mirmanzil” house at College Road of the present town. He got admitted to the Magura high school. At that time, Magura high school’s head teacher was Babu Prafulla Kumar Ghosh. Amiruzzaman was not only a player of the school football team but also the school team’s captain. He matriculated from Magura High School in 1946.
For various family reasons, without pursuing higher education, after matriculation he gets admitted to G.T. training school for receiving “Guru training” in order to earn a living. But, realizing that the teaching profession will not be of much help, he started studying homeopathy under the then famous homeopathic doctor of Magura, Azizur Rahman Khan, M.H, M.S. Being a young man of bohemian nature, Amiruzzaman could not study homeopathy for a long time. So, he resigned the study of homeopathy and returned to his village. After returning home, he expressed his desire to learn Islam in an institutionalized way under his Pir Qibla Alhaj Maulana Shah Sufi Touazuddin Ahmed. On the advice of Huzur Qibla, he got admitted to the Dobra madrasa established by Alhaj Maulana Abdul Gofur in Boalmari Upazila of Faridpur District. While receiving education at the madrasa, he had to return home due to his mother’s illness. In the meantime, he got married with Rizia Khatun, elder daughter of Khondokar Ishaq. Rizia Khatun’s two uncles, Khondokar Nazat Ali and Khondokar Sujayet Ali become the key organizer of Akbar Bahini of Sreepur during the Liberation War. After marriage Amiruzzaman started teaching at the private primary school at Sreepur. At that time, the head teacher of the school was the renowned teacher, Abdur Rahman, from the Baroipara village.
In the year 1952, after the end of the language movement, he left the teaching profession and went to Dhaka in the hope of a better job. At Dhaka, he started his career with type writing education and acted as a manager at the same type writing school.
On 15th April, 1953, he joined the then East Pakistan Rifles force’s Signal branch as a soldier. At the end of the radio and soldier training, he was posted as a “Signal Mechanic” at the EPR force’s Signal Wing and Central Workshop. There, he worked under Subedar Major Mohammad Shawkat Ali (Shaheed).
In June, 1962, he went to Chittagong Hill Tracts to install signal system at the Chittagong Hill Tract outposts. From June till August, for three months, he resided in the Chittagong Hill Tracts and kept a diary of his mountain life. The diary of his hill life was published posthumously on February 2011 under the name Ramgarer Diary (Ramgar’s Diary).
In the year 1963, he was transferred to the post of Signal Mechanic in the Signal branch of the Rajshahi sector headquarters of the EPR force. In 1965, he played an important role in the Indo-Pak war and received state awards. In 1968, he received a promotion and became a Havildar.
As a result of independence, East Pakistan Rifles was named “Bangladesh Rifles”. After Amiruzzaman was promoted to Naib Subedar, the Rifles force’s headquarters were transferred to Dhaka and there he performed his duties in the Signal branch’s “Central Signal Workshop” as an Officer-in-Charge. In the year 1976, for higher training on wireless technology, Bangladesh government sent him abroad. After finishing his training, he returned to his country and got promoted to Signal Subedar and performed duties at the “Central Signal Workshop”. The then Rifles force played an important role in the development of the signal system throughout the whole country.
In the BDR forces, the senior “Wireless Mechanic” position was not present in any sector other than the Dhaka headquarters. Amiruzzaman was the only senior JCO- wireless mechanic. However, in an irrational and out of order way, just a year and a half before retirement, the then Rifles force’s Director General, Major General Golam Moktadir, sent an order of transfer to Chittagong for the freedom fighter Bir Bikrom Amiruzzaman. He legally informed the Director General and appealed for transfer in the Jessore sector if required. All the attempts and recommendations for transfer to Jessore sector by the Deputy Director of the force, the valiant freedom fighter, Major General Ain Uddin, were ignored and Amiruzzaman was transferred to Chittagong. 15 days after the incident he voluntarily retired on 14 August, 1985. Till the day he died, Amiruzzaman believed, “I was a victim of this irregularity because I fought in the liberation war”.
In his personal life, Bir Bikrom Amiruzzaman was a honest, humble, wise and enlightened person. His commentary on society, religion, and liberation war has always garnered the praise of everyone. Wherever he would go, he would advise people to stay true and good. He believed, only honesty keeps people alive for a lifetime and this is one of the philosophies of the liberation war. He has lived by this philosophy throughout his life and has advised others to follow as well.
On 18th January, 2010, this brave warrior of the liberation war left us silently. This is life’s ultimate destiny. On 19th January, he was buried in state honours beside his mother in the family cemetery, at his hometown in Sreepur’s Harindi village of the Magura District.
Zahid Rahman is a Writer and Liberation War Researcher. He is the Chief Coordinator of Muktijuddhe Magura Gobeshona Kendro.
The article was published in a booklet titled Bir Bikram Syed Amiruzzaman.
The article is translated by Tasnim Kabir Odrika.
Bloodless genocide: The allegorical gaze of Ahmed Sofa
March 26, 2020
Salimullah Khan
The Third World must start over a new history of man which takes account of not only the occasional prodigious theses maintained by Europe but also its crimes, the most heinous of which have been committed at the heart of very man, the pathological dismembering of his functions and the erosion of his unity, and in the context of the community, the fracture, the stratification and the bloody tensions fed by class, and finally, on the immense scale of humanity, the racial hatred, slavery, exploitation and above all, the bloodless genocide whereby one and a half billion men have been written off.
—Frantz Fanon (2004: 238)
Ahmed Sofa (1943-2001) was already a legend down and out in Dhaka, if not beyond, when he lay dying. He was not well for years before breathing his last. Ahmed Sofa’s true legend, however, did not begin with this death on July 28, 2001. As in most other cases of our literature, his legend too began with an encounter with poetry, that universal goddess. He however discovered his true calling before long in language as such, plunging in a mélange of prose and poetry alike, closing in on the heels of Bengali literature’s colonial greats, Michael Madhusudhan, Bankimchandra, Rabindranath, Nazrul Islam and a few others who matter.
Perhaps part of the reason Sofa was destined to translate Wolfgang Goethe’s Faust, part one, lay in this mélange of poetic ambitions in a prosaic neo-colonial world. But, for all that, he would not abandon that good old poetic craft. On this occasion of Ahmed Sofa’s sixteenth death anniversary I propose to provide a very short introduction to the reading of a narrative poem that he wrote in our apocalyptic mid-1970s.
In 1975, Sofa published two slim volumes, in quick succession of one another, namely JalladSomoi (Time, the Hangman) and Dukkher Diner Doha (Dog Day Songs), the latter containing a longish narrative poem named Basteeujar (Evicting a Slum). He prided himself a good deal on account of this poem. For instance, however ill-matching his key to the master’s house might be, Ahmed Sofa once dared a transformation of this poem into a broken English prose, coming quite late in the day, though. The petite bourgeois milieu which he was placed to live in condescended to understand his worth rarely, if ever. I must note, however, that Faizul Latif Chowdhury, a good critic and a leading specialist on the acclaimed poet Jibanananda Das, has paid a no-nonsense tribute to this great poem of Ahmed Sofa’s. It seems like finally a wind is blowing. (Chowdhury 2017: 27)
The other or outside in the mothering machine
I should perhaps begin by introducing myself in connection with Ahmed Sofa, who I met for the first time in the summer of 1976. He was then registered as a graduate research student with Dhaka University and living in the northern premises of the University and I, as a fledgling freshman, was just admitted into one of the nearby dorms. At the time he was at work on his doctoral dissertation, under the supervision of the famed Professor Abdur Razzaq, on the growth of a middle class among the Muslims of Bengal (or more aptly, the Bengali Muslims). Ahmed Sofa was not like any other intellectual I knew at that time.
Ever since 1962, when he first moved inside Dhaka, Ahmed Sofa took no leave from the city except perhaps for twice or thrice only, once for a sly break to Brahmanbaria College from where he took his baccalaureate diploma and a second time over to perhaps the Indian states of Tripura and West Bengal as a political refugee in 1971. Ahmed Sofa and Dhaka, thereafter, even in death remained virtually in a deadlock. His remains were finally buried in a common man’s ground in Mirpur, in some sort of a slum for the dead, not far from the burial ground officially consecrated for the nation’s martyred intellectuals and other stalwarts. Thus, even in his death Ahmed Sofa lives outside in the nation’s ceremonial high ground.
Not long away and not far from the space he lived in then, where now stand some of the newer student dormitories of the Dhaka University, a squatter settlement or slum flourished, or so I was told on my first encounter by Ahmed Sofa. It was demolished and its inmates driven out by force one night early in 1975. It was a human disaster but accomplished at the beck of powers that were. Ahmed Sofa happened to be a rare man among our poets who, notwithstanding all its foretold futility, was enraged enough to register his bitter protest. No one else had the guts to raise a riot that day. Ahmed Sofa’s Basteeujar has been perhaps the only testimony of a time out of joints. Sofa mourned the loss, but no nostalgia took hold of him. His vision was tinged with a touch of both melancholia and utopia, as I would venture to say today.
As Ahmed Sofa put it once in his perhaps more youthful days, “Writing a poem is sort of a scandal; so I didn’t go for one for real long”. Perhaps true, founding a city, or better a civilisation, that is to say, the art of living together in towns has been a scandal too. In Gilgamesh, one of the oldest poems we know on earth, we read of how Enkidu, a wild man living in peace with the fauna of the fields and forests, was enticed down from the mountains of south-eastern Anatolia to become a town-dweller in the Mesopotamian plain, by a pretty harlot. As the myth has it, “not unnaturally he fell for her and after seven days of her company he was no longer accepted by the animals he had lived with. He had become civilised.” “The myth,” according to Gwyn Williams, a concerned scholar, “suggests that towns are a female need, if not invention and that men would not naturally live, work and breed in towns unless trapped to this way of life by the beauty and requirements of woman.” (Williams 1967: 48)
For Ahmed Sofa, the name of the harlot is “cruel hunger”, the goddess of need, who entices the rural rabble crowding the city. “These rural folks, like ants in queue beyond a count, drawn to honey, crowd the city,” writes Ahmed Sofa. His imagery is no less traumatic: “Driven by a pitiless hunger like a man-eating tiger’s wrath, like the tyranny of a drought, or a savage flood dragging hillside weeds in its wake,” as Ahmed Sofa describes the rural exodus to the sprawling city. It’s not much unlike what happens in the world of the classical economists or for that matter in Sir Arthur Lewis’s two-sector growth model that divided a neo-colonial economy (a so-called “labour-surplus economy”) into two linked sectors: a large traditional sector and a small industrial one. The traditional sector contains a large pool of low-productivity, surplus, labour upon which the industrial sector can draw. But unlike Lewis’s model there is no dynamic drive here; the labour-surplus economy would not grow over time, there being no industrialisation providing “the engine of growth”.
Lure of the town, in the imaginary of the folks, plays no small role, adds Ahmed Sofa. “These country folks,” in our poet’s own words, “looked at the city as if it is a fun-filled folk lore come true”. The city, in their imaginary is heaven itself; city air frees, or so they believe; it’s all illumination per se. In Ahmed Sofa’s poetic discourse the peasant turned migrant labourer in the city thinks much like this:
“Flood-light wreaths keep flooding city streets, playful fairies
Crowd around; how merry they keep round the clock,
Afternoons and evenings, adapting to the undulations of
The heart, music oozing out of lyrical movements, and pretty feet!
Steam, air, water and blitz of lightning up in heaven
Serve the town like devoted, ungrudging slaves;
Carts and autos speed along; hydrants jetting water out,
Fresh drafts swishing air out of air-machines,
Happiness itself hangs here like a bunch of grapes.”
(Sofa 2008: 532)
An iron rhino or the world turned upside down
Grapes would become sour soon enough, for sure. One fine evening, over mulled wine and cigars, powers that be decided that a whole habitat of hapless rural migrants would be bulldozed in one fell swoop. A rogue never runs out of excuses. Ahmed Sofa had just the misfortune of witnessing the unjust will of that power in action in Nilkhet slums. It was perhaps “Time, the hangman” who was taking over. The world turned upside down that day. It was only Ahmed Sofa who knew that things were more like signs of things to come.
Ahmed Sofa casts a calm, terrible, melancholy look at the scene of mourning. In the end he would end up in an allegory of defiance of the oppressed. All that tyranny needs is a bulldozer and the poet too knows that power comes out of a barrel of a gun. Is it just a narrative motif or is there more to it? Is it a narrative which has a place inside the allegory? Who knows? You are right perhaps. “Evicting a slum” is more than an occasional poem, vintage 1975, for all its oriental despotism. Ahmed Sofa is no doubt witnessing a Dhaka slum, like the couple of thousand others around, fallen prostrate like a dead body sprawling in the mud after three shots in George Orwell’s imperial parable. It was perhaps lying there like a non-uniformed peasant’s body under the boot of one in uniform.
Read as an allegory, “Evicting a slum” yields a tale of dispossession, of exile, and dispossession again. Looking back, our urban slums appear to be a reprieve, a purgatory of sorts. Doomsday cannot be too far, however. On the eve, “a muffled fear runs aground.” As Ahmed Sofa sees it, “a wild rumour jumped like a prairie-fire up and, it seemed, as if some good old hard rock burst asunder in a violent eruption.” In the end it is the other’s gaze that prevails: “It is as if the ground is sobbing and wailing, frozen so long, now letting its voice find life-giving songs”.
At the moment, writes Ahmed Sofa, “pounding hearts were heard beating loud not unlike some trumpets of war.” When the bulldozers, those “iron rhinoceros”, as Sofa calls them, “blind in rage and anger” finally moved in and began ploughing pretty deep in the ground, those tiny make-believe hovels of the poorest folks felt the crushing weight of power. The other’s gaze can hardly skip “skinny naked dirty curious kids bagging a chance to see black eye to black eye those death-dealing gun-barrels”. Our melancholy flâneur, not unlike Charles Baudelaire’s outsider, is in love with “the clouds … the clouds passing,… up there, … up there, … the marvellous clouds”.
Women folk muted like tamed birds
Stood not unlike a still-life painting not knowing
Right when tears in their eyes dried up;
“How could you evade destiny’s writ”, —the elderly murmured.
Young ones, faces downcast, bore with the agony,
It got so hard, felt like skinning a goat alive.
That slum-dog, man’s friend but no fool himself
Got to get barking loud, forgetting to bite the fresh bone in jaw.
(Sofa 2008: 535)
Our narrator meets a bird, shalik, ancient cliché for freedom in a cage, too grief-stricken to sing. A metonymy for home, shimul tree, casts a long shadow. A melancholy, in a word, has taken hold of the world. The poet as flâneur, not a revolutionary, sees “flowers dropping red petals as red tear-drops in anguish”! He sees:
Quilts and pillows bundled up, shutters and window blinds,
Household birds raised in cages, sundry kitchen utensils,
Tubs and bowls, mugs and lanterns, evening kerosene lamps,
Pigeons, stripes all over, flying high,
A disoriented milking goat-mother.
All of man’s friends living in agony for mankind.
(Sofa 2008: 532)
A call to arms
Ahmed Sofa ends on a utopian note, reiterating a call for arms. Slums, abode of the disinherited, refuge of the wretched of the earth in fact die hard; on the contrary they multiply as if in vengeance on the city. The pushing rural unemployment, crossed with the lure of urban slums, partly account for this. Man dreams but the mode disavows. “It’s impossible,” Ahmed Sofa intervened a full quarter century later, “to evict the slums”, reiterating what he had to disgorge in his 1975 poem. He found the slum-denizens murmuring: “we are not going to go back to the village, does a baby get back to the mother’s womb ever?” They promise, instead, a river of blood, a war on the proud and pitiless towns.
You can define a majority of Dhaka’s denizens as “slum dwellers” right now too, the two city corporations boasting more than two thousand slums, thus vindicating Ahmed Sofa’s prognosis forty years down the line, if farther vindication be necessary. Dhaka is overpopulated, at the same time they, the people of the city, are overpowered too. In Marxian parlance, “relative overpopulation” is that part of the labour force which exceeds the regulating needs of employment for capital in the given phase of accumulation. Within this one distinguishes a “floating”, a “latent” and a “stagnant” sector. To this three are now added new sectors every day, of the unemployed, the underemployed and the semi-employed who together form the unemployed mass of the reserve army of labour.
Ahmed Sofa, known in his lifetime as a firebrand, now appears to be no less memorable for his poems. I do not know yet how posterity is going to read him. But it is all apparent now. Sofa sometimes reminds me of the great French lyric poet Charles Baudelaire who in an apostrophe to his own poems had these to say: “Accursed being to whom from the lowest depths of the highest heavens, nothing but me responds; you who, like a shade that leaves no more than a fleeting trace, tread lightly with a serene gaze, those foolish mortals who called you bitter, statue with jet eyes, great angel with your brow made of bronze.” (Baudelaire 1975: 41)
The writer is Professor at General Education Department, ULAB.
References
Baudelaire, Charles. “Poem no. XXXIX [untitled]”. Oeuvrescomplètes, tome I, ed. ClaudePichois, Gallimard, 1975, pp. 40-41.
Chowdhury,FaizulL. “JibananandaDaserdirghotom o aprokashitokabita: SomeshwarMustafirprithibe: bhumika“. Samakal: Eidsamkhya (Samakal: Eid special number), June 2017, pp. 25-28.
Fanon, Franz. The Wretched of the Earth. Translated by RichardPhilcox, Grove Press, 2004.
Sofa, Ahmed. “Basteeucchedkora smabhobnoi, Parts I and 2″. AjkerKagoj, April 14, and 28, 2000.
Sofa, Ahmed. “Basteeujar“. Ahmed SofaRochonaboli. Edited by Nurul Anwar,vol. , Khan Brothers, 2008, pp. 531-536.
Sofa, Ahmed. “The Eviction of the Shanty Town Dwellers”. Ahmed SofaRochonaboli. Edited by Nurul Anwar,vol. , Khan Brothers, 2008, pp. 537-542.
Gwyn Williams, Turkey: Atraveller’sguide and history. Faber and Faber, 1967.
In a post-war society, distinctive and innovative filmmaker Alamgir Kabir embraced cinema as a medium for bringing change in the socio-political scenario of the country. His co-workers, compatriot filmmakers and students aptly call him Cholochitracharya for his enormous contribution to the cinema movement, writing’s on films, and documentation of the 1971 war for liberation, and for activism both home and abroad. This week the Star traces the remarkable journey of the maestro of Bangla cinema.
“It was around 6pm when we arrived at the Nagarbari ferry terminal after attending a film related programme in Bogra. Kabir Bhai parked the car at the edge of the ferry. Morshed (Filmmaker Morshedul Islam) went to buy the tickets.” Munira Morshed Munni, who is working as a photo editor at Drik Picture Library, takes a pause before continuing. As if she was trying to recall a blocked out incident from the past. Munira, more commonly known as Munni amidst friends and family, and film actress Tina Khan were feeling scared as Alamgir Kabir jokingly threatened to throw the car into the river. Suddenly, they saw a heavily loaded truck entering the ferry at a high speed. The truck’s headlights flashed on their car’s windshield. Kabir shouted at the truck driver to stop but it was too late. The driver probably had lost control truck by then, as he crashed into the car at high speed. Munni was the lone survivor of the accident. With the death of Alamgir Kabir, on January 20 1989, the country lost the loudest dissenting voice of its cinema.
Alamgir Kabir is usually remembered as one of the most significant directors who emerged in the wave of Bangladeshi post-war cinema in the early 70’s. For Bangladeshis, however, Kabir was much more than just a distinctive and innovative filmmaker. By the time he made his debut documen-tary, ‘Liberation Fighters’, in 1971, he had already started his career as a journalist in the weekly Holiday writing innumerable articles on films including a book named ‘Cinema in Pakistan’. For that very reason, film researchers have always described Kabir not as only a filmmaker but also as a teacher, a freedom fighter and a cultural activist.
Born in Rangamati in 1938, Kabir spent his early years in various small towns of the country as his family moved from one place to another. At the age of 22, Kabir went to England to study Electrical Engineering at Oxford University. While in the university Kabir became interested in the left movement in England and joined The Daily Worker, a newspaper of the Communist Party of Great Britain.
His stay in England was instrumental in shaping Kabir’s revolutionary nature. The pre and post Liberation war scenario shaped his nature as a filmmaker and philosopher. Instead of blaming our colonial past, Kabir always emphasised on the pursuit of our region’s individual identity, our unique language of art. In one of his writings, Kabir stated, “It is too late to put blame on our colonial past or cultural subjugation by the majority community of this sub-continent. Because we know now that given the right conditions and dedication from adherents of the art, even the most exploited nation could achieve true cinema with marked national character.”
In the early 60s, Kabir went for guerrilla warfare training in Cuba. As a reporter of the said communist daily, he took an interview of the Cuban President Fidel Castro. He also took part in the wars of liberation of Palestine and Algeria.
As an established film critic and writer, Kabir came to embrace cinema above all as an alternative form of self-expression. Self-expression, for him, was never merely a matter of aesthetics but always a matter of social and political discourse. In fact, in his social studies of film that he developed from mid 60s onward in two major books, “Cinema in Pakistan” (1969) and “Film in Bangladesh” (1979), Kabir defined cinema’s purpose precisely as a way to social revolution for development.
He always carried a philosophical attitude to cinema – his works ranging from teaching, writing to filmmaking. What is the face of cinema in this particular region, he would ask. To define it, he emphasised on social consciousness as he wrote, “The aim of every art is to contribute directly or indirectly to social development and also to act as a catalyst in the process of social evaluation.”
Renowned filmmaker Tanvir Mokammel termed him as an auteur filmmaker, a filmmaker whose personal influence and artistic control over a movie are so great that they are regarded as the author of the movie. According to him, “Though the subject matter and backdrop of Alamgir Kabir’s six feature films and a dozen short films depict diversity, there is a common criterion of all his films; Alamgir Kabir was an auteur filmmaker. He was not only a director but also a script and dialogue writer and cinematographer.”
Alamgir Kabir tried to make commercially viable, good quality films. Commercial film is a market sensitive sector and caters to an audience which is solely interested in entertainment. Kabir believed that such mainstream films would naturally be made but other types of films should flourish as well. However, his approach to film was different from his contemporaries. He incorporated animation, using negative films in a film roll, for the first time in Bangladeshi cinema.
Kabir translated his experiences as a communist activist onto the celluloid. In his acclaimed film, ‘Shimana Periye’, he tried to bring together two people from two different classes. The film was a kind of experiment, to see what would happen if two people from two different classes were stranded in an isolated island. Kabir tried to contrive a third meaning through creating affection and love between a modern bourgeoisie girl Tina and a poor peasant Kalu in the film. Here, the narrative might be fiction, but according to Freudian psychoanalyst Jacques Lacan, this theme has a connection with truth. Subconsciously, says Jacque, people with lower social standing fantasise about mingling with people from the elite class.
The same sort of fiction appeared on the screen with another one of his films, ‘Surjo Kanya’. Some critics embraced the movie, as it allowed a feminist voice to surface from the subjugated class. However, in the film the revolutionary female character appeared on the screen as a dream of the male protagonist, Lenin. The film didn’t just translate the desires of a woman on the big screen but also focussed on the urge for freedom reflected through a male perspective. It was, thus, not merely a feminist film but also provoked a common need of people from every region, gender, age, race – the need for freedom.
From Palestine and Algeria to the liberation war of Bangladesh, the word freedom always inflamed Kabir’s desire to fight. Hence, the word freedom would naturally appear in all of his six feature films, either in the form of a dialogue or interwoven into the narrative of the story. According to Tanvir Mokammel, no one can wholly understand the relevance and reality of Liberation War and the urge for freedom without knowing the days of turmoil of the 1960s. Alamgir Kabir superbly played his part both as a filmmaker and as a fighter both during and after the liberation war to free the country from social injustice.
In the early 80s, along with a group of youngsters, Kabir initiated the film society movement. He was considered a mentor because of his refreshing perspective of films. Late Tareq Masud in his memoir, “Cholochitrajatra”, admits that Kabir’s contribution to his journey as a filmmaker was immense. When Tareq was making ‘Adam Surat’, Kabir stood beside him with all his resources. He gladly gave his 16mm camera to shoot the documentary on SM Sultan. According to Tareq, Kabir was always sympathetic to the filmmakers who didn’t have money in their pockets to make a film. He wrote in his book, “He helped me in every way. To pay my gratitude I dedicated ‘Adam Surat’ to him.”
Alamgir Kabir’s co-workers, admirers and students aptly call him Cholochitracharya. According to documentary film-maker and activist Manjare Hasin Murad, he felt completely and personally co-opted by the massive social, economic and cultural developments that were profoundly transforming people in the post-war society and was able to perfectly capture it in his cinema. Moreover he played a crucial role as a social reformist. And that is why Murad believes, “The word Cholochitracharya goes well with him.”
Renowned writer Syed Shamsul Haq, who was also a school friend of Alamgir Kabir, explains why the word Cholochitracharya suits him more than anyone else. He explains that the term “Acharya” is most often said to include the root “char” or “charya” meaning conduct. Thus it literally connotes one who teaches by conduct. He says, “Kabir had charismatic power. He was an intellectual filmmaker and a rare personality in our country. He wanted to create an innovative film language. And for that matter, I believe he deserves national recognition.”
Besides his extraordinary achievement in filmmaking, Kabir and his films still retain for us a sense of revolution that proposes both freedom and social justice that has rarely been seen in the works of any other artist in the country.
The Inheritance of Loss
February 1, 2020
Ananta Yusuf And Shamsuddoza Sajen
This is a story of a journey into the past of Tongibari, an important part of the incredible Vikrampur civilisation. Once known as the City of Courage, Bikrampur’s (as it is called now) glory might have faded a long time back but there are still some remnants that bear testimony to our rich past.
Before travelling to Tongibari upazila to get a firsthand account of the present state of some old architectural sites of the area, we had collected the archeological survey report of Munshiganj (hereafter referred as ASRM), published in 2000, to understand the changes inflicted on them over the last sixteen years. What we found was shocking. The old structures are dilapidated, in complete ruins. Some have decayed over time and some are on the verge of extinction. There are hardly any preservation efforts from the government. Fortunately, we were at least able to get some interesting stories on these cultural relics that speak volumes as to why these are more than just brick structures.
After a two-hour bus ride from Dhaka, we arrived at Tongibari Bazar. We asked the locals to direct us to the Sonarang Temples, showing them pictures of the temples for reference. They hardly recognised them and provided us with conflicting directions. Finally, we went to a nearby temple and got the route details. It took another twenty minutes on a scooter to reach the Sonarang Temples.
The Sonarangs are basically two temples, standing side by side on a single masonry platform. The temple on the west is a Kali temple while the one on the east is dedicated to Shiva. The ASRM notes that in an inscription fixed over the temple, it appeared that a certain Rupchandra had built the large Kali temple in 1843 and the smaller one was built in 1886. Unfortunately, we did not find the inscription. The locals also do not know about him neither do they have any idea about the construction period. The temples are now abandoned.
The surface of the sikhara (a Sanskrit word literally translating to mountain peak, which refers to the rising tower of a temple) of the Shiva temple is relieved with a concave arched panel with a serpent hood on each side, a feature that is repeated all over the structure. While speaking to residents of the area, one of them mused that there are hidden treasure chambers in sikharas. Another one stopped him from further elaboration, warning that the treasures are purportedly protected by giant snakes.
The design and decoration of both the temples bear close resemblance to each other. These are nava-ratna temples. On the second stage of the temples there are small ratnas (spires) around a relatively taller spire. Interestingly, there were three clocks engraved on the walls of temples, each showing different times of the day. These probably depict the prayer times. For us, this seemed to be a remarkable illustration of incorporation of modern symbols in traditional architecture.
A signboard of the Archeological Department near the site warns of fines and punishment for any harm done to the architecture of the temples. But the whole structure, with peeled off wall decorations, broken ratnas and serpent hoods, and encroaching weeds, bear testimony of gross neglect. The plastered dome and a heap of bricks near the site indicate some renovation work in recent times. But the plaster work has wiped out the relief works of the surface, and the wall bears a distorted look, both in colour and design. The ASRM notes that there were two altars on a marble floor inside the dark sanctum of the temple, but without any idols. However, we did not find any such altars; instead, there were some sacks of cement in one of the sanctums. We hoped that the serpent story was true. At least that would save the temples from further dereliction.
After spending one hour at the Sonarganj Temples, we started for Balai Mosque and reached there with relative ease. The image of the mosque depicted in the ASRM shows its beautiful late Mughal design, though in a dilapidated condition. But what we found at the spot was horrifying. The single-domed square building, which measured 2m sides, is now reduced to a pillar strangled by trees and bushes. It confirmed our worst fears; another heritage site lost forever.
The Balai Mosque was owned by the Sikdar family. We found a member of the family at that spot, who, in the past, had the opportunity to perform prayers in the mosque. According to him, the mosque was not spacious enough to accommodate a large gathering. So another mosque was built and the old one was abandoned. They currently have a plan to remove the old ramparts and build another mosque there. Though the cultural relic was included in the archeological survey, it, unfortunately, has not been preserved.
Our next destination was Outshahi Math, located at the village of the same name. The sikhara type structure, with 19 m long conical spire, can be viewed from a long distance. The surface of the spire is relieved with curved cornice designs, repeated vertically upwards from the base to the crest.
There is no signboard of the Archeological Department at this spot. Some Hindu families, who live near the Math, informed us that they do not know of any government initiatives to preserve the site. Basnati Rani, who has been living there for five decades, said there was an inscription on the entrance wall that suggested that the Math was built 600 years ago. We did not find the inscription and there is no mention of the construction period in the ASRM. She further told us that a certain Vaisya Zamindar built the Math on a cremation ground. His descendants left the country during Partition but the place gives you some idea of the grandiose landlord.
One might be confused to see the Muslim prototypes of floral works and arches on the Math. But this was the tradition of Bengal, where the two communities shared lives as well as aesthetics. The pigeon holes stamped on the top of the Math are habitats of colourful birds that fly and chirp around the old relic.
It was already afternoon when we started for Mulchar village. There we found the oldest temple of Bikrampur, popularly known as the Radha Govinda temple. This is a good specimen of the do-chala temple, very popular in Bengal during the late medieval period. According to the ASRM, the temple may be dated to 16th century.
The south facing temple rises to a height of 4.50 m. This part is highly ornamented with terracotta panels; however, it is not in a good state. It has a curved roof with two sloping sides. The roof is badly damaged and both its sloping wings are broken. A fig tree has grown over the wall, strangling the whole structure.
The priest of the temple Binoy Sadhu passed away recently. The centanarian remained unmarried and spent all his life in devotion to the temple. We found Biplab Mandal, a devotee of the temple, working near the area. Now, he performs the rituals in absence of any designated priest.
The temple area belongs to a Muslim family who bought the land from Sen Zamindars, who left the area during Partition. Originally, it was one of the family temples of the Sens. Faruk Haldar, the current land owner, fondly spoke of the priest who was like a member of their family. Many people advised him to remove the structure and make profitable use of the land. But his family spared the land for the old relic, respecting the feelings of the devotees. At a time when we are befuddled with growing intolerance and religious bigotry, this story makes us proud. We feel assured that in the remote corners of our society, there are still people who have fondly preserved the spirit of communal harmony.
The temple has developed innumerable cracks that bear witness to its advanced stage of disintegration. Though it was included in the archeological survey, there is no visible effort from the government to protect it. It could break down someday soon; the ramparts will be thrown away, and we will lose another rich vestige of our heritage.
We are aware that cultural artifacts decay quickly in our damp weather. But our negligence is more ruthless than the nature’s force. We are not experts to suggest what to do to protect these treasures. We just want to share the fact that with these artifacts, our glorious tradition of craftsmanship, aesthetics and stories of religious harmony is also dying. In essence, all we will leave our future generation are the loss of a past glory to inherit.
Passion for the past
January 31, 2020
Shahnaj Husne Jahan
Born on October 1, 1918, in the village of Darikandi under Bancharampur upazila in Brahmanbaria, Bangladesh, Abul Kalam Mohammad Zakariah received his Matriculation Certificate in 1939 from Brindaban High School in Bancharampur and Intermediate Certificate in 1941 from Dacca Intermediate College (currently Dhaka College), Dhaka. He completed his BA (Honour’s) in 1944 and MA in 1945 from the Department of English, University of Dhaka.
In 1946-47, during the last days of the British Raj when he was serving as a lecturer at the Department of English Language and Literature in Azizul Haq College, Bogura, he found himself drawn to Mahasthangarh, a few kilometres from his college. The site fascinated the young academic, then in his late twenties, so much so that he began to pursue scholarly research on history, archaeology and art history of Bengal in particular and world archaeology and antiquities in general. But there were not enough books. An incessant desire to “touch” the past turned into a passion and he began to investigate antiquities in the neighbouring region. Undoubtedly, Mahasthangarh was a compelling experience in his life, an experience that would lead to a tectonic shift in his living. From then on, an insatiable urge to uncover the past—“un-erase” the erased—drove him relentlessly.
After Pakistan was created in 1947, he joined the civil service and, for the first ten years, served in various administrative posts: as a Deputy Magistrate in Manikganj, Faridpur, Noakhali and Chattogram, and a Sub-Divisional Officer in Chattogram and Cox’s Bazar. In a country where one encounters civil servants either in the guise of “brown men with white masks” or as corrupt officials filling up their own coffers, Zakariah was an exception. He was a man of impeccable honesty in financial matters and was meticulous in his role as an administrative functionary, but he also used—or rather “misused”, one may say—his office for archaeological investigations. Importantly, the office provided him with a limitless opportunity to explore the archaeological sites in all areas of his posting.
In 1958, when he was posted as the Joint Collector (Revenue) of Dinajpur district, he visited most of the archaeological sites in the region. The same year, when he won a scholarship to study public administration at the California State University, USA, his passion for archaeology drove him to the Petrified Forest in California. It was a memorable experience for him, for how often does one wander in a past frozen as a forest of felled trees?
After returning home and spending a few more years in the administrative service, Zakariah drove headlong into an experience that would chisel his amateurish passion for archaeology into a definitive contour of hardcore professionalism. This was 1967, when he was posted as the Deputy Commissioner of Dinajpur administrative district. He had earlier visited Fatehpur Marash village at Gopalganj union, under Nawabganj police station in the district, and had instinctively realised that the site was neither a dried water tank, as Westmacott had claimed in 1874, nor the site of Sita’s second exile described in the Ramayana, as claimed by FW Strong in Dinajpur District Gazetteer (1912). He was sure that the site held the ruins of a Buddhist monastery.
Now, with enough administrative authority to pursue a scientific investigation, he urged the Department of Archaeology and Museums of the government of Pakistan to conduct excavations at Fatehpur Marash and nearby sites of Chak Junid, Chor Chakravarti, and Kantangar. However, even his administrate weight could not persuade the Pakistani government to undertake the investigation. As in numerous other cases, it declined his request by showing the same old “red card” the bureaucracy is fond of displaying: paucity of funds. At this point, Zakariah showed his mettle. He raised Rs 10,000 as grant from the District Board of Dinajpur—again, another “misuse” of authority—and invited the Department of Archaeology and Museums to extend its technical support. The fund was insufficient to excavate the entire site. Nevertheless, the result was decisive and significant, because Fatehpur Marash yielded what today is known as Sitakot Vihara, a Buddhist monastery dated to the 6th-7th century CE.
The excavation of Sitakot Vihara intensified Zakariah’s thirst for archaeological investigation. During the two years of his tenure as Deputy Commissioner in Dinajpur, from 1967 to 1969, he conducted an extensive survey in the entire northern Bengal and recorded all the archaeological sites and monuments in the region.
Besides carrying out his administrative responsibilities dutifully, he devoted himself to collecting artefacts from different parts of the greater Dinajpur district (currently the administrative districts of Panchagarh, Thakurgaon and Dinajpur). With the objective of preserving his collection, he established the Dinajpur Museum on May 1, 1968 as an institution attached to the Nazimuddin Muslim Hall and Public Library. This museum was also made the repository of artefacts unearthed from the archaeological excavation of Sitakot Vihara. Anyone visiting the museum will be struck with the rich collection it holds. During this period, he also collected several medieval vernacular texts (punthis), important among which are Gupichandrer Sanyas by Shukur Mahmud, Gaji Kalu Champabati by Sheikh Khuda Bakhsh, Bishaharar Punthi by Jagajjiban Ghoshal, Bishvaketu by Dvija Pashupati, Satyapirer Punthi by Krishna Haridash, Gaji Kalu Champabati by Halu Mir, Shri Krishna Bijay by Maladhara Basu, etc. All these texts were composed between the 15th and 18th centuries CE.
During the last few years of Pakistani rule, from 1969 to 1971, he served as the Chairman of Chattogram Development Authority. In those tumultuous days, when the people of erstwhile East Pakistan decisively sought a new horizon as their national identity, Zakariah rode the wave of the momentous time to recover a large number of artefacts and cultural materials from Chattogram. The success he had with the museum in Dinajpur led him to develop the Chattogram Anthropological Museum of the Department of Archaeology and Museums, which till today stores the materials he recovered from the region.
After the liberation of Bangladesh in 1971, the newly formed government was judicious enough in appointing him as Joint Secretary in the Ministry of Education, Culture and Sport. He now had the full might of the ministry at his disposal and used the opportunity to dispatch the Department of Archaeology and Museums to complete the excavation work at Sitakot Vihara.
As Joint Secretary from 1972 to 1974 and Additional Secretary from 1974 to 1976 at the Ministry of Education, Culture and Sport, he surveyed the entire country and recorded all archaeological sites and monuments. The result was monumental, because it yielded a documentation of over six hundred sites in Bangladesh in the form of a book titled Bangladesher Pratnasampad, which was published by the Shilpakala Academy in Dhaka in 1984. No archaeological documentation can ever claim to be complete, and the same is true in case of Zakariah’s work. Nevertheless, the book brought together what may be called the widest array of known and unknown sites, and exhibited the richness of Bangladesh’s past. The publication is more valuable because of the interest it raised among the non-professionals. If there is one book on Bangladesh’s archaeology that I hold fondly in my memory, it is Bangladesher Pratnasampad, because my student days were spent in retracing Zakariah’s footsteps and rediscovering the rich heritage of Bangladesh that he had documented in it.
Zakariah’s professional career as a civil servant ended in 1976, when he retired as the Secretary of the Ministry of Education, Culture and Sport. By that time, he had enriched himself further by using his professional engagements abroad to visit numerous heritage sites in Italy, Greece, Egypt, Azerbaijan, Iran, Indonesia and India. At home, he also served as a member of the editorial board for Bangladesh District Gazetteer (1972-76), and a member of the first government committee for Mukti Juddher Itihas (the History of Liberation War) in July 1972. After his retirement, his passion for the past drew him to serve as the President of the Editorial Board of Kumilla Jelar Itihas (History of Comilla District) in 1984 and as the Advisory Editor of Varendra Anchaler Itihas (History of Varendra Region) in 1998. However, the bulk of his work in the later part of his life lay in writing. AKM Zakariah has twenty-one full-length publications, a large number of research papers, and nine unpublished novels to his credit. He also wrote on archaeology for children in two volumes titled Bangldesher Prachinkirti.
Having thus scripted the life of a man who pursued archaeology out of love, as I pause and review, I wonder if I have said enough or too little. In a country like Bangladesh, where the top-heavy bureaucracy is perhaps a little too heavy with the burden of bearing the load of a fragile economic infrastructure, and where there is hardly any fund for archaeological investigations, it has to be the people, the amateurs—and not the professional archaeologists—who provide the thrust necessary to investigate the past, either by protecting their heritage sites or by actively promoting a culture of investigating the past. The role of the professional archaeologists here must be to provide the expertise, and not turn out as the prophets who hold the key to the past. This may be a dream, but a dream worth pursuing, that I wish to work as a professional archaeologist in a country with 160 million amateur archaeologists. Zakariah stands in the forefront of such amateurs, leading by example in setting a trend that any person with a passion for the past can provide the impetus by mobilising whatever resources they may be able to access. There are more such amateurs who belong to the same breed as Zakariah, who work for passion, and because of their endeavour, one may hope for the day when archaeology in Bangladesh will achieve a household applicability as necessary as the daily bread.
Prof Shahnaj Husne Jahan is Director, Center for Archaeological Studies, University of Liberal Arts Bangladesh.
Arabic and Persian inscriptions of Bengal
January 27, 2020
SHAMSUDDOZA SAJEN
Did you know that the famous Bara Katra, located in the old quarters of Dhaka city, was built to be an exact replica of the garden of paradise? It is also little known that its patron Mughal Prince Shah Shuja (1616–1661AD) was not satisfied with the structure and thus ordered it to be used as a caravanserai instead. These historical facts can be gleaned from the Persian inscription (pictured below) affixed to the building. Another inscription related to this fabulous structure informs that twenty-two shops were endowed for the regular maintenance of the building and for upkeep of the poor, and that no rent would be charged to those who deserved to stay there for free. This inscription used to be attached to the main gate of the Bara Katra, but is now preserved at the Bangladesh National Museum.
There are hundreds of such inscriptions scattered over the whole of Bengal, including present day Bangladesh and West Bengal, which are living testimonies to the splendour that was Bengal during the Sultanate and Mughal rule. Professor Richard Eaton (author of The Rise of Islam and the Bengal Frontier, 1204–1760 [1993]) rightly opines, “Nowhere was Islamic culture in Bengal expressed more vividly or distinctly than in the region’s rich tradition of public inscriptions, recorded either in Arabic or in Persian.”
Though a number of epigraphic studies of Bengal have been carried out in the past such as Bibliography of the Muslim Inscriptions of Bengal (1957) by Ahmad Hasan Dani and Corpus of the Arabic and Persian Inscriptions of Bengal (1992) by Abdul Karim, the recently published Arabic and Persian Inscriptions of Bengal (2017) by Mohammad Yusuf Siddiq deserves special mention because of its intensive analysis and extensive collection of inscriptions. The author has taken a creative approach in the cultural and historical interpretation and analysis of many freshly discovered inscriptions. Professor Siddiq is a distinguished scholar in the field of Islamic history, particularly Islamic epigraphy. He has held various prestigious academic positions in world-renowned universities such as Harvard, MIT and Oxford.
The book discusses 425 inscriptions with 607 plates dating from Bengal’s Sultanate Period through to the succeeding Mughal period. The earliest inscription is dated 1210-13 AD and the latest is from 1844 AD. These epigraphic records enable readers to understand the transformations in style and subject matter of inscriptions as well as their practical utility with the changes in political administration over the long six-hundred-years of Muslim rule in Bengal.
Bengal already had a rich epigraphic heritage extending back to the pre-Sultanate period. The Muslim rulers introduced various intricate and stylised forms of calligraphy in the inscription style of this area and raised it to a high aesthetic level. Like their Pala and Sena predecessors, Bengal’s Muslim rulers used exquisite black basalt as the preferred medium for recording public inscriptions. But there is a marked difference in execution of inscription work between the earlier (Sanskrit and Proto-Bengali) epigraphs and Islamic (Arabic and Persian) ones. While the former epigraphs are mostly incised, the later ones are in general rendered in relief [Siddiq (2017): 49].
Glorification of Allah is at the heart of calligraphy. Professor Siddiq opines that the written form of Allah in Arabic was a great source of consolation, providing a mental image for contemplating and meditating about God, for the newly converted Muslim of the Bengal who had a strong tradition of religious iconography and symbolism.
Islamic inscriptions vary from region to region in both their artistic expressions and literary styles. But there is a remarkable continuity in the Islamic messages these inscriptions convey, which travelled across the Islamic world. Professor Yusuf Siddiq terms this circulation process as “globalization of the medieval world of Islam”. The extraordinary collection of Islamic inscriptions from Bengal, reproduced in this book, attests to the region’s prominence in this unique global phenomenon.
In the Islamic world, inscriptions can be found not only on buildings, but also on textiles and rugs, metal and glass objects, ceramics and ornaments, not to mention arms, coins and seals. In the second chapter titled “Inscriptions as a source for Islamic history”, Professor Siddiq informs that inscriptions became more common as architectural projects expanded in the Islamic world. Until the eleventh century most inscriptions appeared on the insides of buildings. After that, we see the use of inscription to decorate the outer sides of buildings. It is difficult to imagine a building of the early period without some kind of inscription, as if without one, the building would seem to be incomplete or unfinished, adds the author.
In Bengal, most of the inscriptions appeared on the exterior surfaces of mosques, shrines, tombs, palaces, Sufi hospices and shrines, or on civil structures such as bridges, caravanserais, tanks and wells. The earliest Persian inscription discovered in Bengal was affixed to a bridge near Sultanganj of Chapai Nawabganj. The bridge was built by Sultan Ala Din (1210–13), the second successor of Bakhtiyar Khilji. These secular structures with religious expressions through inscriptions constitute public statements of faith that serve to remind Muslims of aspects of their Islamic belief, explains Professor Siddiq. It also reflects the characteristic Islamic perspective that does not formally separate religious life and everyday worldly activities.
Translation of the inscription
In the beginning, I praise and thank God. The One Who in His (divine) wisdom has provided this inn (like world). At every moment someone is entering into it, while someone else is departing. For no one has the capacity to settle here permanently. As soon as someone becomes aware of the movement of the cosmos, he realises that there is no provision for the life except good deeds. Due to the justice of Sultan Ala Din wa Dunya Shah-e-Jahan, even a lamb does not (need to) hide from a wolf. Because of his efforts, Islam grows every moment. By the mercy of (God) the Just, this bridge was completed during his reign. This good deed was accomplished by the benevolent (sultan), engaged day and night in welfare works for the nobles and the commoners.
A detailed study of popular calligraphic styles in Bengal is presented in the chapter five titled “Inscription as art in Islamic architecture Bengal”. During the Sultanate period (14th to early part of the 16th century) the tughra style flourished and dominated architectural calligraphy of Bengal. The inscription of the tughra type are distinctive for their elongated shafts formed from Arabic letters like alif or lam, which rise to the top of a panel in a symmetrical way. The other letters such as nun or fi sweep across the vertical shafts, appearing rather like swans or boats coursing across the black basalt platform. The author informs that there is a rhythmic pattern in the movement of the letters and the flow of lines in Bengali tughra, which in abstract forms ranging from boats and oars, and swans and reeds, contain a metaphorical expression of riverine Bengal. However, the tughra style lost its popularity to the nastaliq style which was patronised by the Mughals.
The calligraphies in inscriptions not only convey message as text but also constitute a vibrant decorative appeal. In some buildings the calligraphic panels were placed too high to be deciphered, which suggest that their aesthetic impact was more important than their textual message. In many inscriptions, the logic of the pattern of ornamentation took precedence over legibility. Professor Siddiq refers to early kufi inscriptions and some Bengali tughra inscriptions from the Sultanate period that are almost indecipherable but look very attractive in terms of decoration. He adds that this development is inspired by a mystical tendency that not all inscriptions may or should be read by ordinary viewers. A strong belief in the hierarchy of knowledge and spiritual development is embedded in such practices.
The last six chapters of the book (chapters 8–13) chronologically presents the inscriptions along with their picture, original texts and English translation of the texts. These inscriptions provide significant facts surrounding construction of various prominent structures of Bengal and thus help fill many gaps in the history of Muslim rule in Bengal, which otherwise have no other written source. For example, from epigraphic evidence we learn that in the reign of the Mughal emperor Aurangazeb (1658–1707) Shiite migrants settled in Bengal and patronised mosques in the Dhaka region. We can also learn that in the same emperor’s reign, Bengali Hindus patronised civil projects like building bridges.
Another significant example is the Masjid inscription found in the village of Burarchar at Daodkandi in Cumilla dated 1591 AD. It is the first properly dated inscription from the Mughal era in Bengal. This epigraph records the political tension that loomed over Bengal due to the incessant fight for the throne of Bengal between the Mughals and the Baro Bhuiyans led by Isa Khan.
The predominance of Persian as the language of inscription also indicates of the growing influence of the Persian language and culture in Bengal, which was a result of increased overland contact with Iran and Central Asia. This new wave of contacts overshadowed the age-old sea link that was once instrumental in the diffusion of Arab-Islamic culture in the coastal areas of the region.
But besides politics, religion and culture, simple details of life and society of the time are revealed through these inscriptions. For example, three inscriptions of Baba Salih reproduced in the book depicts the life of a traditionally successful rural Muslim landowner of medieval Bengal. All three inscriptions are dated between 1504 and 1506 (during the rule of Sultan Husayn Shah). Baba Salih was a resident of village Azimnagar, which is now located in the Dhaka district. It can be conjectured from the first inscription (masjid inscription of Azimnagar dated 1504) that towards the end of his life Baba Salih built a mosque as an act of piety in his village Azimnagar. The next year, he went to Makkah on a pilgrimage. On his successful return, he assumed the title of Khadim al-Nabi Hajji al-Haramayn wa Zair al-Qadamayn [the servant of the prophet—the one who made a pilgrimage to two most sacred places (Haramayn) and two holy footprints (Qadamayn)]. This information, dated 1505, is recorded in the masjid inscription of Bandar. An inscription in the following year records the death of the pious man. Apparently, this inscription was set on him tomb intended to be a shrine for the locality.
Through such interesting and informative details, Arabic and Persian Inscriptions of Bengal takes the readers in an epigraphic journey into a crucial period of the history of Bengal and helps understand the complex socio-politico-religious transformation process associated with the advent of Muslim rule in this region. This is an invaluable reference book for every researcher and history enthusiast.
Shamsuddoza Sajen is an Archivist at Bangladesh on Record. He is also Commercial Supplements Editor of The Daily Star. Email: [email protected]
Bulbul Chowdhury: The poet of physical rhymes
January 25, 2020
Author: Shamsuddoza Sajen
With stretching arms, pointed toes and emotive facial expressions, dance speaks of the language of human emotions as the music flows into the body. Its gracefulness and vigour portray the human condition in compelling ways that both the dancer and audience can relate to and understand.
Modern dance in the conservative Muslim community in Bengal was pioneered and popularised by a man called Bulbul Chowdhury. The grace and dexterity of his movements, eloquent choreography and, most importantly, his commitment to make dance a people’s art, placed him as one of the greatest performance artists of our time.
Bulbul Chowdhury’s dancing career started with the performance of a Chatak Dance, choreographed by him, at a school function. After passing matriculation in 1934, he went to study in Kolkata. He passed IA from Presidency College (1936), BA from Scottish Church College (1938) and MA from Calcutta University (1943). During his stay in Kolkata he came in contact with well-known dancers such as Uday Shankar and Sadhana Bose which gave him an opportunity to nurture his dancing talent.
In 1936, Bulbul Chowdhury performed with Sadhana Bose in Rabindranath Tagore’s dance drama Kach O Devajani which made him quite popular. At this performance, he starred as Bulbul Chowdhury since at that time Muslims were discouraged in performance arts, particularly in dance. His original name was Rashid Ahmed Chowdhury.
In his short life, just 35 years, he created a unique style of dance by enriching it with deeper meaning and wider forms. Bulbul Chowdhury wrote and choreographed over 80 dance dramas. Among those Abhimanyu, Indrashabha, Sapure, Kabi O Bashonta, Maru Sangeet, Fashal Utshab, Bhabaghure, Jiban O Mrityu, Shiv O Parboti, Ajanta Jagaran, Arjun, Kalbaishakhi, Hafizer Swapno,Anarkali, Iran-er Panthashalay and Lest We Forget earned him rare success.
Bulbul’s uniqueness in dance style is marked by two prominent features. He was a master of mingling dance styles. He brought in the essence of popular myths and legends, folk tales, and history as the theme of his dance dramas. Initially he was inspired by legendary dancer Uday Shankar in incorporating Hindu myths and tales in his performances. But to attract Muslim audiences he started fusing Muslim myths and legends with Indian dance forms. He also adapted elements of traditional Islamic dance forms such as Turkish Sufi dance. This dramatic shift was evident in his famous works such as Iran-er Panthashalay, Sohrab O Rustam and Anarkali. It helped change conservative attitudes of the Muslims in Bengal towards dance and make this performance art respectable and popular among them. It also appealed to the secular imagination of his contemporaries that dance has the potential to transcend the narrow religious divide.
Another important hallmark of Bulbul’s works was his preference for a simple form of dance which could be easily appreciated by ordinary spectators. To Bulbul, dance was a source of entertainment for the common people which helped express their hopes and fears, love and sorrow, and agonies and pathos. Instead of pursuing sumptuous themes and rigorous patterns of classical dance he chose the everyday life of common people and folk elements and created an entirely novel series of dance dramas, rich in conception and vivid in expression. There came out Rupak – the dance of hilly unsophisticated tribal girls passing by; the Fisherman – a folk dance portraying the success and disappointments of the fishermen; Fashal Utshab – festive exuberance of the sturdy peasants at the rich harvest; and many others.
He depicted the sufferings of teeming millions during the man-made famine of 1943 in Lest We Forget. It created a sensation throughout the world and earned the regard of one of the ‘best ballets’ ever produced. After the performance of Lest We Forget in London, the Manchester Guardian wrote, “He [Bulbul] is an innovator and has given Indian dancing [a] turn which is quite new….The political ballet of the Bengal famine of 1943 which staged last night was surprisingly impressive. Contemporary themes are very difficult to render in terms of ballet. Anybody interested in the problem of how to do so should certainly see Bulbul.”
The De Rude Uan of Belgium appreciated, “Not one single modern ‘bourgeois’ theatre piece is so impressively true to life as is this dramatic dance Lest We Forget.”
Bulbul Chowdhury’s popularity survived the artificial division of geography enforced by Partition. He remained the busiest dancer in the sub-continent between 1942 and 1954. He and his troupe, Bulbul Chowdhury Dance Troupe, used to perform in all major cities of India and Pakistan. In 1953, they visited Europe, performing in Britain, Ireland, Holland, Belgium and France. The western audience was enchanted by the technical gifts and eloquent imagination of this oriental pride.
This multifaceted personality also proved his talent in literature through the well-known novel Prachi which portrayed tragic shifts in human lives imposed by the catastrophic events of WWII. It was published in 1942. He also penned quite a good number of short stories. His literary oeuvre bears his commitment to art as an aesthetic expression of the lived experience in a tumultuous time.
Bulbul Chowdhury met a premature death on May 17, 1954 in Kolkata suffering from cancer. But he left a glorious tradition to inspire generations of artists. After his death, Bulbul Academy of Fine Arts (BAFA) was established in Dhaka on May 17, 1955 to carry on his mission. This organisation has produced a school of dancers and musicians over the last six decades. In recognition of his contribution to dance Bulbul Chowdhury was honoured posthumously with ‘Pride of Performance’ by the Pakistan government in 1959 and ‘Independence Award’ by the Bangladesh government in 1984. But the best tribute to this dance maestro would be proper preservation of his innovations in dance and bringing them to the common people which is unfortunately sorely lacking in our times.
Diary of Suhasini Das
December 24, 2019
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী ও আজীবন দেশব্রতী সুহাসিনী দাস (১৯১৫-২০০৯)-এর জন্ম সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায়। তাঁর বাবা প্যারীমোহন রায়, মা শোভা রায়। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। বয়স যখন ষোলো তখন সিলেট শহরের জামতলা এলাকার কুমুদচন্দ্র দাসের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁর স্বামী ছিলেন সিলেটের প্রাচীনতম ছাপাখানা কোটিচাঁদ প্রেসের স্বত্বাধিকারী। বিয়ের চার বছরের মাথায় ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে তাঁর স্বামী মৃত্যুবরণ করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর দেড় বছর বয়সী কন্যা নীলিমাকে নিয়ে শুরু হয় তাঁর সংগ্রামমুখর জীবনযাপন। দেবর ফণীন্দ্রচন্দ্র দাসের সহযোগিতায় বইপড়া থেকে শুরু করে সামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হন। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে শ্রীহট্ট মহিলা সংঘের কার্যক্রমে নিজেকে জড়িত করেন। একই বছর কংগ্রেসের সদস্য হিসেবে তাঁর রাজনীতিতেও আত্মপ্রকাশ ঘটে। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি সিলেট শহরের শেখঘাট এলাকার মহিলা সংঘের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সভায় সুহাসিনী দাস আজীবন খদ্দর কাপড় পরার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ‘ভারত ছাড় আন্দোলন’ কর্মসূচিতে যোগ দেন এবং একপর্যায়ে আরও অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করেন।
১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস সভাপতি পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর সিলেট সফরকে উপলক্ষ করে চাঁদা সংগ্রহের ভার যাঁদের ওপর পড়েছিল, এর মধ্যে সুহাসিনী দাস ছিলেন অন্যতম। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে নোয়াখালীতে ভয়াবহ সামপ্রদায়িক দাঙ্গার পর মহাত্মা গান্ধী শান্তিমিশন নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন। সে মিশনে সিলেট থেকে একটি দল গিয়ে অভয় আশ্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সেবা ও ত্রাণকাজে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে সুহাসিনী দাস গান্ধীজির সান্নিধ্য পেয়েছিলেন। সেবাকাজ চালাতে গিয়ে সুহাসিনী তখন বসন্ত রোগে আক্রান্ত হন এবং সে খবর পেয়ে গান্ধীজি তাঁকে দেখতে ছুটে যান। মহাত্মা গান্ধী তখন সুহাসিনীকে হিন্দিতে কিছু কথা বলেছিলেন, যার বাংলা তরজমা এ-রূপ : ‘শিগগির সুস্থ হয়ে উঠবে এবং সেবার কাজ করবে। মন খারাপ করো না।’
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কংগ্রেসকর্মীদের নিয়ে ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে দিল্লিতে যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেখানে ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আমন্ত্রণে সুহাসিনী অংশ নিয়েছিলেন এবং তাঁর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাত্ করেছিলেন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে সিলেটের বিভিন্ন চা-বাগানে নানা যুক্তিসঙ্গত দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সুহাসিনী দাস শ্রমিক ইউনিয়ন গঠনে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের পর হিন্দুদের বাংলাদেশ ত্যাগ রোধে মুখ্য সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছিলেন। বিভিন্ন সামপ্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে সভা-সমাবেশসহ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে তিনি সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। অনাথ ও দরিদ্র পরিবারের সন্তান এবং মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ধর্ষিতা নারীদের পুনর্বাসন তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ‘রঙ্গিরকুল আশ্রম’ এবং সিলেট শহরের চালিবন্দর এলাকায় অবস্থিত উমেশচন্দ্র-নির্মলাবালা ছাত্রাবাসের কর্মপরিচালনার দায়িত্বে তিনি আজীবন যুক্ত ছিলেন। সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী কর্তৃৃক পুরস্কৃত হন। সুহাসিনী দাস ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের ৩০ মে মৃত্যুবরণ করেন।
দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে অখণ্ড ভারতবর্ষ ভেঙে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুইটি পৃথক রাষ্ট্রে পরিণত হয়। তবে বাংলাদেশের (তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তান) সিলেট অঞ্চলটি ভারত নাকি পাকিস্তানের সঙ্গে থাকবে—এ নিয়ে গণভোট হয়েছিল। যা ‘সিলেটের রেফারেন্ডাম’ নামে পরিচিতি পেয়েছিল। সে ভোটে সিলেটের করিমগঞ্জ ভারতের সঙ্গে এবং সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ পাকিস্তানের স্বপক্ষে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। গণভোটের আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পক্ষে-বিপক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিল। মুসলিম লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তানের পক্ষে এবং কংগ্রেসের নেতৃত্বে ভারতের পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। সে সময় সুহাসিনী দাস কংগ্রেসের একজন কর্মী হিসেবে কাজ করেছিলেন। প্রচারণার পাশাপাশি সুহাসিনী দাস দেশভাগের ওই সময়ের কালপঞ্জি এবং সিলেট অঞ্চলের কিছু ঘটনার বিবরণ তাঁর ব্যক্তিগত ডায়েরিতে টুকে রাখতেন। পরবর্তীকালে সে ডায়েরিটি ‘দেশ বিভাগের ডায়েরি (১৯৪৭)’ শিরোনামে ‘সুহাসিনী দাস সংবর্ধনা গ্রন্থ’ (১৯৯৯) বইয়ে তাঁর আরও কিছু লেখার সঙ্গে মুদ্রিত হয়েছিল। এ সংবর্ধনা গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছিলেন নৃপেন্দ্রলাল দাশ, মনোজবিকাশ দেবরায়, বীরেন্দ্র সূত্রধর, মদনমোহন দত্ত ও দীপংকর মোহান্ত। ডায়েরিটি পৃথক কোনো বই হিসেবে এ-পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি। ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা বিবেচনায় রেখে এ ডায়েরিটি মুদ্রণের ব্যবস্থা করা হলো। এতে লেখকের বানানরীতি ও ভাষা সম্পূর্ণ অক্ষুন্ন রাখা হয়েছে। ডায়েরি-পাঠে পাঠকেরা সিলেট অঞ্চলের তখনকার সমাজব্যবস্থা, সামপ্রদায়িক দাঙ্গা, মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস কর্মীদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড এবং হিন্দু ধর্মালম্বীদের দেশত্যাগের একটি অনুপুঙ্খ বিবরণ জানতে পারবেন।
This diary was published in Suhasini Das Felicitation Volume (1999).
১৫.৪.৪৭ (15-4-47)
সকাল ১০টায় টেংরা বাজারের নিকটে রাজনগর হাইস্কুলে অভিভাবকদের সভা হইল। সভাপতিত্ব করেন পূর্ণেন্দুকিশোর সেনগুপ্ত। বিকাল ৩টায় গয়গড় গ্রামে যুবক কর্ম্মীদের সভায় ‘সেবাদল’ গঠন করা হয়। সিলেটে গণভোট আসন্ন। লোকরা আসাম না পূর্ববঙ্গ চায় তাহা নিয়া ভোট।
Guardians’ meeting started at 10 am at Rajnagar High School near Tengra Bazar. Purnendu Kishore Sengupta presided over the meeting. At 3 pm Seba Dal ( Service group) was formed in meeting of young activists at Goygar village. Sylhet referendum is at hand. People will decide whether they want Assam or East Bengal.
১৬.৪.৪৭
সকাল ৮ ঘটিকার সময় মহাসহস্রের সরোজবাবুর বাড়ীতে বৈঠক হইল। বহু লোকের উপস্থিতিতে ‘সেবাদল’ গঠন করা হয়। ডলাগ্রামে বিকাল তিন ঘটিকার সময় নিকুঞ্জবিহারী গোস্বামীর সভাপতিত্বে ছাত্রদের সভা অনুষ্ঠিত হইল। রাত্রিতে সতীশ চক্রবর্তীর বাড়ীতে আমরা অবস্থান করি। কংগ্রেস আসামের দিকে প্রচার চালাইতেছে আর মুসলিম লীগ পূর্ববঙ্গ অর্থাত্ পাকিস্তান গঠন করার জন্য প্রচার চালাইতেছে।
১৭.৪.৪৭
নোয়াগ্রামে বৈঠক করিয়া সেবাদল গঠন করা হইল। কেপ্টেন সুরেন্দ্র মালাকার সভাপতিত্ব করিলেন। দুপুর ১২টায় কেপ্টেন শরদিন্দু দেবের সভাপতিত্বে চাটুরা গ্রামে সভা হয়। আমরা সারদা বাবুর বাড়ীতে থাকিলাম।
১৮.৪.৪৭
দুপুর ১২টায় শাসমহল গ্রামে কেপ্টেন শ্রীনরেশ দেবের নেতৃত্বে বৈঠক হয়। বিকালে পঞ্চশ্বর গ্রামে মহিলাদের সভা হইল। দেশ ভাগের পরিস্থিতি নিয়া আলোচনা হইল।
১৯.৪.৪৭
রাজনগর থানার প্রায় সব গ্রামেই আমাদের প্রচারাভিযান হইবে। আজ পাঁচগাঁওয়ের সুধীর বাবুর বাড়ীতে থাকিয়া বিকালে সারা গ্রামটি ঘুরিলাম।
২০.৪.৪৭
পাঁচগাঁওয়ে সকাল ৯টায় ছাত্রসভা এবং ১০ ঘটিকার সময় কর্মকারপাড়ায় বয়স্কদের বৈঠক হয়। পুরুষ ও মহিলাদের আলাদা বৈঠকে নিকুঞ্জবিহারী গোস্বামী ও সুধীর বাবু পুরুষের মধ্যে আলোচনা করিলেন। সুহাসিনী দাস মহিলাদের মধ্যে আলোচনা করিলেন। রাত্রে খলাগ্রামে বৈঠক হইল।
২১.৪.৪৭
গ্রামের মহিলারা জাগিতেছে। তাহারা স্বাধীনতার কথা বলিয়া থাকে। খলাগ্রামের নিখিল বাবুর বাড়ীতে সকাল ১০টায় মহিলা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিকাল ৪টায় ব্রাহ্মণপাড়ায় সেই অঞ্চলের মহিলাদের নিয়া বৈঠক করিলাম। তাহারা আমাদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়া শুনিয়া থাকে।
২২.৪.৪৭
সকালে খলাগ্রাম হইতে করিমপুর আসিলাম। এবং ১২টায় কুলাউড়া পৌঁছাইলাম। গ্রামের মানুষ কি ঘটিবে বুঝিতেছে না। সবাই চিন্তা করিতেছে।
২৩.৪.৪৭
সারাদিন কুলাউড়া থাকিয়া কর্মীদের মধ্যে বর্তমান পরিস্থিতি বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হইল। পরিস্থিতি খুব ভাল নয়।
২৪.৪.৪৭
কুলাউড়ায় ছাত্রীদের নিয়া একটি সেবাদল গঠন করিলাম। সম্পাদিকা হইলেন চিনুদেবী, গার্গী ও কল্পনা সহ-সম্পাদিকা, পরিচালিকা সুহাসিনী দাস।
২৫.৪.৪৭
ভোরের গাড়ীতে সিলেট আসিলাম। সময়টা খুব অস্থির হইয়াছে। মানুষের যেন ঘুম নাই।
২৮.৪.৪৭
বাণী সিলেট আসিয়াছে। তাহার সঙ্গে দেখা হইল। মুকুন্দ সরকারের মিটিং-এ যোগদান করিলাম।
আজ সন্ধ্যায় একাডেমী স্কুলের মিটিং-এ যোগদান করিলাম। শহরের গণ্যমান্য লোকরাও আসিয়াছেন। দেশ ভাগের সময় শ্রীহট্ট কোন দিকে থাকিতে চায়—তাহা নিয়া বিশদ আলোচনা হইল। সমবেত সকলেই বলিলেন শ্রীহট্ট আসামে থাকিতে চায়। সর্ব্বসম্মতিক্রমে এই প্রস্তাব গৃহীত হইল।
১১.৫.৪৭
সকালে নিকুঞ্জদার (নিকুঞ্জবিহারী গোস্বামী) কাছে শুনিলাম কুলাউড়া আশ্রমের বড় ঘরটা ঝড়ে পড়িয়া গিয়া সব জিনিস নষ্ট হইয়াছে। বিকালে গালর্স স্কুলে গিয়া তুলাধূনা শিখাইলাম ও কংগ্রেস অফিসের আলোচনায় যোগ দিলাম।
১৪.৫.৪৭
সকালে পুনাদার (পূর্ণেন্দুকিশোর সেনগুপ্ত) সাথে দেখা হইল। জগন্নাথপুর হইতে রাজানগর যাওয়া সম্বন্ধে তাহার সাথে আলোচনা করিলাম। ৫ই জুন পর্যন্ত ঐ অঞ্চলে কাজ করিতে হইবে। দুপুর ১২টায় জগন্নাথপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।
৮.৬.৪৭
সুনামগঞ্জের অনেক গ্রামে গিয়া কাজ করিতে হইল। দেশ বিভাগের বিষয়টা নিয়া অনেকেই চিন্তা করিতেছেন। আজ বিকালে সিলেট পৌঁছাইলাম। শহর গরম হইয়া উঠিতেছে। সিলেট কোন দিকে যাইতে চায় তাহা নিয়া কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ প্রচার শুরু করিয়াছে। যাহার যাহার পক্ষে বক্তৃতা দেওয়া হইতেছে। সামপ্রদায়িক দাঙ্গা লাগিবে কি না চিন্তা করিতে থাকি।
১২.৬.৪৭
সকালবেলা টাউন হলে শ্রীহট্ট পূর্ব্ববঙ্গ ভূক্তি সম্পর্কে আলোচনা সভা হইল। তাহাতে যোগ দিলাম। এখন আর কেউ বৃটিশদের কথা বলিতেছে না, মাথায় শুধু দেশভাগ ও সিলেট কোন দিকে যাইবে তাহা নিয়া চিন্তা। হঠাত্ করিয়া কি জানি হইতেছে। নিজেদের মধ্যে মারামারি লাগিতেছে।
২০.৬.৪৭
কংগ্রেস ব্যাপক প্রচার করিতেছে। তাহারা কুঁড়েঘর নিয়া এবং মুসলিমলীগ কুড়াল নিয়া নামিয়াছে। দুপুর ১টায় নিকুঞ্জবিহারী গোস্বামী ও সরোজকুমার দাসসহ মোটরযোগে কুলাউড়া গেলাম। আসাম হইতে নেতারা আসিবেন। তাহাদিগকে অভ্যর্থনা জানাইতে মেয়েদের প্রয়োজন বিধায় সারা বিকাল ঘুরিয়া মহিলাদের সহিত দেখা করিলাম এবং মিটিং হইল।
২২.৬.৪৭
শিলং হইতে বিষ্ণুমেধী, বৈদ্যনাথ মুখার্জি প্রমুখ কংগ্রেস নেতারা কুলাউড়া আসিলেন। কুলাউড়ায় মিটিং হয়। আসামের সাথে সিলেটভূক্তির পক্ষে তাহারা যুক্তি উপস্থাপন করিলেন। মেয়েরা তাহাদের সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। সন্ধ্যার গাড়ীতে আমরা সিলেট ফিরিয়া আসিলাম।
২৯.৬.৪৭
গণভোটের আয়োজন চলিতেছে কিন্তু শ্রীহট্টের চা-বাগানের শ্রমিকরা এই ভোটে অংশ নিতে পারিবে না বলিয়া সরকার ঘোষণা দিয়াছে। কারণ হিসাবে তাহারা বলিতেছেন যে চা-শ্রমিকরা এইখানকার স্থায়ী জনসাধারণ নয়। কিন্তু তাহারা প্রায় একশত বছর ধরিয়া অত্র প্রদেশে রহিয়াছে। তাহাদের ভোটাধিকারের জন্য আন্দোলন চলিতেছে—আজ মহকুমা প্রশাসকের অফিস ঘেরাও করা হইবে। নিকুঞ্জবিহারী গোস্বামী তাহাদের নেতৃত্ব দিতেছেন। আমি সকাল বেলা মৌলভীবাজারে রওয়ানা হইলাম। বহুদূর হইতে চা-শ্রমিকরা পায়ে হাঁটিয়া আসিয়াছে। প্রায় পনের হাজার শ্রমিক ভোটের দাবীতে মহকুমা প্রশাসকের কাছে আবেদন লিপি দিয়া গেল। তাহারা ভোটের দাবীতে অন্যান্য জায়গায় এইভাবে মিলিত হইতেছে।
৩০.৬.৪৭
দুপুরে কুলাউড়া গ্রামে বাহির হইয়া সারাদিন ঘুরিলাম। সন্ধ্যায় রেল স্টেশনে মহিলাদের মিটিং-এ যোগদান করিলাম। মহিলারা দেশের অবস্থা জানিতে এখন খুব আগ্রহী। সবাই সতর্ক থাকিতেছেন।
দুপুরে নর্ত্তন গিয়েছিলাম। এলাকার সব লোকের সাথে আলাপ হইল। বিকালে কুলাউড়া বিদ্যাশ্রমে ফিরিয়া আসিলাম। এমন কঠিন সময় মানুষের জীবনে যেন আর আসে নাই।
৩.৭.৪৭
সকাল বেলা শ্রীমঙ্গল গিয়া কাজ করিলাম। মানুষের মধ্যে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের উদ্বেগ লক্ষ্য করা গেল। প্রায় সবাই বলিতেছে কি হইবে অবস্থা। বিকাল ৩টায় গাড়ীতে ফিরিয়া আসিলাম। ঢাকা হইতে লীগের নেতা কর্মীরা আসিতেছেন শুনিলাম।
৪.৭.৪৭
কুলাউড়ার নিকটবর্তী গ্রামগুলিতে প্রচারাভিযানে বাহির হইলাম। চুনঘর, বরমচাল, কটারকোনা ঘুরিলাম। ভোটদানের উত্সাহ লক্ষ্য করা গেল। কটারকোনায় অনেক মহিলা সমবেত হইয়াছিলেন। জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ কর্মীদের সঙ্গে আলাপ হইল। তাহারা শ্রীহট্টকে আসামের সঙ্গে থাকিতে চায়। মুসলিম লীগের চিন্তা থেকে তাহারা পৃথক। মুসলিম লীগ মনে করিতেছে ইসলাম মানেই পাকিস্তানি। তাহা প্রচার করিতেছে।
৫.৭.৪৭
আজ জয়চন্ডী গ্রামে রওয়ানা হইলাম। আমাদের আসার কারণ জানিয়া গ্রামবাসীরা খুবই আনন্দিত। তাহারা বিভিন্নভাবে আমাদের কর্মীদের নিকট থেকে উপকার পাইয়া থাকে—আমাদের গ্রামসেবার কাজ এত অঞ্চলে বেশী হয়। অনেক বাড়ী ঘুরাইয়া বিকাল ৫টায় ভাটেরা গ্রামে পৌঁছাইলাম, সেইখান হইতে বরমচাল হইয়া রাত্রে আশ্রমে ফিরিলাম। আগামীকাল হইতে ভোট দেওয়ার কাজ শুরু হইবে। মনের মধ্যে উত্কণ্ঠাবোধ হইতেছে। ভোট লওয়ার জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা ভাল বলিয়া মনে হইল। তবুও সকলের মধ্যে ভয়ের ভাব প্রচুর। লীগ শক্তি প্রদর্শন করায় ভয়টা বাড়িল। কারণ চা-শ্রমিকদের ভোটাধিকার হইতে বঞ্চিত করার ফলে কংগ্রেস সমর্থকদের পক্ষে বহু ভোট কমিয়া গিয়াছে।
৬.৭.৪৭
ভোরে কংগ্রেস অফিসে যাই। সেইখানে কর্মীদের দায়িত্ব মধ্যে বণ্টন করা হইল। আমি এল পি স্কুলে যাই। বিকাল ৩টা পর্যন্ত মহিলাদের ভোটদানের কাজ শেষ হইল। অন্যান্য জায়গা ঘুরিয়া রাত্রে ফিরিলাম। ভোটকেন্দ্রগুলিতে উপস্থিতির সংখ্যা কম নহে। খুব দুঃচিন্তার মধ্যে রাত কাটাইলাম।
৭.৭.৪৭
ভোরের গাড়ীতে সিলেট চলিয়া আসিলাম। সারাদিন হাইস্কুলের মহিলা ভোট কেন্দ্রে থাকিয়া কাজ করিয়া রাত্রে ফিরিয়া আসিলাম। শহরের হিন্দুরা খুবই চিন্তিত বলিয়া মনে হইতেছে। এইখানে লীগের দাপট কম নয়।
১১.৭.৪৭
শহরে উত্তেজনা বাড়িতে থাকিল। পুরানলেনে মহিলাদের নিয়া মিটিং করে কমিটি গঠন করিয়া সকলের মনে সাহস দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। শহরে গুজব ছড়ানো হইতেছে যে রায়ট হইতে পারে। শহরে আতঙ্কের সৃষ্টি হইয়াছে, লোক সরে যাইতেছে। খারাপ লাগিল। এই কি আমরা স্বাধীন হইতেছি যে, ভিটামাটি ছাড়িতে হইবে। মুসলিম লীগের উত্তেজনাকর বক্তব্য ও শ্লোগান এই জন্য অনেকটা দায়ী বলিয়া মনে হইতেছে। এইসব প্রতিকারের জন্য কাজের প্লেন নেওয়া হইল। কঠিন সময়ে মানুষের মধ্যে থাকিয়া সাহস দিতে হইবে। হিন্দু মানসিকভাবে দুর্বল হইয়া পড়িতেছে বুঝিলাম।
১২.৭.৪৭
খুব সকালে বাহির হইয়া পাড়ায় পাড়ায় ঘোরা শুরু করিলাম। সেই সিলেট যেন ক্রমেই স্লান হইয়া যাইতেছে। পরিচিত লোকদের মুখের দিকে তাকাইলেই দেখি চেহারা কাল ও শুষ্ক, লাবণ্যতা লোপ পাইয়াছে। আমাদের তিনটি কাজ করিতে হইবে; প্রথমতঃ লোকদের সাহস দেওয়া, দ্বিতীয়তঃ সংঘবদ্ধ করানো, তৃতীয়তঃ ভলান্টিয়ার দল তৈরী করা। সকলেই কহিতেছে বড় কিছু ঘটিয়া যাইতে পারে। এই সবের জন্য প্রত্যেক দিন ঘোরাঘুরি করিতে হয়।
১৪.৭.৪৭
গণভোটের ফল বাহির হইল। শ্রীহট্ট জেলা পূর্ব্ববাংলার সাথে যুক্ত হইবার পক্ষে বেশী ভোট পড়িল। গণতন্ত্রের এই পদ্ধতিকে মানিয়া লইতে হইবে। রাস্তায় বাহির হওয়া ভাল কি না ভাবিয়া সারাদিন বাড়ীতেই থাকিলাম। রাত্রে আমাদের পাড়ার লোকদের সহিত আলাপ হইল। তাহারা সকলেই চিন্তিত যে শহরে লীগের লোকরা কিছু করিতে পারে। মেয়েদের আত্মরক্ষার বিষয়টি নিয়া চিন্তা লাগিল।
১৮.৭.৪৭
পুরানলেন পূর্ণেন্দুকিশোর সেনগুপ্তের বাসায় মিটিং হইল। বেশ কিছু লোক উপস্থিত ছিলেন। মেয়েদের নিয়া একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হইল। প্রচার বিভাগ ও ভলান্টিয়ার বিভাগের ভার আমার উপর দেওয়া হইল। সভানেত্রী নলিনী চৌধুরী নির্বাচিত হইলেন। নূতন রাষ্ট্রে থাকিবার আহ্বান নিয়া ঘরে ঘরে যাইতে হইবে। এই সময় মানুষের কাছে না দাঁড়াইলে বিশ্বাসঘাতকতার সামিল। মানুষের কল্যাণ-ই তো রাজনীতি।
১৯.৭.৪৭
কাষ্টঘরের মহিলাদের নিয়া সাব-কমিটি গঠন করা হইয়াছে। পাড়ার প্রায় সবাই উপস্থিত ছিলেন। আমরা তথায় যোগ দিয়া সকলকে বুঝাইলাম যে নির্ভয়ে এই মাটিতে থাকিতে হইবে। বর্তমান সময়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি লক্ষ্য করা যাইতেছে। কখনো কখনো মুসলিম লীগের আনন্দোচ্ছ্বাস সংখ্যালঘুদের জন্য হুমকিস্বরূপ বলিয়া মনে হইতেছে।
২০.৭.৪৭
অদ্য চৌহাট্টায় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মিটিং হইল। আমরা একই বক্তব্য দিলাম। গ্রামাঞ্চল থেকে খারাপ সংবাদ আসিতেছে। মানুষ আজ যে বিপদে পড়িল তাহা কখনও চিন্তা করিয়াছে বলিয়া মনে হইতেছে না। এককালের ভাল সম্পর্ক (হিন্দু-মুসলমান) আজ ক্রমেই দূরে চলিয়া যাইতেছে। মুসলিম লীগ বুঝাইতেছে যে, শুধু মাত্র মুসলমান এই ‘পাকিস্তান’ রাষ্ট্রে থাকিলে সবচেয়ে ভাল হইবে। অন্যরা জঞ্জাল।
২২.৭.৪৭
শ্রীহট্ট শহরের প্রতি পাড়ায় আমাদের জনসংযোগ অব্যাহত রহিয়াছে। আজ তেলীহাওরে মিটিং হইল। মানুষের মধ্যে পরিবর্তনের ভাব লক্ষ্য করিতেছি অর্থাত্ তাহারা কোন ভরসা পাইতেছে না কি করিবে কোথায় যাইবে। এর আগে তাহারা এমনভাবে চিন্তা করে নাই।
২৩.৭.৪৭
শহরের পাড়ায় পাড়ায় ঘুরিয়া ভলান্টিয়ারদের অর্গেনাইজ করিলাম। কোন অঘটন শুরু হওয়ামাত্র তাহারা সবাইকে জানাইবে এবং প্রতিরোধ করিবে। বিকালবেলা আমাদের জামতলার লোকদের নিয়া আমার ঘরে মিটিং করিলাম।
২৫.৭.৪৭
এত মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে হিন্দু লোকরা আছে যে অন্য কেউ হয়তো বুঝিবে না। কেউ কি ইচ্ছা করিয়া নিজের চৌদ্দ পুরুষের ভিটামাটি ছাড়িতে পারে? আজ খুবই কষ্ট পাইলাম। কারণ তাঁতী পাড়ার লোকরা সরিয়া যাইতেছে শুনিলাম, তাঁতীপাড়া গিয়া লোকদের সাহস দিয়া আসিলাম কিন্তু শেষ রক্ষা হইবে কি না বুঝিতে পারিতেছি না। কয়েকটি পরিবারে গিয়া জানিলাম গ্রাম ছাড়িয়া অনেকেই চলিয়া আসিয়াছেন। লীগের নেতা কর্মীরা অভয় দিলে মানুষের দেশত্যাগ কিছুটা কমিয়া যাইত। কিন্তু তাহারা তাহা চাহে না।
২৬.৭.৪৭
ক্রমেই আতঙ্ক ছড়াইতেছে। আমাদের কাজও বাড়িল। ৩০ জুলাই পর্যন্ত পাড়ায় পাড়ায় ঘুরিয়া আলোচনা করিবার সিদ্ধান্ত হয়।
১.৮.৪৭
গার্লস স্কুলের আলোচনায় যোগ দিলাম। সেইসব মুখে আজ হাসি দেখি না—শুধু কষ্ট বাড়িতে লাগিল। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়া আলোচনা হইল।
৩.৮.৪৭
আজ কংগ্রেস কমিটির মিটিং। সব পরিস্থিতি নিয়া নেতারা আলোচনা করিলেন। আসলে ইংরেজরা যাহা করিতেছে তাহাতে সামপ্রদায়িকতা কমিবে না। বরং চির অশান্তি বিরাজিত থাকিবে।
৫.৮.৪৭
শহরের সবকয়েকটি পাড়ায় ঘুরিলাম এবং সকলের সহিত আলাপ হইল। কেউ শান্তিতে আছেন বলিয়া মনে হইল না।
৭.৮.৪৭
চৌহাট্টায় দাঁতের ডাক্তারের বাসায় দাঁত চিকিত্সা করাইতে গিয়া দেখিলাম সেইখানে পাড়ার লোক মিলিত হইয়াছে। শুনিলাম দুই-চার দিনের মধ্যেই তাহারা সবাই চলিয়া যাইবে। তাহাদিগকে সাহস দিতে গিয়া অনেক বকুনি শুনিলাম। কংগ্রেসকে গালি দিতে দ্বিধা করিল না। তাহাদের ধারণা এই পরিস্থিতির জন্য কংগ্রেসই দায়ী। কেন কংগ্রেস গণভোট ঠেকাইল না অর্থাত্ বঙ্গ ভূক্তিকে মানিল।
১৩.৮.৪৭
গালর্স স্কুলে গিয়া দেখিলাম তাহারা সব চলিয়া যাইতেছে অন্য বাসায়। খাইরুনের সঙ্গে রেফারেন্ডামের দিনে গোলমাল নিয়া খুব আলোচনা হইল। পরিচিত লোকদের সিলেট ত্যাগের কথা শুনিয়া কান্না আসে। তাহাদের সহিত আর কখনও দেখা হইবে না। যার যার নিরাপদে সবাই যাইতেছে অর্থাত্ পাকিস্তান ছাড়িতেছে। শূন্য বাড়ীগুলি খাঁ খাঁ করিতেছে—অভিভাবকহীন অবস্থায় যেন কান্না করিতেছে ঘরগুলি। গতকাল যে ঘরে বাতি জ্বলিয়াছিল আজ সন্ধ্যায় সেই ঘরে অন্ধকার জমাট হইয়াছে। দুই একটি বাড়ি হইতে দুষ্ট লোকরা মালামাল লুট করিতেছে মনের আনন্দে। কেউ বাধা দিতেছে না।
১৪.৮.৪৭
আমাদের পাড়া (জামতলা), মির্জ্জাজাঙ্গাল, তালতলা প্রভৃতি পাড়ায় গিয়া মেয়েদের সঙ্গে দেখা করিয়া আসি। দেশে স্বাধীনতার সূর্য্য উঠিয়াছে। মানুষের মধ্যে সুখের লক্ষণ দেখিতেছি না। খবর নিয়া জানিলাম অনেকেই চলিয়া গিয়াছেন—আর যাহারা আছেন—সবাই খুব আতঙ্কিত অবস্থায়। তাহাদিগকে বলিয়া আসিলাম যে, যদি কোন গণ্ডগোল হয় তবে সবাই এক জায়গায় যেন সমবেত হয়। আর এই জন্য শঙ্খধ্বনি দেওয়া হবে বলিয়া ঠিক হইল।
১৫.৮.৪৭
আজ সারাদিন কোথাও যাই নাই। উপবাস ও সূতা কাটিয়া দিনটি অতিবাহিত করি। সকালে লীলাদির সঙ্গে অনেকক্ষণ আলাপ হইল। তিনি আমার এখানে আসিয়াছিলেন। বিকালে বিনোদ বাবুর সঙ্গে দেখা হইল। তাহার কাছে বাহিরের খবর জানিলাম। স্বাধীনতার উত্সবটা যেন প্রাণহীনভাবে আজ পালন হইয়াছে।
১৬.৮.৪৭
আজ পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রথম দিন। রাত্রে দুর্গেশকুমার দেব ও নিকুঞ্জবিহারী গোস্বামীর সাথে দেখা হইল। সারাদিন নিজের কাজ করিয়া কাটাইয়া দিলাম। যে সমস্ত লোক শহরে রহিয়াছে তাহাদেরকে দেশত্যাগ করিতে বাধা দিতে হইবে। আমরা কাজে আছি এবং পরেও থাকিব।
১৭.৮.৪৭
শহরের স্তব্ধতায় বুঝা যাইতেছে আজ অপরিচিত সব। কেউ মুখ খুলিতেছে না। সবাই যেন পরিস্থিতি অবলোকন করিতেছে। মির্জাজাঙ্গালে চারুশীলা দেবের বাসায় গেলাম। সুমতি মজুমদার, লীলাদি, শোভাদিসহ অনেক কর্মীর সাথে কথাবার্তা হইল। কি ঘটবে না ঘটবে এই নিয়া সবাই চিন্তিত। রাতে দুর্গেশদা আসিলে সব খবর পাইলাম।
১৯.৮.৪৭
মহিলা সংঘের অফিসে গেলাম। নতুন করিয়া এই পরিস্থিতিতে কাজ করিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। মহিলা নেত্রী কিরণশশী দেবের বাসায়ও গেলাম। আমাদের অনেক কর্মীদের মধ্যে নিস্তেজ ভাব লক্ষ্য করিতেছি কারণ তাহারাও উদ্বিগ্ন।
৩০.৮.৪৭
সকালে আশ্রম হইতে ৯টার গাড়িতে শমসেরনগর চা-বাগানে গেলাম। বাগানের মানুষও চিন্তায় পড়িয়াছে। সেইখান হইতে কানিহাটি ও চাতলাপুর চা-বাগানে মিটিং করিলাম। তাহাদিগকে এইখানে থাকিতে বলিলাম এবং আত্মশুদ্ধি হওয়ার উপদেশ দিলাম। বেশির ভাগ শ্রমিক নেশা করিতেছে—তাহা ছাড়ার জন্য অনেক কথা বলিলাম। রাতে চাতলাপুর চা-বাগানে থাকিলাম।
কয়েকদিন কাজ করিয়া আজ সিলেট ফিরিয়া আসিলাম। বড় ধরনের কিছু না ঘটিলেও মানুষের মন হইতে ভয় যেন দূর হইতেছে না।
৬.৯.৪৭
মহিলা সংঘে মিটিং ছিল—তাহাতে যোগদান করিলাম। বিকালে মীরাবাজারের মিটিং-এ গিয়াছিলাম।
২৪.৯.৪৭
১১টার স্টীমারে প্রভাত চৌধুরী ও বাণীসহ রাজানগর রওয়ানা হইলাম। সুনামগঞ্জের রাজানগরে আমাদের গঠনমূলক কর্মী সংঘের শাখা আছে। সেখানে থাকিয়া কাজ করিতে হইবে। এই সময় ঘরে বসিয়া থাকিলে চলিবে না। মানুষের ভীতি দূর করিতে হইবে।
২৬.৯.৪৭
সুনামগঞ্জের মহকুমার অবস্থাও তেমন ভাল নয়, সারাদিন রাজানগরের কয়েকটি বাড়ি ঘুরিলাম। মানুষ উদ্বিগ্ন চিত্তে দেশের কথা শুনিতে চাহে।
২৮.৯.৪৭
বিকালে জানপুর গ্রামে গেলাম। সবই ছন্নছাড়া ভাব দেখিলাম।
৬.১০.৪৭
আজ ১২টায় আমরা সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হইলাম। পাথারিয়া আসার পর সন্ধ্যা হওয়ায় আখড়ায় অতিথি হইলাম। রাতে বহু লোকের সহিত আলোচনা হইল। তাহারা থাকিবে কিনা জানিতে চাইল।
২৮.১০.৪৭
দীর্ঘদিন সুনামগঞ্জ অঞ্চলে কাজ করিয়া আজ নিজ বাড়ী জগন্নাথপুর ফিরিয়া আসিলাম। মানুষকে অভয় দেওয়া ছাড়া আর কি-ই-বা আমাদের করিবার আছে। আমৃত্যু মানুষের মধ্যে কাজ করিয়া তো যাইতেই হইবে।
১৮.১২.৪৭
সন্ধ্যায় গাড়িতে করিয়া কুলাউড়া আসিলাম। বিভিন্ন অঞ্চলের খবর পাইয়া উদ্বিগ্নবোধ করিলাম। খবর পাইলাম হবিগঞ্জের বামৈ—লাখাই অঞ্চলে নমঃশূদ্র পল্লীতে কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতকারীরা ব্যাপক লুটতরাজ করিয়া তাহাদিগকে গৃহছাড়া করিয়াছে। কিন্তু সরকার কোন প্রতিকার করিল না। তাহারা অতি কষ্টে দিন কাটাইতেছে। আমরা সেইখানে যাইবার প্রস্তুতি নিলাম।
২২.১২.৪৭
সকালে হবিগঞ্জ যাওয়ার উদ্দেশ্যে রঙ্গিরকুল আশ্রম ছাড়িলাম। সেইখানে পুনর্বাসনের কাজ করিতে হইবে। আজ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করিলাম। এইখানে সংখ্যালঘুদের উপর সামপ্রদায়িক দাঙ্গা করা হইয়াছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে।
২৪.১২.৪৭
দুপুরে বামৈ গ্রামে আসিলাম। অনেকেই তাহাদের অভিযোগ জানাইলেন। আমাদিগকে পাইয়া তাহাদের যেন প্রাণ ফিরিয়া আসিল। দুষ্কৃতকারীদের অত্যাচারে নমঃশূদ্র পল্লীর লোকরা খুব কষ্টে দিনাতিপাত করিতেছে। তাহাদের জীবীকার উত্স হইল মাছ ধরা কিন্তু ভিটেমাটি পুড়িয়া যাওয়ার সময় জালও নষ্ট হওয়ায় এখন বেকার রহিয়াছে।
২৫.১২.৪৭
সারাদিন মাসুদপুর গ্রামে কাটাইলাম। মানুষজনের অবস্থা সত্যই করুণ। গ্রামে চরকা ও জালের সূতা সরবরাহের জন্য কংগ্রেস নেতারা চেষ্টা করিতেছেন।
২৬.১২.৪৭
আজ নোয়াগ্রামে গেলাম। মানুষের যন্ত্রণা দেখে কষ্টই লাগিল। আমরা সামান্য ত্রাণ নিয়া আসিয়াছি। স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করা হইবে। তাহাদের হারানো মনোবল ফিরিয়া আসিলে কাজকর্মে আবার গতি আসিবে।
২৭.১২.৪৭
বামৈ গ্রামে পুনর্বাসন কাজ শুরু হইল। আমরা কর্মীরা তথায় লোকদেরকে সাহায্য করিলাম। ঘর মেরামত হইল।
২৮.১২.৪৭
বেলা দুইটায় গোপালপুর রওয়ানা হইলাম—বিধ্বস্ত গ্রাম। মানুষের সঙ্গে মিশিয়া কাজ করিতে ভাল লাগে। গ্রামের লোকরা আমাদের সাহায্য করিতেছে। কেম্পে আমরা থাকিতেছি কিন্তু দুষ্কৃতকারীদের দেখিলেও কিছু বলা যায় না। আমাদের উপর আক্রমণ চালায় কিনা।
২৯.১২.৪৭
আজ বিকালে ভূমাপুর আসিয়া পৌঁছাইলাম। আমরা কাজ করিতে আসিয়াছি শুনিয়া গ্রামবাসীরা আনন্দিত হইল। তাহারা প্রাণ খুলিয়া সব কথা বলিতে থাকে। অনেক বাড়ীর গাছপালা পুড়িয়া গিয়াছে। তাহাদের অপরাধ তাহারা হিন্দু, এরা চলিয়া গেলে সেই জায়গা দখল করিতে চায় তারা।
৩১.১২.৪৭
সকালে উচাইল গ্রামে গেলাম। গ্রামের পথ দীর্ঘ হইলেও মানুষের দিকে চাইয়া সব ভুলিয়া গিয়াছি। নতুন করিয়া ঘর-দরজা তৈরী করিতে বলিলাম। আমরা মহিলাদের হাতের কাজ শিখাইবার চেষ্টা করিতেছি।
১.১.৪৮
সকালে আগাপুর গিয়াছিলাম। প্রায় প্রতিটি বাড়ী গিয়া দেখিলাম এবং রাত্রে বৈঠক হইল। আমার মনে হইল যে আমাদের আগমনে তাহাদের অনেক দুঃখ কাটিয়া গিয়াছে। সকলে তাহাদের নিজ নিজ ক্ষয়ক্ষতির কথা জানাইল।
২.১.৪৮
বিকালে বামৈ গ্রামের মানুষদের নিয়া বৈঠক হইল। বৈঠকে অনেক মুসলমান ভাইরা উপস্থিত ছিলেন—যাহারা এইসব জঘন্য বিষয়াদি অপছন্দ করেন তাহারা সাহায্যের আশ্বাস প্রদান করিলেন। অশিক্ষিত মহিলাদের লেখাপড়া শিখাইতে চেষ্টা করিলাম। সেই জায়গায় মেয়েদের পড়ার কোন জায়গাই নাই।
৬.১.৪৮
গোপালপুর ও নিধনপুরের লোকরা আসিয়া রিলিফের কাপড় নিয়া গেল। তাহাদের জন্য নিকুঞ্জবিহারী গোস্বামী অনেক কষ্ট করিতেছেন। অনেক লোকের ঘর পোড়ানো হইয়াছে, তাহারা আজ পর্যন্ত এক কাপড়েই আছে। রিলিফ পাইয়া আনন্দিত হইয়াছে।
৭.১.৪৮
নোয়াগাঁও-এ রিলিফ দেওয়া হইল। আমাদের কাজকর্মের প্রতি লোকদের বিশ্বাস বাড়িতেছে। কাপড়, ঔষধ বিতরণ ও স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থা করায় তাহাদের মধ্যে আমাদেরকে আরও আপন করিয়া নেওয়ার প্রবণতা বাড়িতেছে।
১১.১.৪৮
খোড়াখই গ্রামে রাত্রে গিয়া বৈঠক ও রিলিফ বিতরণ করা হইল। আমি রাত্রে সেইখানে থাকিয়া খুব সকালে কেম্পে ফিরিলাম। বুঝিলাম মানুষ শান্তিতে থাকতে পারিতেছে না। কারণ সরকার কোন ব্যবস্থা করিতেছে না, ফলে দুষ্কৃতকারী সংখ্যাগরিষ্ঠদের মনোবল বাড়িতেছে।
১৬.১.৪৮
বামৈ গ্রামের পশ্চিম দিকে গেলাম। মেয়েদের দিয়া ২০টি জামা সেলাই করাইয়া নিয়া আসি। তাহা বিতরণ করা হইবে। ঘরে শুধু বসিয়া না থাকিয়া তাহারা যেন উত্পাদনমুখী কাজ করিতে পারে সেই জন্য শেলাইয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হইয়াছে।
থান কাপড় দিয়া নূতন জামা তৈরীর উদ্দেশ্যে বামৈ গ্রামে গেলাম। মেয়েরা কাজ শিখিয়া ফেলিয়াছে।
৩১.১.৪৮
নোয়াগ্রাম-মাসুদপুর গ্রাম ঘুরিয়া কেম্পে আসিয়া গান্ধীজীর মৃত্যুর সংবাদ পাইলাম। এইদিন এই মহামানবের আহ্বানে ঘর ছাড়িয়াছিলাম। কাছে থাকিয়া দেখিয়াছিলাম যে এতবড় মাপের মানুষ অতিদীনভাবে থাকিতে পারেন? বত্সর দেড় আগে সেই নোয়াখালীতে তাঁহাকে দর্শন করিয়াছিলাম। তিনি দেশের জন্য কি না করিয়াছেন, আজ এই নির্মম পুরস্কার। খবর শুনিয়া আমাদের কর্মীদের খারাপ লাগিল। তাঁহার স্মরণে প্রার্থনা করিলাম। তাঁহার আদর্শে মানবসেবা করিয়াই যাইব।
১.২.৪৮
বিকালে ভগ্ন মন নিয়া মাসুদপুর রওয়ানা হইলাম। রাত্রে অনেকের সহিত আলাপ হইল এবং সেইখানেই এক বাড়ীতে রাত্রি কাটাইলাম। মানুষ নূতন করিয়া আবার যেন সংসার সাজাইতেছে কিন্তু মনে ভয় কখন যে এইসব দাঙ্গাবাজরা শেষ করিয়া দেয়। গান্ধীজীর সংবাদে খারাপ লাগিতেছিল।
২.২.৪৮
ভোরে মাসুদপুর হইতে বামৈ আসিলাম। দুপুরে খাইয়া গোপালপুর ও নিধনপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। কাজ করিয়া ক্লান্ত হইয়া পড়িলাম তাই রাত্রে নিধনপুর থাকিতে হইল। আমাদিগকে পাইয়া তাহাদের ভরসা হইল।
কেম্পে গান্ধী তর্পণের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। অনেক গ্রাম হইতে লোক আসিয়াছিল। গান্ধীর উপর আলোচনা হইল।
৮.২.৪৮
আজ গান্ধী স্মৃতি তর্পণ করা হইল। তাঁহার নির্দেশেই যেন আমরা কাজ করিতেছি। তাঁহার ঋণ কোনদিন পরিশোধ করা যাইবে না। ছোট বেলা এই মনীষী সম্পর্কে বহু গল্প শুনিয়াছি।
১০.২.৪৮
আজ রাতে বামৈ গ্রামের রাধানাথের বাড়ীতে ডাকাতি হয়। মনটা ভাঙ্গিয়া যাইতেছে। লোকজন একটু দাঁড়ানোর চেষ্টা যখন করিতেছে। তখনই ঘটিল এই অবস্থা। মানুষকে দেশ না ছাড়ার উপদেশ দিয়া কি ব্যর্থ হইতেছি।
১১.২.৪৮
ভোরবেলা উঠে বামৈ গ্রামে বাহির হইলাম। যে বাড়ীতে ডাকাতি হইয়াছিল সে বাড়ী ঘুরিয়া আসিলাম। তবুও তাহাদেরকে সান্ত্বনার বাণী শুনাইলাম। লজ্জাই লাগিল।
১২.২.৪৮
পরিস্থিতি মনে হইল খারাপ হইতেছে। আজ বিকালে বামৈ গ্রামের মুসলমানদের বাড়ীগুলি ঘুরিয়া আসিলাম। অনেকেই ভাল ব্যবহার করিলেন। রাত্রে নোয়াগ্রাম পুড়াইয়া দেওয়া হইল। সামপ্রদায়িক প্রীতি ভাব যখনই একটু বাড়িতে থাকে তখনই দাঙ্গাবাজরা নূতন করিয়া শুরু করিয়া দেয়। অসহায় মানুষ যাইবে কোথায়।
১৪.২.৪৮
সকালে মাসুদপুর গেলাম। নোয়াগ্রামের লোকদের সাথে দেখা করিয়া পোড়াবাড়ীগুলি দেখিতে বাহির হই। মানুষের কান্নায় বুক ফাটিয়া যাইতেছে। সব মানুষ ভয়ে তটস্থ। ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ এই কষ্ট বুঝিবে না। ঘরগুলি পুড়া ছাইয়ে পরিণত হইয়াছে।
১৫.২.৪৮
আজ পাড়ার ভীত হইয়া যাওয়া মেয়েদের সাথে দেখা করিলাম। দুষ্টদের নানান নির্যাতনের শিকার হইতে পারে তারা। এইখানে থাকিবে কি না তাহা চিন্তা করিতেছে সবাই।
১৮.২.৪৮
মাদনা গেলাম। সেইখানে নোয়াগ্রামের লোকদের নিয়া আলোচনা হইল। আমরা কাজ করিয়াই যাইতেছি। কিন্তু সব সময়তো আর থাকিব না—তখন কি হইবে।
১৯.২.৪৮
আজ সারাদিন বাহির হই নাই। বামৈ গ্রামের মেয়েরা আসিল। তাহাদেরকে নিয়া সারা বিকাল আলোচনা করিলাম। খবর পাইলাম বহু লোক গ্রাম ছাড়িয়া চলিয়া যাইবে। কোথায় যে তাহারা নিরুদ্দেশ হইবে কে জানে? ঐ জায়গায় গিয়াও কষ্ট পাইবে।
২০.২.৪৮
আজ বিকালে কয়েকটি গ্রাম ঘুরিয়া আসিলাম। দেখিলাম সকলের মন ভাঙ্গিয়া গিয়াছে। অনেক পরিবার অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকিয়া পিতৃভূমি ত্যাগ করিয়া যাইতেছে। আমরা আটকাইতে পারিলাম না। তাহারা চলিয়া গেলে সংখ্যাগুরুদের অনেকের লাভ হইবে বুঝিলাম। কতই-বা সহ্য করিবে সংখ্যালঘু। আমরাতো শুধু উপদেশই দিলাম।
২১.২.৪৮
আজ সকালে মাদনা গেলাম। বেগুনা-মদনা গ্রাম ঘুরিলাম। সর্বত্রই একই অবস্থা। রাত্রে মাদনা গ্রামে অবস্থান করি। মানুষ নতুন করিয়া চিন্তা করিতে পারিতেছে না। আগামীকাল বামৈ গ্রামে থাকিব।
২৩.২.৪৮
ব্রজেন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী ও বিনোদ বর্ম্মন বামৈ গ্রামে গিয়াছেন। আমাদের কেম্পে ব্রজেন্দ্র বাবু আসিলে সব কথা শুনিলাম। আসলে দেশে কি ঘটিতেছে বুঝিতেই পারিতেছি না। সরকার শুধু লোক দেখাইবার জন্য আদর্শ কথা বলিতেছে।
২৪.২.৪৮
কংগ্রেস নেতা বসন্ত বাবুসহ ১৬ জন আমাদের কেম্পে আসিলেন। তাহারা সব কিছু দেখিলেন এবং স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করিবেন শুনিলাম। তাহাদের সূতা সরবরাহ করা হইবে। আগামীকল্য কেম্প ত্যাগ করিয়া চলিয়া যাইব।
২৫.২.৪৮ ( 25-2-48)
আজ সকাল বেলা ৭টায় আমরা বামৈ কেম্প হইতে বাহির হইলাম। এলাকাটা ছাড়িতে খারাপ লাগিল। মানুষ আমাদিগকে কত না আদর করিয়াছে। সাড়ে নয়টায় মটরে হবিগঞ্জ আসিলাম। রাত্রে কুলাউড়া পৌঁছাইলাম।
Today at 7 am we left Bamoy Camp. I felt really bad to leave the area. People are so affectionate to us. At 9.30 I reached Habiganj in motor vehicle. I reached Kulaura at night.
The forgotten citizens of Rakhine State
December 19, 2019
ANANTA YUSUF
The forebears of Mohammad Alam and Mohammad Ali, two Rohingya refugees, were Myanmar citizens. They had been in Myanmar for generations.
But Alam and Ali are not rightful citizens of the country. Having white cards, they had voted in the 2010 general elections. But now they have blue cards, under which they have very limited rights.
Escaping violence in Rakhine State, they entered Bangladesh early this month. The two along with their 31 family members have taken refuge at the unregistered Rohingya camp in Taknaf’s Kanjhan Para.
The fate of the ethnic minority changed with the changing of policies by the government. Many legal Myanmar citizens from the Rohingya community became illegal immigrants as the colours of their identity cards changed over the years. The government curtailed some of their basic civil rights.
Talking to us on September 7 2017, Alam said he walked four days to reach Teknuf in Cox’s Bazar from Maungdaw district of Rakhine.
Looking exhausted and distressed, he was reminiscing about his days in Rakhine. “We have proper land records. My grandparents and parents got Myanmar citizenship using their land deeds.”
He has brought those papers with him to Bangladesh. He is hopeful about regaining his land on return to Myanmar someday.
Alam showed some citizenship documents. He was holding tight three cards registered in 1952. These are his precious treasure as he finds a glimpse of hope to become a rightful Myanmar citizen.
In fact, the Myanmar government previously had taken back only those Rohingyas who managed to bring documents with them to Bangladesh.
Refugees like Alam and Ali are still preserving the cards very carefully. The 67-year-old pieces of paper have become brown and somewhat tattered. Each of the documents has the cardholder’s photograph, name, date and place of birth, father’s name and address. All the information is written in Burmese.
At the bottom, there is the date of issuance in English. A fingerprint of the cardholder and the signature of the issuer government official are on the back of the card.
The then Myanmar government introduced a law, Union Citizenship Act 1948, under which members of only eight ethnic minority communities were considered citizens. The Rohingyas were taken off the list of the minority communities.
However, a few Rohingyas, including the forebears of Alam and Ali, got citizenship cards when the government distributed National Registration Cards (NRC) under the law in 1951.
The Myanmar government is now rejecting the NRCs.
Asked why the army was torching villages in Rakhine, Ali, aged about 60, said: “I believe the government inflicted torture on the Rohingyas in an attempt to destroy all the evidence of our citizenship.”
After seizing power in a coup d’état in 1962, military ruler Ne Win started restricting movements of Rohingyas in the country. Before that, holders of NRC could receive good education, health service and other government facilities.
But things changed completely when the Citizenship Act, 1982, came into force. It limited participation of Rohingyas in politics.
Interestingly, according to article 6 of the act, those who had citizenship cards were to be recognised as Myanmar citizens. But the military junta overlooked the legal provision and claimed that Rohingyas were illegal migrants from Bangladesh and trying to get Myanmar citizenship hiding their Bengali identity.
Ali claimed that the government started torturing them after the Citizenship Verification Campaign had began in 1989. “At that time the government didn’t upgrade our cards and even the citizenships of the descendants of lawful citizens were revoked”.
He said his family had submitted all the necessary documents, including land records, but the government ignored those.
A new type of card, Citizenship Scrutiny Card, was distributed instead of the National Registration Cards in 1989 through the so called Citizen Verification Campaign. The Rohingyas were not provided with the new cards. Instead, they were given a white card in 1995, and around 4,00,000 Rohingyas from 13 townships were registered under white cards.
Holders of white cards were merely considered as immigrants. Ali said this card was necessary for availing trade permission, education, healthcare facility and travel within the country. “You can’t even get admitted to a hospital if you don’t have a white card. Many people in our village remained out of the purview of the medical treatment as they had no cards.
“After 1995, government officials used to visit our home every year to take family photographs. The government considered us immigrants though our forebears were Myanmar citizens.”
Another Rohingya refugee Shamsul Alam said a Rohingya without a white card could not even visit a bazar, let alone setting up a business. All the undocumented people have been living in camps in Rakhine.
The Rohingyas even didn’t get permission for getting married. Police would stop them verifying their cards at almost all locations.
“After 1995, many of our women came to Bangladesh to get married with Rohingyas living in camps here to avoid bribing the Myanmar army for marriage. Besides, there were many other hassles,” said Shamsul from Maungdaw, now living in Kutupalong camp of Ukhia.
In 2015, the Myanmar immigration ministry abrogated the white cards and distributed green and blue cards among the Rohingyas. According to the ministry, holders of green cards would be able to apply for citizenship directly. The blue cards had a two-year tenure which could be extended upon expiry.
Not a single Rohingya has a green card in Myanmar. The new cards have curtailed more citizen facilities that they had enjoyed before. The helpless people have to take permission from the government and face a lot of hassles even for securing the most basic needs.
The discriminations against the Rohingya Muslims have been going on for decades. Their miseries have increased in the last three weeks as they are being evicted from their homes and killed, raped and looted.
The Rohingyas are simple people who want to live in peace and with dignity. Having a small shanty now seems to be a far cry for the Rohingyas — the most persecuted ethnic minority community in the world.
Sylhet Referendum: A personal account
December 14, 2019
By Shahed Ali
Sylhet was a district of Assam. The district was famous for paddy, tea, cement, fish, limestone, sand, gravel and bolder. Who doesn’t know the taste of Sylhet’s orange and pineapple ( Joldubi Anaras)? The Shrine of Hazrat Shahjalal (R), Madhabkundo waterfall, Jaflong and the sights of tea garden hugely attract people. Sylhet used to dominate Assam, Shilong secretariat was basically controlled by Sylhetis. Sylhet played a key role in Pakistan movement. We joined Pakistan movement with the hope that the whole Assam including Sylhet will be a part of Pakistan. Muslims were the single largest community in Assam. If indigenous people were not counted Hindus were minority in Assam. Assam is consisted of two valleys. Surma Valley was dominated by Muslims. In the Assam valley non-Muslims including different indigenous groups and lower cast Hindus were majority. Boalpara district of Assam was a Muslim-dominated area. Dhubri was also a strong-hold of Muslims. We had the belief that Bangladesh and Assam would form the eastern part of Pakistan or the greater Bangadesh. But Mountbatten Plan ceded Assam to India. And whether Sylhet would join Pakistan would be determined by referendum. North-west frontier of Sylhet and Sylhet district was Muslim-dominated area. We had no doubt that the whole Sylhet along with Hailakandi and Silchar would be included in Sylhet. But the declaration of referendum put the Sylhetis to the big test. The call for referendum went off in Sylhet.
Initially Mountbatten’s declaration came as a shock for Sylhetis but they soon prepared themselves for the new test. Although Hindus in Sylhet were minority they were very influential and rich. Deoband Maolana Sayyid Hussain Ahmad Madani had a deep influence on local Muslims. He didn’t support idea of Pakistan. His party Jamiat Ulama-i Hind lent support to Congress.
The call for referendum created a sensation not only in the Sylhet region but also in Assam and Bangladesh. Thousands of activists of Muslim League and student members of Muslim National Guard from schools, colleges and universities spread over Sylhet. Many leaders and activists arrived from various parts of India. The Muslim League office was located at Sheikh Ghat in the town. Campaign method was decided at the office. Groups of activists were sent in different areas. Wherever they went they found enthusiastic response from local people who themselves were carrying out campaign for Pakistan. It was surprising. How come such an awakening occurred to these fishermen, peasants and illiterate villagers.
Translated by ABM Shamsud Doza
This is part of Shahed Ali’s autobiography Jibankatha which was published by Baatighar in November 2019.
Akrum Khan Letters
December 12, 2019
1
The Azad
THE ONLY VERNACULAR MUSLIM DAILY
Azad Munzil
Patharchapti
Modhupur
E.I.Rly.
24.8.44
My dear Quaide Azam,
I have not yet recovered from my illness. But on an urgent call from my revered leader Sir Nazimuddin I went to Calcutta and attended a meeting of the Working Committee of B.P.Muslim League. There I heard some statements which were prepared for your consideration. So I felt it my duty to send you my humble opinion about the E.Pakistan. But I am sorry it has become unnecessarily lengthy. As you know my defects of English knowledge , I am confident that you will be kind enough to forgive this…
Khadem
Md. Akrum Khan
A Pioneer of the Bengali Muslim renaissance
September 17, 2019
Once in a century, a man is born with extraordinary leadership skills that can change the course of history and blessed is the country where such a man is born. Such a man was Sher-e-Bangla AK Fazlul Huq – a great statesman, a self-sacrificing patriot, a spokesman of truth and justice and a champion of freedom and liberty.
Our great national leader, Sher-e-Bangla AK Fazlul Huq was born on October 26, 1873 in his maternal uncle’s house in the village of Saturia under the Rajapur Thana in the district of Jhalakathi, then under greater Barisal. His father’s residence was at the village Chakhar in the Banaripara Thana, under Barisal district. His forefathers, however, were the inhabitants of the village Bilbillash under the Baufal Thana, in the district of Patuakhali.
AK Fazlul Huq, since his childhood, was an extra-ordinarily meritorious student. He obtained scholarship in his mid-level examinations and passed the Entrance (SSC) Examination with brilliant marks in the year 1889. In 1891, in his FA Examination, Sher-e-Bangla also got scholarship. In 1894, he passed the Honours Examination simultaneously in Mathematics, Physics and Chemistry with credit from the Presidency College, Kolkata (Calcutta) India. It was the first time that a Muslim student had passed the honours exams in three different subjects at the same time. The following year, one day, while Fazlul Huq was busy preparing himself for the MA Examination in English, one of his Hindu friends said, “You are appearing in MA in English because you Muslim students are afraid of Mathematics – Is it not so ? “ AK Fazlul Huq was shocked at this negative attitude from his friend while his friend went on to add that Muslim students are very much afraid of intelligent subjects.
The Tiger of Bengal, challenged him that he would not appear in the MA exams in English, rather he would appear for the MA exams in Mathematics and hence prove such a perception wrong. Subsequently, AK Fazlul Huq passed the MA in Mathematics with the highest credits and that too with only a mere six month’s preparation by obtaining special permission from the Calcutta University. It is worth mentioning that Sher-e-Bangla AK Fazlul Huq was the first Muslim in undivided Bengal (the then greater Bengal) to obtain an MA degree in Mathematics. He also passed the Law degree with distinction only to become one of the most celebrated and legendary lawyers of the Indian Sub-continent in no time. Once, the then district Magistrate Briston Bell while discussing matters relating to education in the district, had asked Moulvi Mohammad Wazed, the father of Sher-e-Bangla, “How many graduates are there in the Bakerganj (a large area of the then greater Barisal was known as Bakerganj) district?” In reply, to the English Magistrate’s utter surprise, Mr Wazed, a renowned lawyer (Muktar) by profession, said proudly, “Me and my only son Fazlul Huq are the only two known graduates in the entire district.” This was in 1901, a time during which, most common people of the Indian Sub-continent were living in illiteracy, extreme poverty and acute frustration.
In 1873, when AK Fazlul Huq was born, the Indian Sub-continent lay prostrate at the feet of the British Raj. The great mutiny of 1857 had been ruthlessly quelled and the ancient ruling classes had been either wiped out or lay cringing in the dust. The foreign traders had been firmly entrenched as rulers and the British Queen had been proclaimed the Emperor of the India. It seemed to be taken for granted that this bright jewel would continue to shed lustre on the Imperial Crown forever. Almost ninety years later, when Sher-e-Bangla died in 1962, the face of Bengal had been totally transformed politically and socially. She had also recovered her self-respect and spiritually, she had started discovering the hidden springs of creative life.
A multitude of political and social factors were responsible for this historic transformation. Among the greatest individuals who made these forces creative in shaping the destiny of Bengalis and Bangladesh, Sher-e-Bangla AK Fazlul Huq stands out as pre-eminent. It is not only in the history of Bangladesh, but in the history of the entire Sub-continent that he will always be among the greatest. AK Fazlul Huq was one of the fortunate few whom the Creator, in his infinite mercy, gave in full measures, all the things which human beings desire and yet with a contrariety which is beyond human understanding. Along with these gifts he had immense sympathy for human suffering, which sometimes turned his personal achievements into an agony at the sight of so much folly, so much futility and so much hatred all around.
Shere-e-Bangla’s was a career of outstanding service, of great achievement and of dedication to a cause. The flame of his faith in freedom and in nationalism never flickered. As a statesman, an orator, a philanthropist, an administrator and an educationist, Sher-e-Bangla was undoubtedly a giant among men, almost an institution by himself. A rare combination of human qualities, he had a heart that suffered for the poor and the people around him. Courteous, sharp, witty, and kind, he gave out his mature judgment and counsel which was often sought and valued. Single-minded in his devotion to the national movement, broad-minded in his approach to the varied international problems, national, regional and sectional, Sher-e-Bangla had always been revered and adored as a keen intellectual, eloquent speaker, eagle-eyed politician, and above all a loveable human- being.
Entirely selfless, free from all narrowness, truthful in thought, fearless in action, meek as a lamb but a lion in sprit as he was, Fazlul Huq never failed to rise to the occasion and respond to the call and urges of his country, his people. His foresight was indeed amazing and in a letter written to the then Governor of Bengal, Sir John Herbert on the August 2, 1942, he had the courage and firm conviction to demand a separate Bengali Army and wrote, “I want you to consent to the formation of a Bengali Army consisting of a hundred thousand young Bengalis consisting of Muslim and Hindu youths on a fifty-fifty basis. There is an insistent demand for such a step being taken at once, and the people of great Bengal will not be satisfied with any excuses. It is a national demand which must be immediately considered.” He also pointed out in the same letter, “Administrative measures must be suited to the genius and traditions of the people and not fashioned according to the whims and caprices of hundred bureaucrats to many of whom autocratic ideas are bound up with the very breath of their lives”.
So diverse was his entire political life that among a host of political positions, he held the post of the first-ever elected Mayor of Calcutta City Corporations in 1930 to becoming the Education Minister of Bengal in 1924 to crowing the coveted chair of the Prime Minister of Undivided Bengal in 1937 to the post ranging from the Chief Minister of East Pakistan after the landslide victory of the 1954 general elections under the historic platform of the Jukto-Front to the Home Minister of Pakistan in 1956. As rare as his political acumen and personality was that he was able to hold two completely diverse positions of, the President of the Muslim League of India on one hand, and the Secretary General of the All-India Congress party, on the other and all at the same time.
A champion of spreading mass education throughout Bengal, his active support and contributions had shaped the establishing of the Dhaka University in 1921. Indeed, he set up a number of schools, colleges and other educational institutions among them the Adina Fazlul Huq College of Rajshahi, Harganga College of Munshiganj, Chakhar Fazlul Huq College, Wazed Memorial Institutions, Islamia college of Calcutta, a number of Hostels for the Muslim students, Lady Brabourne College of Calcutta for women and Eden Girl’s College Hostel. He also contributed to the improvement of the Shakawat Memorial Girl’s College set up by Begum Rokeya. In 1933 Sher-e-Bangla established the Tejgaon Agricultural College for imparting modern agricultural methods to the Bengalis, which has been converted and upgraded to a full-fledged Agricultural University named after him by the honorable Prime Minister, Sheikh Hasina as a mark of national respect to his fond memories.
In the year 1938, during his premiership of Bengal, Sher-e-Bangla, by passing and implementing the Mahajani Law and the Bengal Tenancy Act and setting up the dsebt settlement board, not only saved millions of Bengali peasants from the torture and oppression of Zamindars (landlords) but also paved the way to bring the light of education to every house. It was Sher-e-Bangla who had introduced free primary education up to Class-IV. It was Fazlul Huq’s free primary education system that helped the emergence of an educated middle-class and lower middle-class throughout Bengal, (today’s Bangladesh) following which we saw the establishment of numerous schools and colleges in many villages and remote areas for the down-trodden people.
AK Fazlul Huq was the pioneer of the Bengali Muslim renaissance. We are indebted to him in more ways than one. The very word ‘We’ covers a multitude of things from peasants of Bangladesh to the politicians, leaders, poets, journalists, educationists, students to mention but a few only. We are indebted to him for the inspiring leadership that brought about the revolution. He was the great mover of the historic Lahore resolution in 1940, drafting which, he had clearly indicated with all its diligent arguments, a separate and an independent land for the Muslim majority Bengalis of this part (Bangladesh) Indeed, through the upheaval journeys starting from 1947, after the great divide, through to the oppressive and struggling years of 1952, 1954, 1962, 1966, 1970 and finally, the year of 1971 the teeming millions of Bangladesh witnessed the very birth of a free land through the undisputed leadership of its founding father–Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman.
Guided by the gracious gleam of nature, AK Fazlul Huq was dear to this land of ours as a prince without royal titles or crowns. But a beloved household name, which will live through all times. In defiance of time’s tyrannical mortality and oblivion, such triumphant immortals, reposing in the bosom of God, conquer death; deprive it of its terror, making it almost beloved. It would have been difficult to recall a more beautiful life with a purer heart, a richer mind and a nobler dedication than his, even in the ampler days that are no more. He was a giant amongst the giants and his name echoed through the shouts of millions. It is only such a kingly sprit which could dare demand the public audiences of his fellowmen.
Sher-e-Bangla is no more with us, yet he is alive in the in the hearts of all. His memory persists in the long cherished and yet unfulfilled dreams, hopes and aspirations of the people whom he inspired. His name will persist as long as Bangladesh remains and we have the capacity to dream and realise the object of his dream. He will thus continue to live in the continuity of the hopes and aspirations of the people of Bangladesh. Joy Bangla.
1897 Earthquake : A witness account
May 27, 2019
The letter was published in The Aberdeen Journal on July 19, 1897. Here we are publishing it verbatim.
A gentleman In Aberdeenshire has received from a relative in Assam the following account of the recent earthquake there. The letter is dated Dhubri, Assam, June 16th, 1897.
We have had a very fine specimen of earthquake, something better than the ” common or garden” earthquake of Assam, and, the line being still blocked somewhere beyond Jadrapore, I am writing in good time, and will send this via Goalundo. We have had no letters since the earthquake occurred, so I shall be awfully busy when the accumulated letters do arrive, and it may not be possible to write on the proper mail day. Today communication was effected between here and Calcutta, a few “urgents” having been sent, but as yet no wires from Calcutta have reached us. A wire from the Chief Commissioner came in here this morning, transmitted partly by wire and partly by post, giving a sad account of Shillong.
M’Cabe was killed by the falling of his house, and that is supposed to be the only casualty among Europeans; but the natives came to awful grief, it seems. We here account for the salvation of the Europeans in Shillong by the fact that on Saturday afternoon there was to be a cricket match, and most of them would be away from their houses.
Ganhuli and Goalpara, so far as pucca buildings go, are demolished.
Dhubri I can’t say much about; all the pucca buildings are down, and lot of those built on posts, but we know of only one instance of loss of life, though some people are missing-natives, of course. If you could only see how the ground has cracked into chasms you would wonder that people were not engulfed. Great spouts of sand, water, and mud came up from below, stinking bad, and overran everything in the westerly part, where our depot is. Our depot wells are all broken bar one, in which sand spouted up. However, as I have said from the first, Dhubri will be found to compare well with some other places. I think the mortality would have been greater had it occurred at another hour. At night-time it would have been terrible. Lots of little earthquakes are going on all the time; we must have had 50 to 60 since the time of the big one. By the way, Shillong is quite cut off from everywhere, there having been big landslips which took away the road; bridges are all down and immense trees are over it everywhere through the forest.
June 17th
Little quakes going on all night, but nothing to harm. The downward steamer is due, so I must post this.
Note: The Assam earthquake of 1897 occurred on 12 June in Assam at 17:15 local time, India, and had an estimated moment magnitude of 8.0. Considering the size of the earthquake, the mortality rate was about 1,542 casualties, but property damage was very heavy. The damage from the earthquake also extended into different parts of Bengal where many buildings were badly damaged or collapsed. [ Wikipedia]